মা'আরিফুল হাদীস
রিকাক অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৫
রিকাক অধ্যায়
নবী করীম ﷺ-কে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়া হয়েছে
৬৫. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় আমাকে যা ভয় দেখানো হয়েছে তা অন্য কাউকে দেখানো হয়নি। আল্লাহর রাস্তায় আমাকে যে কষ্ট দেয়া হয়েছে তা অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। এবং এমন এক সময় আমার উপর এসেছে যে, ত্রিশ দিন ও রাত বিলালের বগলের নীচে যা রাখা হয়েছিল তা ছাড়া আমার এবং বিলালের জন্য কোন বস্তু ছিল না যা কোন প্রাণী খেতে পারে। (তিরমিযী)
کتاب الرقاق
عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لَقَدْ أُخِفْتُ فِي اللهِ وَمَا يُخَافُ أَحَدٌ ، وَلَقَدْ أُوذِيتُ فِي اللهِ وَمَا يُؤْذَى أَحَدٌ ، وَلَقَدْ أَتَتْ عَلَيَّ ثَلاَثُونَ مِنْ بَيْنِ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ وَمَا لِي وَلِبِلاَلٍ طَعَامٌ يَأْكُلُهُ ذُو كَبِدٍ إِلاَّ شَيْءٌ يُوَارِيهِ إِبْطُ بِلاَلٍ . (رواه الترمذى)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আল্লাহর দীন আল্লাহর বান্দাদের কাছে যাতে প্রচারিত না হয় তার জন্য মক্কার নগর রাষ্ট্রের হোমড়া চোমরাদের পক্ষ থেকে সীমাহীন চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন গোত্রের প্রধানদের হাতে মক্কার শাসন ব্যবস্থা ছিল। তারা তাদের গোত্রের নিষ্ঠুর চরিত্রের লোকদেরকে নবী করীমের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল। আল্লাহর পয়গাম মানুষের কাছে পেশ না করার জন্য তারা নবী ﷺ-কে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ধরনের ভয় প্রদর্শন করত। যখন তাদের ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করে তিনি দীনের দাওয়াত দিতে থাকলেন, তখন তারা তাঁকে এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে দৈহিক নির্যাতন করতে লাগল। তাতেও যখন তিনি ক্ষান্ত হলেন না, তখন তাঁর বিরুদ্ধে তারা অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করল। শে'বে আবু তালিবে তাঁকে ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে অন্তরীণ রাখা হল। সীরাত বা জীবন চরিত বিষয়ক কিতাবসমূহে সে সময়ের করুণ অবস্থার বর্ণনা রয়েছে। অসহায় শিশুদের চীৎকার ও ক্রন্দনে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু অন্তরীণ অবস্থায়ও নবী করীম ﷺ এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীগণ নিরুৎসাহিত হননি। তিনি ও তাঁর সঙ্গী-সাথীগণ যেভাবে নির্যাতীত হয়েছেন, তার উদাহরণ বিরল। হাসি-ঠাট্টা, বিদ্রূপ-নির্যাতন, প্রিয় সাথীদের হত্যা, স্বয়ং নবী করীমকে হত্যার ষড়যন্ত্র, অর্থনৈতিক বয়কট, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করা প্রভৃতি কোন কিছুর দ্বারা নবী করীম ﷺ-কে ইসলাম প্রচারের পথ থেকে বিরত রাখা যায়নি। এ ধরনের কঠিন অবস্থায়ও তিনি মুসলমানদেরকে বলতেনঃ হে মুসলমানগণ! স্মরণ রাখ, যদি ইসলাম প্রচারের যিম্মাদারী পরিত্যাগ কর তাহলে উত্তম উম্মত হওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলবে এবং হক সুবহানাহু তা'আলা প্রদত্ত মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হবে, তখন আল্লাহ তোমাদের উপর যালিমদের কর্তৃত্ব দিয়ে দিবেন, তারা তোমাদের উপর যুলম করবে। যদিও তখন তোমাদের উত্তম ব্যক্তিগণ দু'আ করবেন; কিন্তু তাদের দু'আ কবুল হবে না।
রাসূলের আনুগত্য ও তাঁর প্রতি মহব্বত রাখা উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। আনুগত্য ও মহব্বতের দাবি পূরণ করতে হলে সর্বাবস্থায় ইসলাম প্রচারের হক আদায় করতে হবে। কোন অবস্থাতেই এ মহান যিম্মাদারী ত্যাগ করা যাবে না। 'আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার'-এর যিম্মাদারী অবশ্যই পালন করতে হবে। বলা বাহুল্য, এ যিম্মাদারী পালন করার মধ্যেই উম্মতের স্থায়িত্ব ও সাফল্য রয়েছে।
রাসূলের আনুগত্য ও তাঁর প্রতি মহব্বত রাখা উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। আনুগত্য ও মহব্বতের দাবি পূরণ করতে হলে সর্বাবস্থায় ইসলাম প্রচারের হক আদায় করতে হবে। কোন অবস্থাতেই এ মহান যিম্মাদারী ত্যাগ করা যাবে না। 'আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার'-এর যিম্মাদারী অবশ্যই পালন করতে হবে। বলা বাহুল্য, এ যিম্মাদারী পালন করার মধ্যেই উম্মতের স্থায়িত্ব ও সাফল্য রয়েছে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)