মা'আরিফুল হাদীস
রিকাক অধ্যায়
হাদীস নং: ৪১
রিকাক অধ্যায়
সম্পদ বৃদ্ধি করার লোভ কখনো মেটে না
৪১. হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী ﷺ বলেছেন: আদম সন্তানের কাছে যদি সম্পদের দুটো উপত্যকা থাকে তাহলেও সে তৃতীয়টা চাইবে। মাটি ছাড়া অন্য কিছু বনী আদমের পেট ভরতে পারে না। যে তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الرقاق
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : « لَوْ كَانَ لِابْنِ آدَمَ وَادِيَانِ مِنْ مَالٍ لاَبْتَغَى ثَالِثًا ، وَلاَ يَمْلَأُ جَوْفَ ابْنِ آدَمَ إِلَّا التُّرَابُ ، وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ تَابَ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
স্বভাবতই সাধারণভাবে মানুষ সম্পদের প্রতি অত্যন্ত লোভী। আল্লাহ তাকে এক দুনিয়া সম্পদ দান করলেও তাতে তার তৃপ্তি হয় না এবং যিনি সম্পদ দিয়েছেন তাঁর শুকরিয়া আদায় করে না। বুদ্ধি-বিবেচনার দাবি হল, যে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন সে আল্লাহর প্রতি অনুগত হওয়া, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, তাঁর হুকুম মোতাবিক অর্থ ব্যয় করা এবং জীবনের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা। কিন্তু আফসোসের বিষয়, খোশহাল মানুষ এ বাস্তবতাকে স্বীকার করতে চায় না; বরং তার বিপরীত আল্লাহর হুকুমকে অমান্য করে সম্পদ অর্জন করে এবং আল্লাহদ্রোহী কাজে তা ব্যয় করে। সূরা আল-আদিয়াতে আল্লাহ তা'আলা মানুষের এক অকৃতজ্ঞতা ও অবিবেচক মনোভাবের উল্লেখ করে বলেন:
إِنَّ الْإِنْسَانَ لِرَبِّهِ لَكَنُودٌ وَإِنَّهُ عَلَى ذَلِكَ لَشَهِيدٌ وَإِنَّهُ لِحُبِّ الْخَيْرِ لَشَدِيدٌ
- "মানুষ অবশ্যই তার রব্বের প্রতি অকৃতজ্ঞ এবং সে অবশ্যই এ বিষয়ে অবহিত এবং অবশ্যই সে ধন-দৌলতের লালসায় উন্মত্ত।" (সূরা আল-আদিয়াহ্: ৫-৭)
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক পন্থা হল, আল্লাহ যে সম্পদ দিয়েছেন সে সম্পদকে নিজের প্রয়োজন পূরণ, পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ, দুঃস্থ ও গরীব মানবতার সেবায় বিনিয়োগ এবং আল্লাহর পয়গামকে তাঁর বান্দাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজে ব্যয় করা। কিন্তু সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি হাসিলের পর মানুষ এ কথা বেমালুম ভুলে যায়, যে আল্লাহ তাকে সম্পদ দান করেছেন। তাঁর কাছে তাকে ফিরে যেতে হবে। প্রত্যেকটি বস্তুর হিসাব তাকে দিতে হবে এবং আখিরাতের কঠিন মুহূর্তে সম্পূর্ণ একাকী ও কোন সাহায্যকারী বন্ধু ছাড়া আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। সম্পদের নেশা মানুষকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্ধারিত পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। প্রভাব, প্রতিপত্তির নেশা মানুষকে তার আখিরাত সম্পর্কে গাফিল করে দেয়। নিজেকে খোশহাল রাখা ও অর্থনৈতিক জীবনে বুলন্দ মাকামে অধিষ্ঠিত হওয়ার মারাত্মক নেশায় লিপ্ত মানুষ হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ সব ভুলে যায়। পন্থা যত গর্হিত হোক না কেন, তাতে তার কিছু আসে যায় না, সম্পদ তার চাই। সম্পদের নেশায় বিভোর ব্যক্তি মানুষকে অভুক্ত রেখে অগণিত মানুষকে দাসত্ব শৃংখলে আবদ্ধ করে বা প্রয়োজনবোধে এ ধরনের কাজে বাধাদানকারীকে হত্যা করে রাশি রাশি সম্পদ আয়ত্ত করতে চায়। সম্পদের নেশা অফুরন্ত, এর কামনা অতৃপ্ত। কবরে না যাওয়া পর্যন্ত মানুষের এ নেশা কাটে না। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ
"প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের মৃত্যুকাল পর্যন্ত মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। (সূরা তাকাসুর: ১-২)
আখিরাতের প্রথম মনযিল কবরে পা দিয়ে মানুষ বুঝতে পারবে তার অঢেল সম্পদ কোন কাজে আসবে না এবং হাড়ে হাড়ে টের পাবে, সম্পদ আহরণের জন্য সারা জীবন সে যা কিছু করেছে, তা তার বিফল ও ব্যর্থ হয়েছে। তার ভাগ্যে সঞ্চিত হয়ে রয়েছে শুধু পাপের পাহাড়, যুলমের যুলমাত এবং লাঞ্ছনার তওক ও তকমা।
এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে হলে আখিরাতের প্রতি অটল বিশ্বাস ও আল্লাহর মুলাকাতের খাহেশ মযবুত থাকতে হবে। সম্পদের বল্গাহীন কামনা মানুষকে যেন আখিরাতের কামিয়াবীর রাজপথ থেকে বিচ্যুত করতে না পারে, সেজন্য সদা ইস্তিগফার করতে হবে। নিজের আখলাক-আমলকে সংশোধিত এবং কামনা-বাসনাকে সংযত করতে হবে। এ পথে দৃঢ় ও মযবুত থাকার জন্য আল্লাহর কাছে ওয়াদা করতে হবে এবং তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। এভাবে যারা আল্লাহর দিকে ধাবিত হন আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দেন এবং তাদেরকে অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকারক উপায়-উপকরণ হতে রক্ষা করেন। দয়াময় আল্লাহ! দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদের সহায় হোন।
إِنَّ الْإِنْسَانَ لِرَبِّهِ لَكَنُودٌ وَإِنَّهُ عَلَى ذَلِكَ لَشَهِيدٌ وَإِنَّهُ لِحُبِّ الْخَيْرِ لَشَدِيدٌ
- "মানুষ অবশ্যই তার রব্বের প্রতি অকৃতজ্ঞ এবং সে অবশ্যই এ বিষয়ে অবহিত এবং অবশ্যই সে ধন-দৌলতের লালসায় উন্মত্ত।" (সূরা আল-আদিয়াহ্: ৫-৭)
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক পন্থা হল, আল্লাহ যে সম্পদ দিয়েছেন সে সম্পদকে নিজের প্রয়োজন পূরণ, পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ, দুঃস্থ ও গরীব মানবতার সেবায় বিনিয়োগ এবং আল্লাহর পয়গামকে তাঁর বান্দাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজে ব্যয় করা। কিন্তু সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি হাসিলের পর মানুষ এ কথা বেমালুম ভুলে যায়, যে আল্লাহ তাকে সম্পদ দান করেছেন। তাঁর কাছে তাকে ফিরে যেতে হবে। প্রত্যেকটি বস্তুর হিসাব তাকে দিতে হবে এবং আখিরাতের কঠিন মুহূর্তে সম্পূর্ণ একাকী ও কোন সাহায্যকারী বন্ধু ছাড়া আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। সম্পদের নেশা মানুষকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্ধারিত পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। প্রভাব, প্রতিপত্তির নেশা মানুষকে তার আখিরাত সম্পর্কে গাফিল করে দেয়। নিজেকে খোশহাল রাখা ও অর্থনৈতিক জীবনে বুলন্দ মাকামে অধিষ্ঠিত হওয়ার মারাত্মক নেশায় লিপ্ত মানুষ হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ সব ভুলে যায়। পন্থা যত গর্হিত হোক না কেন, তাতে তার কিছু আসে যায় না, সম্পদ তার চাই। সম্পদের নেশায় বিভোর ব্যক্তি মানুষকে অভুক্ত রেখে অগণিত মানুষকে দাসত্ব শৃংখলে আবদ্ধ করে বা প্রয়োজনবোধে এ ধরনের কাজে বাধাদানকারীকে হত্যা করে রাশি রাশি সম্পদ আয়ত্ত করতে চায়। সম্পদের নেশা অফুরন্ত, এর কামনা অতৃপ্ত। কবরে না যাওয়া পর্যন্ত মানুষের এ নেশা কাটে না। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ
"প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের মৃত্যুকাল পর্যন্ত মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। (সূরা তাকাসুর: ১-২)
আখিরাতের প্রথম মনযিল কবরে পা দিয়ে মানুষ বুঝতে পারবে তার অঢেল সম্পদ কোন কাজে আসবে না এবং হাড়ে হাড়ে টের পাবে, সম্পদ আহরণের জন্য সারা জীবন সে যা কিছু করেছে, তা তার বিফল ও ব্যর্থ হয়েছে। তার ভাগ্যে সঞ্চিত হয়ে রয়েছে শুধু পাপের পাহাড়, যুলমের যুলমাত এবং লাঞ্ছনার তওক ও তকমা।
এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে হলে আখিরাতের প্রতি অটল বিশ্বাস ও আল্লাহর মুলাকাতের খাহেশ মযবুত থাকতে হবে। সম্পদের বল্গাহীন কামনা মানুষকে যেন আখিরাতের কামিয়াবীর রাজপথ থেকে বিচ্যুত করতে না পারে, সেজন্য সদা ইস্তিগফার করতে হবে। নিজের আখলাক-আমলকে সংশোধিত এবং কামনা-বাসনাকে সংযত করতে হবে। এ পথে দৃঢ় ও মযবুত থাকার জন্য আল্লাহর কাছে ওয়াদা করতে হবে এবং তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। এভাবে যারা আল্লাহর দিকে ধাবিত হন আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দেন এবং তাদেরকে অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকারক উপায়-উপকরণ হতে রক্ষা করেন। দয়াময় আল্লাহ! দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদের সহায় হোন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)