মা'আরিফুল হাদীস

রিকাক অধ্যায়

হাদীস নং: ৪২
রিকাক অধ্যায়
আল্লাহ দুনিয়া তলবকারীর অবস্থা ব্যাকুল করে দেন এবং আখিরাতপ্রার্থীর কলবে প্রশান্তি দান করেন
৪২. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন: আখিরাতের অন্বেষণ যার নিয়াতে রয়েছে, আল্লাহ তার কলবে প্রশান্তি দান করেন, তার অন্তরের ব্যাকুলতা দূর করে দেন এবং দুনিয়া অবনত হয়ে তার কাছে আসে। আর যার নিয়্যতে রয়েছে দুনিয়া লাভ করা, আল্লাহ তার চেহারায় অভাব-অনটনের ভাব সৃষ্টি করেন। তার অবস্থা ব্যাকুল ও অশান্ত করে দেন এবং তকদীরে নির্ধারিতের চেয়ে অধিক দুনিয়া (ধন-সম্পদ) সে লাভ করতে পারে না। (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ ও দারেমী)
کتاب الرقاق
عَنْ أَنَسِ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَنْ كَانَتْ نِيَّتُهُ طَلَبُ الآخِرَةِ جَعَلَ اللَّهُ غِنَاهُ فِي قَلْبِهِ وَجَمَعَ لَهُ شَمْلَهُ ، وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ رَاغِمَةٌ ، وَمَنْ كَانَتِ نِيَّتُهُ طَلَبُ الدُّنْيَا جَعَلَ اللَّهُ الفَقْرَ بَيْنَ عَيْنَيْهِ ، وَشَتَّتْ عَلَيْهِ اَمْرَهُ ، وَلَا يَأْتِيْهِ مِنَهَا إِلاَّ مَا كُتِبَ لَهُ . (رواه الترمذى وراه احمد والدارمى)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহ তাআলা আখিরাত লাভের প্রার্থীদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করেন। সম্পদের প্রাচুর্যের চেয়ে অন্তরের প্রশান্তি সুমহান। আল্লাহ আখিরাত অন্বেষণকারীদের অন্তরে প্রাচুর্য বা প্রশান্তি দান করার কারণে তারা নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হন না। তারা অন্যের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন না। আল্লাহ তাদের যা দান করেন তারা তাতে সন্তুষ্ট থাকেন। ফলে কোনরূপ দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন তাদের হতে হয় না। আখিরাতের চিন্তায় যারা দিনরাত মশগুল, তাদের পার্থিব সমস্যা কোনদিন অমীমাংসিত থাকে না। আল্লাহ তা'আলা দয়া পরবশ হয়ে তাঁর প্রিয় বান্দাদের অবস্থা সংশোধন করেন, সমস্যার সমাধান করে দেন এবং তাদের যে সব বিষয় বিক্ষিপ্ত ও অগোছালো ছিল এবং সম্ভবত নিজে তারা যেগুলো গোছাতে পারত না, সেগুলো সুন্দর ও সঠিকভাবে গুছিয়ে দেন। আল্লাহর এ ধরনের বান্দারা কখনো দুনিয়ার উপায়-উপকরণ থেকে বঞ্চিত থাকেন না। কোন না-কোনভাবে আল্লাহ তাদের হিসসা পূরণ করে দেন। আখিরাতের জন্য যারা চেষ্টা করেন, আল্লাহ তাদের আখিরাতের অনন্ত জীবনকে সমুজ্জ্বল করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার জীবনেও তাদেরকে শান্তি ও সম্মান দান করেন। বস্তুত, এ ধরনের মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াব।

দুনিয়া প্রার্থীগণ সর্বদা ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। আখিরাতের সুখ-শান্তির পরিবর্তে তারা দুনিয়ার আরাম-আয়েশ হাসিলের জন্য দিনরাত ব্যাকুল থাকে। ফলে তাদের আখিরাত চিরদিনের জন্য বিনষ্ট হয়ে যায় এবং যে দুনিয়ার জন্য আখিরাত বিসর্জন দেয়, সে দুনিয়া ততটুকু পায় যতটুকু আল্লাহ তাদের জন্য লিখে রেখেছেন। দুনিয়া ও আখিরাতের একমাত্র মালিক-মুখতার আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। দুনিয়া ও আসমানের সবকিছু তাঁর ব্যবস্থাধীন। দুনিয়ার তামাম মাখলুকের রোযগার ও কিসমতের বিলি-বণ্টন তাঁর হুকুমে হয়ে থাকে। তিনি মানুষের জন্য যা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন সে তাই লাভ করবে। শত চেষ্টা করেও মানুষ তার ভাগ্যের নির্ধারিত জিনিস থেকে একবিন্দু বেশি লাভ করতে পারবে না। দুনিয়াপ্রার্থীরা এ সত্য উপলব্ধি না করার কারণে দুনিয়ার প্রভাব-প্রতিপত্তি হাসিলের জন্য সর্বদা নিজেকে ব্যস্ত রাখে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুম মোতাবিক পার্থিব প্রয়োজন পূরণ না করার কারণে তাদের অন্তরে কোনরূপ তৃপ্তির সৃষ্টি হয় না। এ ধরনের দুনিয়াপ্রার্থীদের প্রয়োজন বহুমুখী। এক প্রয়োজন পূরণ না হতেই নতুন প্রয়োজন সৃষ্টি হয়। সম্পদের এক পাহাড় লাভ করার পর দ্বিতীয় পাহাড় লাভ করার চিন্তা-ভাবনায় ব্যাকুল থাকে। সম্পদ ও প্রাচুর্যের মধ্যে থাকলেও এ ধরনের মানুষকে আরও সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি হাসিলের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয়। বলা বাহুল্য, আল্লাহ এ ধরনের বান্দাদের উপর অসন্তুষ্ট থাকার কারণে তাদের দুনিয়ার জীবন কখনো সুখ-শান্তিপূর্ণ হয় না। তারা দুনিয়ার জীবনে বিভিন্ন বিড়ম্বনা ও অশান্তির শিকার হয়। শুধু তাই নয়, অশান্তির অনলভরা আখিরাতের অনন্ত জীবন তাদের জন্য অধীর প্রতীক্ষায় রয়েছে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান