মা'আরিফুল হাদীস

রিকাক অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৪
রিকাক অধ্যায়
দুনিয়া উপস্থিত সামগ্রী যা নেককার ও বদকার উপভোগ করে
৩৪. হযরত আমর ইবন আস (রা) থেকে বর্ণিত, একদিন নবী ﷺ ভাষণ দান করলেন। তিনি তাঁর ভাষণে বললেনঃ সাবধান, দুনিয়া এক উপস্থিত সামগ্রী যা নেককার ও বদকার উপভোগ করে থাকে, আর মনে রাখ, আখিরাত সুনির্দিষ্ট ও সত্য এবং তাতে সর্বশক্তিমান বাদশাহ ফয়সালা করবেন। (আরো) মনে রাখ। যাবতীয় মঙ্গল জান্নাতের মধ্যে এবং যাবতীয় অমঙ্গল দোযখের মধ্যে রয়েছে। (তাই) সাবধান, আল্লাহকে ভয় করে তোমরা আমল কর এবং মনে রাখ, তোমাদেরকে তোমাদের আমলসহ (আল্লাহর কাছে) পেশ করা হবে। অতঃপর "অণু পরিমাণ মঙ্গল যে করেছে, সে তা দেখতে পাবে এবং অণু পরিমাণ অমঙ্গল যে করেছে, তাও সে দেখতে পাবে।" (শাফিঈ)
کتاب الرقاق
عَنْ عَمْروٍ ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطَبَ يَوْمًا فَقَالَ فِي خُطْبَتِهِ : " أَلَا إِنَّ الدُّنْيَا عَرَضٌ حَاضِرٌ يَأْكُلُ مِنْهَا الْبَرُّ وَالْفَاجِرُ ، أَلَا وَإِنَّ الْآخِرَةَ أَجَلٌ صَادِقٌ يَقْضِي فِيهَا مَلِكٌ قَادِرٌ ، أَلَا وَإِنَّ الْخَيْرَ كُلَّهُ بِحَذَافِيرِهِ فِي الْجَنَّةِ ، أَلَا وَإِنَّ الشَّرَّ كُلَّهُ بِحَذَافِيرِهِ فِي النَّارِ ، أَلَا فَاعْمَلُوا وَأَنْتُمْ مِنَ اللَّهِ عَلَى حَذَرٍ ، وَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ مَعْرُوضُونَ عَلَى أَعْمَالِكُمْ ، {فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ ، وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ} (رواه الشافعى)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

দুনিয়ার যিন্দেগীর উপায়-উপকরণ আল্লাহ তা'আলা সবাইকে দান করেছেন। দুনিয়ার রিযক ও ধন-দৌলত বণ্টন করার ক্ষেত্রে তিনি ঈমান ও আনুগত্যের শর্ত আরোপ করেননি। আল্লাহদ্রোহী ব্যক্তিগণও আল্লাহর দুনিয়ার যারতীয় উপায়-উপকরণ ভোগ করে আল্লাহ তাদেরকে কোনরূপ নিয়ামাত থেকে বঞ্চিত করেননি।

আখিরাতের যিন্দেগীর ব্যাপার আমাদের দুনিয়ার যিন্দেগীর সম্পূর্ণ বিপরীত। আখিরাতের যিন্দেগীর আরাম-আয়েশ একমাত্র তারাই ভোগ করবে যারা দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করে জীবনে যাবতীয় কাজ করে থাকে। আখিরাতের যিন্দেগীর ফসল একমাত্র তারা কাটবে যারা দুনিয়ায় ক্ষণস্থায়ী আরাম এবং যাবতীয় প্রলোভন পরিহার করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে থাকে।

দুনিয়ার যিন্দেগীর সাথে আখিরাতের যিন্দেগী অতুলনীয়। দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিও আখিরাতের সাধারণ আরাম-আয়েশের সমতুল্য আরামও দুনিয়াতে ভোগ করতে অক্ষম। আখিরাতের জীবন আমাদের চোখের অন্তরালে থাকার কারণে আমরা তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে অক্ষম। দুনিয়ার অস্থায়ী উপায়-উপকরণ চোখের সামনে থাকার কারণে সেগুলো হাসিল করার প্রতি আমরা খুব বেশি গুরুত্ব আরোপ করি আমাদের যাবতীয় যোগ্যতা ও শ্রম-মেহনত তাতে ব্যয়িত হয়। আখিরাতের স্থায়ী আরাম-আয়েশ হাসিলের জন্য একটু সময়ও আমাদের অবশিষ্ট থাকে না। এটা মানুষের চরম নির্বুদ্ধিতা। মানুষ যত চেষ্টা করুক না কেন, বেহেশেতের সমতুল্য আরাম সে দুনিয়াতে পেতে পারে না। অধিকন্তু দুনিয়া হাসিল করার প্রতিযোগিতায় যদি আখিরাত বিনষ্ট হয়ে যায়, তাহলে দোযখের নির্মম আগুনের আযাব ভোগ করতে হবে। তাই নবী করীম ﷺ আখিরাতের জীবনের কামিয়াবীর জন্য দুনিয়া আখিরাতের প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করেছেন। দুনিয়ার প্রলোভন থেকে বাঁচার জন্য তিনি আল্লাহকে স্মরণ করে যাবতীয় কাজ সম্পাদন করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। কারণ দুনিয়ার ক্ষুদ্রতম কাজও আখিরাতের মীযানে ওযন হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান