মা'আরিফুল হাদীস
রিকাক অধ্যায়
হাদীস নং: ৩
রিকাক অধ্যায়
কবর জান্নাতের বাগান কিংবা দোযখের গর্ত
৩. হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ নামাযের জন্য (ঘর থেকে) বের হলেন এবং লোকজনকে হাসি-ঠাট্টা করতে দেখে বললেন, আমি তোমাদেরকে বলছি, যদি তোমরা স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করতে, তাহলে আমি যা দেখেছি তা তোমাদেরকে (এই গাফলতিতে) মশগুল করত না।
তাই তোমরা স্বাদ বিনষ্টকারী (উপভোগস্পৃহা অপহরণকারী) মৃত্যুকে অধিক স্মরণ কর। এমন কোন দিন নেই যখন কবর এ কথা না বলে যে, আমি মুসাফিরের গৃহ, আমি নিঃসঙ্গ থাকার গৃহ, আমি মাটির গৃহ, আমি কীটের গৃহ। যখন কোন মু'মিন বান্দাকে দাফন করা হয়, তখন কবর তাকে বলে 'আহলান ওয়া সাহলান' বা স্বাগতম। জেনে রেখো, যারা আমার পিঠে বিচরণ করত, তদের মধ্যে তুমিই আমার কাছে বেশি প্রিয় ছিলে। তোমাকে আমার কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। তুমি আমার কাছে এসেছ, তাই দেখবে তোমার সাথে আমি কি আচরণ করি। নবী ﷺ বলেনঃ অতঃপর কবর তার জন্য তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রসারিত হয় এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে এক দরজা খোলা হয়। যখন বদকার এবং কাফির ব্যক্তিকে দাফন করা হয়, তখন কবর তাকে স্বাগত জানায় না, বরং তাকে বলে জেনে রেখো, যারা আমার পিঠে বিচরণ করত, তাদের মধ্যে তুমি আমার কাছে বেশি ঘৃণ্য ছিলে। তোমাকে আমার কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। তুমি আমার কাছে চলে এসেছ। তুমি এখন দেখবে তোমার সাথে আমি কি আচরণ করি। নবী ﷺ বলেন: অতঃপর কবর তার জন্যে এমনভাবে সংকীর্ণ হয়ে যাবে যে, তার একদিকের পাঁজর অপরদিকে চলে যাবে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল ﷺ তাঁর এক হাতের আংগুলের ফাঁকের মধ্যে অন্য হাতের আংগুল প্রবেশ করিয়ে তা বললেন। নবী ﷺ আরো বললেনঃ তার উপর '৭০'টি 'তিন্নীন'১ নিয়োজিত করা হবে, যদি তার একটিও দুনিয়ায় শ্বাস ফেলতো, তা হলে দুনিয়া যত দিন থাকবে ততদিন তাতে কোন উদ্ভিদ জন্মাত না। হাশরের দিন হিসেবের জন্য আহূত না করা পর্যন্ত এসব সাপ তাকে কাটবে এবং ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকবে। আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, নবী ﷺ আরো বলেন: নিশ্চয়ই কবর জান্নাতের বাগানগুলোর একটি বাগান কিংবা দোযখের গর্তসমূহের একটি গর্ত। (তিরমিযী)
টিকা ১. ইলিয়াস এন্টনী ইলিয়াস তাঁর আরবী-ইংরেজী অভিধানে তিন্নীনের তরজমা-ড্রাগন করেছেন। অনলবর্ষী পাখাযুক্ত এক প্রকার প্রাণী।
তাই তোমরা স্বাদ বিনষ্টকারী (উপভোগস্পৃহা অপহরণকারী) মৃত্যুকে অধিক স্মরণ কর। এমন কোন দিন নেই যখন কবর এ কথা না বলে যে, আমি মুসাফিরের গৃহ, আমি নিঃসঙ্গ থাকার গৃহ, আমি মাটির গৃহ, আমি কীটের গৃহ। যখন কোন মু'মিন বান্দাকে দাফন করা হয়, তখন কবর তাকে বলে 'আহলান ওয়া সাহলান' বা স্বাগতম। জেনে রেখো, যারা আমার পিঠে বিচরণ করত, তদের মধ্যে তুমিই আমার কাছে বেশি প্রিয় ছিলে। তোমাকে আমার কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। তুমি আমার কাছে এসেছ, তাই দেখবে তোমার সাথে আমি কি আচরণ করি। নবী ﷺ বলেনঃ অতঃপর কবর তার জন্য তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রসারিত হয় এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে এক দরজা খোলা হয়। যখন বদকার এবং কাফির ব্যক্তিকে দাফন করা হয়, তখন কবর তাকে স্বাগত জানায় না, বরং তাকে বলে জেনে রেখো, যারা আমার পিঠে বিচরণ করত, তাদের মধ্যে তুমি আমার কাছে বেশি ঘৃণ্য ছিলে। তোমাকে আমার কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। তুমি আমার কাছে চলে এসেছ। তুমি এখন দেখবে তোমার সাথে আমি কি আচরণ করি। নবী ﷺ বলেন: অতঃপর কবর তার জন্যে এমনভাবে সংকীর্ণ হয়ে যাবে যে, তার একদিকের পাঁজর অপরদিকে চলে যাবে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল ﷺ তাঁর এক হাতের আংগুলের ফাঁকের মধ্যে অন্য হাতের আংগুল প্রবেশ করিয়ে তা বললেন। নবী ﷺ আরো বললেনঃ তার উপর '৭০'টি 'তিন্নীন'১ নিয়োজিত করা হবে, যদি তার একটিও দুনিয়ায় শ্বাস ফেলতো, তা হলে দুনিয়া যত দিন থাকবে ততদিন তাতে কোন উদ্ভিদ জন্মাত না। হাশরের দিন হিসেবের জন্য আহূত না করা পর্যন্ত এসব সাপ তাকে কাটবে এবং ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকবে। আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, নবী ﷺ আরো বলেন: নিশ্চয়ই কবর জান্নাতের বাগানগুলোর একটি বাগান কিংবা দোযখের গর্তসমূহের একটি গর্ত। (তিরমিযী)
টিকা ১. ইলিয়াস এন্টনী ইলিয়াস তাঁর আরবী-ইংরেজী অভিধানে তিন্নীনের তরজমা-ড্রাগন করেছেন। অনলবর্ষী পাখাযুক্ত এক প্রকার প্রাণী।
کتاب الرقاق
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ، قَالَ : دَخَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُصَلاَّهُ فَرَأَى نَاسًا كَأَنَّهُمْ يَكْتَشِرُونَ قَالَ : أَمَا إِنَّكُمْ لَوْ أَكْثَرْتُمْ ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ لَشَغَلَكُمْ عَمَّا أَرَى ، فَأَكْثِرُوا مِنْ ذِكْرِ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ الْمَوْتِ ، فَإِنَّهُ لَمْ يَأْتِ عَلَى القَبْرِ يَوْمٌ إِلاَّ تَكَلَّمَ فِيهِ فَيَقُولُ : أَنَا بَيْتُ الغُرْبَةِ وَأَنَا بَيْتُ الوَحْدَةِ ، وَأَنَا بَيْتُ التُّرَابِ ، وَأَنَا بَيْتُ الدُّودِ ، فَإِذَا دُفِنَ العَبْدُ الْمُؤْمِنُ قَالَ لَهُ القَبْرُ : مَرْحَبًا وَأَهْلاً أَمَا إِنْ كُنْتَ لأَحَبَّ مَنْ يَمْشِي عَلَى ظَهْرِي إِلَيَّ ، فَإِذْ وُلِّيتُكَ اليَوْمَ وَصِرْتَ إِلَيَّ فَسَتَرَى صَنِيعِيَ بِكَ قَالَ : فَيَتَّسِعُ لَهُ مَدَّ بَصَرِهِ وَيُفْتَحُ لَهُ بَابٌ إِلَى الجَنَّةِ . وَإِذَا دُفِنَ العَبْدُ الفَاجِرُ أَوِ الكَافِرُ قَالَ لَهُ القَبْرُ : لاَ مَرْحَبًا وَلاَ أَهْلاً أَمَا إِنْ كُنْتَ لأَبْغَضَ مَنْ يَمْشِي عَلَى ظَهْرِي إِلَيَّ ، فَإِذْ وُلِّيتُكَ اليَوْمَ وَصِرْتَ إِلَيَّ فَسَتَرَى صَنِيعِيَ بِكَ قَالَ : فَيَلْتَئِمُ عَلَيْهِ حَتَّى تَلْتَقِيَ عَلَيْهِ وَتَخْتَلِفَ أَضْلاَعُهُ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : بِأَصَابِعِهِ ، فَأَدْخَلَ بَعْضَهَا فِي جَوْفِ بَعْضٍ قَالَ : وَيُقَيِّضُ اللَّهُ لَهُ سَبْعِينَ تِنِّينًا لَوْ أَنْ وَاحِدًا مِنْهَا نَفَخَ فِي الأَرْضِ مَا أَنْبَتَتْ شَيْئًا مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا فَيَنْهَشْنَهُ وَيَخْدِشْنَهُ حَتَّى يُفْضَى بِهِ إِلَى الْحِسَابِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّمَا القَبْرُ رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الجَنَّةِ أَوْ حُفْرَةٌ مِنْ حُفَرِ النَّارِ . (رواه الترمذى)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
দুনিয়ার যিন্দেগীর সাথে আখিরাতের যিন্দেগী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সৎকর্মশীলদের প্রতি আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা অত্যাধিক মেহেরবানী প্রদর্শন করেন এবং তাদের পরিণাম ভাল হয়ে থাকে। যিনি দুনিয়ার জীবনে হালাল-হারাম, ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ পরখ করে চলেন, আল্লাহর হুকুমের কাছে সর্বদা মাথা নত করেন, জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মেনে চলেন, রাসূলের প্রচলিত তরীকা ও আইনকে দুনিয়ার যাবতীয় তরীকা ও আইনের উপর স্থান দেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতাকারীদের মনে প্রাণে ঘৃণা করেন, আল্লাহর যমীনে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখলে চঞ্চল হয়ে ওঠেন এবং নিজের ধন-দৌলত ও প্রাণ দিয়ে বাতিলের মুকাবিলা করেন-তিনি আল্লাহর মাহবুব বান্দা। আল্লাহ দুনিয়ার যিন্দেগীতে এ ধরনের ঈমানদার ব্যক্তির বন্ধু ও অভিভাবক এবং আখিরাতের যিন্দেগীতে তিনি তার সুহৃদ ও মুহাফিয। মৃত্যুকালেও তিনি ঈমানদার ব্যক্তিকে শয়তানের কঠিন আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন এবং ফেরেশতার মাধ্যমে অভয়বাণী দেন; আলমে বরযখেও মু'মিন ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা হয়। কবর মৃত ব্যক্তিকে স্বাগতম জানায়। আল্লাহর মেহেরবানীর ফলে মু'মিন ব্যক্তির জন্য কবর দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত হয়। শুধু তাই নয়, শান্তি ও প্রাচুর্য পরিপূর্ণ জান্নাতের সাথে আলমে বরযখে শায়িত মু'মিনদের বাসস্থানকে সংযুক্ত করে দেয়া হয়।
অপরপক্ষে দুনিয়ার জীবনে যে আল্লাহর উপর বিশ্বাস করেনি, নবী করীম ﷺ-কে একমাত্র পথ প্রদর্শক, আইন রচয়িতা এবং চূড়ান্ত ফয়সালাকারী হিসেবে গ্রহণ করেনি, নিজের ও পরিবার-পরিজনের স্বার্থের জন্য ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে কাজ করেছে বা ফিসক ও ফুজুরীর যিন্দেগী যাপন করেছে, সে মৃত্যুর কঠিন মুহূর্তে আল্লাহর দয়া থেকে বঞ্চিত থাকে। মৃত্যুকালে যাবতীয় মন্দ তাকে স্পর্শ করে, মৃত্যুর পরও সে কোনরূপ আরামের মুখ দেখে না। ফেরেশতারা তার সঙ্গে কঠিন আচরণ করে থাকেন। কবর তার জন্য এমন সংকীর্ণ হয় যে, তার এক পাঁজর অপর পাঁজরে ঢুকে যায়। অজগর সাপ তাকে কিয়ামত অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দংশন করতে থাকে। এ জন্য নবী করীম ﷺ কবরকে জান্নাতের একটি বাগান কিংবা দোযখের একটি গর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দুনিয়ার জীবনে যে অপবিত্র জীবন-যাপন করল, যে অপবিত্র খাদ্য খেল, বরযখের জীবনে সে শান্তি লাভ করতে পারে না। যাবতীয় অন্যায় ও অপবিত্রতার বিষ দংশনে সে ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকবে। যারা ইয়াওমুল আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসী, যারা আল্লাহর সাথে মুলাকাতের প্রত্যাশী, তারা দুনিয়ার জীবনে অপবিত্রতা পরিহার করে চলেন এবং বরযখের জীবনে জান্নাতের শান্তি লাভ করেন।
অপরপক্ষে দুনিয়ার জীবনে যে আল্লাহর উপর বিশ্বাস করেনি, নবী করীম ﷺ-কে একমাত্র পথ প্রদর্শক, আইন রচয়িতা এবং চূড়ান্ত ফয়সালাকারী হিসেবে গ্রহণ করেনি, নিজের ও পরিবার-পরিজনের স্বার্থের জন্য ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে কাজ করেছে বা ফিসক ও ফুজুরীর যিন্দেগী যাপন করেছে, সে মৃত্যুর কঠিন মুহূর্তে আল্লাহর দয়া থেকে বঞ্চিত থাকে। মৃত্যুকালে যাবতীয় মন্দ তাকে স্পর্শ করে, মৃত্যুর পরও সে কোনরূপ আরামের মুখ দেখে না। ফেরেশতারা তার সঙ্গে কঠিন আচরণ করে থাকেন। কবর তার জন্য এমন সংকীর্ণ হয় যে, তার এক পাঁজর অপর পাঁজরে ঢুকে যায়। অজগর সাপ তাকে কিয়ামত অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দংশন করতে থাকে। এ জন্য নবী করীম ﷺ কবরকে জান্নাতের একটি বাগান কিংবা দোযখের একটি গর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দুনিয়ার জীবনে যে অপবিত্র জীবন-যাপন করল, যে অপবিত্র খাদ্য খেল, বরযখের জীবনে সে শান্তি লাভ করতে পারে না। যাবতীয় অন্যায় ও অপবিত্রতার বিষ দংশনে সে ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকবে। যারা ইয়াওমুল আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসী, যারা আল্লাহর সাথে মুলাকাতের প্রত্যাশী, তারা দুনিয়ার জীবনে অপবিত্রতা পরিহার করে চলেন এবং বরযখের জীবনে জান্নাতের শান্তি লাভ করেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)