মা'আরিফুল হাদীস

রিকাক অধ্যায়

হাদীস নং:
রিকাক অধ্যায়
নবী করীম ﷺ তাহাজ্জুদে বলতেন, প্রথম শিংগা-ধ্বনি আসন্ন, দ্বিতীয় শিংগা-ধ্বনি তাকে অনুসরণ করছে
৪. হযরত উবাই ইবন কা'আব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর নবী ﷺ উঠতেন এবং বলতেন। হে মানুষ! আল্লাহকে স্মরণ কর। হে মানুষ! আল্লাহকে স্মরণ কর। রাজিফাত বা প্রথম শিংগা-ধ্বনি আসন্ন এবং রাদিফাত বা দ্বিতীয় শিংগা-ধ্বনি তা অনুসরণ করছে। এসব কিছু নিয়ে মৃত্যু হাযির। এসব কিছু নিয়ে মৃত্যু হাযির। (তিরমিযী)
کتاب الرقاق
عَنِ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ ، قَالَ : كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا ذَهَبَ ثُلُثَا اللَّيْلِ قَامَ فَقَالَ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا اللَّهَ اذْكُرُوا اللَّهَ جَاءَتِ الرَّاجِفَةُ تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ جَاءَ الْمَوْتُ بِمَا فِيهِ جَاءَ الْمَوْتُ بِمَا فِيهِ . (رواه الترمذى)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী করীম ﷺ-এর অভ্যাস ছিল রাতের প্রথমাংশে এশার নামাযের পর বিশ্রাম নিতেন। অতঃপর তিনি বিছানা থেকে উঠে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হতেন। তিনি কখনো রাতের প্রায় তিন ভাগের দু'ভাগ, কখনো অর্ধাংশ আবার কখনো রাতের তিন ভাগের একভাগ সময় আল্লাহর ইবাদত করতেন। সূরা মুযযাম্মিলে নবী করীম ﷺ-এর রাতের এ অভ্যাস সম্পর্কে বলা হয়েছে:

إِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدْنَى مِنْ ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهُ وَثُلُثَهُ

"অবশ্যই আপনার রব্ব অবগত আছেন যে, আপনি কখনো রাতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ, আবার কখনো এক-তৃতীয়াংশ ইবাদতের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকেন। (সূরা মুয্যাম্মিল: ২০)

বস্তুত নবী করীম ﷺ বিশ্বাসীদেরকে রাতের শেষাংশে ইবাদতের জন্যে জাগ্রত করতেন। ঘুমের গাফলতি দূর করার জন্য আমাদের প্রিয় নবী ﷺ তাঁর অনুসারীদেরকে কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতেন। আল্লাহ্ তা'আলা 'সূরা নাযিয়াতে' (৭৯ নং সূরা) কিয়ামতের ভয়াবহতা বর্ণনা করার জন্য যে দু'টো শব্দ 'রাজিফাত' ও 'রাদিফাত' ব্যবহার করেছেন তাঁর নবীও সে দু'টো শব্দ ব্যবহার করে মানুষকে সাবধান করতেন। রাজিফাত বা প্রথম শিংগা-ধ্বনি দ্বারা আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন দুনিয়ার যাবতীয় জিনিস ধ্বংস করে দিবেন। রাদিফাত বা দ্বিতীয় শিংগা-ধ্বনি দ্বারা তিনি সকল মৃতকে জীবিত করবেন। তখন মানুষ ভয়ে কাঁপতে থাকবে এবং তাদের দৃষ্টি ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। সূরা যুমারে কিয়ামতের এ দুই অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ

وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ

"যে দিন শিংগার ফুৎকার দেয়া হবে, (ফলে) আসমান ও যমীনের সবাই বেহুঁশ হয়ে পড়বে; তবে তারা নয়, যাদের আল্লাহ রক্ষা করার ইচ্ছা করবেন। অতঃপর দ্বিতীয়বার শিংগার ফুৎকার দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা (সব প্রাণী) দাঁড়িয়ে দেখতে থাকবে।"
(সূরা যুমার: ৬৮)

কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষ অনেক ক্ষেত্রে উদাসীন থাকে এবং মনে করে যে, তা নিকটবর্তী নয়। কিয়ামত সম্পর্কে শয়তান এভাবে মানুষকে গাফিল রাখে যে, হযরত আদম (আ) থেকেই তো দুনিয়ার মানুষ কিয়ামতের কথা শুনে মাসছে। আসলে কিয়ামত হলেও অতিশীঘ্র হবে না। দূরবর্তী কোন এক সময়ে তা অনুষ্ঠিত হবে। নবী ﷺ এ ভুল ধারণা নিরসনের জন্য কিয়ামতের ভয়াবহতার সাথে সাথে মানুষের মৃত্যুর কথাও উল্লেখ করেছেন। বস্তুত মৃত্যু কিয়ামতের প্রথম মনযিল। যার মৃত্যু হ'ল তার কিয়ামত শুরু হল। মৃত্যুর পূর্বে যে আমল করেছে, সে আমলের ভিত্তিতে কিয়ামতের দিন তার ফয়সালা হবে। সুতরাং সময় ও সুযোগ থাকতে মৃত্যুর আগেই পরকালের পাথেয় সঞ্চয় করতে হবে, আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে। এই জন্য নবী করীম ﷺ শেষ রাতে তাঁর সাহাবীদেরকে আল্লাহ তা'আলার ইবাদতে মশগুল হওয়ার জন্য আহ্বান করতেন। মানুষ যাতে ঘুমের আকর্ষণ কাটিয়ে উঠতে পারে, তার জন্য তিনি কিয়ামতের ভয়াবহতা ও মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দিতেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান