মা'আরিফুল হাদীস

ঈমান অধ্যায়

হাদীস নং: ১২৯
ঈমান অধ্যায়
দোযখ ও তার শাস্তি

যেরূপ জান্নাত সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও রাসুল (ﷺ)-এর হাদীস থেকে জানা যায় যে, জান্নাতের মধ্যে এমন উন্নতমানের আরাম আয়েশ রয়েছে যার সাথে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আরাম-আয়েশের সাথেও তুলনা করা যায় না এবং যা অমর ও চিরস্থায়ী। সেরূপ কুরআন ও হাদীসে দোযখ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা থেকে জানা যায় যে, দোযখের দুঃখ-কষ্ট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মুসীবতের সঙ্গেও তুলনা চলে না।

বরং ঘটনা হলো যে, কুরআন ও হাদীসের বর্ণনার থেকে জান্নাতের আরাম আয়েশ এবং দোযখের দুঃখ কষ্টের যে ধারণা আমরা লাভ করি তা জান্নাত এবং জাহান্নামের বাস্তব অবস্থা থেকে অনেক কম। কেননা, আমাদের দুনিয়ার ভাষা-শব্দাবলী দুনিয়ার জিনিসকে বুঝানোর জন্যই ব্যবহার করা হয়। যেমন আপেল বা আঙ্গুর দ্বারা আমাদের দৃষ্টি এমন আপেল বা আঙ্গুরের দিকে ধাবিত হয় যে আপেল বা আঙ্গুর আমরা দেখেছি বা খেয়েছি। কিন্তু আমরা জান্নাতের আপেল বা আঙ্গুরের ধারণা কি করে করতে পারি যার মান এবং গুণ আমাদের পৃথিবীর ফল থেকে শত সহস্রগুণ বেশী হবে যার কোন নমুনা পৃথিবীতে নেই। অনুরূপভাবে সাপ এবং বিচ্ছু শব্দের দ্বারা আমাদের মন ঐ ধরনের সাপ বিচ্ছুর দিকে ধাবিত হয় যা আমরা দুনিয়াতে দেখেছি। কিন্তু দুনিয়ার সাপ-বিচ্ছুর চেয়ে হাজার গুণ ভয়ঙ্কর দোযখের সাপ-বিচ্ছু সম্পর্কে আমরা কি করে আন্দাজ করতে পারি যার কোন নমুনা আমরা দেখিনি।

বস্তুতঃ কুরআন এবং হাদীসের শব্দে জান্নাত ও জাহান্নামের জিনিসের আসল হাকীকত এবং অবস্থা পরিপূর্ণভাবে বুঝতে সক্ষম হই। সেখানে পৌছার পরেই আমরা জানতে পারবো যে, জান্নাতে আরাম আয়েশ সম্পর্কে আমরা দুনিয়াতে যা জেনেছিলাম তার চেয়েও হাজার গুণ বেশী আরাম আয়েশ জান্নাতে রয়েছে। দোযখের দুঃখ-কষ্ট সম্পর্কে আমরা যা জেনেছিলাম তা থেকে বাস্তব অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর।

যেরূপ পূর্বে আমরা আলোচনা করেছি যে জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে যে বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে তার দ্বারা জান্নাতে ও জাহান্নামের বিস্তারিত চিত্র অঙ্কন করাটার উদ্দেশ্য নয় বরং আল্লাহর বান্দাহদের মনে জান্নাতের লোভ এবং দোযখের ভয় সৃষ্টি করে মানুষকে জান্নাতের দিকে ধাবিত করা এবং দোযখ থেকে দূরে রাখাই উদ্দেশ্য। তাই জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে হাদীস পাঠকালে এ উদ্দেশ্য সামনে রাখা বাঞ্ছনীয়।

দুনিয়ার আগুন দোযখের আগুনের সত্তর অংশের এক অংশ
১২৯. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ তোমাদের (এই দুনিয়ার) আগুন দোযখের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ইহা (দুনিয়ার আগুন) কি যথেষ্ট ছিলনা? তিনি বললেন, দোযখের উপর ৬৯ ভাগ আগুন ঢালা হয়েছে এবং তার প্রত্যেক অংশের তাপ দুনিয়ার তাপের সমান। -বুখারী, মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ»، قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً قَالَ: «فُضِّلَتْ عَلَيْهِنَّ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا» (رواه البخارى ومسلم واللفظ البخارى)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আমাদের পৃথিবীর আগুনের প্রকার এবং মাত্রার বিভিন্নতা রয়েছে যেমন- কাঠের আগুন, ঘাসের আগুনের থেকে তেজ হয়। পাথর এবং কয়লার আগুনের উত্তাপ কাঠের আগুনের চেয়ে অধিক। কোন কোন সময় কোন আগুনের তীব্রতা হয় এ থেকে আমরা সহজে অনুমান বুঝতে পারি যে, আগুনের তীব্রতা এবং উত্তাপের মধ্যে তারতম্য হতে পারে। হাদীসে বর্ণিত জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চেয়ে অনেকগুণ বেশী দাহিকা সম্পন্ন।

হাদীসে একথাও বর্ণিত হয়েছে যে, জনৈক সাহাবী বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! দুনিয়ার আগুনই যথেষ্ট ছিল। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তার কোন স্বতন্ত্র উত্তর প্রদান করেন নি এবং তার প্রথম কথা বিশদভাবে পুনরায় বর্ণনা করলেন। সম্ভবত তিনি এ উপদেশ দিতে চেয়েছেন যে, আল্লাহর 'জালাল' এবং 'কহর'কে ভয় করা উচিত এবং দোযখের আগুন থেকে বাঁচার জন্য চিন্তা-ভাবনা করা আমাদের কর্তব্য। আল্লাহ তা'আলার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কোনরূপ প্রশ্ন করা অনুচিত। তিনি যা কিছু করেন এবং কারবেন তা সবই ঠিক।

(বিঃদ্রঃ হাদীসে সত্তর সংখ্যাটি নিছক সংখ্যা না বুঝিয়ে অধিক বুঝানোর জন্যও ব্যবহৃত হতে পারে। কারণ আরবী পরিভাষায় এরূপ ক্ষেত্রে সাধারণত অধিক বুঝানোর জন্য সত্তর ও এ জাতীয় সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। এমতাবস্থায় হাদীসে ব্যবহৃত সত্তর সংখ্যাটির অর্থ হবে, জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ ও শক্তি হবে দুনিয়ার আগুনের অনেক অনেক গুণ বেশী। দুনিয়ার কোন জিনিসের সাথে জান্নাত ও জাহান্নামের তুলনা হতে পারে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান