মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)
৭. নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৮৬
নামাযের অধ্যায়
(৮) অনুচ্ছেদঃ নিজ নামায বিনষ্টকারী হাদীস প্রসঙ্গে
(৪৮৬) রেফায়া ইবন্ রাফে আয্যুরকী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলের একজন সাহাবী ছিলেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) মসজিদে বসা ছিলেন, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে রাসূল (ﷺ)-এর পাশে নামায আদায় করেন। তারপর রাসূল (ﷺ)-এর নিকটে আসল তখন রাসূল (ﷺ) তাঁকে বললেন, তুমি পুনরায় নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায আদায় করি নি। (অর্থাৎ তোমার নামায আদায় করা সঠিক হয় নি।) তিনি বলেন, লোকটি গিয়ে পূর্বের মতই নামায আদায় করল। অতঃপর রাসূল (ﷺ)-এর কাছে ফিরে আসল তখন তিনি (রাসূল, বললেন গিয়ে পুনর্বার আদায় কর। কেননা তুমি নামায আদায় কর নি। তখন লোকটি বলল। হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! কিভাবে নামায পড়ব আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন রাসুল (ﷺ) বললেন, কিবলার দিকে মুখ করে তাকবীরে তাহরীমা বলবে, তারপর সূরা ফাতিহা পড়বে, তারপর কুরআনের যেখানে থেকে চাও সেখান থেকে পড়বে। যখন রুকু করবে তখন তোমার হাতের তালু দু'হাঁটুতে রাখবে এবং পিঠ সোজা রাখবে, প্রশান্তির সাথে রুকু করবে। রুকু থেকে যখন তোমার মাথা উঠাবে তখন ঠিকভাবে দাঁড়াবে। সমস্ত হাড় যথাস্থানে না যাওয়া পর্যন্ত। আর যখন সিজদা করবে তখন প্রশান্তির সাথে সিজদা করবে, আর যখন সিজদা থেকে তোমার মাথা উঠাবে তখন বাম রানের ওপর বসবে। প্রত্যেক রাক'আতে ও সিজদায় এরূপ করবে।
(তাঁর থেকে দ্বিতীয় বর্ণনায় আছে) তিনি বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ) সাথে মসজিদে ছিলাম, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে মসজিদের এক কোণায় নামায আদায় করছিল, তখন রাসূল (ﷺ) তাঁর দিকে দৃষ্টি দিলেন। নামায শেষে লোকটি রাসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে সালাম দিল। তিনি তার সালামের উত্তর দিলেন এবং বললেন, তুমি ফিরে গিয়ে নামায আদায় কর। কেননা তুমি নামায আদায় কর নি। এভাবে দুই অথবা তিনবার বললেন, তৃতীয় অথবা চতুর্থবারে লোকটি তাঁকে (রাসূল (ﷺ)-কে) বলল, সে মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য বিধানসহ প্রেরণ করেছেন। আমি সাধ্যমত সঠিকভাবে নামায পড়ার চেষ্টা করেছি। সুতরাং আমাকে শিখিয়ে দিন এবং দেখিয়ে দিন। তখন নবী (ﷺ) তাকে বললেন, যখন নামায পড়তে ইচ্ছা করবে তখন ভাল করে ওযু, করবে, তারপর কিবলার দিকে মুখ করবে, অতঃপর তাকবীর (তাহরীমা) বলবে, তারপর কিরাত পড়বে। তারপর রুকু করবে প্রশান্তি সহকারে। অতঃপর রুকু থেকে উঠে প্রশান্তির সাথে দাঁড়াবে, তারপর সিজদা করবে এবং তা প্রশান্তির সাথে করবে। তারপর সিজদা থেকে উঠে প্রশান্তির সাথে বসবে, তারপর পুনরায় প্রশান্তির সাথে সিজদা আদায়-করবে। আর যদি এখান থেকে কোন কিছু বাদ দাও তাহলে তা তোমার নামায হতে বাদ যাবে।
(আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবন মাজাহ।)
(তাঁর থেকে দ্বিতীয় বর্ণনায় আছে) তিনি বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ) সাথে মসজিদে ছিলাম, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে মসজিদের এক কোণায় নামায আদায় করছিল, তখন রাসূল (ﷺ) তাঁর দিকে দৃষ্টি দিলেন। নামায শেষে লোকটি রাসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে সালাম দিল। তিনি তার সালামের উত্তর দিলেন এবং বললেন, তুমি ফিরে গিয়ে নামায আদায় কর। কেননা তুমি নামায আদায় কর নি। এভাবে দুই অথবা তিনবার বললেন, তৃতীয় অথবা চতুর্থবারে লোকটি তাঁকে (রাসূল (ﷺ)-কে) বলল, সে মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য বিধানসহ প্রেরণ করেছেন। আমি সাধ্যমত সঠিকভাবে নামায পড়ার চেষ্টা করেছি। সুতরাং আমাকে শিখিয়ে দিন এবং দেখিয়ে দিন। তখন নবী (ﷺ) তাকে বললেন, যখন নামায পড়তে ইচ্ছা করবে তখন ভাল করে ওযু, করবে, তারপর কিবলার দিকে মুখ করবে, অতঃপর তাকবীর (তাহরীমা) বলবে, তারপর কিরাত পড়বে। তারপর রুকু করবে প্রশান্তি সহকারে। অতঃপর রুকু থেকে উঠে প্রশান্তির সাথে দাঁড়াবে, তারপর সিজদা করবে এবং তা প্রশান্তির সাথে করবে। তারপর সিজদা থেকে উঠে প্রশান্তির সাথে বসবে, তারপর পুনরায় প্রশান্তির সাথে সিজদা আদায়-করবে। আর যদি এখান থেকে কোন কিছু বাদ দাও তাহলে তা তোমার নামায হতে বাদ যাবে।
(আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবন মাজাহ।)
كتاب الصلاة
(8) فصل من فى حديث المسى صلاته
(486) عن رفاعة بن رافع الزُّرقىَّ رضى الله عنه وكان من أصحاب النَّبىِّ صلى الله عليه وسلم قال جاء رجل ورسول الله صلى الله عليه وسلم جالس فى المسجد فصلَّي قريبًا منه, ثمَّ انصرف إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم, فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم أعد صلاتك فإنَّك لمّ تصلِّ, قال فرجع فصلَّى كنحو مَّما صلَّى, ثمَّ انصرف إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال له أعد صلاتك فإنك لم تصلَّ, فقال يا رسول الله علَّمني كيف أصنع قال إذا استقبلت القبلة (1) فكبِّر ثمَّ اقرأ بأم القرآن, ثم اقرأ بما شئت, فإذا ركعت فاجعل راحتيك (2) على ركبتيك وامدد ظهرك (3) ومكن لركوعك (4) فإذا رفعت رأسك فأقم صلبك حتَّ ترجع العظام إلى مفاصلها, (5) وإذا سجدت فمكِّن لسجودك (6) فإذا رفعت رأسك فاجلس على فخذك اليسرى ثم اصنع ذلك فى كلِّ ركعةٍ وسجدةٍ
(وعنه من طريق ثانٍ) (7) قال كنَّا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فى المسجد فدخل رجل فصلَّى فى ناحية المسجد, فجعل رسول الله صلى الله عليه وسلم يرمقه (8) ثمَّ جاء فسلَّم فردَّ عليه وقال ارجع فصلِّ فإنَّك لم تصل, قال مرَّتين أو ثلاثًا, فقال له فى الثَّالثة أو فى الرَّابعة والَّذى بعتك بالحقَّ لقد أجهدت نفسى (9) فعلمنى وأرنى؟ فقال له النَّبى صلى الله عليه وسلم إذا أردت أن تصلى فتوضَّأ فأحسن وضوءك, ثمَّ استقبل القبلة, ثمَّ كبِّر, ثمَّ أقرأ, ثمَّ اركع حتَّى تطمئن راكعًا, ثمَّ ارفع حتَّى تطمئن قائمًا, ثمَّ اسجد حتَّى تطمئنَّ ساجدًا, ثمَّ ارفع حتَّى تطمئن جالسًا, ثمَّ اسجد حتَّى تطمئن ساجدًا, ثمَّ قم فإذا أتممت صلاتك على هذا فقد أتممتها, وما انتقصت من هذا من شيء فإنَّما تنقصه من صلاتك
(وعنه من طريق ثانٍ) (7) قال كنَّا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فى المسجد فدخل رجل فصلَّى فى ناحية المسجد, فجعل رسول الله صلى الله عليه وسلم يرمقه (8) ثمَّ جاء فسلَّم فردَّ عليه وقال ارجع فصلِّ فإنَّك لم تصل, قال مرَّتين أو ثلاثًا, فقال له فى الثَّالثة أو فى الرَّابعة والَّذى بعتك بالحقَّ لقد أجهدت نفسى (9) فعلمنى وأرنى؟ فقال له النَّبى صلى الله عليه وسلم إذا أردت أن تصلى فتوضَّأ فأحسن وضوءك, ثمَّ استقبل القبلة, ثمَّ كبِّر, ثمَّ أقرأ, ثمَّ اركع حتَّى تطمئن راكعًا, ثمَّ ارفع حتَّى تطمئن قائمًا, ثمَّ اسجد حتَّى تطمئنَّ ساجدًا, ثمَّ ارفع حتَّى تطمئن جالسًا, ثمَّ اسجد حتَّى تطمئن ساجدًا, ثمَّ قم فإذا أتممت صلاتك على هذا فقد أتممتها, وما انتقصت من هذا من شيء فإنَّما تنقصه من صلاتك
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে যে সাহাবীর ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, তার নাম খাল্লাদ ইবন রাফি'। তিনি একজন বেদুঈন সাহাবী। তিনি মসজিদে এসে তাড়াহুড়া করে নামায পড়ছিলেন। তা'দীলুল আরকান করছিলেন না। তা'দীলুল আরকান অর্থ নামাযের রুকন অর্থাৎ রুকূ'-সিজদা ইত্যাদি ফরযসমূহ ধীরস্থিরভাবে আদায় করা। যেমন রুকূ'তে গিয়ে এতটুকু সময় স্থির হয়ে থাকা, যাতে ধীরস্থিরভাবে অন্ততপক্ষে একবার সুবহানা রাব্বিয়াল 'আযীম পড়া যায়। তারপর রুকু' থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে খানিকটা স্থির হওয়া। তারপর রুকূ'র মতো ধীরস্থিরভাবে সিজদা করা। দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে স্থিরভাবে বসা। এসব কাজ ওয়াজিব। এগুলো না করলে নামায হয় না। এরূপ নামায পুনরায় পড়তে হয়। ওই সাহাবী তা'দীলুল আরকান ছাড়াই নামায পড়ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা লক্ষ করছিলেন।
ওই সাহাবী নামায শেষ করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং সালাম দিলেন। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন- اِرْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصل (ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি)। তাঁর নামায পড়াটা যেহেতু সহীহভাবে হয়নি, তাই বলেছেন তুমি নামায পড়নি। অর্থাৎ তোমার পড়াটা না পড়ার মতোই হয়েছে। তাই এ নামায আবার পড়তে হবে। কীভাবে পড়তে হবে তা তিনি বলে দেননি। সম্ভবত মনে করেছিলেন ওই সাহাবী নিজেই বুঝতে পারবেন তাঁর নামায কীভাবে পড়া উচিত ছিল আর কীভাবে পড়েছেন। কিন্তু সাহাবীর নামাযের সব নিয়ম-কানুন জানা ছিল না। তাই ফিরে গিয়ে আবারও নামায পড়লেন বটে, কিন্তু পড়লেন আগের মতোই। তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইতি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে সালাম দিলেন। তিনি যথারীতি সালামের উত্তর দিলেন। ওই সাহাবী ক্ষনিক আগেই এসে সালাম দিয়েছিলেন। তারপর নামায পড়ে এসে আবার সাহাবী দিলেন। দুইবার সালাম দেওয়ার মাঝখানে ছিল নামাযের ব্যবধান। অল্পসময়ের বিরতির পর ফের সালাম দেওয়ায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপত্তি করেননি; বরং যথারীতি সালামের উত্তর দিয়েছেন। বোঝা গেল একবার সালাম দেওয়ার পর যদি ক্ষণিকের বিচ্ছেদ হয়, তারপর পুনরায় সাক্ষাৎকালে সালাম দেওয়া বিধিসম্মত। প্রথমবারের মতোই পরেরবারও সালাম দেওয়া সুন্নত।
যাহোক দ্বিতীয়বার সালামের জবাব দেওয়ার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বললেন, ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি। এভাবে তিনবার হল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয়বারও তাঁকে নামাযের নিয়ম শিখিয়ে দিলেন না। এর কারণ এ হতে পারে যে, তিনি তাঁকে সময় দিচ্ছিলেন। যাতে নিজ ত্রুটি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন এবং বিশুদ্ধভাবে নামায পড়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। তারপরও যখন তাঁর কাছে নিজ ত্রুটি ধরা পড়বে না, তখন তাঁর নিজের মধ্যেই শেখার আগ্রহ জন্মাবে এবং বিষয়টির গুরুত্বও তাঁর বুঝে আসবে। তখন জানতে চাইবেন সহীহ-শুদ্ধভাবে নামায কীভাবে পড়তে হয়। তখন যদি শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে তা তার মনে বসে যাবে। কখনও ভুলবেন না। পরিশেষে তাই হল। শেষবার যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন 'ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি', তখন তিনি নিজ অপারগতা প্রকাশ করে বললেন-
والذي بعثك بالحق ما أحسن غيره، فعلمني،
‘যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম! আমি এরচে' ভালো পারি না। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন’।
তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্নেহ-মমতার সঙ্গে তাঁকে নামাযের নিয়ম শিখিয়ে দিলেন। নামাযের কোন রুকন কীভাবে আদায় করতে হবে তা বলে দিলেন। অর্থাৎ প্রতিটি রুকন আদায় করতে হবে ধীরস্থিরভাবে। তা'দীলুল আরকানের সঙ্গে। তাড়াহুড়া করা যাবে না। যদি তাড়াহুড়া করা হয়, তবে তা'দীলুল আরকান ছুটে যাবে, যা কিনা ওয়াজিব। রুকু'-সিজদায় গিয়ে স্থির না হলে, রুকু' থেকে সোজা হয়ে না দাঁড়ালে এবং দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে না বসলে নামায হয় না। কেননা এর প্রতিটিই ওয়াজিব।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. একবার সালাম দেওয়ার পর ক্ষণিকের বিচ্ছেদ বা আড়ালের পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে পুনরায় সালাম দেওয়া সুন্নত।
খ. নামাযে তা'দীলুল আরকান ওয়াজিব। ওয়াজিব ছুটে গেলে নামায হয় না।
গ. কারও দ্বারা কোনও ভুল হলে তাকে শিক্ষাদানের একটা নববী পন্থা এটাও যে, তাকে সুযোগ দেওয়া হবে যাতে সে নিজে নিজেই অনুসন্ধান করে নিজ ভুল নির্ণয় করতে পারে এবং নিজে নিজেই তা সংশোধন করতে সক্ষম হয়।
ঘ. যার যে বিষয়ে জানা নেই তার উচিত, তা অকপটে স্বীকার করা এবং যে জানে তার কাছ থেকে জেনে নেওয়া।
ঙ. শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ ছিল খুবই মমতাপূর্ণ। প্রত্যেক শিক্ষাদাতার এ আদর্শ অনুসরণ করা উচিত।
ওই সাহাবী নামায শেষ করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং সালাম দিলেন। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন- اِرْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصل (ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি)। তাঁর নামায পড়াটা যেহেতু সহীহভাবে হয়নি, তাই বলেছেন তুমি নামায পড়নি। অর্থাৎ তোমার পড়াটা না পড়ার মতোই হয়েছে। তাই এ নামায আবার পড়তে হবে। কীভাবে পড়তে হবে তা তিনি বলে দেননি। সম্ভবত মনে করেছিলেন ওই সাহাবী নিজেই বুঝতে পারবেন তাঁর নামায কীভাবে পড়া উচিত ছিল আর কীভাবে পড়েছেন। কিন্তু সাহাবীর নামাযের সব নিয়ম-কানুন জানা ছিল না। তাই ফিরে গিয়ে আবারও নামায পড়লেন বটে, কিন্তু পড়লেন আগের মতোই। তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইতি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে সালাম দিলেন। তিনি যথারীতি সালামের উত্তর দিলেন। ওই সাহাবী ক্ষনিক আগেই এসে সালাম দিয়েছিলেন। তারপর নামায পড়ে এসে আবার সাহাবী দিলেন। দুইবার সালাম দেওয়ার মাঝখানে ছিল নামাযের ব্যবধান। অল্পসময়ের বিরতির পর ফের সালাম দেওয়ায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপত্তি করেননি; বরং যথারীতি সালামের উত্তর দিয়েছেন। বোঝা গেল একবার সালাম দেওয়ার পর যদি ক্ষণিকের বিচ্ছেদ হয়, তারপর পুনরায় সাক্ষাৎকালে সালাম দেওয়া বিধিসম্মত। প্রথমবারের মতোই পরেরবারও সালাম দেওয়া সুন্নত।
যাহোক দ্বিতীয়বার সালামের জবাব দেওয়ার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বললেন, ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি। এভাবে তিনবার হল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয়বারও তাঁকে নামাযের নিয়ম শিখিয়ে দিলেন না। এর কারণ এ হতে পারে যে, তিনি তাঁকে সময় দিচ্ছিলেন। যাতে নিজ ত্রুটি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন এবং বিশুদ্ধভাবে নামায পড়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। তারপরও যখন তাঁর কাছে নিজ ত্রুটি ধরা পড়বে না, তখন তাঁর নিজের মধ্যেই শেখার আগ্রহ জন্মাবে এবং বিষয়টির গুরুত্বও তাঁর বুঝে আসবে। তখন জানতে চাইবেন সহীহ-শুদ্ধভাবে নামায কীভাবে পড়তে হয়। তখন যদি শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে তা তার মনে বসে যাবে। কখনও ভুলবেন না। পরিশেষে তাই হল। শেষবার যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন 'ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি', তখন তিনি নিজ অপারগতা প্রকাশ করে বললেন-
والذي بعثك بالحق ما أحسن غيره، فعلمني،
‘যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম! আমি এরচে' ভালো পারি না। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন’।
তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্নেহ-মমতার সঙ্গে তাঁকে নামাযের নিয়ম শিখিয়ে দিলেন। নামাযের কোন রুকন কীভাবে আদায় করতে হবে তা বলে দিলেন। অর্থাৎ প্রতিটি রুকন আদায় করতে হবে ধীরস্থিরভাবে। তা'দীলুল আরকানের সঙ্গে। তাড়াহুড়া করা যাবে না। যদি তাড়াহুড়া করা হয়, তবে তা'দীলুল আরকান ছুটে যাবে, যা কিনা ওয়াজিব। রুকু'-সিজদায় গিয়ে স্থির না হলে, রুকু' থেকে সোজা হয়ে না দাঁড়ালে এবং দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে না বসলে নামায হয় না। কেননা এর প্রতিটিই ওয়াজিব।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. একবার সালাম দেওয়ার পর ক্ষণিকের বিচ্ছেদ বা আড়ালের পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে পুনরায় সালাম দেওয়া সুন্নত।
খ. নামাযে তা'দীলুল আরকান ওয়াজিব। ওয়াজিব ছুটে গেলে নামায হয় না।
গ. কারও দ্বারা কোনও ভুল হলে তাকে শিক্ষাদানের একটা নববী পন্থা এটাও যে, তাকে সুযোগ দেওয়া হবে যাতে সে নিজে নিজেই অনুসন্ধান করে নিজ ভুল নির্ণয় করতে পারে এবং নিজে নিজেই তা সংশোধন করতে সক্ষম হয়।
ঘ. যার যে বিষয়ে জানা নেই তার উচিত, তা অকপটে স্বীকার করা এবং যে জানে তার কাছ থেকে জেনে নেওয়া।
ঙ. শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ ছিল খুবই মমতাপূর্ণ। প্রত্যেক শিক্ষাদাতার এ আদর্শ অনুসরণ করা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)