আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২৫. অধ্যায়ঃ পুনরুত্থান ও কিয়ামাত

হাদীস নং: ৫৫৪২
অধ্যায়ঃ পুনরুত্থান ও কিয়ামাত
পরিচ্ছেদ: শাফা'আত ইত্যাদির বর্ণনা
৫৫৪২. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী (ﷺ)-এর সঙ্গে এক দা'ওয়াতে ছিলাম। তাঁকে একটি (বকরীর) বাহু পেশ করা হল। এটা তাঁর পছন্দনীয় ছিল। তিনি তা থেকে দাঁত দিয়ে গোশত ছিঁড়লেন, আর বললেন, আমি কিয়ামতের দিন মানব জাতির সর্দার থাকব। তোমরা কি জান এটা কিভাবে হবে? আল্লাহ্ তা'আলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত মানুষকে একটি ভূমিতে সমবেত করবেন। একজন দর্শক তাদেরকে দেখবে, একজন আহ্বানকারী তাদেরকে (ঘোষণা) শোনাবে এবং সূর্য তাদের নিকটবর্তী হবে। দুঃখ ও কষ্টে মানুষের এমন অবস্থা সৃষ্টি হবে, যা তাদের সহ্য হবে না এবং তারা বরদাশত করতে পারবে না। মানুষ বলাবলি করবে, তোমরা যে কী অবস্থার সম্মুখীন এবং কী অবস্থা যে তোমাদের হয়েছে, তা কি তোমরা লক্ষ্য করছ না? এবং কে তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের সমীপে সুপারিশ করবে, তা কি তোমরা চিন্তা করবে না? তখন মানুষ একে অপরকে বলবে, তোমাদের পিতা আদম (আ)। তখন তারা তাঁর কাছে যাবে এবং বলবে, হে আদম (আ) আপনি মানব জাতির পিতা, আল্লাহ্ তা'আলা আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজের পক্ষ থেকে আপনার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করেছেন, তিনি ফিরিশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যার ফলে তারা আপনাকে সিজদা করেছে এবং তিনি আপনাকে জান্নাতে স্থান দিয়েছেন। আপনি কি আপনার প্রতিপালকের দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন না? আমরা যে কী (নিদারুণ) পরিস্থিতির সম্মুখীন এবং আমাদের যে কী অবস্থা হয়েছে, তাকি আপনি লক্ষ্য করছেন না? তিনি বলবেন, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক আজ এমনি রুষ্ট হয়েছেন, যেমনটি ইতিপূর্বে কখনও হননি এবং যেমনটি রুষ্ট এর পরেও কখনও তিনি হবেন না। তিনি একটি নির্দিষ্ট বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু, আমি তা অমান্য করেছি। এখন শুধু নাফসী। নাফসী। নাফসী। (আমার কী হবে হায়, আমার কী হবে। আমার পরবর্তী তোমরা অন্য কারো কাছে যাও।
তোমরা নূহ (আ)-এর কাছে যাও। তারা তখন হযরত নূহ (আ)-এর কাছে যাবে এবং বলবে, হে নূহ। আপনি পৃথিবী বাসীর কাছে প্রেরিত সর্বপ্রথম রাসূল। আল্লাহ্ তা'আলা আপনাকে 'কৃতজ্ঞ বান্দা" আখ্যা দিয়েছেন, আপনি কি আমরা যে নিদারুণ পরিস্থিতির সম্মুখীন, তা লক্ষ্য করছেন না? এবং আপনি কি আমাদের যে অবস্থা কী হয়েছে তা প্রত্যক্ষ করছেন না? আপনি কি আপনার প্রতিপালকের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন না? তিনি বলবেন, নিশ্চয় আমার প্রশ্ন আজ এমনি রুষ্ট হয়েছেন, যেমনটি রুষ্ট ইতিপূর্বে কোনদিন তিনি হন নি এবং যেমনটি রুষ্ট এর পরও কোনদিন হবেন না। আমার একটি দু'আর অধিকার ছিল, তদ্দ্বারা আমি আমার সম্প্রদায়ের জন্য বদদু'আ করেছি। সুতরাং এখন কেবল নাফসী! নাফসী!! নাফসী!!! তোমরা বরং আমার পরিবর্তে অন্য কারে কাছে যাও। তোমরা ইবরাহীম (আ)-এর কাছে যাও।।
তারা তখন ইব্‌রাহীম (আ)-এর কাছে যাবে এবং বলবে, আপনি সমগ্র পৃথিবীবাসীর মধ্যে আল্লাহর নবী ও তাঁর অন্তরঙ্গ। আপনি আপনার প্রভুর কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আমরা যে কী নিদারুণ পরিস্থিতির সম্মুখীন, তা কি আপনি কি লক্ষ্য করলেন না? তিনি তাদেরকে বলবেন, নিশ্চয় আমার প্রভু আজ এমনি রুষ্ট হয়েছেন, যেমনটি রুষ্ট ইতিপূর্বে তিনি কোন দিন হন নি এবং এরপরও যেমনটি রুষ্ট কোন দিন হবেন না। আমি (বাহ্যিক অর্থের বিপরীত হিসেবে) তিনটি মিথ্যা কথা বলেছিলাম। এ বলে তিনি কথাগুলো উল্লেখ করবেন। সুতরাং আজ কেবল নাফসী! নাফসী!! নাফসী!!! তোমরা বরং আমার পরিবর্তে অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা মূসা (আ)-এর কাছে যাও!!!
তারা তখন মূসা (আ)-এর কাছে যাবে এবং বলবে, হে মূসা! আপনি আল্লাহর রাসূল। আপনাকে আল্লাহ্ তা'আলা নিজ রিসালাত ও কালাম দিয়ে সমগ্র মানব জাতির উপর মর্যাদা মণ্ডিত করেছেন। আপনি আপনার প্রভুর কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আমরা যে কী নিদারুণ পরিস্থিতির সম্মুখীন, তা কি আপনি দেখছেন না। তিনি বলবেন, নিশ্চয় আমার প্রভু আজ এমন রুষ্ট হয়েছেন, যেমনটি রুষ্ট ইতিপূর্বে তিনি কখনও হন নি এবং এরপরও যেমনটি রুষ্ট কখনও হবেন না। আমি এমন একটি লোককে হত্যা করেছিলাম, যাকে হত্যা করতে আমাকে হুকুম দেওয়া হয়নি। সুতরাং আজ কেবল নাফসী! নাফসী!! নাফসী!!! তোমরা বরং আমার পরিবর্তে অন্য কারো- কাছে যাও। তোমরা ঈসা (আ)-এর কাছে যাও।
তারা ঈসা (আ)-এর কাছে যাবে এবং বলবে, হে ঈসা (আ)। আপনি আল্লাহর রাসূল ও তাঁর কালেমা বা পূতবাণী যা তিনি মারইয়াম (আ)-এর কাছে আমানত রেখেছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে প্রদত্ত অহী। আপনি দোলনায় থাকা অবস্থায় মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আপনি আপনার প্রভুর কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আমরা কী নিদারুণ পরিস্থিতির সম্মুখীন তা কি আপনি দেখছেন না? ঈসা (আ) বলবেন, প্রভু আজ এমনি রুষ্ট, যেমনটি রুষ্ট ইতিপূর্বে তিনি কখনো হন নি এবং এরপরও এমন রুষ্ট কখনো হবেন না। কিন্তু তিনি কোন অপরাধের উল্লেখ করবেন না। সুতরাং আজ কেবল নাফসী! মাফসী!! নাফসী !!! তোমরা বরং আমার পরিবর্তে অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা মুহাম্মদ-এর কাছে যাও। তখন তারা আমার কাছে আসবে এবং বলবে, হে মুহাম্মদ। আপনি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আল্লাহ্ তা'আলা আপনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আপনার প্রভুর কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আমরা যে কী নিদারুণ পরিস্থিতির সম্মুখীন, তা কি আপনি লক্ষ করছেন না? তখন আমি চলতে চলতে আরশের নিচে গিয়ে পৌঁছাব এবং আমার প্রভুর সম্মুখে সিজদাবনত হব। এরপর আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে তাঁর এমন প্রশংসা ও হামদ শিখাবেন, যা আমার পূর্বে কাউকেই তিনি শিখান নি। তারপর বলা হবে, হে মুহাম্মদ! আপনি আপনার মাথা তুলুন। আপনি প্রার্থনা করুন। তা পূর্ণ করা হবে। আপনি সুপারিশ করুন। আপনার সুপারিশ মঞ্জুর করা হবে। তখন আমি আমার মাথা তুলব এবং বলব, হে আমার রব। আমার উম্মত! হে আমার রব আমার উম্মত!! হে আমার রব। আমার উম্মত!!! উত্তরে বলা হবে, হে মুহাম্মদ। আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের হিসাব-নিকাশ নেই, তাদেরকে জান্নাতের দরজাসমূহের মধ্যে ডান দিকের দরজা দিয়ে দাখিল করুন। তারা এ দরজা ব্যতীত অন্যান্য দরজাসমূহে মানুষের সাথে শরীক থাকবে। অতঃপর বললেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় জান্নাতের দরজার পার্টসমূহের মধ্যে দুই পাটের মধ্যবর্তী স্থান হবে মক্কা ও হাজারের মধ্যবর্তী স্থানের সমান। অথবা মক্কা ও বুসরার মধ্যবর্তী স্থানের সমান।
(বুখারী ও মুসলিম (র) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
كتاب البعث
فصل فِي الشَّفَاعَة وَغَيرهَا
5542- وَعَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِي فِي دَعْوَة فَرفع إِلَيْهِ الذِّرَاع وَكَانَت تعجبه فنهس مِنْهَا نهسة وَقَالَ أَنا سيد النَّاس يَوْم الْقِيَامَة
هَل تَدْرُونَ مِم ذَاك يجمع لله الْأَوَّلين والآخرين فِي صَعِيد وَاحِد فَيبْصرُهُمْ النَّاظر وَيسْمعهُمْ الدَّاعِي وتدنو مِنْهُم الشَّمْس فَيبلغ النَّاس من الْغم وَالْكرب مَا لَا يُطِيقُونَ وَلَا يحْتَملُونَ فَيَقُول النَّاس أَلا ترَوْنَ إِلَى مَا أَنْتُم فِيهِ وَإِلَى مَا بَلغَكُمْ أَلا تنْظرُون من يشفع لكم إِلَى ربكُم فَيَقُول بعض النَّاس لبَعض أبوكم آدم فيأتونه فَيَقُولُونَ يَا آدم أَنْت أَبُو الْبشر خلقك الله بِيَدِهِ وَنفخ فِيك من روحه وَأمر الْمَلَائِكَة فسجدوا لَك وأسكنك الْجنَّة أَلا تشفع لنا إِلَى رَبك أَلا ترى مَا نَحن فِيهِ وَمَا بلغنَا فَقَالَ إِن رَبِّي غضب الْيَوْم غَضبا لم يغْضب قبله مثله وَلَا يغْضب بعده مثله وَإنَّهُ نهاني عَن الشَّجَرَة فعصيت نَفسِي نَفسِي نَفسِي ذَهَبُوا إِلَى غَيْرِي اذْهَبُوا إِلَى نوح فَيَأْتُونَ نوحًا فَيَقُولُونَ يَا نوح أَنْت أول الرُّسُل إِلَى أهل الأَرْض وَقد سماك لله عبدا شكُورًا أَلا ترى إِلَى مَا نَحن فِيهِ أَلا ترى إِلَى مَا بلغنَا أَلا تشفع لنا إِلَى رَبك فَيَقُول إِن رَبِّي غضب الْيَوْم غَضبا لم يغْضب قبله مثله وَلنْ يغْضب بعده مثله وَإنَّهُ قد كَانَ لي دَعْوَة دَعَوْت بهَا على قومِي نَفسِي نَفسِي نَفسِي ذَهَبُوا إِلَى غَيْرِي اذْهَبُوا إِلَى إِبْرَاهِيم فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيم فَيَقُولُونَ أَنْت نَبِي الله وخليله من أهل الأَرْض شفع لنا إِلَى رَبك أَلا ترى إِلَى مَا نَحن فِيهِ فَيَقُول لَهُم إِن رَبِّي قد غضب الْيَوْم غَضبا لم يغْضب قبله مثله وَلنْ يغْضب بعده مثله وَإِنِّي كنت كذبت ثَلَاث كذبات فَذكرهَا نَفسِي نَفسِي نَفسِي ذَهَبُوا إِلَى غَيْرِي ذَهَبُوا إِلَى مُوسَى فَيَأْتُونَ مُوسَى فَيَقُولُونَ يَا مُوسَى أَنْت رَسُول الله فضلك الله بِرِسَالَاتِهِ
وبكلامه على النَّاس شفع لنا إِلَى رَبك أما ترى إِلَى مَا نَحن فِيهِ فَيَقُول إِن رَبِّي قد غضب الْيَوْم غَضبا لم يغْضب قبله مثله وَلنْ يغْضب بعده مثله وَإِنِّي قد قتلت نفسا لم أومر بقتلها نَفسِي نَفسِي نَفسِي ذَهَبُوا إِلَى غَيْرِي ذَهَبُوا إِلَى عِيسَى فَيَأْتُونَ عِيسَى فَيَقُولُونَ يَا عِيسَى أَنْت رَسُول الله وكلمته أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَم وروح مِنْهُ وَكلمت النَّاس فِي المهد شفع لنا إِلَى رَبك أَلا ترى إِلَى مَا نَحن فِيهِ فَيَقُول عِيسَى إِن رَبِّي قد غضب الْيَوْم غَضبا لم يغْضب قبله مثله وَلنْ يغْضب بعده مثله وَلم يذكر ذَنبا نَفسِي نَفسِي نَفسِي اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي اذْهَبُوا إِلَى مُحَمَّد فَيَأْتُوني فَيَقُولُونَ يَا مُحَمَّد أَنْت رَسُول الله وَخَاتم الْأَنْبِيَاء وَقد غفر الله لَك مَا تقدم من ذَنْبك وَمَا تَأَخّر اشفع لنا إِلَى رَبك أَلا ترى إِلَى مَا نَحن فِيهِ فأنطلق فَآتي تَحت الْعَرْش فأقع سَاجِدا لرَبي ثمَّ يفتح الله عَليّ من محامده وَحسن الثَّنَاء عَلَيْهِ شَيْئا لم يَفْتَحهُ على أحد قبلي ثمَّ يُقَال يَا مُحَمَّد رفع رَأسك سل تعطه وَاشْفَعْ تشفع فأرفع رَأْسِي فَأَقُول أمتِي يَا رب أمتِي يَا رب أمتِي يَا رب فَيُقَال يَا مُحَمَّد أَدخل من أمتك من لَا حِسَاب عَلَيْهِم من الْبَاب الْأَيْمن من أَبْوَاب الْجنَّة وهم شُرَكَاء النَّاس فِيمَا سوى ذَلِك من الْأَبْوَاب ثمَّ قَالَ وَالَّذِي نَفسِي بِيَدِهِ إِن مَا بَين المصراعين من مصاريع الْجنَّة كَمَا بَين مَكَّة وهجر أَو كَمَا بَين مَكَّة وَبصرى

رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ৫৫৪২ | মুসলিম বাংলা