আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২৫. অধ্যায়ঃ পুনরুত্থান ও কিয়ামাত

হাদীস নং: ৫৫০০
অধ্যায়ঃ পুনরুত্থান ও কিয়ামাত
পরিচ্ছেদ: হিসাব-নিকাশের আলোচনা
৫৫০০. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا "সেদিন ভূমি তার সমস্ত সংবাদ বলে দেবে।" (৯৯ঃ ৪) তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জান, ভূমির সংবাদ কি? তারা বলল, আল্লাহও তাঁর রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেন, নিশ্চয় ভূমির সংবাদ হচ্ছে এই যে, তার হকের উপর প্রত্যেক বান্দা-বাঁদী যেসব কর্ম করেছে সে সম্পর্কে ভূমি সাক্ষা দেবে। সে বলবে, সে একর্ম ও কর্ম করেছে।
(ইবন হিব্বান (র) নিজ 'সহীহ'-এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
كتاب البعث
فصل في ذكر الحساب وغيره
5500- وَعَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَرَأَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم هَذِه الْآيَة يَوْمئِذٍ تحدث أَخْبَارهَا الزلزلة 8 قَالَ أَتَدْرُونَ مَا أَخْبَارهَا قَالُوا الله وَرَسُوله أعلم
قَالَ فَإِن أَخْبَارهَا أَن تشهد على كل عبد وَأمة بِمَا عمل على ظهرهَا تَقول عمل كَذَا وَكَذَا

رَوَاهُ ابْن حبَان فِي صَحِيحه

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা যিলযালের চতুর্থ আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৌলিক চারটি কাজের একটি কাজ ছিল কুরআন মাজীদের তা'লীম দেওয়া। অর্থাৎ কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা যা বলেছেন, উম্মতের সামনে তার ব্যাখ্যা পেশ করা। তিনি সারা জীবন নিজ কথা ও আমলের দ্বারা ব্যাখ্যাদানের সে দায়িত্ব পালন করেছেন। যখন যে আয়াতের মর্ম বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেছেন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। সূরা যিলযালের এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, যেদিন তা অর্থাৎ ভূমি তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। ভূমির বৃত্তান্ত কী, এটা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। ব্যাখ্যা ছাড়া বোঝা কঠিন। তাই তিনি সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করেন-

أَتَدْرُونَ مَا أَخْبَارُهَا (তোমরা কি জান তার বৃত্তান্ত কী? সাহাবায়ে কেরাম অজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং বিনয়ের সঙ্গে বললেন, তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তখন তিনি এর ব্যাখ্যা করে দিলেন যে-

فَإِنَّ أَخْبَارَها أَنْ تَشْهَدَ عَلَى كُلِّ عَبْدٍ أَوْ أَمةٍ بِمَا عَمِلَ عَلَى ظَهْرِهَا، تَقُولُ: عَمِلْتَ كَذَا وكذَا في يَوْمِ كَذَا وَكَذَا، فهَذِهِ أَخْبَارُهَا

(সে তার পৃষ্ঠে প্রত্যেক বান্দা ও বান্দী যা-কিছু করেছে সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে। সে বলবে, অমুক অমুক দিন তুমি অমুক অমুক কাজ করেছ। এটাই হলো তার বৃত্তান্ত)। যমীন এ সাক্ষ্য দেবে তার নিজ ভাষায়। কিভাবে সে সাক্ষ্য দেবে, এ প্রশ্ন অবান্তর। কেননা বাকশক্তি আল্লাহ তাআলারই দান। যে আল্লাহ মানুষকে বাকশক্তি দিয়েছেন, তিনি ভূমিকেও বাকশক্তি দিতে পারেন। তিনি তো হাশরের ময়দানে হাত, পা ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকেও বাকশক্তি দিয়ে দেবেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

حَتَّى إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (20) وَقَالُوا لِجُلُودِهِمْ لِمَ شَهِدْتُمْ عَلَيْنَا قَالُوا أَنْطَقَنَا اللَّهُ الَّذِي أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُوَ خَلَقَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ (21)

‘অবশেষে যখন তারা তার (অর্থাৎ আগুনের) কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। তারা তাদের চামড়াকে বলবে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে কেন? তারা বলবে, আল্লাহ আমাদেরকে বাকশক্তি দান করেছেন, যিনি বাকশক্তি দান করেছেন প্রতিটি জিনিসকে। তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন প্রথমবার আর তাঁরই কাছে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।৩৮১

ভূমির সাক্ষ্যদান সম্পর্কিত এ সংবাদ আমাদের জন্য এক সতর্কবাণী। ভূমি আল্লাহ তাআলার কত বড়ই না নি'আমত। এর উপর আমরা বাস করি। এর উপর চলাফেরা করি। এতে চাষাবাদ করে ফসল উৎপন্ন করি। এতে প্রবাহিত পানি আমাদের বহুমুখী কল্যাণ সাধন করে। আমাদের জন্য হাজারও উপকার এর মধ্যে নিহিত আছে। আমাদের তো কর্তব্য এর শোকর আদায়ার্থে আল্লাহ তাআলার বাধ্য ও অনুগত হয়ে থাকা, কিছুতেই এর উপর নাফরমানির কাজে লিপ্ত না হওয়া। তা সত্ত্বেও আমরা হামেশাই ভূপৃষ্ঠে আল্লাহ তাআলার নানারকম নাফরমানিতে লিপ্ত হই। তাই আল্লাহ সতর্ক করে দিয়েছেন, তোমরা যে এর উপর আমার নাফরমানি করছ, একদিন কিন্তু এ ভূমি তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। তোমরা কী কী অপরাধ এর উপর করেছ তা সব জানিয়ে দেবে। তাই সতর্ক হও। আমার নাফরমানি পরিত্যাগ করে ফরমাবরদারিতে লিপ্ত হও। শরীআত মেনে চল ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন ওহীর বাহক ছিলেন, তেমনি ছিলেন তার ব্যাখ্যাতাও।

খ. বিশেষ কোনও আয়াতের মর্মার্থ বুঝে না আসলে তা হাদীছে সন্ধান করা চাই। হাদীছেও না পাওয়া গেলে সাহাবায়ে কেরামের উক্তিতে। তারপর প্রজন্ম পরম্পরায় যারা সাহাবায়ে কেরাম থেকে দীন শিখে এসেছে, সেই ধারার উলামায়ে কেরামের শরণাপন্ন হওয়া চাই।

গ. ভূমি আল্লাহর এক বিশাল নি'আমত। এর উপর কিছুতেই পাপকর্ম করা উচিত নয়।

ঘ. হাশরের ময়দানে বান্দার পাপকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে অনেকেই। এমনকি ভূমিও। সুতরাং অন্তরে সেই ভয় রেখে পাপকর্ম পরিহার করে চলতে হবে।

৩৮১. সূরা হা-মীম সাজদা (৪১), আয়াত ২০-২১
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান