আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২৫. অধ্যায়ঃ পুনরুত্থান ও কিয়ামাত

হাদীস নং: ৫৪৯৭
অধ্যায়ঃ পুনরুত্থান ও কিয়ামাত
পরিচ্ছেদ: হিসাব-নিকাশের আলোচনা
৫৪৯৭. তাঁরই থেকে বর্ণিত আছে যে, লোকজন আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? তিনি বললেন, নির্মেঘ পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে কি তোমাদের পারস্পরিক বিবাদ হয়? তারা বলল জ্বী না ইয়া রাসূলাল্লাহ।। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সূর্যের উপর যখন মেঘ না থাকে তখন সূর্য দেখতে কি তোমাদের পারস্পরিক বিবাদ হয়? তারা বলল, জ্বী না। তিনি বললেন, নিশ্চয় তোমরা তাকে এভাবে দেখবে।
কিয়ামতের দিন মানুষকে সমবেত করা হবে। তখন তিনি বলবেন, যে যার ইবাদত কর, সে যেন তার অনুসরণ করে। সেমতে তাদের মধ্য থেকে কেউ সূর্যের অনুসরণ করবে, কেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ প্রতিমাও শয়তানের অনুসরণ করবে এবং এ উম্মাত বাকি থাকবে। তাদের সাথে থাকবে এ উম্মাতের মুনাফিকরাও। তারপর আল্লাহ্ তা'আলা তাদের সামনে হাযির হয়ে বলবেন, আমি তোমাদের প্রতিপালক, তারা বলবে, আমাদের প্রতিপালক আমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত এটা আমাদের স্থান। যখন আমাদের প্রতিপালক আমদের কাছে আসবেন, তখন আমরা তাকে চিনতে পারব। তখন আল্লাহ তা'আলা তাদের কাছে এসে বলবেন, আমিই তো তোমাদের প্রতিপালক। তারা বলবে, (হ্যাঁ,) আপনিই আমাদের প্রতিপালক। এরপর তিনি তাদেরকে ডাকবেন, এবং জাহান্নামের উপর দিয়ে পুলসিরাত কায়েম করা হবে। আমি সেসব রাসূলদের মধ্যে প্রথম থাকব, যারা তাঁদের উম্মাত নিয়ে সেই পুলসিরাত পার হবেন। সেদিন রাসূলগণ ব্যতীত কেউ কথা বলবে না। সেদিন রাসূলদের সালাম হবে "আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম।" অর্থাৎ "হে আল্লাহ্। তুমি নিরাপদে। রাখ, তুমি নিরাপদে রাখ।" জাহান্নামের মধ্যে সা'দানের কাঁটার মত বহু কাঁটা থাকবে। তোমরা কি সা'দানের। কাঁটা দেখেছ? তারা বলল, জ্বী হ্যাঁ। তিনি বললেন, সে হুক হবে সা'দানের কাঁটার মত। তবে তা যে কত বড় হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এ হুক মানুষকে তাদের আমল সহকারে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে। তাদের মধ্যকার কাউকে তার আমলের কারণে ধ্বংস করা হবে এবং কাউকে ন্যায়ের নিক্তিতে মাপা হবে। তারপরই সে মুক্তি পাবে। এরপর আল্লাহ তা'আলা যখন কোন জাহান্নামীর প্রতি দয়া করতে ইচ্ছা করবেন, তখন আল্লাহ্ তা'আলা ফিরিশতাদেরকে নির্দেশ দেবেন, যাতে যারা আল্লাহর ইবাদত করত তাদেরকে তারা বের করে নেয়। সুতরাং তারা তাদেরকে সিজদার চিহ্নের সাহায্যে বের করবে। আল্লাহ্ তা'আলা জাহান্নামের জন্য সিজদার চিহ্ন জ্বালানো হারাম করে দেবেন। সেমতে তারা জাহান্নাম থেকে জ্বলে-পুড়ে বের হবে। এরপর তার উপর অমৃতের পানি ঢেলে দেওয়া হবে। তখন তারা (এতদ্রুত সুস্থ হয়ে) উঠবে, যেমন বন্যার পানিতে ভেসে আসা পলির মধ্যে বীজ অংকুরিত হয়। তারপর আল্লাহ্ তা'আলা বান্দাদের বিচার থেকে নিষ্ক্রান্ত হবেন এক ব্যক্তি তখনও জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থলে বাকি রয়ে যাবে। সে হবে সর্বশেষ জাহান্নামী ব্যক্তি, যে জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে তখনও জাহান্নাম অভিমুখী হয়ে থাকবে। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক। জাহান্নামের দিক থেকে আমার চেহারা ফিরিয়ে দিন। জাহান্নামের বায়ু যে আমার শরীরে বিষ মিশিয়ে দিল এবং জাহান্নামের অগ্নি শিখা যে আমাকে পুড়িয়ে দিল। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তুমি কি আশা কর, যদি আমি তোমার এ আবেদন পূর্ণ করি তবে তুমি এছাড়া আরও কিছু চাইবে? সে বলবে, আপনার সম্ভ্রমের কসম, না, (চাইবনা)। তারপর সে আল্লাহ্ তা'আলার সাথে যা ইচ্ছা ওয়াদা-অঙ্গীকার করবে। তখন আল্লাহ তার চেহারা জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দেবেন। যখন তাকে জান্নাতের অভিমুখী করে দেবেন তখন সে জান্নাতের সজীবতা শ্যামলিমা দেখে যতক্ষণ তার চুপ থাকা আল্লাহর ইচ্ছা হয়, সে চুপ থাকবে। এরপর বলবে, হে আমার প্রতিপালক। আমাকে একটু জান্নাতের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিন। আল্লাহ্ তা'আলা বলবেন, তুমি কি একটু আগে ওয়াদা-অঙ্গীকার কর নি যে, তুমি যা কিছু চেয়েছিলে, তাছাড়া আর কিছু চাইবে না? সে বলবে, হে আমার যা আমি তোমার সর্বাধিক হতভাগা মাখলুক হতে চাই না। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তুমি কি আশা কর, যদি আমি তোমার এ আবেদন মঞ্জুর করি তবে তুমি এছাড়া আরও কিছু চাইবে? সে বলবে, আপনার সম্ভ্রমের ভাসম, না এছাড়া আর কিছুই চাইব না। এ বলে সে আল্লাহ্ তা'আলার সাথে যা ইচ্ছা ওয়াদা-অঙ্গীকার করবে। সেমতে তিনি তাকে জান্নাতের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেবেন। যখন সে জান্নাতের দরজায় পৌঁছবে তখন সে জান্নাতের সজীবতা শ্যামলিমা ও তার আনন্দ-প্রাচুর্য প্রত্যক্ষ করবে। এবং যতক্ষণ তার চুপ থাকা আল্লাহর ইচ্ছা হয়, সে চুপ থাকবে। এরপর বলবে, হে আমার প্রতিপালক। আমাকে জান্নাতে দাখিল কর। আল্লাহ্ তা'আলা বলবেন, তোমার সর্বনাশ হোক। হে আদম সন্তান। তুমি কতই না প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী। তুমি কি আমার সাথে ওয়াদা-অঙ্গীকার করনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হয়েছে, তা ছাড়া তুমি আর কিছু চাইবে না? সে বলবে, হে আত্মার প্রতিপালক। তুমি আমাকে তোমার সর্বাধিক হতভাগা মাখলুক পরিণত করো না। তখন আল্লাহ্ তা'আলা তার ব্যাপারে হেসে দেবেন। এরপর তাকে জান্নাতে প্রবেশ করতে অনুমতি দেবেন এবং বলবেন, তুমি (আমার কাছে যা ইচ্ছা) চাও। সে চাইবে। যখন তার চাওয়া শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলবেন, তুমি মন খুলে চাও। আল্লাহ্ তা'আলা তাকে স্মরণ করিয়ে দেবেন। সে তখন মন খুলে অনেক কিছুই চাইবে। যখন তার সব চাওয়া শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলবেন, এগুলো এবং এর সাথে এর সমপরিমাণ তোমাকে দান করলাম।
আবু সাঈদ খুদরী (রা) আবূ হুরায়রা (রা)-কে বললেন, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ্ তা'আলা বলবেন, এগুলো এবং এগুলোর দশগুণ তোমাকে দিলাম। আবু হুরায়রা (রা) বললেন, আমার কেবল রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর এ উক্তিটিই স্মরণ আছে, "এগুলো এবং এর সাথে এর সমপরিমাণ তোমাকে দিলাম।' আবু সাঈদ (রা) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, "এগুলো এবং এগুলোর দশগুণ তোমাকে দিলাম।" আবু হুরায়রা (রা) বললেন, এ ব্যক্তি হচ্ছে জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতী ব্যক্তি।
(বুখারী (র) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
كتاب البعث
فصل في ذكر الحساب وغيره
5497- وَعنهُ أَيْضا رَضِي الله عَنهُ أَن النَّاس قَالُوا يَا رَسُول الله هَل نرى رَبنَا يَوْم الْقِيَامَة قَالَ هَل تمارون فِي الْقَمَر لَيْلَة الْبَدْر لَيْسَ دونه سَحَاب قَالُوا لَا يَا رَسُول الله قَالَ هَل تمارون فِي الشَّمْس لَيْسَ دونهَا سَحَاب قَالُوا لَا
قَالَ فَإِنَّكُم تَرَوْنَهُ كَذَلِك يحْشر النَّاس يَوْم الْقِيَامَة فَيَقُول من كَانَ يعبد شَيْئا فليتبعه فَمنهمْ من يتبع الشَّمْس وَمِنْهُم من يتبع الْقَمَر وَمِنْهُم من يتبع الطواغيت وَتبقى هَذِه الْأمة فِيهَا منافقوها فيأتيهم الله فَيَقُول أَنا ربكُم فَيَقُولُونَ هَذَا مَكَاننَا حَتَّى يأتينا رَبنَا فَإِذا جَاءَ رَبنَا عَرفْنَاهُ فيأتيهم الله فَيَقُول أَنا ربكُم فَيَقُولُونَ أَنْت رَبنَا فيدعوهم وَيضْرب الصِّرَاط بَين ظهراني جَهَنَّم فَأَكُون أول من يجوز من الرُّسُل بأمته وَلَا يتَكَلَّم يَوْمئِذٍ أحد إِلَّا الرُّسُل وَسَلام الرُّسُل يَوْمئِذٍ اللَّهُمَّ سلم سلم وَفِي جَهَنَّم كلاليب مثل شوك السعدان
هَل رَأَيْتُمْ شوك السعدان قَالُوا نعم
قَالَ فَإِنَّهَا مثل شوك السعدان غير أَنه لَا يعلم قدر عظمها إِلَّا الله تخطف النَّاس بأعمالهم فَمنهمْ من يوبق بِعَمَلِهِ وَمِنْهُم من يخردل ثمَّ ينجو حَتَّى إِذا أَرَادَ الله رَحْمَة من أَرَادَ من أهل النَّار أَمر الله الْمَلَائِكَة أَن يخرجُوا من كَانَ يعبد الله فيخرجونهم بآثار السُّجُود وَحرم الله على النَّار أَن تَأْكُل أثر السُّجُود فَيخْرجُونَ من النَّار وَقد امتحشوا فَيصب عَلَيْهِم مَاء الْحَيَاة فينبتون كَمَا تنْبت الْحبَّة فِي حميل السَّيْل ثمَّ يفرغ الله من الْقَضَاء بَين الْعباد وَيبقى رجل بَين الْجنَّة وَالنَّار وَهُوَ آخر أهل النَّار دُخُولا الْجنَّة مقبل بِوَجْهِهِ قبل النَّار فَيَقُول يَا رب اصرف وَجْهي عَن النَّار قد قشبني رِيحهَا وأحرقني ذكاها فَيَقُول هَل عَسَيْت إِن أفعل أَن
تسْأَل غير ذَلِك فَيَقُول لَا وَعزَّتك فيعطي الله مَا شَاءَ من عهد وميثاق فَيصْرف الله وَجهه عَن النَّار فَإِذا أقبل بِهِ على الْجنَّة رأى بهجتها سكت مَا شَاءَ الله أَن يسكت ثمَّ قَالَ يَا رب قدمني عِنْد بَاب الْجنَّة فَيَقُول الله أَلَيْسَ قد أَعْطَيْت الْعَهْد والميثاق أَن لَا تسْأَل غير الَّذِي كنت سَأَلت فَيَقُول يَا رب لَا أكون أَشْقَى خلقك فَيَقُول فَمَا عَسَيْت إِن أَعطيتك ذَلِك أَن تسْأَل غَيره فَيَقُول لَا وَعزَّتك لَا أَسأَلك غير هَذَا فيعطي ربه مَا شَاءَ من عهد وميثاق فَيقدمهُ إِلَى بَاب الْجنَّة فَإِذا بلغ بَابهَا رأى زهرتها وَمَا فِيهَا من النضرة وَالسُّرُور فَسكت مَا شَاءَ الله أَن يسكت فَيَقُول يَا رب أدخلني الْجنَّة فَيَقُول الله وَيحك يَا ابْن آدم مَا أغدرك أَلَيْسَ قد أَعْطَيْتنِي العهود أَن لَا تسْأَل غير الَّذِي أَعْطَيْت فَيَقُول يَا رب لَا تجعلني أَشْقَى خلقك فيضحك الله مِنْهُ ثمَّ يَأْذَن لَهُ فِي دُخُول الْجنَّة فَيَقُول تمن فيتمنى حَتَّى إِذا انْقَطَعت أمْنِيته قَالَ الله تمن من كَذَا وَكَذَا يذكرهُ ربه حَتَّى إِذا انْتَهَت بِهِ الْأَمَانِي قَالَ الله لَك ذَلِك وَمثله مَعَه
قَالَ أَبُو سعيد الْخُدْرِيّ لأبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنْهُمَا إِن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ قَالَ الله لَك ذَلِك وَعشرَة أَمْثَاله
قَالَ أَبُو هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ لم أحفظ من رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم إِلَّا قَوْله لَك ذَلِك وَمثله مَعَه
قَالَ أَبُو سعيد رَضِي الله عَنهُ أشهد أَنِّي سمعته من رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول لَك ذَلِك وَعشرَة أَمْثَاله
قَالَ أَبُو هُرَيْرَة وَذَلِكَ الرجل آخر أهل الْجنَّة دُخُولا الْجنَّة
رَوَاهُ البُخَارِيّ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান