আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২৫. অধ্যায়ঃ পুনরুত্থান ও কিয়ামাত

হাদীস নং: ৫৪৮২
অধ্যায়ঃ পুনরুত্থান ও কিয়ামাত
পরিচ্ছেদ: হিসাব-নিকাশের আলোচনা
৫৪৮২. হযরত ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, হাবশার অধিবাসী জনৈক ব্যক্তি নবী (ﷺ)-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! বর্ণে ও নবুওয়াতে আপনারা তো আমাদের উপর প্রাধান্য পেয়েছেন। তবে আপনার কি অভিমত, আপনি যার প্রতি ঈমান রাখেন, আমিও যদি তার প্রতি ঈমান রাখি এবং আপনি যা আমল করেন, আমিও যদি তা আমল করি, আমি কি আপনার সাথে জান্নাতে থাকতে পারব? নবী (ﷺ) বললেন, যে ব্যক্তি "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে, তার জন্য এর বদৌলতে আল্লাহর কাছে একটি অঙ্গীকার লিপিবদ্ধ হয় এবং যে ব্যক্তি সুবহানাল্লাহ্” বলে, তার জন্য এক লাখ নেকী লিখা হয়। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। এরপরও আমরা কিভাবে ধ্বংস হব। নবী (ﷺ) বললেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, নিশ্চয় মানুষ কিয়ামতের দিন এমন আমল নিয়ে আসবে, যদি তা কোন পর্বতের উপর রাখা হয়, তবে তার পক্ষেও তা ভারী হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ্ তা'আলার নিয়ামতসমূহের মধ্য থেকে একটি নিয়ামত দাঁড়াবে এবং তার সমস্ত আমল শেষ করে ফেলার উপক্রম হবে। যদি না আল্লাহ্ তা'আলা নিজ দয়ায় তার প্রতি অনুগ্রহ করেন। তারপরই অবতীর্ণ হলঃ
هَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُنْ شَيْئًا مَذْكُورًا (إلى قوله) : وَإِذَا رَأَيْتَ ثَمَّ رَأَيْتَ نَعِيمًا وَمُلْكًا كَبِيرًا
"কাল প্রবাহে মানুষের উপর এমন এক সময় এসেছিল, যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্র বিন্দু থেকে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য। এজন্য আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন। আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে। আমি অকৃতজ্ঞদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি শৃংখল, বেড়ি ও লেলিহান অগ্নি। সংকর্মশীলেরা পান করবে এমন পানীয়, যার মিশ্রণ হবে কাফুর। এমন একটি প্রস্রবণের, যা থেকে আল্লাহর বান্দাগণ পান করবে। তারা এ প্রস্রবণকে যথা ইচ্ছা প্রবাহিত করবে। তারা কর্তব্য পালন করে এবং সেই দিনের ভয় করে, যেদিনের ইচ্ছা প্রবাহিত করবে। তারা কর্তব্য পালন করে এবং সেই দিনের ভয় করে, যেদিনের বিপত্তি হবে ব্যাপক। আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে এবং বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি। আমরা তোমাদের নিকট থেকে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়। আমরা আশংকা করি আমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের। পরিণামে আল্লাহ্ তাদেরকে রক্ষা করবেন সে দিবসের অনিষ্ট থেকে এবং তাদেরকে দিবেন উৎফুল্লতা ও আনন্দ। আর তাদের ধৈর্যশীলদের পুরস্কার স্বরূপ তাদেরকে দেবেন উদ্যান ও রেশমী বস্তু। সেখানে তারা সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে, তারা সেখানে অতিশয় গরম অথবা অতিশয় শীতবোধ করবে না। সন্নিহিত বৃক্ষ-ছায়া তাদের উপর থাকবে এবং তার ফলমূল সম্পূর্ণরূপে তাদের আওতাধীন করা হবে। তাদেরকে পরিবেশন করা হবে রৌপ্যপাত্রে এবং স্ফটিকের মত স্বচ্ছ পানপাত্রে রজতশুভ্র স্ফটিক পাত্রে, পরিবেশনকারীরা যথাযথ পরিমাণে তা পূর্ণ করবে। সেখানে তাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে অদ্রক মিশ্রিত পানীয়, জান্নাতের এমন এক প্রস্রবণের, যার নাম সালসাবীল। তাদেরকে পরিবেশন করবে চির কিশোরগণ, তাদেরকে দেখে মনে হবে তারা যেন বিক্ষিপ্ত মুক্তা। তুমি যখন সেখানে দেখবে, দেখতে পাবে ভোগ বিলাসের উপকরণ এবং বিশাল রাজ্য।" (৭৬ঃ ১-২০) তখন হাবশার লোকটি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। জান্নাতে আপনার চোখ যা দেখবে, আমার চোখ কি সেরূপই দেখবে? নবী (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ। তারপর হাবশী লোকটি এমন কান্নাই কাঁদল যে, তার প্রাণ বায়ু বেরিয়ে গেল। ইবন উমর (র) বলেন, আমি স্বচক্ষে দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ্ তাকে তার কবরে রাখছেন।
(তাবারানী (র) আইয়ুব ইব্‌ন উৎবার রিওয়ায়েতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
كتاب البعث
فصل في ذكر الحساب وغيره
5482- وَعَن ابْن عمر رَضِي الله عَنْهُمَا أَن رجلا من الْحَبَشَة أَتَى النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ يَا رَسُول الله فضلْتُمْ علينا بالألوان والنبوة أَفَرَأَيْت إِن آمَنت بِمثل مَا آمَنت بِهِ وعملت بِمثل مَا عملت بِهِ إِنِّي لكائن مَعَك فِي الْجنَّة فَقَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم نعم ثمَّ قَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من قَالَ لَا إِلَه إِلَّا الله كَانَ لَهُ بهَا عهد عِنْد الله وَمن قَالَ سُبْحَانَ الله كتب لَهُ مائَة ألف حَسَنَة فَقَالَ رجل يَا رَسُول الله كَيفَ نهلك بعد هَذَا فَقَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَالَّذِي نَفسِي بِيَدِهِ إِن الرجل ليجيء يَوْم الْقِيَامَة بِعَمَل لَو وضع على جبل لأثقله فتقوم النِّعْمَة من نعم الله فتكاد تستنفد ذَلِك كُله لَوْلَا مَا يتفضل الله من رَحمته ثمَّ نزلت هَل أَتَى على الْإِنْسَان حِين من الدَّهْر لم يكن شَيْئا مَذْكُورا الْإِنْسَان 1 إِلَى قَوْله وَإِذا رَأَيْت ثمَّ رَأَيْت نعيما وملكا كَبِيرا الْإِنْسَان 02
فَقَالَ الحبشي يَا رَسُول الله وَهل ترى عَيْني فِي الْجنَّة مثل مَا ترى عَيْنك فَقَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم نعم فَبكى الحبشي حَتَّى فاضت نَفسه قَالَ ابْن عمر فَأَنا رَأَيْت رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يدليه فِي حفرته

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ من رِوَايَة أَيُّوب بن عتبَة
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান