আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২৪. অধ্যায়ঃ জানাযা

হাদীস নং: ৫২৩২
অধ্যায়ঃ জানাযা
ধৈর্যধারণের প্রতি উৎসাহ প্রদান, বিশেষত সেই ব্যক্তিকে, যে তার ধন-প্রাণে বিপদাক্রান্ত হয়েছে। বালা-মুসিবত, রোগ-ব্যাধি ও জ্বর তাপের ফযীলত এবং দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস সমূহঃ
৫২৩২. হযরত ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ)-এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে স্পর্শ করে বল্লাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আপনি তো অতি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি এত বেশি জ্বরে আক্রান্ত, যেমন তোমাদের মধ্য থেকে দু'জন জ্বরাক্রান্ত হয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি এ কারণে যে. আপনার জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, কোন মুসলমান কোন রোগ-ব্যাধি অথবা অন্য কোন কষ্টে পতিত হলে আল্লাহ্ তার বদলে তার পাপসমূহ ঝরিয়ে দেন, যেমন বৃক্ষতার পাতা ঝরিয়ে দেয়।
(বুখারী ও মুসলিম (র) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
كتاب الجنائز
التَّرْغِيب فِي الصَّبْر سِيمَا لمن ابْتُلِيَ فِي نَفسه أَو مَاله وَفضل الْبلَاء وَالْمَرَض والحمى وَمَا جَاءَ فِيمَن فقد بَصَره
5232- وَعَن ابْن مَسْعُود رَضِي الله عَنهُ قَالَ دخلت على النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فمسسته فَقلت يَا رَسُول الله إِنَّك توعك وعكا شَدِيدا فَقَالَ أجل إِنِّي أوعك كَمَا يوعك رجلَانِ مِنْكُم قلت ذَلِك بِأَن لَك أَجْرَيْنِ قَالَ أجل مَا من مُسلم يُصِيبهُ أَذَى من مرض فَمَا سواهُ إِلَّا حط الله بِهِ سيئاته كَمَا تحط الشَّجَرَة وَرقهَا

رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ সাহাবী ছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসুস্থতার খবর পেয়ে তিনি তাঁকে দেখতে গেলেন। গিয়ে দেখেন তিনি জ্বরে আক্রান্ত। হয়তো গায়ে হাত দিয়ে কিংবা চেহারা দেখে বুঝেছিলেন তাঁর জ্বর খুব বেশি। সে কথা যখন প্রকাশ করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানালেন, তাঁর জ্বরের মাত্রা অন্যান্য লোকের দু'জনের সমান। তখন হযরত ইবনে মাসউদ রাযি, তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আপনার এতবেশি জ্বর হয়তো এ কারণে যে, আপনি দ্বিগুণ ছওয়াব পাবেন। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা স্বীকার করলেন এবং এই বলে অসুখ-বিসুখের ফযীলত বয়ান করলেন যে, তাতে গুনাহ মাফ হয়। গুনাহ মাফের বিষয়টাকে তিনি গাছের পাতা ঝরে পড়ার সংগে তুলনা করলেন। সাধারণত শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যায়। তাতে গাছ একদম ন্যাড়া হয়ে যায়। একটি পাতাও থাকে না। এ তুলনা দ্বারা বোঝানো হচ্ছে, অসুখ-বিসুখেও সেভাবেই সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যায়। একটিও বাকি থাকে না, যেমন এক হাদীছে আছে-

حَتَّى يَمْشِيَ فِي الأَرْضِ وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ

‘ফলে ভূপৃষ্ঠে সে বিচরণ করে সম্পূর্ণ নিষ্পাপ অবস্থায়।
অবশ্য অন্যান্য হাদীছ দ্বারা জানা যায়, এর দ্বারা সগীরা গুনাহ বোঝানো উদ্দেশ্য, যেহেতু কবীরা গুনাহ মাফের জন্য তাওবা প্রয়োজন। আর বান্দার হক মাফের জন্যে বান্দার পক্ষ থেকে ক্ষমালাভও জরুরি।
প্রশ্ন হচ্ছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্বর অন্যান্য লোকের জ্বরের দ্বিগুণ হত কেন? এর উত্তর অপর এক হাদীছ দ্বারা জানা যায়। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাযি. বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাঁর গায়ের কম্বলের উপর হাত রাখলাম। তাতেই জ্বরের উত্তাপ অনুভব করলাম। বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার জ্বর কী তীব্র। তিনি বললেন, হাঁ, আমরা নবীদের জামাত। আমাদের অসুখ বিসুখ দ্বিগুণ হয়ে থাকে। ফলে প্রতিদানও দ্বিগুণ দেওয়া হয়।

বোঝা গেল, নবীগণকে অসুখ-বিসুখও বেশি দেওয়া হয় অধিকতর প্রতিদান দেওয়ার জন্য। তাঁরা আল্লাহ তা'আলার সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়পাত্র। যারা আল্লাহর বেশি প্রিয়, তাদের মর্যাদাবৃদ্ধির জন্য আল্লাহ তা'আলা নানা ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। রোগ-ব্যাধি ও বালা-মসিবতে ফেলাও তার একটি।
এক হাদীছে আছে, হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, সর্বাপেক্ষা বেশি কঠিন পরীক্ষা নেওয়া হয় কার? তিনি বললেন, নবীগণের। তারপর যারা নবীগণের যতবেশি অনুসারী তাদের। মানুষের পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে তার দীনদারী অনুপাতে।

তো মহানবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু নবীগণের মধ্যেও সবার সেরা. তাই তাঁর পরীক্ষাও নেওয়া হত সর্বাপেক্ষা বেশি কঠিন। সেই হিসেবেই তাঁর জ্বর হত অন্যদের চেয়ে বেশি এবং কষ্ট-ক্লেশও করতে হয়েছে সর্বাধিক।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারাও রোগ-ব্যাধিতে সবরের ফযীলত জানা গেল।

খ. আরও জানা গেল, যে ব্যক্তি আল্লাহর যত প্রিয় তার পরীক্ষাও ততবেশি কঠিন।

গ. রোগ-ব্যাধি দ্বারা যেমন গুনাহ মাফ হয়, তেমনি মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়। নবীগণের রোগ-ব্যাধি দ্বারা তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ৫২৩২ | মুসলিম বাংলা