আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
২১. অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
হাদীস নং: ৩৮২৩
অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথে সম্পর্ক অটুট রাখার প্রতি অনুপ্রেরণা এবং সম্পর্ক ছিন্নকরার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৩৮২৩. হযরত মায়মুনা (রা) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি তাঁর একটি দাসী মুক্ত করেন অথচ তিনি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এ অনুমতি নেননি। যে দিন তাঁর ঘরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পালা এলো, সেদিন তিনি বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনি কি জানেন যে, আমি আমার একটি দাসী মুক্ত করেছি। তিনি বলেন: তুমি (মুক্ত) করেছ? তিনি বলেন: হাঁ। তিনি বলেনঃ তুমি যদি দাসীটি তোমার মামাদের দিতে, তাতে তুমি অধিক সাওয়াব পেতে।
(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসঈ বর্ণিত। 'সদাচরণ অনুচ্ছেদে' হযরত ইবনে উমার (রা) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ একদা এক ব্যক্তি নবী (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল: আমি একটি জঘন্য অপরাধ করেছি। সুতরাং আমার তাওবার ব্যবস্থা আছে কি? তিনি বলেনঃ তোমার মা (জীবিত) আছে কি? সে বলল: হাঁ। তিনি বলেন। তবে তুমি তার সাথে সদাচরণ কর (খিদমত কর)।
ইবনে হিব্বান ও হাকিম বর্ণিত।)
(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসঈ বর্ণিত। 'সদাচরণ অনুচ্ছেদে' হযরত ইবনে উমার (রা) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ একদা এক ব্যক্তি নবী (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল: আমি একটি জঘন্য অপরাধ করেছি। সুতরাং আমার তাওবার ব্যবস্থা আছে কি? তিনি বলেনঃ তোমার মা (জীবিত) আছে কি? সে বলল: হাঁ। তিনি বলেন। তবে তুমি তার সাথে সদাচরণ কর (খিদমত কর)।
ইবনে হিব্বান ও হাকিম বর্ণিত।)
كتاب البر والصلة
التَّرْغِيب فِي صلَة الرَّحِم وَإِن قطعت والترهيب من قطعهَا
3823- وَعَن مَيْمُونَة رَضِي الله عَنْهَا أَنَّهَا أعتقت وليدة لَهَا وَلم تستأذن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَلَمَّا كَانَ يَوْمهَا الَّذِي يَدُور عَلَيْهَا فِيهِ قَالَت أشعرت يَا رَسُول الله أَنِّي أعتقت وليدتي قَالَ أَو فعلت قَالَت نعم قَالَ أما أَنَّك لَو أعطيتهَا أخوالك كَانَ أعظم لأجرك
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
وَتقدم فِي الْبر حَدِيث ابْن عمر قَالَ أَتَى النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم رجل فَقَالَ إِنِّي أذنبت ذَنبا عَظِيما فَهَل لي من تَوْبَة فَقَالَ هَل لَك من أم قَالَ لَا
قَالَ فَهَل لَك من خَالَة قَالَ نعم قَالَ فبرها
رَوَاهُ ابْن حبَان وَالْحَاكِم
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
وَتقدم فِي الْبر حَدِيث ابْن عمر قَالَ أَتَى النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم رجل فَقَالَ إِنِّي أذنبت ذَنبا عَظِيما فَهَل لي من تَوْبَة فَقَالَ هَل لَك من أم قَالَ لَا
قَالَ فَهَل لَك من خَالَة قَالَ نعم قَالَ فبرها
رَوَاهُ ابْن حبَان وَالْحَاكِم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, উম্মুল মুমিনীন হযরত মায়মুনা রাযি. তাঁর একটি দাসীকে আযাদ করে দিলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, তুমি তাকে আযাদ না করে যদি তোমার মামাদের দিয়ে দিতে, সেটাই ভালো হতো। এতেই তুমি বেশি ছাওয়াব পেতে। বেশি ছাওয়াব পাওয়ার কারণ এর দ্বারা একসঙ্গে দু'টি সৎকর্ম করা হয়- সদাকা করা ও আত্মীয়ের সেবা করা।
কেউ কেউ বলেন, এর দ্বারা বোঝা যায় দাস-দাসীকে আযাদ করাও অতি বড় ছাওয়াবের কাজ বটে, তবে তারচে'ও বেশি ছাওয়াব হয় আত্মীয়-স্বজনকে দান করে দিলে। কিন্তু সাধারণভাবে তাদের এ মত সঠিক নয়। বিভিন্ন হাদীছে দাস-দাসীকে মুক্তিদান করার বিপুল ছাওয়াবের কথা বর্ণিত আছে। এটা একটা বিশেষ ঘটনা। এ ক্ষেত্রে সম্ভবত হযরত মায়মুনা রাযি.-এর মামাদের অর্থসংকট বিবেচনা করা হয়েছে। অপর এক হাদীছ দ্বারা এর সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন নাসাঈর আস সুনানুল কুবরায় আছে
عن الهلالية التي كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم : أنها كانت لها جارية سوداء، فقالت : يا رسول الله، إني أردت أن أعتق هذه، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أفلا تفدين بها بنت أخيك أو بنت أختك من رعاية الغنم؟
'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিলাল গোত্রীয়া স্ত্রী (হযরত মায়মুনা রাযি.)-এর একটি কালো দাসী ছিল। একদিন তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার এ দাসীটিকে আযাদ করতে চাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বরং এটির দ্বারা তোমার ভাইয়ের মেয়েকে কিংবা বললেন তোমার বোনের মেয়েকে ছাগল চরানোর কষ্ট থেকে মুক্ত কর।৮৮
এর দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া তখনই উত্তম, যখন তাদের অভাব-অনটন থাকে। প্রকৃতপক্ষে আযাদ করা উত্তম না আত্মীয়কে দেওয়া উত্তম, তা পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। সে হিসেবে কখনও আযাদ করা উত্তম হবে এবং কখনও আত্মীয়দের দেওয়া উত্তম হবে।
এ হাদীছে দেখা যাচ্ছে হযরত মায়মূনা রাযি. তাঁর দাসীটি আযাদ করেছিলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতি ছাড়াই। আযাদ করে দেওয়ার পর তিনি তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। কেন তাঁর অনুমতি ছাড়া আযাদ করলেন, এ কারণে তিনি তাঁকে তিরস্কার করেননি এবং তাঁর প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেননি; বরং কী করলে উত্তম হত সে পরামর্শ দান করেছেন। এটা প্রমাণ করে স্ত্রী তার নিজ মালিকানাধীন বস্তুতে সম্পূর্ণ স্বাধীন। নিজ ইচ্ছামত তা খরচ করতে পারে। এজন্য স্বামীর অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। কাজেই কোনও স্ত্রী তার মালিকানাধীন বস্তু নিজ ইচ্ছামত খরচ করতে চাইলে স্বামীর তাতে বাধা দেওয়া উচিত নয়। হাঁ, যদি অপচয় করে কিংবা নাজায়েয খাতে খরচ করে, সে ক্ষেত্রে স্বামীর তাকে সতর্ক করার অধিকার আছে। সেটা তার কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। অবশ্য স্ত্রীর নিজস্ব সম্পদে তার একচ্ছত্র অধিকার থাকলেও বড় ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করাই সৌজন্য ও ভদ্রতার দাবি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারাও মামা, খালা ও আত্মীয়-স্বজনের সেবাযত্ন করার ও তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার গুরুত্ব বোঝা যায়। সুতরাং অন্য খাতে দান-দক্ষিণা অপেক্ষা তাদের পেছনে খরচ করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া চাই।
খ. স্ত্রী তার নিজস্ব সম্পদ স্বাধীনভাবে খরচ ও দান-খয়রাত করার অধিকার রাখে। এজন্য স্বামীর অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। তবে সে খরচ অবশ্যই বৈধ পন্থায় হতে হবে।
গ. স্বামীর উচিত স্ত্রীকে তার অর্থ-সম্পদ ভালো খাতে খরচ করার পরামর্শ দেওয়া।
৮৮, নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৪৯১২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ১০৬১
কেউ কেউ বলেন, এর দ্বারা বোঝা যায় দাস-দাসীকে আযাদ করাও অতি বড় ছাওয়াবের কাজ বটে, তবে তারচে'ও বেশি ছাওয়াব হয় আত্মীয়-স্বজনকে দান করে দিলে। কিন্তু সাধারণভাবে তাদের এ মত সঠিক নয়। বিভিন্ন হাদীছে দাস-দাসীকে মুক্তিদান করার বিপুল ছাওয়াবের কথা বর্ণিত আছে। এটা একটা বিশেষ ঘটনা। এ ক্ষেত্রে সম্ভবত হযরত মায়মুনা রাযি.-এর মামাদের অর্থসংকট বিবেচনা করা হয়েছে। অপর এক হাদীছ দ্বারা এর সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন নাসাঈর আস সুনানুল কুবরায় আছে
عن الهلالية التي كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم : أنها كانت لها جارية سوداء، فقالت : يا رسول الله، إني أردت أن أعتق هذه، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أفلا تفدين بها بنت أخيك أو بنت أختك من رعاية الغنم؟
'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিলাল গোত্রীয়া স্ত্রী (হযরত মায়মুনা রাযি.)-এর একটি কালো দাসী ছিল। একদিন তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার এ দাসীটিকে আযাদ করতে চাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বরং এটির দ্বারা তোমার ভাইয়ের মেয়েকে কিংবা বললেন তোমার বোনের মেয়েকে ছাগল চরানোর কষ্ট থেকে মুক্ত কর।৮৮
এর দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া তখনই উত্তম, যখন তাদের অভাব-অনটন থাকে। প্রকৃতপক্ষে আযাদ করা উত্তম না আত্মীয়কে দেওয়া উত্তম, তা পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। সে হিসেবে কখনও আযাদ করা উত্তম হবে এবং কখনও আত্মীয়দের দেওয়া উত্তম হবে।
এ হাদীছে দেখা যাচ্ছে হযরত মায়মূনা রাযি. তাঁর দাসীটি আযাদ করেছিলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতি ছাড়াই। আযাদ করে দেওয়ার পর তিনি তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। কেন তাঁর অনুমতি ছাড়া আযাদ করলেন, এ কারণে তিনি তাঁকে তিরস্কার করেননি এবং তাঁর প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেননি; বরং কী করলে উত্তম হত সে পরামর্শ দান করেছেন। এটা প্রমাণ করে স্ত্রী তার নিজ মালিকানাধীন বস্তুতে সম্পূর্ণ স্বাধীন। নিজ ইচ্ছামত তা খরচ করতে পারে। এজন্য স্বামীর অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। কাজেই কোনও স্ত্রী তার মালিকানাধীন বস্তু নিজ ইচ্ছামত খরচ করতে চাইলে স্বামীর তাতে বাধা দেওয়া উচিত নয়। হাঁ, যদি অপচয় করে কিংবা নাজায়েয খাতে খরচ করে, সে ক্ষেত্রে স্বামীর তাকে সতর্ক করার অধিকার আছে। সেটা তার কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। অবশ্য স্ত্রীর নিজস্ব সম্পদে তার একচ্ছত্র অধিকার থাকলেও বড় ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করাই সৌজন্য ও ভদ্রতার দাবি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারাও মামা, খালা ও আত্মীয়-স্বজনের সেবাযত্ন করার ও তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার গুরুত্ব বোঝা যায়। সুতরাং অন্য খাতে দান-দক্ষিণা অপেক্ষা তাদের পেছনে খরচ করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া চাই।
খ. স্ত্রী তার নিজস্ব সম্পদ স্বাধীনভাবে খরচ ও দান-খয়রাত করার অধিকার রাখে। এজন্য স্বামীর অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। তবে সে খরচ অবশ্যই বৈধ পন্থায় হতে হবে।
গ. স্বামীর উচিত স্ত্রীকে তার অর্থ-সম্পদ ভালো খাতে খরচ করার পরামর্শ দেওয়া।
৮৮, নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৪৯১২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ১০৬১
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)