আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২০. অধ্যায়ঃ হদ্দ

হাদীস নং: ৩৫১০
অধ্যায়ঃ হদ্দ
অধ্যায়: হদ্দ ও অপরাপর বিষয়।
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধাজ্ঞার প্রতি অনুপ্রেরণা এবং যে ব্যক্তি এ দু'টি বর্জন করেও তোষামদ করে তার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৩৫১০. হযরত আবু বাকর সিদ্দীক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে লোক সকল! তোমরা এ আয়াত পাঠ করে থাকঃ "হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের কথা চিন্তা কর, অপর কারোর পথভ্রষ্ট হওয়ার তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না, যদি তোমরা নিজেরা সঠিক পথে থাকতে পার। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে। এরপর তিনি তোমাদের বলে দেবেন, তোমরা (পার্থিব জীবন) কি করেছিলেন।" (সুরা: আল-মায়িদা: ১০৫।) আমি (আবু বাকর (রা) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি। লোকেরা যখন দেখবে, যালিম যুলম করছে, কিন্তু তারা তার প্রতিরোধ করছে না, এরূপ লোকদের উপর আল্লাহ্ অচিরেই শাস্তি পাঠাবেন।
(আবু দাউদ, তিরমিযী বর্ণিত। ইমাম তিরমিযী (র) বলেন। হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনে মাজাহ, নাসাঈ ও ইবনে হিব্বানের সহীহ্ গ্রন্থে বর্ণিত। ইমাম নাসাঈ (র) নিজ শব্দযোগে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছিঃ "কোন সম্প্রদায় যখন কাউকে খারাপ কাজ করতে দেখে অথচ তা থেকে তাকে বারণ করে না, তখন আল্লাহ্ তাদের সকলের উপর শাস্তি সার্বজনীন করে দেন"।
আবু দাউদের এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি। যখন কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে গুনাহের কাজ হতে থাকে, আর তাদের তা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিরোধ করে না, তখন অচিরেই আল্লাহ্ তাদের উপর শাস্তি ব্যাপক করে দেন।)
كتاب الحدود
كتاب الْحُدُود وَغَيرهَا
التَّرْغِيب فِي الْأَمر بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْي عَن الْمُنكر والترهيب من تَركهمَا والمداهنة فيهمَا
3510- وَعَن أبي بكر الصّديق رَضِي الله عَنهُ قَالَ يَا أَيهَا النَّاس إِنَّكُم تقرؤون هَذِه الْآيَة يَا أَيهَا الَّذين آمنُوا عَلَيْكُم أَنفسكُم لَا يضركم من ضل إِذا اهْتَدَيْتُمْ الْمَائِدَة 501
وَإِنِّي سَمِعت رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول إِن النَّاس إِذا رَأَوْا الظَّالِم فَلم يَأْخُذُوا على يَدَيْهِ أوشك أَن يعمهم الله بعقاب من عِنْده

رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ وَقَالَ حَدِيث حسن صَحِيح وَابْن مَاجَه وَالنَّسَائِيّ وَابْن حبَان فِي صَحِيحه
وَلَفظ النَّسَائِيّ إِنِّي سَمِعت رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول إِن الْقَوْم إِذا رَأَوْا الْمُنكر فَلم يغيروه عمهم الله بعقاب
وَفِي رِوَايَة لأبي دَاوُد سَمِعت رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول مَا من قوم يعْمل فيهم بِالْمَعَاصِي ثمَّ يقدرُونَ على أَن يُغيرُوا ثمَّ لَا يُغيرُوا إِلَّا يُوشك أَن يعمهم الله مِنْهُ بعقاب

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ বর্ণনায় হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. যে আয়াত উল্লেখ করেছেন, বাহ্যদৃষ্টিতে তা দ্বারা বোঝা যায়- কেউ যদি নিজে শরী'আতের আদেশ-নিষেধ মেনে চলে তবে তার মুক্তির জন্য সেটাই যথেষ্ট, অন্যে কী করল না করল তা দেখার প্রয়োজন নেই। কেউ কেউ এ আয়াতটি দ্বারা সে অর্থই বুঝেছিল। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি, তাদের সে ধারণা ভুল সাব্যস্ত করেন এবং হাদীছ দ্বারা এ আয়াতটির প্রকৃত অর্থ তাদেরকে বুঝিয়ে দেন।

তিনি যে হাদীছ উল্লেখ করেছেন তাতে স্পষ্টই বলা হয়েছে- জালেমকে তার জুলুমের কাজে বাধা না দেওয়া হলে যারা জুলুম করে এবং যারা জুলুম করে না আল্লাহ তা'আলা তাদের সকলকেই শাস্তিদান করবেন। জালেমকে শাস্তিদান করবেন তার জুলুমের কারণে আর অন্যদেরকে শাস্তিদান করবেন জুলুমে বাধা না দিয়ে নীরবদর্শক হয়ে থাকার কারণে। বোঝা গেল জুলুমে বাধা দান করা ফরয ও অবশ্যকর্তব্য। এর আগে যতগুলো হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে তার সবগুলোতেই সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজে নিষেধ করাকে জরুরি সাব্যস্ত করা হয়েছে।

হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি, হাদীছটির উল্লেখ দ্বারা বোঝাতে চাচ্ছেন যে, তোমরা আসলে আয়াতটির ভুল ব্যাখ্যা করছ। এক বর্ণনায় আছে, তিনি তাদেরকে এ কথাও বলেছিলেন যে-

وَتَضَعُونَهَا غَيْرَ مَوْضِعِهَا

এবং তোমরা একে ভুল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছ। মুসনাদে আহমান, হাদীছ নং ১৬
বস্তুত সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজে নিষেধ করা অবশ্যই জরুরি এবং সাধ্যমত এটা করতেই হবে। আয়াতটির বক্তব্য এর পরিপন্থী নয়। আয়াতে বোঝানো হচ্ছে যে, তোমরা নিজেরা সৎকর্মে প্রতিষ্ঠিত ও অসৎকর্ম হতে বিরত থেকে যারা সৎকর্ম করে না তাদেরকে যদি সৎকর্ম করতে বল এবং যারা অসৎকর্ম করে তাদেরকে সাধ্যমত বাধাদান কর আর তা সত্ত্বেও তারা তা থেকে ফিরে না আসে, তবে তাদের এ বিপথগামিতা দ্বারা তোমাদের কোনও ক্ষতি হবে না, যেহেতু তোমরা তোমাদের কর্তব্য পালন করেছ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারাও অন্যায়-অসৎকাজে বাধা দেওয়ার আবশ্যিকতা বোঝা যায়।

খ. এর দ্বারা জানা যায় যে, হাদীছ কুরআন মাজীদের ব্যাখ্যা। কুরআন মাজীদের কোনও আয়াতে কোনও বিষয় অস্পষ্ট থাকলে হাদীছে তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাই কুরআন বোঝার জন্য হাদীছের দ্বারস্থ হওয়া জরুরি।

গ. যারা কুরআন ও হাদীছের যথেষ্ট জ্ঞান রাখে না তাদের উচিত নয় নিজে নিজে কোনও আয়াত বা হাদীছের ব্যাখ্যা করতে যাওয়া বা তাদের নিজেদের যা বুঝে আসে তা নিয়ে বসে থাকা। তাদের কর্তব্য আলেমদের শরণাপন্ন হয়ে নিজেদের বুঝ সঠিক না ভুল—তা তাদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া।

ঘ. এটা উলামায়ে কিরামের দায়িত্ব যে, তারা যদি কাউকে কুরআন-হাদীছের ভুল ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা করতে দেখেন, তবে সে ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করবেন এবং মানুষের মধ্যে তা প্রচার হয়ে গেলে মানুষকেও সে ব্যাপারে সাবধান করে দেবেন। সে ক্ষেত্রে মানুষের কর্তব্য তাদের সমালোচনা না করে তাদের বক্তব্য গ্রহণ করে নেওয়া, যেহেতু তারা তাদের ওপর অর্পিত যিম্মাদারীই পালন করেছেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান