আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৬. অধ্যায়ঃ বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়

হাদীস নং: ৩০০০
অধ্যায়ঃ বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়
স্বামীর প্রতি তার স্ত্রীর হক আদায় ও তার প্রতি সদাচরণ এবং স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীর হক আদায় ও আনুগত্য করার অনুপ্রেরণা এবং স্বামীর হক বিনষ্ট করা ও বিরোধিতা করার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৩০০০. হযরত মু'আয ইবনে জাবাল (রা) সূত্রে নবী (ﷺ)-থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন স্ত্রী তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দেবে না। যদি সে কষ্ট দেয়, তবে হুর স্ত্রী বলে। তুমি তাকে কষ্ট দিও না, আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। কেননা, সে কেবল ক্ষণিকের জন্যই তোমার কাছে থাকছে, সে অচিরেই তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।
(ইবনে মাজাহ্ ও তিরমিযী বর্ণিত। ইমাম তিরমিযী (র) বলেন: হাদীসটি হাসান।
يوشك অচিরেই, অতি সত্তর, খুব শীঘ্রই।)
كتاب النكاح
ترغيب الزَّوْج فِي الْوَفَاء بِحَق زَوجته وَحسن عشرتها وَالْمَرْأَة بِحَق زَوجهَا وطاعته وترهيبها من إِسْقَاطه ومخالفته
3000- وَعَن معَاذ بن جبل رَضِي الله عَنهُ عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لَا تؤذي امْرَأَة زَوجهَا فِي الدُّنْيَا إِلَّا قَالَت زَوجته من الْحور الْعين لَا تؤذيه قَاتلك الله فَإِنَّمَا هُوَ عنْدك دخيل يُوشك أَن يفارقك إِلَيْنَا

رَوَاهُ ابْن مَاجَه وَالتِّرْمِذِيّ وَقَالَ حَدِيث حسن
يُوشك أَي يقرب ويسرع ويكاد

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে কষ্টদানের পরিণাম বলা হয়েছে যে, এরূপ স্ত্রীকে জান্নাতের হুর অভিশাপ দিয়ে থাকে। বলাবাহুল্য এটা সে ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যখন এ কষ্ট দেওয়াটা অন্যায়ভাবে হয়ে থাকে অর্থাৎ তার কাছে স্বামীর যে অধিকার আছে, সে অধিকার আদায়ে অবহেলার কারণে যদি স্বামী কষ্ট পেয়ে থাকে। পক্ষান্তরে স্ত্রীর নিজের যে অধিকার স্বামীর কাছে আছে, স্বামী যদি তা আদায়ে গড়িমসি করে আর স্ত্রী তার কাছে তা দাবি করার কারণে সে মনে কষ্ট পায়, তবে এটা নাহক কষ্ট। এজন্য স্ত্রীকে দায়ী করা হবে না।
হাদীছে হুরদের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, সে তো তোমার কাছে অতিথি। তার মানে অতিথি যেমন মেজবানের বাড়িতে অল্পসময়ের জন্য থাকে, তেমনি তোমার এ স্বামী অল্পকালের জন্যই তোমার কাছে আছে। বাস্তবিকপক্ষে আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন অতি অল্পকালীন জীবনই বটে। আখেরাতের জীবন অনন্ত কালের আর দুনিয়ার জীবন যত দীর্ঘই হোক না কেন তা সীমিত। অসীমের বিপরীতে সীমিত যত দীর্ঘই হোক না কেন তা অতি অল্পই। বোঝানো হচ্ছে, এ অল্প কিছুদিন তোমার কাছে আছে। তাও তুমি কষ্ট দিচ্ছ! তোমার তো প্রাণভরে তার সেবা করা উচিত ছিল, যাতে সীমিত জীবনের পর অসীম জীবনেও তার সঙ্গিনী হয়ে থাকতে পার।
দ্বিতীয়ত হুরদের এ কথার দ্বারা একটা ঈমানী দায়িত্বের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কেননা স্বামীকে যখন মেহমান বলা হয়েছে, তখন স্ত্রীর কর্তব্য সম্মানজনকভাবে তার সেবাযত্ন করা। অতিথির সম্মানজনক সেবা করা ঈমানের দাবি। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-

وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ

‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।৩৬০

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল স্বামীকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া জায়েয নয়। কাজেই প্রত্যেক স্ত্রীর এর থেকে বিরত থাকা উচিত।

খ. জান্নাতে মুমিনদের হূর স্ত্রী থাকবে।

গ. দুনিয়ার জীবন সামান্য ক'দিনের। এর মায়ায় আখেরাত ভুলতে নেই।

ঘ. মেহমানকে ইজ্জত-সম্মান করা উচিত। এটা ঈমানের দাবি।

৩৬০. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬০১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৪৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৫৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৫০০; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৬৭২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৬২১; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ৩৩৪৭৩; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৫৮৫; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ২০৭৯; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১০২
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান