আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১২. অধ্যায়ঃ জিহাদ

হাদীস নং: ২১৬৩
অধ্যায়ঃ জিহাদ
জিহাদ করা ও জিহাদের সংকল্প ছাড়া মৃত্যুবরণ করার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন ও বিভিন্ন পর্যায়ের মৃত্যু যাতে মানুষ শহীদের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয় এবং প্লেগ মহামারী থেকে পলায়নের হুঁশিয়ারী প্রসঙ্গে
২১৬৩. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদ না করে মৃত্যুবরণ করল এবং জিহাদের ইচ্ছার উদ্রেকও তার অন্তরে হল না, সে এক প্রকার মুনাফিকী তথা কপটতা নিয়েই মৃত্যুবরণ করল।
(হাদীসটি আবু দাউদ, মুসলিম ও নাসাঈ বর্ণনা করেছেন।)
كتاب الْجِهَاد
التَّرْهِيب من أَن يَمُوت الْإِنْسَان وَلم يغز وَلم ينْو الْغَزْو وَذكر أَنْوَاع من الْمَوْت تلْحق أَرْبَابهَا بِالشُّهَدَاءِ والترهيب من الْفِرَار من الطَّاعُون
2163- وَعَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَاتَ وَلم يغز وَلم يحدث بِهِ نَفسه مَاتَ على شُعْبَة من النِّفَاق

رَوَاهُ مُسلم وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

যে ব্যক্তি ঈমানের দাবী করার পর ও সারা জীবন আল্লাহর পথে কোন জিহাদ করেনি বা অন্তরে জিহাদের কোন কামনা বাসনা পোষণ করেনি বস্তুতঃ সে ব্যক্তির জীবন মুনাফিকসূলভ। যদি দুর্ভাগ্যবশত সে অবস্থায় তার মৃত্যু হয় তা হলে নিফাকের এক অবস্থায়ই সে দুনিয়া ত্যাগ করল।

[বিঃ দ্রঃ নিজের জানমাল কুরবান করে আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্যই মু'মিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে।]

জলে স্থলে যখন আল্লাহর দীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষিত হয় তখন কোন মু'মিন ব্যক্তিই নীরব থাকতে পারে না। জীবনের যাবতীয় আরামকে পদাঘাত করে আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে বিপদের আগুনে ঝাঁপিড়ে পড়ে তাদের মোকাবিলা করার জন্য। জিহাদ মুসলমানের জাতীয় দায়িত্ব। দীনের প্রচার প্রসার ও ইসলামের আখলাকী, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা ইসলামী শরীআতকে পূর্ণভাবে জীবনের সকল স্তরে কায়েম করা মুসলমানদের অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য। এই জিম্মাদারী বা দায়িত্ব পালনের জন্য যে চেষ্টা সাধনা করা হয় তা জিহাদের অন্তর্গত। ইসলামী শিক্ষার অভাবে অনেকে এ ধরনের দীনি প্রচেষ্টাকে জিহাদ হিসাবে গণ্য করে না। জিহাদের চূড়ান্ত পর্যায় হচ্ছে কিতাল বা যুদ্ধ। প্রথম স্তরে অংশগ্রহণকারীগণ স্বাভাবিকভাবে উৎসাহ উদ্দীপনা, আন্তরিকতার সাথে দ্বিতীয় স্তরের জিম্মাদারী পালনে সর্বদা ব্যস্ত থাকে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে প্রথম স্তরের জিম্মাদারী পালনের মধ্যেই মুমিন ব্যক্তির জিন্দেগী শেষ হয়ে যায়। দ্বিতীয় স্তরের জিম্মাদারী অর্থাৎ শত্রুর সামনে দাঁড়িয়ে সে অস্ত্রের দ্বারা যুদ্ধ করার সুযোগ লাভ করে না। উভয়স্তরে অংশগ্রহণকারী মুমিনগণ জিহাদের জিম্মাদারী পালন করে। এ ধরনের কাজে আত্মনিয়োগ করা সকল মুমিনের কর্তব্য। কোন শরীআতগ্রাহ্য কারণবশতঃ কোন স্তরে অংশ না নিতে পারলে মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য হবে উভয় স্তরের মুজাহিদদেরকে সর্বোতভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা। এরূপ করতেও যদি কেউ শরীয়তসম্মতকরণে অক্ষম হয়, তাহলে অন্তরের দ্বারা মুজাহিদদেরকে ভালবাসতে হবে। নিজে শরীক না হতে পারার জন্য মনে মনে অনুশোচনা করতে হবে। আর মনের মধ্যে এরূপ আকাক্ষা রাখতে হবে যে, কোন না কোন দিন সেও এরূপ কাজে আত্মনিয়োগ করে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল প্রদত্ত জিম্মাদারী পালন করবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান