আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১২. অধ্যায়ঃ জিহাদ

হাদীস নং: ২০১৪
আল্লাহ্ তা'আলার পথে শাহাদত প্রার্থনায় উৎসাহ দান প্রসঙ্গে
২০১৪. হযরত মুয়ায ইবন জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে বলতে শুনেছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে উটনী দোহনকারীর দোহনের দু'টানের মধ্যবর্তী সামান্য সময়ও জিহাদ করল, নিঃসন্দেহে জান্নাত তার জন্য অবধারিত হয়ে গেল। আর যে ব্যক্তি অকপট চিত্তে আল্লাহর কাছে শাহাদত প্রার্থনা করল, তারপর সে স্বাভাবিক মৃত্যুমুখে পতিত হল অথবা নিহত হল, সে শহীদের সওয়াব পাবে। যে বাক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে সামান্য যখমী হল, অথবা পাথরে আঘাত পেল, কিয়ামতের দিন সে আরো বেশি আহতাবস্থায় উপস্থিত হবে। তার আঘাতটির রং থাকবে জাফরানের এবং গন্ধ হবে মিশকের মত। তারপর রাবী হাদীসটি বর্ণনা করেন।
(হাদীসটি আবু দাউদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান-সহীহ। নাসাঈ, ইবন মাজাহ এবং ইবন হিব্বানও তাঁর 'সহীহ' গ্রন্থে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে ইবন হিব্বান তাঁর বর্ণনায় বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অকৃত্রিম অন্তরে শাহাদত কামনা করে, আল্লাহ তাকে শাহাদতের মর্যাদা দান করেন যদিও সে তার আপন শয্যায় মৃত্যুবরণ করে। হাদীসটি হাকিমও বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন: এটি মুসলিম ও বুখারীর শর্তানুযায়ী সহীহ।)
التَّرْغِيب فِي سُؤال الشَّهَادَة فِي سَبِيل الله تَعَالَى
2014- وَعَن معَاذ بن جبل رَضِي الله عَنهُ أَنه سمع رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول من قَاتل فِي سَبِيل الله فوَاق نَاقَة فقد وَجَبت لَهُ الْجنَّة وَمن سَأَلَ الله الْقَتْل من نَفسه صَادِقا ثمَّ مَاتَ أَو قتل فَإِن لَهُ أجر شَهِيد وَمن جرح جرحا فِي سَبِيل الله أَو نكب نكبة فَإِنَّهَا تَجِيء يَوْم الْقِيَامَة كأغزر مَا كَانَت لَوْنهَا لون الزَّعْفَرَان وريحها ريح الْمسك
فَذكر الحَدِيث

رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ وَقَالَ حَدِيث حسن صَحِيح وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه وَابْن حبَان فِي صَحِيحه بِنَحْوِهِ إِلَّا أَنه قَالَ فِيهِ وَمن سَأَلَ الله الشَّهَادَة مخلصا أعطَاهُ الله أجر شَهِيد وَإِن مَاتَ على فرَاشه
وَرَوَاهُ الْحَاكِم وَقَالَ صَحِيح على شَرطهمَا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছ দ্বারাও সত্যতার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। আরও জানা যায় নিয়তের সাথেও সত্যতার সম্পর্ক আছে। যদি আল্লাহ তা'আলাকে খুশি করার জন্য কোনও কাজের ইচ্ছা করা হয় আর মনেপ্রাণে সে কাজ বাস্তবায়নের ইচ্ছা ও চেষ্টাও থাকে, তবে বলা হবে তার নিয়ত সত্য। অর্থাৎ সত্যিই সে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে কাজটি করতে চেয়েছে। এরূপ সত্য ও খাঁটি নিয়ত আল্লাহ কবুল করে নেন। কাজেই কোনও ওজরবশত যদি সে কাজটি করার সুযোগ তার নাও হয়, তবুও আল্লাহ তা'আলা তাকে সেই কাজের ফযীলত দান করেন। এস্থলে দৃষ্টান্তস্বরূপ শাহাদাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ যদি আল্লাহর পথে শহীদ হতে চায়, অর্থাৎ দীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনে জান দিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রার্থনা জানায় যে, হে আল্লাহ! আমাকে তোমার পথে শহীদ হওয়ার তাওফীক দান কর, তবে আল্লাহ তা'আলা তার এ সদিচ্ছা কবুল করে নেন। অতঃপর তার যদি রণক্ষেত্রে প্রাণ দেওয়ার সুযোগ না হয়, হয়তো যুদ্ধই সংঘটিত হয়নি কিংবা তা সংঘটিত হলেও বিশেষ ওজরবশত তাতে তার যোগদান করার সুযোগ হয়নি, তবে এ অবস্থায় নিজ বিছানায় পড়ে মারা গেলেও সে শহীদী মর্যাদা লাভ করবে। তার সত্যিকার নিয়তকে বস্তবিক শাহাদাতরূপে গণ্য করা হবে। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাস্তব উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন-

إلى بالمدينة لرِجَالًا مَا سِرْكُمْ مَسِيرًا وَلا قَطَعْتُمْ وَادِيًا إِلَّا كَانُوا مَعَكُمْ، حَبَسَهُمُ الْغَدْرُ

‘মদীনায় এমন কিছু লোক রয়ে গেছে যে, তোমরা যে পথ চলেছ ও যত উপত্যকা অতিক্রম করেছ, তাতে তারা (ছওয়াবে) তোমাদের সংগে থেকেছে। ওজর তাদের আটকে রেখেছে (ফলে তারা তোমাদের সংগে আসতে পারেনি)। তো মদীনায় অবস্থিত সেই সাহাবীগণ যুদ্ধে না এসেও যুদ্ধে যোগদানকারীদের মত ছওয়াবের অধিকারী হয়েছিলেন। এমনকি পথচলা ও উপত্যকা পাড়ি দেওয়ার ছওয়াব থেকেও তারা বঞ্চিত হননি। নিজ ঘরে বসে থেকেই সে ছওয়াব পেয়ে গেছেন। তা তাঁরা পেয়েছিলেন কেবল এ কারণে যে, যুদ্ধে যোগদানের খাঁটি নিয়ত তাঁদের অন্তরে ছিল। সত্যমনেই চেয়েছিলেন অন্যদের মত তাঁরাও জান-মাল দিয়ে জিহাদে শরীক থাকবেন এবং জিহাদে যাওয়া-আসার সবরকম কষ্ট স্বীকার করবেন। কিন্তু ওজরের কারণে তাঁরা যেতে পারেননি। তা যেতে না পারলেও যাওয়ার নিয়ত যেহেতু ছিল, তাই ছওয়াব পেয়ে গেছেন। বিষয়টা কেবল জিহাদের জন্য নির্দিষ্ট নয়। সত্যমনের যে- কোনও নেক নিয়তের ক্ষেত্রেই এ নিয়ম প্রযোজ্য।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া গেল যে, নিয়তের ক্ষেত্রেও সততা অবলম্বন জরুরি এবং আল্লাহর কাছে বান্দার কোনও নেক নিয়তই বৃথা যায় না ।

খ. আরও শিক্ষা পাওয়া গেল যে, আল্লাহর পথে শহীদ হতে পারা পরম সৌভাগ্যের বিষয়। তাই মু'মিন ব্যক্তির উচিত আল্লাহর কাছে শাহাদাত কামনা করা। হযরত ‘উমর রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি আল্লাহর কাছে দু'আ করতেন-
صحيح البخاري (4/ 16)
وقال عمر: «اللهم ارزقني شهادة في بلد رسولك»
‘হে আল্লাহ! আমাকে আপনার নবীর নগরে শাহাদাত নসীব করুন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ২০১৪ | মুসলিম বাংলা