আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৯. অধ্যায়ঃ রোযা

হাদীস নং: ১৬৪৩
অধ্যায়ঃ রোযা
খুরমা দ্বারা ইফতার করার প্রতি উৎসাহ প্রদান, তা পাওয়া না গেলে পানি দ্বারাই ইফতার সেরে ফেলা
১৬৪৩. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন: যার নিকট খুরমা রয়েছে, সে যেন তা দিয়েই ইফতার করে। আর যে খুরমা পেল না, সে যেন পানি দ্বারাই ইফতার করে ফেলে। কেননা এটি পবিত্রকারী।
(হাদীসটি ইব্‌ন খুযায়মা তাঁর 'সহীহ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। হাকিমও এটি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে সহীহ।)
كتاب الصَّوْم
التَّرْغِيب فِي الْفطر على التَّمْر فَإِن لم يجد فعلى المَاء
1643- وَعنهُ رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من وجد تَمرا فليفطر عَلَيْهِ وَمن لم يجد فليفطر على المَاء فَإِنَّهُ طهُور

رَوَاهُ ابْن خُزَيْمَة فِي صَحِيحه وَالْحَاكِم وَقَالَ صَحِيح على شَرطهمَا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার সম্পর্কে বলেছেন যে, তোমরা ইফতার করবে খেজুর দিয়ে। কেননা এতে বরকত আছে। বরকত বলা হয় যে বস্তু যে কাজের, তার অল্প পরিমাণ দ্বারাই সে কাজ পূরণ হয়ে যাওয়া। খেজুর এমন এক খাদ্য, যার অল্প দ্বারাই ক্ষুধা মেটে, দুর্বলতা দূর হয় ও যথেষ্ট পুষ্টি লাভ হয়। ইফতারকালে এ তিনওটি বিষয় প্রয়োজন। কেননা এ সময় অনেক ক্ষুধা থাকে। সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার ফলে শরীরে পুষ্টি সরবরাহ বন্ধ থাকে এবং শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এ কারণে ইফতারে খেজুরের ব্যবহার সর্বাপেক্ষা বেশি উপযোগী। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু উৎসাহ দিয়েছেন, তাই খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাবও বটে।

যদি খেজুর সহজে পাওয়া না যায়, তবে পানি দ্বারা ইফতার করবে। ইফতারে অন্য কোনও আয়োজন থাকলেও আগে পানি খেয়ে নেওয়া চাই। এতে করেও মুস্তাহাব আদায় হবে। যদি খেজুর ও পানি দু'টোই থাকে, তবে আগে খেজুর খেয়ে তারপর পানি খাওয়া উচিত।

প্রকাশ থাকে যে, ইফতার করা সুন্নতে মুআক্কাদা। এটা ইসলামী রোযার বিশেষত্ব।
আর এ সুন্নত আদায়ের মুস্তাহাব পন্থা হলো খেজুর বা পানি দ্বারা ইফতার করা। এ হাদীছে পানির বিশেষত্ব বলা হয়েছে যে, এটি طهور (পবিত্রকারক)। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً طَهُورًا

‘আমি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে বর্ষণ করেছি পবিত্রকারী পানি।১১২

আরও ইরশাদ হয়েছে-

وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُمْ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً لِيُطَهِّرَكُمْ بِهِ

‘তিনি আসমান থেকে তোমাদের প্রতি পানি বর্ষণ করেন তা দ্বারা তোমাদেরকে পবিত্র করার জন্য।১১৩

অর্থাৎ পানি ব্যবহার দ্বারা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নাপাকি দূর হয়ে যায়। ওযূ ও গোসল দ্বারা অপবিত্র শরীর পবিত্র হয়। বাহ্যিক এ পবিত্রতার প্রভাব অন্তরেও পড়ে। নিয়মিত ওযূ-গোসল করার দ্বারা গুনাহ মাফ হয় ও অন্তরের কলুষ দূর হয়। সুতরাং পানি বাহ্যিক ও গুপ্ত এবং দৃশ্য ও অদৃশ্য অপবিত্রতা থেকে পবিত্রকারক এক মহানিআমত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব।

খ. খেজুর একটি বরকতপূর্ণ খাবার। এর বিশেষ মর্যাদা দেওয়া চাই।

গ. খেজুর পাওয়া না গেলে অন্যান্য ইফতারসামগ্রী খাওয়ার আগে পানি খেয়ে নেওয়া চাই।

ঘ. পানি প্রকাশ-অপ্রকাশ্য অপবিত্রতা থেকে মুক্তিলাভের এক মহামূল্যবান উপকরণ। এর মূল্য ও গুরুত্ব উপলব্ধি করা উচিত।

১১২. সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ৪৮

১১৩. সূরা আনফাল (৮), আয়াত ১১
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান