আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৯. অধ্যায়ঃ রোযা

হাদীস নং: ১৫১৯
শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযার প্রতি উৎসাহ দান প্রসঙ্গ
১৫১৯. হযরত সাওবান (রা) (রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর আযাদকৃত দাস) রাসূলুল্লাহ্ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন: ঈদুল ফিতরের পর যে ব্যক্তি ছয়টি রোযা পালন করবে, সে পূর্ণ বছর রোযা পালনকারী হিসেবে গণ্য হবে। কেননা যে একটি পুণ্য করবে, তাকে দশগুণ বিনিময় দেয়া হবে।
(হাদীসাটি ইবন মাজাহ বর্ণনা করেছেন। নাসাঈও এটি নিম্নরূপ বর্ণনা করেছেনঃ
আল্লাহ্ একটি পুণ্যের বিনিময় দশগুণ করে দিয়েছেন। অতএব একমাসে দশমাস। আর ঈদুল ফিতরের পর ছয় দিন রোযা পালনে পূর্ণ বছরের রোযা হয়ে যায়।
ইবন খুযায়মা এটি তাঁর 'সহীহ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনা এবং নাসাঈর অপর একটি বর্ণনা নিম্নরূপ: রমযানের এক মাসের রোযা দশ মাসের রোযার সমান। আর (শাওয়ালের) ছয়দিনের রোযা দু'মাসের রোযার সমান। অতএব এতে পূর্ণ বৎসরের রোখা হয়ে গেল।
ইবন হিব্বানও এ হাদীসটি তাঁর 'সহীহ' গ্রন্থে নিম্নরূপ বর্ণনা করেছেন: যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখল এবং শাওয়ালেরও ছয়দিন রোযা পালন করল, সে যেন পূর্ণ বৎসর রোযা রাখল।
এ হাদীসটি আহমদ, বাযযার ও তাবারানী হযরত জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন।)
التَّرْغِيب فِي صَوْم سِتّ من شَوَّال
1519- وَعَن ثَوْبَان رَضِي الله عَنهُ مولى رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم عَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ من صَامَ سِتَّة أَيَّام بعد الْفطر كَانَ تَمام السّنة {من جَاءَ بِالْحَسَنَة فَلهُ عشر أَمْثَالهَا} الْأَنْعَام 061
رَوَاهُ ابْن مَاجَه وَالنَّسَائِيّ وَلَفظه جعل الله الْحَسَنَة بِعشر أَمْثَالهَا فشهر بِعشْرَة أشهر وَصِيَام سِتَّة أَيَّام بعد الْفطر تَمام السّنة
وَابْن خُزَيْمَة فِي صَحِيحه وَلَفظه وَهُوَ رِوَايَة النَّسَائِيّ قَالَ صِيَام شهر رَمَضَان بِعشْرَة أشهر وَصِيَام سِتَّة أَيَّام بشهرين فَذَلِك صِيَام السّنة
وَابْن حبَان فِي صَحِيحه وَلَفظه من صَامَ رَمَضَان وستا من شَوَّال فقد صَامَ السّنة
رَوَاهُ أَحْمد وَالْبَزَّار وَالطَّبَرَانِيّ من حَدِيث جَابر بن عبد الله

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বান্দার সৎকর্মের প্রতিদান দেওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার নীতি
এতে আল্লাহ তা'আলা তাঁর একটি নীতি বয়ান করেছেন এই যে
(যে ব্যক্তি একটি সৎকর্ম করবে, তার জন্য রয়েছে তার দশগুণ বেশি ছাওয়াব)। অর্থাৎ কেউ একটি সৎকর্ম করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে তার দশগুণ বদলা দেন, এমনকি তা বৃদ্ধি করতে করতে সাতশ' গুণ বরং তারচেও অনেক বেশি দিয়ে থাকেন।

কুরআন মাজীদে এর একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে এভাবে যে-
مَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنُبُلَةٍ مِائَةً
حَبَّةٍ وَاللهُ يُطْعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
যারা আল্লাহর পথে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত এ রকম, যেমন একটি শস্যদানা সাতটি শীষ উদ্‌গত করে (এবং) প্রতিটি শীর্ষে একশ' দানা জন্মায়। আর আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন (ছাওয়াবে) কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় (এবং) সর্বজ্ঞ।

এক হাদীছে আছে, যখন এ আয়াতটি নাযিল হয়, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা'আলার কাছে নিজ উম্মতের জন্য আরও বেশি প্রতিদান চাইলেন। তখন আল্লাহ তা'আলা নাযিল করেন-
مَن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضعِفهُ لَذَ أَضْعَافًا كَثِيرَةٌ وَاللَّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسطُ وَإِلَيْهِ
'কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম পন্থায় ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার কল্যাণে তা বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন? আল্লাহই সংকট সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সচ্ছলতা দান করেন, আর তাঁরই কাছে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।'
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মতকে আরও বেশি দিন। তখন আল্লাহ নাযিল করলেন-
إِنَّمَا يُوَفَّ الصُّبِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
"যারা সবর অবলম্বন করে তাদেরকে তাদের ছাওয়াব দেওয়া হবে অপরিমিত।"

মহান আল্লাহ অতি সহজ সহজ আমলের বিনিময়েও বান্দাকে অপরিমিত ছাওয়াব দিয়ে থাকেন। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত আছে-
مَنْ دَخَلَ السُّوْقَ، فَقَالَ : لا إله إلا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ
يُحْيِي وَيُمِيتُ، وَهُوَ حَيٌّ لا يَمُوتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ ، وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، كَتَبَ الله لَهُ أَلْفَ أَلْفِ حَسَنَةٍ، وَمَحَا عَنْهُ أَلْفِ أَلْفِ سَيِّئَةِ، وَرَفَعَ لَهُ أَلْفَ أَلْفِ دَرَجَةٍ
'কোনও ব্যক্তি বাজারে প্রবেশকালে যদি এই দু'আ পাঠ করে-
لا إله إلا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ، وَهُوَ حَيٌّ لا يَمُوتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ ، وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
(আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনও শরীক নেই। সার্বভৌমত্ব তাঁরই এবং সমস্ত প্রশংসাও তাঁরই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। তিনি জীবন্ত, তাঁর মৃত্যু নেই। তাঁরই হাতে সমস্ত কল্যাণ। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান, তবে আল্লাহ তা'আলা তাকে দশ হাজার
নেকী দান করেন এবং তার দশ হাজার গুনাহ মাফ করেন আর তার মর্যাদা দশ হাজার স্তর উন্নীত করেন।

হযরত তামীম দারী রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দশবার পাঠ করে-
أَشْهَدُ أَنْ لا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، إلهَا وَاحِدًا أَحَدًا صَمَدًا، لَمْ يَتَّخِذُ صَاحِبَةً وَلا وَلَدًا، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনও শরীক নেই। তিনি এক অদ্বিতীয় মাবুদ, যিনি কারও মুখাপেক্ষী নন; বরং সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তাঁর কোনও স্ত্রী নেই এবং কোনও সন্তানও নেই আর তাঁর সমতুল্য নেই কেউ।) আল্লাহ তা'আলা তার জন্য চার লাখ নেকী লিপিবদ্ধ করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. বান্দার সৎকর্মে আল্লাহ তা'আলা বড়ই খুশি হন। তাই প্রতিদান দেন বহুগুণ বেশি। সুতরাং আমাদের যথাসম্ভব বেশি বেশি সৎকর্মে অগ্রগামী থাকা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ১৫১৯ | মুসলিম বাংলা