আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৮. অধ্যায়ঃ সদকা

হাদীস নং: ১১৬২
অনুচ্ছেদ
১১৬২. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: যে ব্যক্তি পাঁজরে আগুনের আংটি পরিধান করতে চায়, সে যেন স্বর্ণের আংটি পরিধান করে। আর যে ব্যক্তি আগুনের হার পরিধান করতে চায়, সে যেন স্বর্ণের হার পরিধান করে। আর যে ব্যক্তি আগুনের চুড়ি পরিধান করতে চায়, সে যেন স্বর্ণের চুড়ি পরিধান করে। অলংকার পরিধান করতে চাইলে তোমরা রূপার অলংকার পরিধান করতে পার।
(আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সনদে উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন।)

[গ্রন্থকার বলেন]: উল্লিখিত হাদীসসমূহে যে অলংকার পরিধানজনিত কারণে জাহান্নামের শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে, তা কয়েকটি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ:
১. উল্লিখিত হাদীসসমূহের বিধান রহিত। কেননা বিশুদ্ধ বর্ণনামতে নারী সমাজের জন্য স্বর্ণের অলংকার পরিধান করা জায়েয আছে।
২. যারা অলংকারের যাকাত আদায় করে না, উপরোক্ত হাদীসসমূহ তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর প্রমাণ স্বরূপ আমর ইবন শু'আয়ব, হযরত আয়েশা ও আসমা (রা) বর্ণিত হাদীসসমূহ রয়েছে। নারী সমাজের অলংকারে যাকাতের বিধান কার্যকর হওয়ার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। উমর ইবন খাত্তাব (রা)-এর নিকট অলংকারের যাকাত দেওয়া ওয়াজিব। অনুরূপ আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবন মাস'উদ, আবদুল্লাহ ইবন আমর, সাঈদ ইবন মুসায়্যিব, আতা, সাঈদ ইবন জুবায়র (রা), আবদুল্লাহ ইবন শাদ্দাদ, মায়মূন ইবন মিহরান, ইবন সীরীন, মুজাহিদ, জাবির ইবন যায়দ, যুহরী, সুফয়ান সাওরী, আবূ হানীফা (র) ও তাঁর শিষ্যবর্গের মাযহাব। আল্লামা মুনযিরী (র)-ও এ অভিমত পোষণ করেন।
নারীদের অলংকারে যাকাত নেই বলে যাঁরা অভিমত দিয়েছেন, তাঁরা হলেন: আবদুল্লাহ ইবন উমর, জাবির ইবন আবদুল্লাহ, আসমা বিনত আবূ বকর, আয়েশা (রা), শাবী, কাসিম ইবন মুহাম্মদ, মালিক, আহমদ,
ইসহাক, আবু উবায়দ (র)। ইমাম মুনযিরী (র) বলেনঃ ইমাম শাফিঈ (র) ইরাকে অবস্থানকালে উপরোক্ত মত পোষণ করতেন। মিসরে এসে তিনি নীরবতা পালন করেন। তিনি বলেনঃ আমি ইস্তিখারার মাধ্যমে এই মাযহাব অবলম্বন করেছি।
[খাতাবী (র) বলেন]: অলংকারের যাকাত দান ওয়াজিব, এই অভিমত পোষণকারীদের পক্ষে কুরআনুল কারীমের প্রকাশ্য আয়াত বিদ্যমান। হাদীসসমূহ তাঁদের অভিমতের পক্ষে সাহায্য করছে। আর যাঁরা দ্বিমত পোষণ করেন, তাঁদের অভিমত চিন্তার উপর নির্ভরশীল। অবশ্য তাঁদের পক্ষেও কিছু সংখ্যক হাদীস রয়েছে। তবে যাকাত আদায় করাই শ্রেয়। আল্লহ সর্বজ্ঞ।
৩. যে মহিলা সৌন্দর্য প্রদর্শনের লক্ষ্যে অলংকার ব্যবহার করে, তাদের জন্য এ সকল সতর্কতামূলক হাদীস। নাসাঈ ও আবু দাউদ-এর বর্ণনায় এটাই বুঝা যায়। যেমন, রিবঈ ইবন খারাশ তাঁর স্ত্রী হতে, তিনি হুযায়ফা (রা)-এর বোন হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন: হে নারী সমাজ। রূপার অলংকার পরিধানে তোমাদের অসুবিধা কোথায়? মনে রেখ, তোমাদের মধ্যকার যারা সোনার অলংকার পরিধান করবে এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন করবে, অবশ্যই সে অলংকার দ্বারা তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। হুযায়ফা (রা)-এর বোনের নাম ফাতিমা। ইমাম নাসাঈ-এর কোন কোন বর্ণনা সূত্রে এরূপ রয়েছে যে, রিবঈ হতে, তিনি তাঁর স্ত্রী হতে, তিনি হুযায়ফা (রা)-এর বোন হতে বর্ণনা করেন। উল্লেখ্য, হুযায়ফা (রা)-এর কয়েকটি বোন ছিলেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা) সাহচর্য পেয়েছেন।
ইমাম নাসাঈ (র) এই মর্মে একটি অনুচ্ছেদ বর্ণনা করেছেনঃ بَاب الْكَرَاهَة للنِّسَاء فِي إِظْهَار حلي الذَّهَب এরপর তিনি হযরত উকবা ইবন আমির (রা)-এর হাদীস বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর পরিবারবর্গকে অলংকার ও রেশমী বস্তু পরিধান করতে নিষেধ করতেন এবং বলতেন: তোমরা যদি জান্নাতে অলংকার ও রেশমী বস্তু পরিধান করতে চাও, তাহলে এ দু'টি তোমরা দুনিয়ায় পরিধান করো না। উপরোক্ত হাদীসটি হাকিম (র)-ও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন: এই হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ। উক্ত মাসআলার ব্যাপারে ইমাম নাসাঈ (র)-এর অভিমত সাওবান ও আসমা (রা) বর্ণিত হাদীসের মর্মের অনুরূপ।
৪. যারা সোনার মোটা চুড়ি ও শাখা পরিধান করে, তাদের মধ্যে দু'টি দোষ পরিলক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তা হল: ১. অহংকার এবং ২. বাহ্যিক প্রদর্শনীমূলক অহমিকা। হাদীসের অবশিষ্টাংশ উপরোক্ত অর্থেই নেওয়া হয়েছে। এ নিষেধের সম্ভাবনার মধ্যেও একটি সুযোগ রয়েছে। অল্প স্বর্ণ ব্যবহার জায়েয, এ পর্যায়ে ইমাম নাসাঈ (র) হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) স্বর্ণের অলংকার পরিধান করতে নিষেধ করেছেন, তবে অল্প পরিমাণ স্বর্ণ ব্যবহারে কোন আপত্তি নেই। অনুরূপভাবে নাসাঈ (র) আবূ কিলাবা সূত্রে হযরত মু'আবিয়া ইবন আবূ সুফয়ান (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) চিতা বাঘের উপর আরোহণ করা থেকে এবং স্বর্ণ ব্যবহার করা হতে নিষেধ করেছেন। তবে অল্প পরিমাণ ব্যবহারে কোন আপত্তি নেই। মূলত আবূ কিলাবা (র) মু'আবিয়া (রা) থেকে সরাসরি শোনেন নি। তবে নাসাঈ (র) কাতাদা থেকে, তিনি আবু কাতাদা (রা) থেকে, তিনি আবুশ-শায়খ হতে বর্ণনা করেন যে, মু'আবিয়া (রা) রাসূলুল্লাহ থেকে শুনেছেন। এরপর তিনি অনুরূপ উল্লেখ করেন। উক্ত সূত্রটি মুত্তাসিল। আবুশ শায়খ বিশ্বস্ত ও বিখ্যাত মুহাদ্দিস। ইমাম তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবন হিব্বানের 'সহীহ' গ্রন্থে হযরত আবদুল্লাহ ইবন বুরায়দা হতে, তিনি তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন:
একদা এক ব্যক্তি লোহার আংটি পরে রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট আসে। রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে বলেনঃ তোমার হাতে আগুনের অলংকার দেখছি কেন? এরপর তিনি অবশিষ্ট হাদীস বর্ণনা করেন। পরে সে ব্যক্তি বলল: আমি কিসের আংটি ব্যবহার করব? তিনি বললেন: রূপার আংটি। তবে তা যেন পূর্ণ এক মিসকাল না হয়। আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
فصل
1162 - وَعَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ من أحب أَن يحلق جَبينه حَلقَة من نَار فليحلقه حَلقَة من ذهب وَمن أحب أَن يطوق جَبينه طوقا من نَار فليطوقه طوقا من ذهب وَمن أحب أَن يسور جَبينه بِسوار من نَار فليسوره بِسوار من ذهب وَلَكِن عَلَيْكُم بِالْفِضَّةِ فالعبوا بهَا

رَوَاهُ أَبُو دَاوُد بِإِسْنَاد صَحِيح
قَالَ المملي رَحمَه الله وَهَذِه الْأَحَادِيث الَّتِي ورد فِيهَا الْوَعيد على تحلي النِّسَاء بِالذَّهَب تحْتَمل وُجُوهًا من التَّأْوِيل
أَحدهَا أَن ذَلِك مَنْسُوخ فَإِنَّهُ قد ثَبت إِبَاحَة تحلي النِّسَاء بِالذَّهَب
الثَّانِي أَن هَذَا فِي حق من لَا يُؤَدِّي زَكَاته دون من أَدَّاهَا وَيدل على هَذَا حَدِيث عَمْرو بن شُعَيْب وَعَائِشَة وَأَسْمَاء
وَقد اخْتلف الْعلمَاء فِي ذَلِك فَروِيَ عَن عمر بن الْخطاب رَضِي الله عَنهُ أَنه أوجب فِي الْحلِيّ الزَّكَاة وَهُوَ مَذْهَب عبد الله بن عَبَّاس وَعبد الله بن مَسْعُود وَعبد الله بن عَمْرو وَسَعِيد بن الْمسيب وَعَطَاء وَسَعِيد بن جُبَير وَعبد الله بن شَدَّاد وَمَيْمُون بن مهْرَان وَابْن سِيرِين وَمُجاهد وَجَابِر بن زيد وَالزهْرِيّ وسُفْيَان الثَّوْريّ وَأبي حنيفَة وَأَصْحَابه وَاخْتَارَهُ ابْن الْمُنْذر
وَمِمَّنْ أسقط الزَّكَاة فِيهِ عبد الله بن عمر وَجَابِر بن عبد الله وَأَسْمَاء ابْنة أبي بكر وَعَائِشَة وَالشعْبِيّ وَالقَاسِم بن
مُحَمَّد وَمَالك وَأحمد وَإِسْحَاق وَأَبُو عُبَيْدَة
قَالَ الْمُنْذر وَقد كَانَ الشَّافِعِي قَالَ بِهَذَا إِذا هُوَ بالعراق ثمَّ وقف عَنهُ بِمصْر وَقَالَ هَذَا مِمَّا أستخير الله تَعَالَى فِيهِ
وَقَالَ الْخطابِيّ الظَّاهِر من الْآيَات يشْهد لقَوْل من أوجبهَا والأثر يُؤَيّدهُ وَمن أسقطها ذهب إِلَى النّظر وَمَعَهُ طرف من الْأَثر وَالِاحْتِيَاط أَدَاؤُهَا وَالله أعلم
الثَّالِث أَنه فِي حق من تزينت بِهِ وأظهرته وَيدل لهَذَا مَا رَوَاهُ النَّسَائِيّ وَأَبُو دَاوُد عَن ربعي بن خرَاش عَن امْرَأَته عَن أُخْت لِحُذَيْفَة أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ يَا معشر النِّسَاء مَا لَكِن فِي الْفضة مَا تحلين بِهِ أما إِنَّه لَيْسَ مِنْكُن امْرَأَة تتحلى ذَهَبا وتظهره إِلَّا عذبت بِهِ وَأُخْت حُذَيْفَة اسْمهَا فَاطِمَة
وَفِي بعض طرقه عِنْد النَّسَائِيّ عَن ربعي عَن امْرَأَة عَن أُخْت لِحُذَيْفَة رَضِي الله عَنْهَا وَكَانَ لَهُ أَخَوَات قد أدركن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَقَالَ النَّسَائِيّ بَاب الْكَرَاهَة للنِّسَاء فِي إِظْهَار حلي الذَّهَب ثمَّ صَدره بِحَدِيث عقبَة بن عَامر أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم كَانَ يمْنَع أَهله الْحِلْية وَالْحَرِير وَيَقُول إِن كُنْتُم تحبون حلية الْجنَّة وحريرها فَلَا تلبسوهما فِي الدُّنْيَا وَهَذَا الحَدِيث رَوَاهُ الْحَاكِم أَيْضا وَقَالَ صَحِيح على شَرطهمَا ثمَّ رأى النَّسَائِيّ فِي الْبَاب حَدِيث ثَوْبَان الْمَذْكُور وَحَدِيث أَسمَاء
الرَّابِع من الِاحْتِمَالَات أَنه إِنَّمَا منع مِنْهُ فِي حَدِيث الأسورة والفتخات لما رأى من غلظه فَإِنَّهُ مَظَنَّة الْفَخر وَالْخُيَلَاء وَبَقِيَّة الْأَحَادِيث مَحْمُولَة على هَذَا وَفِي هَذَا الِاحْتِمَال شَيْء وَيدل عَلَيْهِ مَا رَوَاهُ النَّسَائِيّ عَن عبد الله بن عمر رَضِي الله عَنْهُمَا أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم نهى عَن لبس الذَّهَب إِلَّا مقطعا وروى أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ أَيْضا عَن أبي قلَابَة عَن مُعَاوِيَة بن أبي سُفْيَان رَضِي الله عَنْهُمَا أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم نهى عَن ركُوب النمار وَعَن لبس الذَّهَب إِلَّا مقطعا وَأَبُو قلَابَة لم يسمع من مُعَاوِيَة وَلَكِن روى النَّسَائِيّ أَيْضا عَن قَتَادَة عَن أبي قَتَادَة عَن أبي شيخ أَنه سمع مُعَاوِيَة فَذكر نَحوه وَهَذَا مُتَّصِل وَأَبُو شيخ ثِقَة مَشْهُور
وَفِي التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ وصحيح ابْن حبَان عَن عبد الله بن بُرَيْدَة عَن أَبِيه قَالَ
جَاءَ رجل إِلَى النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَعَلِيهِ خَاتم من حَدِيد فَقَالَ مَا لي أرى عَلَيْك حلية أهل النَّار فَذكر الحَدِيث إِلَى أَن قَالَ من أَي شَيْء أتخذه قَالَ من ورق لَا تتمه مِثْقَالا
وَالله أعلم
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ১১৬২ | মুসলিম বাংলা