আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
৮. অধ্যায়ঃ সদকা
হাদীস নং: ১১৫৪
যাকাত অনাদায়ের প্রতি ভীতি প্রদর্শন ও অলংকারের যাকাত
১১৫৪. হযরত আহনাফ ইবন কায়স (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কুরায়শদের এক জামায়াতের মধ্যে বসলাম। এমন সময় সেখানে এলো কেশধারী খসখসে কাপড় পরা ও বিক্ষিপ্ত অবস্থাসম্পন্ন এক ব্যক্তি। সে এসে তাদের সালাম দিল এবং বলল: সম্পদ সঞ্চয়কারীদের (এ মর্মে) সংবাদ দিন যে, জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে গরম পাথর তাদের বুকের উপর রাখা হবে। ফলে তা তাদের গ্রীবাদেশের হাড় বিদীর্ণ করে অপর দিকে বের হয়ে যাবে। আবার তার ঘাড়ের হাড়ের উপর তা রাখা হবে। এমন কি তা গড়িয়ে বক্ষদেশ ভেদ করে বের হবে। এরপর লোকটি ফিরে গেল। অবশেষে সে একটি খুঁটির কাছে বসল। আমি তাকে অনুসরণ করলাম এবং তার কাছে বসলাম। তবে আমি জানতাম যে, সে কোন ব্যক্তি? আমি বললামঃ তুমি তাদের যা বলেছ, আমার ধারণা তাতে জাতির লোকেরা তোমার উপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। সে বলল: তারা কিছুই, বুঝে না। এতো আমার পরম বন্ধু আমাকে বলেছেন। আমি বললাম: তোমার বন্ধু কে? সে বলল: নবী (সা)। তিনি বললেন: তুমি কি উহুদ পাহাড় দেখতে পাচ্ছ? সে বলল, আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দিনের কতটুকু অংশ এখনো বাকী এবং আমি মনে করলাম, রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে তাঁর কোন প্রয়োজনে পাঠাবেন। আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড় সমান সোনা থাকে, তিন দীনার ব্যতীত অবশিষ্ট অংশ আমি (আল্লাহর পথে) ব্যয় করাই অধিক পসন্দ করি। তারা তো পৃথিবীতে সম্পদ সঞ্চয় করা ছাড়া কিছুই বুঝে না। আল্লাহর শপথ! আমি কখনো তাদের কাছে দুনিয়া প্রার্থনা করব না এবং দ্বীন সম্পর্কেও তাদের কাছে ফাতওয়াও চাই না, এমন কি আমি আল্লাহর সাথে মিলিত হয়ে যাই।
(বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
(বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
التَّرْهِيب من منع الزَّكَاة وَمَا جَاءَ فِي زَكَاة الْحلِيّ
1154 - وَعَن الْأَحْنَف بن قيس رَضِي الله عَنهُ قَالَ جَلَست إِلَى ملإ من قُرَيْش فجَاء رجل خشن الشّعْر وَالثيَاب والهيئة حَتَّى قَامَ عَلَيْهِم فَسلم ثمَّ قَالَ بشر الكانزين برضف يحمى عَلَيْهِ فِي نَار جَهَنَّم ثمَّ يوضع على حلمة ثدي أحدهم حَتَّى يخرج من نغض كتفه وَيُوضَع على نغض كتفه حَتَّى يخرج من حلمة ثديه فيتزلزل ثمَّ ولى فَجَلَسَ إِلَى سَارِيَة وتبعته وَجَلَست إِلَيْهِ وَأَنا لَا أَدْرِي من هُوَ فَقلت لَا أرى الْقَوْم إِلَّا قد كَرهُوا الَّذِي قلت
قَالَ إِنَّهُم لَا يعْقلُونَ شَيْئا
قَالَ لي خليلي
قلت من خَلِيلك قَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم أتبصر أحدا قَالَ فَنَظَرت إِلَى الشَّمْس مَا بَقِي من النَّهَار وَأَنا أرى أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يُرْسِلنِي فِي حَاجَة لَهُ قلت نعم
قَالَ مَا أحب أَن لي مثل أحد ذَهَبا أنفقهُ كُله إِلَّا ثَلَاثَة دَنَانِير وَإِن هَؤُلَاءِ لَا يعْقلُونَ إِنَّمَا يجمعُونَ الدُّنْيَا لَا وَالله لَا أسألهم دنيا وَلَا أستفتيهم عَن دين حَتَّى ألْقى الله عز وَجل
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم
قَالَ إِنَّهُم لَا يعْقلُونَ شَيْئا
قَالَ لي خليلي
قلت من خَلِيلك قَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم أتبصر أحدا قَالَ فَنَظَرت إِلَى الشَّمْس مَا بَقِي من النَّهَار وَأَنا أرى أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يُرْسِلنِي فِي حَاجَة لَهُ قلت نعم
قَالَ مَا أحب أَن لي مثل أحد ذَهَبا أنفقهُ كُله إِلَّا ثَلَاثَة دَنَانِير وَإِن هَؤُلَاءِ لَا يعْقلُونَ إِنَّمَا يجمعُونَ الدُّنْيَا لَا وَالله لَا أسألهم دنيا وَلَا أستفتيهم عَن دين حَتَّى ألْقى الله عز وَجل
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীছটিতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুহদ (বিষয়বিমুখতা)-এর বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। উহুদ মদীনা মুনাউওয়ারার সবচে' বড় পাহাড়। এত বড় পাহাড় সোনায় পরিণত হলে কী বিপুল সম্পদ হয় তা কি কল্পনা করা সম্ভব? কারও কাছে সামান্য কিছু সম্পদ জমা হয়ে গেলে সে তা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করে। কমে যাওয়ার ভয়ে তা থেকে কাউকে কিছু দিতে চায় না। যার যত হয় সে ততো বেশি চায়। কোনও গরীবের হাতে হঠাৎ কিছু টাকা-পয়সা চলে আসলে সে প্রথমেই তা দ্বারা ভালো একটি বাড়ি তৈরির চিন্তা করে। কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলছেন। তিনি গরীব হালে দিন কাটাচ্ছিলেন। তাঁর ছিল ছোট্ট কুটির। দিনের পর দিন তাঁর চুলায় আগুন জ্বলত না। কোনওরকম খেজুর ও পানি খেয়ে ক্ষুধা ও পিপাসা মেটাতেন। তা সত্ত্বেও তিনি বলছেন এত বড় উহুদ পাহাড় পুরোটা সোনা হয়ে গেলেও তিনি তার সবটা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। তিন দিনের মধ্যে সব লুটিয়ে দিতেন। এক দীনার পরিমাণও নিজের কাছে রাখতেন না। এক বর্ণনায় একদিনের কথাও আছে। তার মানে সর্বনিম্ন সময়ের মধ্যে তা বিলানোর চেষ্টা করতেন। তিন দিনের বেশি কিছুতেই পার হতে দিতেন না। এটা তাঁর সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্মোহ চরিত্রের প্রমাণ বহন করে। দুনিয়ার প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্র লোভ ছিল না। সঞ্চয়ের পক্ষপাতী ছিলেন না। সম্পদ যত বেশিই হোক না কেন, তা বিলাতেই পসন্দ করতেন। কিছু রেখে কিছু খরচ করা তাঁর ধাতে ছিল না।
হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছিলেন- (কেবল ওই সামান্য কিছু ছাড়া, যা আমি আমার ঋণ পরিশোধের জন্য রাখব)। অর্থাৎ দেনা পরিশোধের সময় হলে তখন যাতে তা পরিশোধ করতে পারি অথবা পাওনাদার যদি হাজির না থাকে আর এখনই তার পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব না হয়, তবে সে ফিরে আসার পর যাতে তা পরিশোধ করতে পারি সেজন্য দেনা পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ করে রাখব। এর দ্বারা দেনা পরিশোধের গুরুত্ব বোঝা যায়।
দান-খয়রাত করা নফল ইবাদত। কিন্তু দেনা পরিশোধ করা ফরয। তাই দেনা পরিশোধ না করে সবটা সম্পদ দান করে দেওয়া ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টাকা-পয়সা জমা করে রাখতে পসন্দ করতেন না। কিন্তু এ হাদীছে দেখা যাচ্ছে, দেনা পরিশোধ করা যায় এ পরিমাণ অর্থ নিজের কাছে রেখে দেওয়ার কথা বলছেন। কেননা এটা বান্দার হক। জীবদ্দশায় আদায় না করে গেলে আখিরাতে নিজের ছাওয়াব দিয়ে তা আদায় করতে হবে। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ الدَّيْنَ يُقْضَى مِنْ صَاحِبِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِذَا مَاتَ وَلَمْ يَقْضِهِ
“কিয়ামতের দিন দেনাদারের কাছ থেকে দেনা আদায় করিয়ে দেওয়া হবে, যদি সে তা আদায় না করে মারা যায়।'
এক ব্যক্তি দেনাদার অবস্থা মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ভাইকে বলেছিলেন-
إِن أَخَاكَ مُحْتَبَس بِدَيْنِهِ، فَاقْضِ عَنْهُ
'তোমার ভাই তার দেনার দায়ে আটক আছে। তার পক্ষ থেকে তা আদায় করে দাও।'
কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, মায়্যিত দেনাদার হলে তার দেনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা পড়াতেন না। কাজেই দেনাদার ব্যক্তির উচিত সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেনা পরিশোধের চেষ্টা করা, যাতে দেনার দায় নিয়ে কবরে যেতে না হয়।
হাদীছটি দ্বারা বোঝা গেল এমনিতে কারও কাছে অর্থ-সম্পদ থাকা দোষের নয়। দোষের হয় তখনই, যখন তা আল্লাহর পথে খরচ করা না হয়। কেউ যদি আল্লাহর জন্য আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে অর্থ-সম্পদ বিতরণে অভ্যস্ত থাকে, তবে এ অবস্থায় তার হাতে উহুদ পাহাড় পরিমাণ টাকা-পয়সা থাকলেও কোনও ক্ষতি নেই। তবে এতেও কোনও সন্দেহ নেই যে, টাকা-পয়সার আকর্ষণ বড় কঠিন। সে আকর্ষণ উপেক্ষা করে মানুষের মধ্যে তা বিলিয়ে দেওয়া খুব সহজ কাজ নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. হাদীছটি দ্বারা যুহদের উচ্চমর্যাদা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
খ. যার অর্থ-সম্পদ আছে তার কর্তব্য তা থেকে আল্লাহর পথে অকৃপণভাবে খরচ করা।
গ. এ হাদীছ দ্বারা ঋণ পরিশোধের গুরুত্বও উপলব্ধি করা যায়। এ গুরুত্বের কারণেই নিজের কাছে অর্থ-সম্পদ জমা করে রাখা অপসন্দ হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণ পরিশোধ করা যায় এ পরিমাণ অর্থ নিজের কাছে রেখে দেওয়ার কথা বলেছেন।
হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছিলেন- (কেবল ওই সামান্য কিছু ছাড়া, যা আমি আমার ঋণ পরিশোধের জন্য রাখব)। অর্থাৎ দেনা পরিশোধের সময় হলে তখন যাতে তা পরিশোধ করতে পারি অথবা পাওনাদার যদি হাজির না থাকে আর এখনই তার পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব না হয়, তবে সে ফিরে আসার পর যাতে তা পরিশোধ করতে পারি সেজন্য দেনা পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ করে রাখব। এর দ্বারা দেনা পরিশোধের গুরুত্ব বোঝা যায়।
দান-খয়রাত করা নফল ইবাদত। কিন্তু দেনা পরিশোধ করা ফরয। তাই দেনা পরিশোধ না করে সবটা সম্পদ দান করে দেওয়া ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টাকা-পয়সা জমা করে রাখতে পসন্দ করতেন না। কিন্তু এ হাদীছে দেখা যাচ্ছে, দেনা পরিশোধ করা যায় এ পরিমাণ অর্থ নিজের কাছে রেখে দেওয়ার কথা বলছেন। কেননা এটা বান্দার হক। জীবদ্দশায় আদায় না করে গেলে আখিরাতে নিজের ছাওয়াব দিয়ে তা আদায় করতে হবে। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ الدَّيْنَ يُقْضَى مِنْ صَاحِبِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِذَا مَاتَ وَلَمْ يَقْضِهِ
“কিয়ামতের দিন দেনাদারের কাছ থেকে দেনা আদায় করিয়ে দেওয়া হবে, যদি সে তা আদায় না করে মারা যায়।'
এক ব্যক্তি দেনাদার অবস্থা মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ভাইকে বলেছিলেন-
إِن أَخَاكَ مُحْتَبَس بِدَيْنِهِ، فَاقْضِ عَنْهُ
'তোমার ভাই তার দেনার দায়ে আটক আছে। তার পক্ষ থেকে তা আদায় করে দাও।'
কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, মায়্যিত দেনাদার হলে তার দেনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা পড়াতেন না। কাজেই দেনাদার ব্যক্তির উচিত সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেনা পরিশোধের চেষ্টা করা, যাতে দেনার দায় নিয়ে কবরে যেতে না হয়।
হাদীছটি দ্বারা বোঝা গেল এমনিতে কারও কাছে অর্থ-সম্পদ থাকা দোষের নয়। দোষের হয় তখনই, যখন তা আল্লাহর পথে খরচ করা না হয়। কেউ যদি আল্লাহর জন্য আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে অর্থ-সম্পদ বিতরণে অভ্যস্ত থাকে, তবে এ অবস্থায় তার হাতে উহুদ পাহাড় পরিমাণ টাকা-পয়সা থাকলেও কোনও ক্ষতি নেই। তবে এতেও কোনও সন্দেহ নেই যে, টাকা-পয়সার আকর্ষণ বড় কঠিন। সে আকর্ষণ উপেক্ষা করে মানুষের মধ্যে তা বিলিয়ে দেওয়া খুব সহজ কাজ নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. হাদীছটি দ্বারা যুহদের উচ্চমর্যাদা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
খ. যার অর্থ-সম্পদ আছে তার কর্তব্য তা থেকে আল্লাহর পথে অকৃপণভাবে খরচ করা।
গ. এ হাদীছ দ্বারা ঋণ পরিশোধের গুরুত্বও উপলব্ধি করা যায়। এ গুরুত্বের কারণেই নিজের কাছে অর্থ-সম্পদ জমা করে রাখা অপসন্দ হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণ পরিশোধ করা যায় এ পরিমাণ অর্থ নিজের কাছে রেখে দেওয়ার কথা বলেছেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: