আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৫. অধ্যায়ঃ নামাজ

হাদীস নং: ৫৫০
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সংরক্ষণ এবং ঈমানের অপরিহার্যতার প্রতি অনুপ্রেরণা এ সম্পর্কে হযরত ইবন উমর (রা)-এর হাদীস এবং অপরাপর হাদীস
৫৫০. হযরত সা'দ ইবন আবু ওয়াককাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দুই ব্যক্তি ছিলেন পরস্পর ভাই ভাই। তাদের একজন অপর ভাইয়ের চল্লিশ রাত পূর্বে ইনতিকাল করেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে প্রথম (মৃত্যুবরণকারী) ভাইযের ফযীলত আলোচিত হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন: দ্বিতীয় ভাই কি মুসলমান ছিল না? তারা বলল: হ্যাঁ, অবশ্যই। আর সে মন্দ লোক ছিল না। রাসূলুল্লাহ বললেন: তোমরা জান না, তার সালাত তাকে কোন স্তরে পৌঁছিয়েছে। অবশ্য সালাতের উপমা হল তোমাদের কারো দরজায় অবিস্থত গভীর, পরিপূর্ণ, সুমিষ্ট পানির নহরের মত। উক্ত নহরে দৈনিক পাঁচবার যে গোসল করবে, তার সম্পর্কে তোমাদের কি ধারণা, তার দেহে কি কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে? অবশ্য তোমরা জান না, তার সালাত তাকে মর্যাদার কোন স্তরে পৌঁছে দিয়েছে।
(ইমাম মালিক নিজ শব্দযোগে, আহমদ হাসান সনদে এবং নাসাঈও ইবন খুযায়মা 'সহীহ' গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ বিষয়ে ইবন খুযায়মা তাঁর 'সহীহ' গ্রন্থে আমির ইবন সা'দ ইবন আবু ওয়াককাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন: আমি সা'দ (রা) এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এর কয়েকজন সাহাবীকে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ (সা) এর যামানায় দুই ব্যক্তি ছিল পরস্পর ভাই ভাই। তাদের একজন ছিল অপরজন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। (ঘটনাক্রমে) তাদের উত্তমজন ইনতিকাল করে। এর চল্লিশ রাত পর অপরজন ইনতিকাল করে। এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ এর নিকট বর্ণনা করা হল। তিনি বললেন: সে কি সালাত আদায় করত? তারা বলল: হ্যাঁ ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে মন্দ লোক ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ তোমরা জান না, তার সালাত তাকে কোন স্তরে পৌঁছিয়েছে। হাদীসের শেষ পর্যন্ত।
التَّرْغِيب فِي الصَّلَوَات الْخمس والمحافظة عَلَيْهَا وَالْإِيمَان بِوُجُوبِهَا فِيهِ حَدِيث ابْن عمر وَغَيره
550 - وَعَن سعد بن أبي وَقاص رَضِي الله عَنهُ قَالَ كَانَ رجلَانِ أَخَوان فَهَلَك أَحدهمَا قبل صَاحبه بِأَرْبَعِينَ لَيْلَة فَذكرت فَضِيلَة الأول مِنْهُمَا عِنْد رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم ألم يكن الآخر مُسلما قَالُوا بلَى وَكَانَ لَا بَأْس بِهِ فَقَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَمَا يدريكم مَا بلغت
بِهِ صلَاته إِنَّمَا مثل الصَّلَاة كَمثل نهر عذب غمر بِبَاب أحدكُم يقتحم فِيهِ كل يَوْم خمس مَرَّات فَمَا ترَوْنَ فِي ذَلِك يبقي من درنه فَإِنَّكُم لَا تَدْرُونَ مَا بلغت بِهِ صلَاته
رَوَاهُ مَالك وَاللَّفْظ لَهُ وَأحمد بِإِسْنَاد حسن وَالنَّسَائِيّ وَابْن خُزَيْمَة فِي صَحِيحه إِلَّا أَنه قَالَ عَن عَامر بن سعد بن أبي وَقاص قَالَ سَمِعت سَعْدا وناسا من أَصْحَاب رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُولُونَ كَانَ رجلَانِ أَخَوان فِي عهد رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَكَانَ أَحدهمَا أفضل من الآخر فَتوفي الَّذِي هُوَ أفضلهما ثمَّ عمر الآخر بعد أَرْبَعِينَ لَيْلَة ثمَّ توفّي فَذكر ذَلِك لرَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ ألم يكن يُصَلِّي قَالُوا بلَى يَا رَسُول الله وَكَانَ لَا بَأْس بِهِ فَقَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وماذا يدريكم مَا بلغت بِهِ صلَاته
الحَدِيث

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নামাযকে বাড়ির সম্মুখে প্রবাহিত গভীর নদীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। নদী গভীর ও প্রবাহমান হলে তার পানি স্বচ্ছ হয়ে থাকে। পানি যত স্বচ্ছ হয়, তা দ্বারা ময়লাও ততবেশি দূর হয়। কর্মব্যস্ততায় ধুলোমলিন লোক পরিষ্কার পানি দ্বারা রোজ পাঁচবার গোসল করলে তার শরীরে আদৌ ময়লা থাকতে পারে না। ঠিক তেমনি নামায দ্বারাও পাপের মলিনতা দূর হয়। যে ব্যক্তি রোজ পাঁচবার বাড়ি থেকে বের হয়ে সামনের মসজিদে নামায পড়বে, তার সেদিনের সমস্ত সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ، كَفَّارَاتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ، مَا لَمْ تُغْشَ الْكَبَائِرُ .
'পাঁচ নামায এবং জুমু'আ হতে অপর জুমু'আ তার মধ্যবর্তী সমস্ত গুনাহের জন্য কাফ্ফারা, যাবৎ না কবীরা গুনাহ করা হয়।

অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের প্রতি দুই ওয়াক্ত দ্বারা তার মাঝখানের সগীরা গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়। এমনিভাবে এক জুমু'আ থেকে অপর জুমু'আ দ্বারা মধ্যবর্তী সমস্ত সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আল্লাহু আকবার। কতইনা মেহেরবান আমাদের মাওলা। নামায পড়া তাঁর আদেশ। মনিব কোনও আদেশ করলে গোলাম তা মানতে বাধ্য। তাতে আবার পুরস্কার কিসের? অথচ দয়াময় আল্লাহ নামাযের বিনিময়ে আখিরাতে বিশাল পুরস্কারও দান করবেন। তদুপরি এর মধ্যে তিনি এই বাড়তি কল্যাণও নিহিত রেখেছেন যে, এর দ্বারা পাপের পঙ্কিলতাও দূর হয়। বান্দা নিজ অবহেলা ও অসতর্কতায় পাপ করে, অথচ সেজন্য সহজে যাতে সে শাস্তির সম্মুখীন না হয় সেজন্য তিনি দয়াপরবশ হয়ে অতি সহজে তার ক্ষমালাভেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এতসব মেহেরবানীর কী শোকর আমার আদায় করতে পারি? নামায দ্বারা গুনাহ মাফ হওয়া সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ
এবং (হে নবী!) দিনের উভয় প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশে নামায কায়েম কর। নিশ্চয়ই পুণ্যরাজি পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ মানে তাদের জন্য এটা এক উপদেশ।

প্রকাশ থাকে যে, নামায দ্বারা মাফ হয় শুধু সগীরা গুনাহ, কবীরা গুনাহ নয়। কবীরা শুনাহ মাফ হওয়ার জন্য তাওবা জরুরি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা আল্লাহ তা'আলার অশেষ দয়ামায়ার পরিচয় পাওয়া যায়।

খ. এ হাদীছ আমাদের অন্তরে ক্ষমাপ্রাপ্তির আশা যোগায়।

গ. এ হাদীছ আমাদেরকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ের প্রতি উৎসাহ দান করে। আমরা অবশ্যই এর উপর আমল করতে থাকব। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ৫৫০ | মুসলিম বাংলা