রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين

২. বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ৪৭ টি

হাদীস নং: ৭০০
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ৮ ওয়াজ-নসীহত করা ও তাতে মধ্যপন্থা রক্ষা
হযরত মু‘আবিয়া ইবনুল হাকাম রাযি.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে শিক্ষাদান করেন
হাদীছ নং: ৭০০

হযরত মু‘আবিয়া ইবনুল হাকাম আস সুলামী রাযি. বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে নামায পড়ছিলাম। হঠাৎ উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন হাঁচি দিল। আমি বললাম, ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন)। এতে লোকজন আমার প্রতি তাদের দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আমি বললাম, কী হল, আমার মা সন্তানহারা হোক! তোমাদের কী হল যে, আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ? তখন তারা তাদের হাত দিয়ে উরু চাপড়াতে শুরু করল। যখন দেখলাম তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে, অগত্যা আমি চুপ করলাম। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করলেন। তাঁর প্রতি আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। আমি তাঁর আগে ও পরে তাঁর চেয়ে উত্তম শিক্ষাদাতা কোনও শিক্ষক দেখিনি। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন না (অথবা এর অর্থ- তিনি চেহারা কুঞ্চিত করলেন না), মারলেন না এবং মন্দও বললেন না। তিনি বললেন, এই যে নামায, এর ভেতর মানবীয় কোনও কথাবার্তা সঙ্গত নয়; এটা তো তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠ। অথবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন বলেছেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি জাহিলী যুগের খুব কাছের (অর্থাৎ আমি সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী)। আল্লাহ আমাদের এ অবস্থায় ইসলাম দিয়েছেন যে, আমাদের কিছু লোক গণকদের কাছে যাতায়াত করে। তিনি বললেন, তুমি তাদের কাছে যেয়ো না। আমি বললাম, আমাদের কিছু লোক অশুভ প্রক্ষিণে বিশ্বাস করে। তিনি বললেন, এটা এমন একটা জিনিস, যা তারা তাদের অন্তরে অনুভব করে। তবে তা যেন তাদেরকে (ঈন্সিত কাজে) বাধা না দেয়। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ৫৩৭; সুনানে আবু দাউদ: ৯৩০; সুনানে নাসাঈ: ১২১৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা : ২৩৫২৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৯৪১; সহীহ ইবনে খুযায়মা: ৮৫৯; সহীহ ইবনে হিব্বান: ২২৪৭: বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৩৩৫১)
كتاب الأدب
بابُ الوَعظ والاقتصاد فِيهِ
700 - وعن مُعاوِيَة بن الحكم السُّلَمي - رضي الله عنه - قَالَ: بَيْنَا أنَا أُصَلّي مَعَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - إذْ عَطَسَ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ، فَقُلْتُ: يَرْحَمُكَ اللهُ، فَرَمَانِي القَوْمُ بِأبْصَارِهِمْ! فَقُلْتُ: وَاثُكْلَ أُمِّيَاهُ، مَا شَأنُكُمْ تَنْظُرُونَ إلَيَّ؟! فَجَعَلُوا يَضْرِبُونَ بأيديهم عَلَى أفْخَاذِهِمْ! فَلَمَّا رَأيْتُهُمْ يُصَمِّتُونَنِي لكِنّي سَكَتُّ، فَلَمَّا صَلّى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - فَبِأبِي هُوَ وَأُمِّي، مَا رَأيْتُ مُعَلِّمًا قَبْلَهُ وَلاَ بَعْدَهُ أحْسَنَ تَعْلِيمًا مِنْهُ، فَوَاللهِ مَا كَهَرَني، وَلاَ ضَرَبَنِي، وَلاَ شَتَمَنِي. قَالَ: «إنَّ هذِهِ الصَّلاَةَ لاَ يَصْلُحُ فِيهَا شَيْءٌ مِنْ كَلامِ النَّاسِ، إنَّمَا هِيَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ، وَقِراءةُ القُرْآنِ»، أَوْ كَمَا قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم. قلتُ: يَا رسول الله، إنّي حَدِيثُ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ، وَقَدْ جَاءَ اللهُ بِالإسْلاَمِ، وَإنَّ مِنّا رِجَالًا يَأتُونَ الْكُهّانَ؟ قَالَ: «فَلاَ تَأتِهِمْ» قُلْتُ: وَمِنّا رِجَالٌ يَتَطَيَّرُونَ؟ قَالَ: «ذَاكَ شَيْء يَجِدُونَهُ في صُدُورِهِمْ فَلاَ يَصُدَّنَّهُمْ». رواه مسلم. (1)
«الثُكْلُ» بضم الثاءِ المُثلثة: المُصيبَةُ وَالفَجِيعَةُ. «مَا كَهَرَنِي» أيْ: مَا نَهَرَنِي.
হাদীস নং: ৭০১
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ৮ ওয়াজ-নসীহত করা ও তাতে মধ্যপন্থা রক্ষা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি ওয়াজের নমুনা
হাদীছ নং: ৭০১

হযরত ইরবায ইবন সারিয়া রাযি. বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নসীহত করলেন- এমন মর্মস্পর্শী উপদেশ যে, আমাদের হৃদয় তাতে ভীত-বিগলিত হল এবং চোখ অশ্রুসজল হল। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা যেন বিদায় গ্রহণকারীর উপদেশ! সুতরাং আপনি আমাদেরকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহভীতির এবং (আমীরের) পূর্ণ আনুগত্যের, যদিও তোমাদের আমীর হয়ে যায় কোনও হাবশী গোলাম। তোমাদের কেউ জীবিত থাকলে সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নত আঁকড়ে ধরা। তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরবে (অর্থাৎ শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে)। এবং তোমরা নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ (অর্থাৎ বিদ'আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রতিটি বিদ'আতই গোমরাহী। -আবু দাউদ ও তিরমিযী
(সুনানে আবু দাউদ: ৪৬০৭; জামে তিরমিযী: ২৮৭০; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪২; মুসনাদে আহমাদ: ১৭১৪২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর ৬২২; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩২৯; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ২০৩৩৮; মুসনাদুল বাযযার: ৪২০১)

ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ স্তরের হাদীছ।
كتاب الأدب
بابُ الوَعظ والاقتصاد فِيهِ
عن أَبي نَجيحٍ العِرباضِ بنِ سَارية – رضي الله عنه – قَالَ: وَعَظَنَا رسولُ اللهِ – صلى الله عليه وسلم – مَوعظةً بَليغَةً وَجِلَتْ مِنْهَا القُلُوبُ، وَذَرَفَتْ مِنْهَا العُيُونُ، فَقُلْنَا: يَا رسولَ اللهِ، كَأَنَّهَا مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَأوْصِنَا، قَالَ: «أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللهِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَإنْ تَأَمَّر عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ، وَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اختِلافًا كَثيرًا، فَعَليْكُمْ بسُنَّتِي وسُنَّةِ الخُلَفاءِ الرَّاشِدِينَ المَهْدِيِيِّنَ، عَضُّوا عَلَيْهَا بالنَّواجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ؛ فإنَّ كلَّ بِدعَةٍ ضَلاَلَة». رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح» (1).
হাদীস নং: ৭০২
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ গাম্ভীর্য ও ধীর-শান্ত অবস্থা

الْوَقَارُ অর্থ গাম্ভীর্য ও ধীরস্থিরতা। যেসকল ক্ষেত্রে মানুষ সাধারণত অস্থিরতা প্রকাশ করে ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করে, তাতে শান্ত ও স্থির থাকাকে اَلْوَقَارُ বলা হয়। কেউ কেউ বলেন, اَلْوَقَارُ হল অনর্থক কথা ও অহেতুক কাজ হতে বিরত থাকা, অযথা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া না করা, অধিক পরিমাণে ইশারা-ইঙ্গিত করা হতে বিরত থাকা, বেশি বেশি রাগ না করা, কথা শ্রবণে মনোযোগী থাকা, উত্তর দিতে তাড়াহুড়া না করা এবং দৃষ্টি ও আওয়াজ সংযত রাখা।
السکينة অর্থ শান্ত ও স্থির থাকা। অস্থিরতা প্রকাশ ও অহেতুক কাজ করা হতে বিরত থাকাকে السکينة বলা হয়। মূলত উভয় শব্দ কাছাকাছি অর্থবোধক।
গাম্ভীর্যপূর্ণ ও ধীরশান্ত প্রকৃতি অবলম্বন করা প্রশংসনীয় গুণ। কুরআন ও হাদীছ এ গুণ অর্জনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ গুণের অধিকারী ছিলেন। এ গুণ অবলম্বন দ্বারা মানুষের মধ্যে ব্যক্তির ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ গুণের অধিকারী ব্যক্তিকে মানুষ বিশেষ সম্মান ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে। তারা তার কথা ও মতামতের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। একজন ব্যক্তিত্ববান লোক হিসেবে মানুষ তাকে নেতৃত্বের আসনে বসায়। ফলে এরূপ ব্যক্তির দ্বারা জনকল্যাণমূলক কাজ করা এবং উন্নত ও শান্তিপূর্ণ সমাজগঠনে ভূমিকা রাখা সহজ হয়। একজন সত্যিকারের মুসলিমের তো সেই ভূমিকা রাখাই উচিত। কেননা ইসলাম এক জনকল্যাণমূলক দীন। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে জনকল্যাণমূলক কাজে উৎসাহিত করে।
বস্তুত ধীরশান্ত স্বভাবের প্রয়োজন জীবনের সকল ক্ষেত্রেই। পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত সকল জায়গায় এটা গুরুত্বপূর্ণ। অস্থিরতা প্রকাশ সর্বাবস্থায় সকল ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর। দুঃখ-কষ্টে নিজেকে সঠিক অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত রাখতে যেমন ধীরস্থির গুণের প্রয়োজন, তেমনি এর প্রয়োজন সুখ-শান্তিকালে নিজেকে বেসামাল হওয়া থেকে সুরক্ষাদানের জন্যও। স্বামী, স্ত্রী, পিতা, মাতা, শিক্ষক, শাসক-প্রশাসক তথা প্রত্যেক দায়িত্বশীলের আপন আপন ক্ষেত্রে সুচারুরূপে দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের জন্য এ গুণের চর্চা অপরিহার্য। অন্যথায় দায়িত্ব-কর্তব্য পালন সুষ্ঠু ও সুন্দর তো হবেই না, উল্টো অস্থিরমতিত্বের কারণে দেখা দেবে নানা বিপত্তি। ঘরে-বাইরে সর্বত্র যে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে আমরা দেখি, তার একটা বড় কারণ আমাদের ধীরস্থিরতার অভাব। সুতরাং আমাদের মধ্যে যারা জন্মগতভাবে ধীরস্থির স্বভাবের নয়, চেষ্টা ও সাধনার মাধ্যমে এ গুণ অর্জন করে নেওয়া তাদের একান্ত কর্তব্য। সে লক্ষ্যেই এ গ্রন্থে বক্ষ্যমাণ পরিচ্ছেদটির অবতারণা।


‘গাম্ভীর্য ও ধীর-শান্ত অবস্থা’ সম্পর্কিত একটি আয়াত

وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا (63)
অর্থ: রহমানের বান্দা তারা, যারা ভূমিতে শান্তভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞলোক যখন তাদেরকে লক্ষ্য করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে।’(সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ৬৩)

ব্যাখ্যা
এ আয়াতটিতে মুমিন ব্যক্তির বিশেষ দু'টি গুণ বর্ণিত হয়েছে। একটি গুণ হাঁটাচলা সম্পর্কিত এবং আরেকটি গুণ কথাবার্তা সম্পর্কিত। প্রথম গুণটি সম্পর্কে আয়াতটিতে বলা হয়েছে-
يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا (যারা ভূমিতে শান্তভাবে চলাফেরা করে)। هون শব্দটির অর্থ নম্রতা, কোমলতা, ধীরস্থিরতা ও গাম্ভীর্য। আয়াতটিতে বোঝানো হচ্ছে, যারা আল্লাহ তা'আলার প্রকৃত বান্দা ও ইবাদত-বন্দেগীতে পরিপক্ক, তারা মাটির উপর দর্প ও অহংকারের সঙ্গে চলে না; বরং তারা চলে বিনয়ের সঙ্গে ও ধীরস্থিরভাবে।
দ্বিতীয় গুণটি হচ্ছে- وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا ‘এবং অজ্ঞলোক যখন তাদেরকে লক্ষ্য করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে'। অর্থাৎ নির্বোধ লোকেরা যখন তাদের সঙ্গে এমন কথা বলে যা তারা পসন্দ করে না, হয়তো মানসম্মানে আঘাত করে কথা বলে, গালমন্দ করে, অহেতুক খোঁচা মারে কিংবা বেহুদা কথা বলে সময় নষ্ট করে, মোটকথা অনুচিত ও অপ্রীতিকর যে কথাই তাদের সঙ্গে বলে, তাতে তারা সমানে সমান উত্তর দেয় না। অজ্ঞদের বিপরীতে তারা অজ্ঞতাসুলভ কথা বলে না। গালির উত্তর গালি দিয়ে দেয় না। বরং এমন কথা বলে, যা দ্বারা শান্তি রক্ষা হয়। নিজেরা তো উত্তেজিত হয়ই না; বরং তাদের শান্তিপূর্ণ কথার দ্বারা অপরপক্ষের উত্তেজনাও প্রশমিত হয়। অন্ততপক্ষে অধিকতর আগ্রাসী হওয়া থেকে ক্ষান্ত তো হয়ই।
বাক্যটির আরেক অর্থ হতে পারে, অজ্ঞলোকেরা যখন তাদেরকে লক্ষ্য করে অপ্রীতিকর কোনও কথা বলে, তখন তারা বলে দেয় 'সালাম'। অর্থাৎ তারা তাদের সঙ্গে কলহ-বিবাদে লিপ্ত হয় না; বরং সালাম বলে বিদায় নেয়। যেমন অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ (55)
‘তারা যখন কোনও বেহুদা কথা শোনে, তা এড়িয়ে যায় এবং বলে, আমাদের জন্য আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। তোমাদেরকে সালাম। আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না।’(সুরা কাসাস (২৮), আয়াত ৫৫)
লক্ষণীয়, যারা অন্যের সঙ্গে অপ্রীতিকর ও অবাঞ্ছনীয় কথা বলে, আয়াতে তাদেরকে অজ্ঞ সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এরূপ কথা বলা কোনও জ্ঞানী ও শিক্ষিত লোকের কাজ হতে পারে না। যারা তা বলে, তারা শিক্ষিত হলেও প্রকৃত জ্ঞানী নয়। বাস্তবিকপক্ষে তারা অজ্ঞদেরই অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেক বিদ্বান ও শিক্ষিত লোকের এদিকে লক্ষ রাখা একান্ত কর্তব্য।
আরও লক্ষণীয়, আয়াতটিতে এরূপ গুণবিশিষ্ট ব্যক্তিদের 'রহমানের বান্দা' বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়েছে। এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে, যারা চলাফেরায় শান্ত হবে এবং কতাবার্তায় হবে শান্তিপূর্ণ, অর্থাৎ ঝগড়া-ফাসাদ এড়িয়ে চলবে, তারা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে রহমত ও দয়া লাভের উপযুক্ত হবে। দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি তাঁর বিশেষ রহমত বর্ষণ করবেন।

আয়াতটির শিক্ষা
ক. দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হতে হলে ধীর-শান্ত স্বভাব আয়ত্ত করতে হবে।
খ. হাঁটাচলায় অহমিকা পরিহার করে শান্ত ও বিনয়ী থাকা জরুরি।
গ. অপ্রীতিকর ও অবাঞ্ছিত কথা বলা অজ্ঞতার পরিচায়ক।
ঘ. অজ্ঞ লোকেরা যতই অপ্রীতিকর কথা বলুক না কেন, দয়াময় আল্লাহর বান্দাদেরকে অবশ্যই তা উপেক্ষা করতে হবে। তাদের সঙ্গে কলহ-বিবাদে না জড়িয়ে সালাম জানিয়ে বিদায় নেওয়াই প্রকৃত বান্দার পরিচায়ক।
হাদীছ নং: ৭০২

উন্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনও পরিপূর্ণরূপে হাসতে দেখিনি, যাতে তাঁর আলজিব দেখা দেয়। তিনি কেবল মুচকি হাসতেন। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬০৯২; সহীহ মুসলিম: ৮৯৯; সুনানে আবূ দাউদ: ৫০৯৮; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩৭০০; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ৬৪৬২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১১৫)
كتاب الأدب
باب الوقار والسكينة
قَالَ الله تَعَالَى: {وَعِبَادُ الرَّحْمانِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الأرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلاَمًا} [الفرقان: 63].
702 - وعن عائشة رضي الله عنها، قالت: مَا رَأيْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مُسْتَجْمِعًا قَطُّ ضَاحِكًا حَتَّى تُرَى مِنهُ لَهَوَاتُهُ، إنَّمَا كَانَ يَتَبَسَّمُ. متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
«اللَّهْوَاتُ» جَمْعُ لَهَاةٍ: وَهِيَ اللَّحْمَةُ الَّتي في أقْصى سَقْفِ الْفَمِ.
হাদীস নং: ৭০৩
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ নামায আদায় ও ইলম হাসিল এবং অনুরূপ যে-কোনও ইবাদত-বন্দেগীতে ধীরস্থিরতা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে চলার প্রতি উৎসাহদান

ঈমানের পর নামায সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটা আল্লাহ তা'আলার এক শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। নামাযে বান্দা আল্লাহ তা'আলার অভিমুখী হয়। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে নিজ দাসত্ব ও ক্ষুদ্রতা প্রকাশ করে এবং আল্লাহ তা'আলার গৌরব ও বড়ত্বের স্বীকারোক্তি নেয়। দুনিয়ার রীতি হল কেউ যখন মহান কোনও ব্যক্তির সামনে যায়, তখন বিনয় ও আদব রক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও মালিক। তিনি সকল বাদশার বাদশা। নামায হল তাঁর সামনে উপস্থিতির এক নমুনা। কাজেই নামাযে যাওয়ার সময় বিনয় ও আদব রক্ষার প্রতি অধিকতর সচেতন থাকা বাঞ্ছনীয়।
দীনী ইলম দ্বারা আল্লাহ তা'আলার পরিচয় লাভ হয় এবং তাঁর ইবাদত-বন্দেগী করার পদ্ধতি জানা যায়, যা কিনা মানবসৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য। এ ইলমের উৎস হল কুরআন ও হাদীছ, যা ওহীর মাধ্যমে মানুষকে দেওয়া হয়েছে। কাজেই দীনী ইলমের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। এই ইলম যারা শেখে, ফিরিশতারা পর্যন্ত তাদের সম্মান করে। সাগরের মাছও তাদের জন্য দু'আ করে। সুতরাং এ ইলমের শিক্ষার্থীর প্রথম কর্তব্য এর মহিমা উপলব্ধি করা। যে শিক্ষার্থী তা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে, সে অবশ্যই এ ইলমের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবকিছুকে মর্যাদাপূর্ণ গণ্য করবে। সে তার প্রত্যেকটির আদব রক্ষা করবে। সে আদব রক্ষা করবে কুরআন মাজীদের, হাদীছ গ্রন্থের, শিক্ষকের, শিক্ষালয়ের এবং ইলমের যাবতীয় উপকরণের। সে ধারায় ইলম শিক্ষার জন্য গমনকালেও আদব-কায়দার প্রতি লক্ষ রাখবে। হাঁটবে শান্তভাবে। অহেতুক কোনও কাজ করবে না। অপ্রয়োজনীয় কোনও কথা বলবে না। তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনওকিছুতেই জড়াবে না। হযরত উমর ফারূক রাযি. বলেন-
تَعَلَّموا العِلمَ وعَلِّموه النَّاسَ، وتعَلَّموا له الوَقارَ والسَّكينةَ، وتواضَعوا لِمَن يُعَلِّمُكم عِندَ العِلمِ، وتواضَعوا لِمن تُعَلِّموه العِلمَ، ولا تكونوا جَبابرةَ العُلَماءِ
‘তোমরা ইলম শেখো। মানুষকে তা শেখাও। ইলমের জন্য ভাবগাম্ভীর্য শেখো এবং শেখো ধীর-শান্ত হতে। যার কাছ থেকে ইলম শেখ, তার সামনে বিনয় অবলম্বন করো। যাকে ইলম শেখাও, তার সঙ্গে নম্র-কোমল থেকো। তোমরা কঠোর-কঠিন উলামা হয়ো না।’(বায়হাকী, শু শু'আবুল ঈমান: ১৭৮৯)
নামায ও দীনী ইলমের মতো ইবাদত-বন্দেগীর সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও যা-কিছু আছে, সবকিছুর বেলায়ই আদব রক্ষার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই এ গ্রন্থে স্বতন্ত্র এক পরিচ্ছেদের অবতারণা করা হয়েছে। ইমাম নববী রহ. এ পরিচ্ছেদে সে সম্পর্কিত আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আমরা সংক্ষেপে তার বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।


‘নামায আদায় ও ইলম হাসিল এবং অনুরূপ যে-কোনও ইবাদত-বন্দেগীতে... চলার প্রতি উৎসাহদান’ সম্পর্কিত একটি আয়াত

وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ
অর্থ: আর কেউ আল্লাহর ‘শাআইর’-কে সম্মান করলে তা তো অন্তরস্থ তাকওয়া থেকেই সাধিত হয়।( সূরা হজ্জ (২২), আয়াত ৩২)

ব্যাখ্যা
আল্লাহর শা‘আইর মানে আল্লাহর দীনের শা‘আইর। شَعَائِر শব্দটি شَعِيْرَةٌ বা شِعَارَةُ এর বহুবচন। এর অর্থ আলামত ও নিদর্শন। পরিভাষায় শা‘আইর (شَعَائِر) বলা হয় এমনসব বিষয় ও বস্তুকে, যা কোনও ধর্ম বা মতাদর্শের একান্ত বিষয় ও তার পরিচায়ক। সুতরাং 'দীনে ইসলাম'-এর শাআইর বলতে এমনসব বিষয় ও বস্তুকে বোঝাবে, যা এ দীনের পরিচয় বহন করে বা যা একান্তভাবে এ দীনের সঙ্গেই সম্পর্কযুক্ত। এভাবেও বলা যায় যে, যেসকল বিষয় দেখলে বা শুনলে বোঝা যায় যে, এটা কেবল ইসলামেরই জিনিস, অন্যকিছুর নয়, তাকেই দীনের শাআইর বলে। যেমন ওযু, আযান, নামায, মসজিদ, বায়তুল্লাহ, হজ্জের স্থানসমূহ, কুরবানীর পশু, কুরআন-হাদীছ, কুরআন-হাদীছ ও দীনী ইলমের চর্চা ইত্যাদি।
এমনিভাবে যেসকল ব্যক্তিবর্গ দীন ইসলামের বিশেষ কোনও আমলের সঙ্গে এমনভাবে সম্পৃক্ত, যদ্দরুন সেই আমলের বিশেষণে তারা বিশেষিত হয়ে থাকে, তারাও ইসলামের শা'আইরের অন্তর্ভুক্ত। যেমন মুআযযিন, ইমাম, ইসলামী রাষ্ট্রের খলীফা, হাজী, মুসল্লী, মু'আল্লিম (ইলমে দীনের শিক্ষক), তালিবুল ইলম প্রমুখ। এসকল উপাধি অন্য কোনও ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানকারীর জন্য প্রযোজ্য হয় না। এর যে-কোনও উপাধি উচ্চারণ মাত্রই শ্রোতার দৃষ্টি চলে যায় ইসলামের দিকে। সুতরাং এ উপাধিধারীগণ ইসলামের নিদর্শন।
এ আয়াতে দীনের শাআইরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ (তা তো অন্তরস্থ তাকওয়া থেকেই সাধিত হয়)। অর্থাৎ যার অন্তরে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি আছে, সেই-ই এটা করে। সে হিসেবে এটা তাকওয়ার আলামতও বটে। এ আয়াত দ্বারা জানা গেল, তাকওয়া অন্তরের বিষয়। এক হাদীছেও আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ বুকের দিকে ইশারা করে বলেন, أَلَا إِنَّ التَّقْوَى ههُنَا ‘জেনে রেখো, তাকওয়া এখানে'। তাকওয়া যেহেতু অন্তরের বিষয়, তাই তা চোখে দেখা যায় না, আলামত দ্বারা বোঝা যায়। শাআইরকে সম্মান করা একটা আলামত। কেউ এটা করলে এর দ্বারা বোঝা যায় তার অন্তরে তাকওয়া আছে।
এ আয়াত দ্বারা মূলত মু'মিন-মুত্তাকীকে তাগিদ করা হয়েছে সে যেন দীনের শা'আইর ও নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে ও তার আদব বজায় রাখে। কাজেই নামায যেহেতু দীনের গুরুত্বপূর্ণ এক নিদর্শন, তাই সর্বোতভাবে এর আদব রক্ষা করা জরুরি। নামাযের যাওয়ার সময় না দৌড়িয়ে ধীরস্থিরভাবে হাঁটাও সে আদবের অন্তর্ভুক্ত। এমনিভাবে ইলমে দীনের চর্চাও যেহেতু দীনের এক নিদর্শন, তাই এ চর্চার সঙ্গে যারা জড়িত, প্রথমত তাদের কর্তব্য নিজেদের অন্তরে এ কাজের মূল্যবোধ সৃষ্টি করা ও আদবের সঙ্গে এ কাজ আঞ্জাম দেওয়া। মু'আল্লিম শিক্ষাদানের কাজটি করবে সংশ্লিষ্ট আদবসমূহ রক্ষা করে। অনুরূপ তালিবুল ইলমও ইলম হাসিলের যা-কিছু আদব আছে, সেসবের প্রতি লক্ষ রেখেই দীনী ইলম হাসিল করবে। ধীর-শান্তভাবে যাওয়াটাও সে আদবের একটি।

আয়াতটির শিক্ষা
ক. প্রত্যেক মুসলিমের উচিত দীনের নিদর্শনসমূহকে মর্যাদা দেওয়া। এটা তাকওয়া- পরহেযগারীর পরিচায়ক।
খ. নামায, দীনী ইলমের চর্চা এবং এ জাতীয় অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী যেহেতু দীনের নিদর্শন, তাই এসবের সম্মান রক্ষা করা একান্ত কর্তব্য।
গ. নামায পড়তে যাওয়া কিংবা দীনী ইলম শিক্ষার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় ধীর- শান্তভাবে চলা উচিত। এর দ্বারা দীনের নিদর্শনের মর্যাদা রক্ষা হয়।
নামাযের জামাতে যাওয়াকালীন চলার আদব
হাদীছ নং: ৭০৩

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যখন নামাযের ইকামত হয়ে যায়, তখন তাতে (শরীক হওয়ার জন্য) তোমরা দৌড়ে আসবে না। বরং তোমরা হেঁটে হেঁটে আসবে এবং ধীর-শান্ত ভাব রক্ষা করবে। তারপর তোমরা নামাযের যে অংশ পাও তা পড়বে আর যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করে নেবে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৯০৮; সহীহ মুসলিম: ৬০২; জামে' তিরমিযী: ৩২৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ৭৭৬; সুনানে নাসাঈ: ৮৬১; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৩৪০৪; মুসনাদুল হুমায়দী: ৯৬৪; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৭৪০০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ২১৪৮; তহাবী, শারহু মা'আনিল আছার: ২৩১০)

মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, কেননা তোমাদের কেউ যখন নামাযের উদ্দেশে যায়, তখন সে নামাযেই থাকে।
كتاب الأدب
باب الندب إِلَى إتيان الصلاة والعلم ونحوهما من العبادات بالسكينة والوقار
قَالَ الله تَعَالَى: {وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَإنَّهَا مِنْ تَقْوَى القُلُوبِ} [الحج: 32].
703 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: سَمِعْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ، فَلاَ تَأتُوهَا وَأَنْتُمْ تَسْعَونَ، وَأتُوهَا وَأَنْتُمْ تَمْشُونَ، وَعَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ، فَمَا أدْرَكْتُم فَصَلُّوا، وَمَا فَاتكُمْ فَأَتِمُّوا». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
زاد مسلِمٌ في روايةٍ لَهُ: «فَإنَّ أحَدَكُمْ إِذَا كَانَ يَعْمِدُ إِلَى الصَّلاَةِ فَهُوَ في صَلاَةٍ».
হাদীস নং: ৭০৪
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১০ নামায আদায় ও ইলম হাসিল এবং অনুরূপ যে-কোনও ইবাদত-বন্দেগীতে ধীরস্থিরতা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে চলার প্রতি উৎসাহদান
আরাফা থেকে মুযদালিফায় গমনকালে ধীর-শান্ত ভাব বজায় রাখা
হাদীছ নং: ৭০৪

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি আরাফার দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে যাচ্ছিলেন। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পেছন দিকে সজোরে হাঁকানো ও প্রহারের আওয়াজ এবং উটের ধ্বনি শুনতে পেলেন। সুতরাং তিনি তাদের দিকে নিজ চাবুক দ্বারা ইশারা করলেন এবং বললেন, হে লোকসকল! তোমরা শান্তভাবে চলো। কেননা দ্রুত চলায় কোনও পুণ্য নেই। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ১৬৭১; সহীহ মুসলিম: ১২৮২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৯৩৪; বায়হাকী,আস সুনানুল কুবরা: ৯৪৮৩)
كتاب الأدب
باب الندب إِلَى إتيان الصلاة والعلم ونحوهما من العبادات بالسكينة والوقار
704 - وعن ابن عباس رضي الله عنهما: أنَّهُ دَفَعَ مَعَ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - يَوْمَ عَرَفَةَ فَسَمِعَ النبيُّ - صلى الله عليه وسلم - وَرَاءهُ زَجْرًا شَديدًا وَضَرْبًا وَصَوْتًا للإِبْلِ، فَأشَارَ بِسَوْطِهِ إلَيْهِمْ، وقال: «يَا أيُّهَا النَّاسُ، عَلَيْكُمْ بالسَّكِينَةِ، فَإنَّ الْبِرَّ لَيْسَ بالإيضَاعِ». رواه البخاري، وروى مسلم بعضه. (1)
«الْبِرُّ»: الطَّاعَةُ. وَ «الإيضَاعُ» بِضادٍ معجمةٍ قبلها ياءٌ وهمزةٌ مكسورةٌ، وَهُوَ: الإسْرَاعُ.
হাদীস নং: ৭০৫
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অতিথিকে সম্মান ও সমাদর করা

অতিথিকে সমাদর করা ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এটা নবী-রাসূলগণের সুন্নত। সালিহীনের আদর্শ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে অসামান্য অতিথিপরায়ণ ছিলেন। নবুওয়াতলাভের আগেও অতিথির সেবাযত্ন করতেন। তাঁর প্রতি সর্বপ্রথম যখন ওহী নাযিল হয় এবং ওহীর চাপে তিনি ভীষণ অস্থিরতা বোধ করেন এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কা পর্যন্ত করেন, তখন উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা রাযি. তাঁর যেসকল সদগুণের উল্লেখপূর্বক তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন এবং আল্লাহর সাহায্যলাভের বিষয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন, তার মধ্যে তাঁর অতিথিপরায়ণতার কথাও ছিল। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে কখনওই অসহায় ছেড়ে দেবেন না। কেননা আপনি আত্মীয়তা রক্ষা করেন, অতিথির সেবাযত্ন করেন...। তিনি সাহাবায়ে কেরামকেও এ মহৎগুণের উপর গড়ে তুলেছিলেন। তাঁদের একেকজন অভাবনীয় রকমের অতিথিপরায়ণ ছিলেন। মদীনা মুনাওয়ারায় দূর-দূরান্ত থেকে যেসকল প্রতিনিধি দল ও মেহমান আসত, তাঁরা দু'জন-চারজন করে আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে ভাগ করে নিতেন। সামর্থ্য কিই বা ছিল? অনেকের তো নিজেদেরই খাওয়ার মতো কিছু থাকত না। হয়তো বাচ্চাদের খাওয়ার মতো সামান্য কিছু থাকত। তাঁরা নিজেরা না খেয়ে এবং বাচ্চাদেরকে নানা বাহানায় ঘুম পাড়িয়ে রেখে সেই খাবারই অতিথিদের খাইয়ে দিতেন। মদীনার আনসারগণ তো সব মুহাজিরকেই নিজেদের অতিথিরূপে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা যে অকল্পনীয় ত্যাগ ও আন্তরিকতার সঙ্গে মুহাজিরদের সমাদর করেছিলেন, ইতিহাসে তার কোনও দৃষ্টান্ত নেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা এবং সাহাবায়ে কেরামের দ্বারা সে শিক্ষার ব্যাপক চর্চারই ফল যে, অতিথিপরায়ণতা তখনকার ইসলামী সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছিল।
প্রতিটি বাড়ি যেন ছিল একেকটি মেহমানখানা। মেহমানকে প্রফুল্লমনে গ্রহণ করা, তাকে সম্মানজনকভাবে থাকতে দেওয়া, গভীর আন্তরিকতার সঙ্গে তার আপ্যায়ন করা, পথখরচা দিয়ে সংবর্ধনাসহ তাকে বিদায় করা- এ সবই ছিল যুগ-যুগান্তব্যাপী মুসলিম সমাজের এক বহুল চর্চিত সংস্কার। তখন মেহমান বলতে কেবল আত্মীয়-স্বজনের বেড়ানোকেই বোঝাত না। আত্মীয়ের হক তো আলাদা জিনিস। তখনকার মেহমানদের একটা বড় অংশ হতো পথিকজনেরা। মুসাফির ও পথিকেরা দুপুরের প্রখর রোদে কিংবা রাতের অন্ধকারে কোথায় যাবে, কীভাবে পথ চলবে? বিশ্রাম ও আশ্রয়ের কোনও জায়গা দরকার। এ অবস্থায় সামনে যে বাড়িই পড়ত, সেই বাড়িতেই তার আশ্রয় মিলত। গৃহস্থ পরম যতনে তাকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দিত এবং মেহমানরূপে তার সমাদর করত। মুসাফিরকে তাতে কোনও সংকোচবোধও করতে হতো না। কারণ গৃহকর্তা 'আহলান ওয়া সাহলান' বলে যেভাবে তাকে অকৃত্রিম ও দিলখোলা অভ্যর্থনা জানাত, তাতে সে আপনা-আপনিই সহজ ও হালকা হয়ে যেত।
কিন্তু কালক্রমে আমরা সেই ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের সমাজে সেই মেহমানদারি এখন নেই বললেই চলে। আত্মীয় ছাড়াও যে-কেউ অতিথি হতে পারে, তা যেন কেউ ভাবতেই পারে না। সেরূপ আগুন্তুক এখনকার সমাজে নিতান্তই উটকো ঝামেলা। এ ঝামেলা এখন সহজে কেউ গ্রহণ করতে পারে না। একটি মুসলিমসমাজের জন্য এটা কিছুতেই মঙ্গলজনক নয়। অতিথিগ্রহণে কৃপণতা আমাদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সকল মুসলিম ভাই ভাই এবং সকলে মিলে এক দেহের মতো- ইসলামী ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের এই যে মহান শিক্ষা, তা থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে সরে পড়েছি। জাতিগতভাবে আমাদের দুর্বলতা ও পশ্চাদপদতার এটা একটা বড় কারণ। আমরা আমাদের আত্মিক উৎকর্ষ ও জাতিগত উন্নতির ভাবনা সত্যিই যদি ভেবে থাকি, তবে আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের পুরোনো ঐতিহ্যে ফিরে যেতে হবে। সে ঐতিহ্যের এক বিশেষ অঙ্গ হল অতিথিসমাদর। অতিথির প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তার সহৃদয় সেবাযত্নের দ্বারা আমরা আমাদের আত্মিক ও বৈষয়িক বহুবিধ উৎকর্ষ সাধন করতে পারি। কুরআন ও হাদীছ আমাদেরকে এর প্রতি বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। রিয়াযুস সালেহীনের বর্তমান পরিচ্ছেদটি সে সম্পর্কেই।


‘অতিথিকে সম্মান ও সমাদর করা’ সম্পর্কিত দু'টি আয়াত

এক নং আয়াত
هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ (24) إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ (25) فَرَاغَ إِلَى أَهْلِهِ فَجَاءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ (26) فَقَرَّبَهُ إِلَيْهِمْ قَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ (27)
অর্থ: (হে রাসূল!) তোমার কাছে কি ইবরাহীমের সম্মানিত অতিথিদের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে? যখন তারা ইবরাহীমের কাছে উপস্থিত হয়ে বলল সালাম, তখন ইবরাহীমও বলল সালাম। (এবং সে মনে মনে চিন্তা করল যে,) এরা তো অপরিচিত লোক। তারপর সে চুপিসারে নিজ পরিবারবর্গের কাছে গেল এবং একটি মোটাতাজা বাছুর (-ভাজা) নিয়ে আসল। এবং তা সেই অতিথিদের সামনে এগিয়ে দিল এবং বলল, আপনারা খাচ্ছেন না যে?(সূরা যারিয়াত (৫১), আয়াত ২৪-২৭)


ব্যাখ্যা
এ আয়াতগুলোতে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে মানুষের আকৃতিতে কয়েকজন ফিরিশতার আগমন এবং অতিথি হিসেবে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পক্ষ থেকে তাদের সেবাযত্নের কথা বর্ণিত হয়েছে। প্রথমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে-
هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ ‘(হে রাসূল!) তোমার কাছে কি ইবরাহীমের সম্মানিত অতিথিদের বৃত্তান্ত পৌছেছে'? এ প্রশ্নটি স্বীকৃতিমূলক। বোঝানো হয়েছে, তাদের বৃত্তান্ত তোমার কাছে অবশ্যই এসেছে। তুমি তাদের সম্পর্কে জান। এর দ্বারা সে বৃত্তান্তের গুরুত্ব তুলে ধরা উদ্দেশ্য। সেইসঙ্গে এদিকেও ইঙ্গিত করে দেওয়া হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এর আগে আরও ওহী এসেছে।
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে আগত অতিথিদের বিশেষণরূপে الْمُكْرَمِينَ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ সম্মানিত। এর দ্বারা দু'টি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত হয়। এক তো ফিরিশতাগণ এমনিতেই সম্মানিত। তারা কোনও গুনাহ করেন না। তারা আল্লাহ তা'আলার হুকুম পালন করেন এবং তাঁর মহিমা ও গৌরব বর্ণনায় রত থাকেন। দ্বিতীয়ত হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কর্তৃক তারা সম্মানিত হয়েছিলেন। তিনি জানতেন না তারা ফিরিশতা। তথাপি অতিথি হিসেবে তিনি তাদেরকে সম্মান করেছিলেন। তিনি নিজে ও তাঁর স্ত্রী তাদের সেবাযত্ন করেছিলেন।
ফিরিশতাগণ মানুষের আকৃতিতে তাঁর ঘরে প্রবেশ করে বললেন- سَلَامًا (সালাম)। এখানে আরবী শব্দটি হল سَلَامًا । এটি ক্রিয়াপ্রধান বাক্য। এর মূল রূপ হল يُسَلِّمُكَ سَلَامًا (আমরা আপনাকে সালাম দিচ্ছি)। এর উত্তরে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বললেন-
سَلَمٌ قَوْمٌ مُّنْكَرُوْنَ ‘সালাম। (এবং সে মনে মনে চিন্তা করল যে,) এরা তো অপরিচিত লোক'। তিনি উত্তরে ব্যবহার করলেন বিশেষ্যপ্রধান বাক্য। কেননা سَلَامٌ এর প্রকৃত রূপ হল سَلَامٌ عَلَيْكُمْ (আপনাদের প্রতিও সালাম)। ক্রিয়াপ্রধান বাক্য ক্ষণস্থায়িত্বের অর্থ দেয় আর বিশেষ্যপ্রধান বাক্য স্থায়িত্বের অর্থ দেয়। এ হিসেবে ফিরিশতাদের সালাম অপেক্ষা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের উত্তর উৎকৃষ্ট হয়েছে। জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে এদিকে লক্ষ রাখা ভালো। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا
‘যখন কেউ তোমাদেরকে সালাম করে, তখন তোমরা (তাকে) তদপেক্ষাও উত্তমরূপে সালাম দিয়ো কিংবা (অন্ততপক্ষে) সেই শব্দেই তার জবাব দিয়ো।’(সূরা নিসা (৪) আয়াত ৮৬)
সালামের উত্তর দেওয়ার পর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মনে মনে বললেন, এরা কারা? এরা তো আমার অপরিচিত! এরা এখানকার স্থানীয় নয়। যে কারণে আমি এদের চিনতে পারছি না।
এমনও হতে পারে যে, তিনি সরাসরি তাদেরকে বলেছিলেন, আপনাদেরকে আমার অপরিচিত মনে হচ্ছে। আমি আপনাদের চিনতে পারছি না । এ বলে সম্ভবত তিনি তাদের পরিচয় জানতে চেয়েছিলেন।
তারপর তিনি চুপিসারে নিজ স্ত্রীর কাছে চলে গেলেন। মেহমানদের জন্য খানাদানার ব্যবস্থা করলেন। তিনি তাদের জন্য একটা মোটাতাজা বাছুর ভুনা করলেন। সেই ভুনা বাছুর এনে তাদের সামনে পরিবেশন করলেন। তারপর বললেন- أَلَا تَأْكُلُونَ (আপনারা খাচ্ছেন না যে)? অথবা এর অর্থ- আপনারা খাবেন না? এ বলে তিনি আদবের সঙ্গে তাদেরকে খাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। অথবা তিনি তাদের সামনে খাবার পরিবেশন করার পর দেখতে পেলেন যে, তারা যথারীতি হাত গুটিয়ে বসে আছেন। খাবারের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন না। তা দেখে তাঁর মনে হল তারা হয়তো খাবেন না। তারা কেন খাবেন না তা জানার জন্য তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা খাচ্ছেন না যে? তাঁর মনে একটু ভীতিও সঞ্চার হল, যেমন পরবর্তী আয়াতে জানানো হয়েছে। ফলে ফিরিশতাগণ নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেন এবং হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে পুত্রসন্তান জন্মের সুসংবাদ দিয়ে তাদের আগমনের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেন। সে উদ্দেশ্য ছিল হযরত লূত আলাইহিস সালামের কওমকে শাস্তি দেওয়া।

আয়াতের শিক্ষা
এ আয়াত দ্বারা আতিথেয়তার কয়েকটি আদব জানা যায়। যেমন-
ক. প্রথমত সালাম বিনিময় এবং মেহমানদের ঘরের ভেতর বসানো ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা।
খ. তাদের জন্য যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি খানাদানার ব্যবস্থা করা।
গ. তাদের জিজ্ঞেস করতে নেই আপনারা খাবেন কি? বরং চুপিসারে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি খাবার প্রস্তুত করে তাদের সামনে পরিবেশন করা।
ঘ. মেহমানের জন্য নিজ সাধ্যমতো উত্তম খাবার প্রস্তুত করা কাম্য।
ঙ. মেহমানের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হবে সম্মানজনকভাবে ও বিনয়ের সঙ্গে।
চ.খাবার পরিবেশনের পর অতিথির চাহিদা থাকলে খাবে, নয়তো নয়। খাওয়ার জন্য তাদেরকে পীড়াপীড়ি করা উচিত নয়।

দুই নং আয়াত
وَجَاءَهُ قَوْمُهُ يُهْرَعُونَ إِلَيْهِ وَمِنْ قَبْلُ كَانُوا يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ قَالَ يَاقَوْمِ هَؤُلَاءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطْهَرُ لَكُمْ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَلَا تُخْزُونِ فِي ضَيْفِي أَلَيْسَ مِنْكُمْ رَجُلٌ رَشِيدٌ (78)
অর্থ: তার সম্প্রদায়ের লোক তার দিকে ছুটে আসল। তারা পূর্ব থেকেই কুকর্মে লিপ্ত ছিল। লুত বলল, হে আমার সম্প্রদায়! এই আমার কন্যাগণ উপস্থিত রয়েছে। এরা তোমাদের পক্ষে ঢের পবিত্র! সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে তোমরা আমাকে হেয় করো না। তোমাদের মধ্যে কি একজনও ভালো লোক নেই?(সূরা হুদ (১১), আয়াত ৭৮)

ব্যাখ্যা
এ আয়াতে হযরত লূত আলাইহিস সালাম ও তাঁর সম্প্রদায়ের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তাঁর সম্প্রদায় বিকৃত যৌনাচার (সমকামিতা)-সহ নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। তিনি তাদেরকে তা থেকে ফেরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। তাদেরকে নানাভাবে বোঝাচ্ছিলেন। তা থেকে বিরত না হলে তারা আল্লাহর আযাবে আক্রান্ত হতে পারে বলেও তাদেরকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু কোনওক্রমেই তারা তা থেকে বিরত হচ্ছিল না। পরিশেষে তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহ তা'আলা একদল ফিরিশতা পাঠালেন। ফিরিশতাগণ রূপবান যুবকের বেশে হযরত লূত আলাইহিস সালামের বাড়িতে আসলেন। তিনি তাদেরকে মানুষ ও অতিথি মনে করলেন। ওদিকে তাঁর সম্প্রদায় জানতে পারল যে, তাঁর বাড়িতে কয়েকজন অতিথি এসেছে। অমনি তারা তাদের বিকৃত যৌনলালসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়িতে ছুটে আসল। তিনি তাদের হাত থেকে মেহমানদের রক্ষা করার সবরকম চেষ্টা করতে থাকলেন। কিন্তু তারা কোনওকিছুই মানছিল না। শেষে তিনি তাদেরকে বললেন-
يَا قَوْمِ هَٰؤُلَاءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطْهَرُ لَكُمْ (হে আমার সম্প্রদায়! এই আমার কন্যাগণ উপস্থিত রয়েছে। এরা তোমাদের পক্ষে ঢের পবিত্র)! অর্থাৎ তোমরা তোমাদের এ দুষ্কর্ম থেকে ক্ষান্ত হও। আমি আমার মেয়েদেরকে তোমাদের নেতাদের সঙ্গে বিয়ে দেব। তোমরা যা চাচ্ছ তা অপবিত্র কাজ। আমার মেয়েদেরকে বিবাহ করলে তা তোমাদের জন্য পবিত্র ও হালাল সাব্যস্ত হবে। উল্লেখ্য, সেকালে অমুসলিম পুরুষের সঙ্গে মুসলিম নারীদের বিবাহ জায়েয ছিল। সে হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাঁর কন্যা হযরত যায়নাব রাযি.-কে আবুল 'আস ইবনুর রাবী'র সঙ্গে বিবাহ দিয়েছিলেন। তখনও পর্যন্ত আবুল 'আস ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি তাঁর অপর এক কন্যাকে আবু লাহাবের পুত্র উতবার সঙ্গে বিবাহ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এরূপ বিবাহ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। সুতরাং এখন কোনও অমুসলিম পুরুষের সঙ্গে মুসলিম নারীর বিবাহ জায়েয নয়।
কোনও কোনও মুফাসসিরের মতে এ আয়াতে 'কন্যা' বলে হযরত লূত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের কন্যাদের বোঝানো হয়েছে। নবী তাঁর নিজ সম্প্রদায়ের জন্য পিতা স্বরূপ এবং তাঁর সম্প্রদায় তাঁর পক্ষে সন্তান স্বরূপ। যেমন কুরআন মাজীদের এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ
‘মুমিনদের পক্ষে নবী তাদের নিজেদের প্রাণ অপেক্ষাও বেশি ঘনিষ্ঠ। আর তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মা।’(সূরা আহযাব (৩৩), আয়াত ৬)


তিনি তাদেরকে আরও বলেছিলেন- فَاتَّقُوا اللَّهَ وَلَا تُخْزُونِ فِي ضَيْفِي (সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে তোমরা আমাকে হেয় করো না)। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং এ অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকো। আল্লাহ সব দেখছেন। তোমরা এর থেকে বিরত না হলে তিনি তোমাদের কঠিন শাস্তি দেবেন। তোমরা সুমতির পরিচয় দাও। আমার অতিথিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আমাকে অপদস্থ করো না। তোমরা কি বোঝ না অতিথিকে অপদস্থ করা গৃহস্থকে অপদস্থ করারই নামান্তর?
তিনি আক্ষেপ করে বললেন- أَلَيْسَ مِنكُمْ رَجُلٌ رَّشِيدٌ (তোমাদের মধ্যে কি একজনও ভালো লোক নেই)! অর্থাৎ এমন একজনও নেই, যে আমার অনুরোধ ও উপদেশে কর্ণপাত করবে এবং এসব অন্যায়-অপরাধ থেকে বেঁচে থাকবে! ইবন ইসহাক রহ. বলেন, رَشِيدٌ হলা হয় এমন ব্যক্তিকে, যে সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে। এ হিসেবে সম্ভবত হযরত লূত আলাইহিস সালাম বোঝাতে চাচ্ছিলেন যে, তোমরা সকলেই কি এমন দুরাচার? তোমাদের মধ্যে একজনও নেই, যে আমার কথার সমর্থন করবে এবং তোমাদেরকে এ জঘন্য কাজ থেকে নিবৃত্ত করবে!
মোটকথা, তাঁর সম্প্রদায়কে তিনি কোনওক্রমেই নিবৃত্ত করতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। তারা তাঁর কোনও কথায়ই কান দিচ্ছিল না। পরিশেষে অতিথিগণ আপন পরিচয় ব্যক্ত করলেন। তারা জানালেন যে, তারা মানুষ নয়; বরং আল্লাহ তা'আলার ফিরিশতা। তারা এ অপরাধী সম্প্রদায়কে আল্লাহ তা'আলার আদেশে শাস্তি দেওয়ার জন্যই এসেছে। শেষে তাই হল। ফিরিশতাগণ গোটা সম্প্রদায়কে সমূলে ধ্বংস করে দিলেন। তার আগে হযরত লূত আলাইহিস সালাম তাঁর কন্যাদের নিয়ে সে জনপদ ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেলেন।

আয়াতটির শিক্ষা
ক. গৃহকর্তার কর্তব্য অতিথির সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করা এবং অন্য কেউ তাদের অসম্মান করতে চাইলে সর্বোতপ্রকারে তা থেকে অতিথিকে রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া।
খ. অন্যের অতিথিকে সম্মান করা উচিত। কেননা তাকে অসম্মান করা গৃহকর্তাকে অসম্মান করার নামান্তর।
অতিথির প্রতি সম্মানজনক আচরণ ঈমানের দাবি
হাদীছ নং: ৭০৫

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার অতিথিকে সম্মান করে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার আত্মীয়তা রক্ষা করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালো কথা বলে নয়তো চুপ থাকে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬১৩৮; সহীহ মুসলিম: ৪৭; জামে' তিরমিযী: ২৬৬৮; সুনানে ইবন মাজাহ: ৩৬৭২; সুনানে আবূ দাউদ: ৫১৫৪; মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক: ১৯৭৪৬; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ১১৭৮২; মুসনাদে আহমাদ: ৭৬২৬; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫১৬; মুসনাদুল বাযযার: ৬৯১০)
كتاب الأدب
باب إكرام الضيف
قَالَ الله تَعَالَى: {هَلْ أتَاكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ إذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلاَمًا قَالَ سَلاَمٌ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ فَرَاغَ إِلَى أهْلِهِ فَجَاءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ فَقَرَّبَهُ إلَيْهِمْ قَالَ ألاَ تَأكُلُونَ} [الذاريات: 24 - 27]، وقال تَعَالَى: {وَجَاءهُ قَوْمُهُ يُهْرَعُونَ إِلَيْهِ وَمِنْ قَبْلُ كَانُوا يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ قَالَ يَا قَوْمِ هَؤُلاَءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطْهَرُ لَكُمْ فَاتَّقُوا اللهَ وَلاَ تُخْزُونِ في ضَيْفِي أَلَيْسَ مِنْكُمْ رَجُلٌ رَشِيدٌ} [هود: 78].
705 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّ النبيَّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীস নং: ৭০৬
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১১ অতিথিকে সম্মান ও সমাদর করা
মেহমানদারির তিনটি ধাপ
হাদীছ নং: ৭০৬

হযরত আবূ শুরায়হ খুওয়ায়লিদ ইবন আমর আল-খুযা'ঈ রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন সম্মানজনকভাবে তার অতিথিকে তার প্রাপ্য আতিথেয়তা দান করে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তার প্রাপ্য আতিথেয়তা কী? তিনি বললেন, এক দিন ও এক রাত (তার সমাদর করা)। আর যিয়াফাত হল তিন দিন। এর অতিরিক্ত করা হলে তা হবে অতিথির প্রতি দান স্বরূপ। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬০১৯; সহীহ মুসলিম: ৪৮; সুনানে আবূ দাউদ: ৩৭৪৮; জামে' তিরমিযী: ১৯৬৭; সুনানে দারিমী ২০৭৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ২৭৭৪; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫২৮৭)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, মুসলিম ব্যক্তির জন্য তার ভাইয়ের নিকট এ পরিমাণ অবস্থান করা বৈধ নয়, যা তাকে গুনাহগার বানাবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কীভাবে তাকে গুনাহগার বানাবে? তিনি বললেন, সে তার নিকট অবস্থান করবে, অথচ তার কাছে এমন কিছু নেই, যা দ্বারা তার মেহমানদারি করবে।
كتاب الأدب
باب إكرام الضيف
706 - وعن أَبي شُرَيْح خُوَيْلِدِ بن عَمرو الخُزَاعِيِّ - رضي الله عنه - قَالَ: سَمِعْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتَهُ»
قالوا: وَمَا جَائِزَتُهُ؟ يَا رسول الله، قَالَ: «يَوْمُهُ وَلَيْلَتُهُ، وَالضِّيَافَةُ ثَلاَثَةُ أيَّامٍ، فَمَا كَانَ وَرَاءَ ذَلِكَ فَهُوَ صَدَقَةٌ عَلَيْهِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
وفي رواية لِمسلمٍ: «لاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يُقِيمَ عِنْدَ أخِيهِ حَتَّى يُؤْثِمَهُ» قالوا: يَا رسول الله، وَكيْفَ يُؤْثِمُهُ؟ قَالَ: «يُقِيمُ عِنْدَهُ وَلاَ شَيْءَ لَهُ يُقْرِيه بِهِ».
হাদীস নং: ৭০৭
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ (ভবিষ্যৎ) কল্যাণের জন্য সুসংবাদ দেওয়া এবং প্রাপ্ত কল্যাণের জন্য অভিনন্দন জানানো

মানুষকে ভবিষ্যৎকালীন কল্যাণের জন্য সুসংবাদ দেওয়া এবং কেউ কোনও কল্যাণ লাভ করে থাকলে সেজন্য তাকে অভিনন্দন জানানো মুস্তাহাব। এটা পার্থিব বিষয়েও হতে পারে এবং পরকালীন বিষয়েও হতে পারে। পার্থিব ভবিষ্যৎকালীন কল্যাণের জন্য সুসংবাদ দেওয়ার উদাহরণ হল- কেউ অসুস্থ হলে তাকে এই বলে প্রবোধ দেওয়া যে, তুমি চিন্তা করো না। ইনশাআল্লাহ অচিরেই তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। কেউ কোনও বিপদে পড়লে এই বলে সান্ত্বনা দেওয়া যে, তুমি ধৈর্য ধরো। এ বিপদ বেশি দিন স্থায়ী হবে না। আল্লাহ তা'আলার রহমতে তুমি শীঘ্রই এর থেকে মুক্তি পাবে। আল্লাহ তা'আলা ধৈর্য ধারণকারীকে সাহায্য করে থাকেন।
পার্থিব যে-কোনও দুঃখ-কষ্ট ও বালা-মসিবতে এভাবে প্রবোধ দেওয়া ও আশুমুক্তির সুসংবাদ জানানো একটি প্রশংসনীয় কাজ। নবী-রাসূল ও আল্লাহওয়ালাদেরকে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এ জাতীয় সুসংবাদ জানানোর দৃষ্টান্ত বহু আছে। যেমন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল যে, তাঁর ঔরসে হযরত ইসমা'ঈল ও ইসহাক আলাইহিমাস সালাম জন্মগ্রহণ করবেন এবং তাঁর পরে পৌত্র হযরত ইয়া'কূব আলাইহিস সালামের জন্ম হবে। হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামকে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল যে, ইয়াহইয়া নামে তাঁর এক পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করবে। হযরত মারয়াম আলাইহাস সালামকে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল যে, কুমারী অবস্থায়ই তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্মদান করবেন, যার নাম হবে ঈসা। কোনও সাহাবী অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে যেতেন এবং এই বলে সান্ত্বনা দিতেন যে- لَا بَأْسَ طَهُوْرٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ (চিন্তা করো না। ইনশাআল্লাহ তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। অথবা এর অর্থ- এ রোগে কোনও ক্ষতি নেই। ইনশাআল্লাহ এটা তোমার পাপমুক্তির কারণ হবে)।
অসুস্থ ব্যক্তি অনেক সময় হতাশাগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এটা তার আরোগ্যলাভকে বাধাগ্রস্ত করে। সুসংবাদ জানানোর দ্বারা সে মানসিক শক্তি পায়। তার অন্তরে আশার সঞ্চার হয়। বিপন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই কথা। তাই এরূপ ব্যক্তিকে যথাশীঘ্র সুসংবাদ জানানো চাই। সুসংবাদ তাকে সাহস যোগাবে। তাকে উদ্দীপিত করবে। সে মনোবল হারাবে না। ভেঙে পড়বে না।
পরকালীন কল্যাণের সুসংবাদদানের উদাহরণ হল- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু সাহাবীকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। নেককার ব্যক্তির মৃত্যুকালে ফিরিশতাগণ জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে থাকে। কেউ অসুস্থ হলে অথবা কোনও বিপদে পড়লে এই বলে প্রবোধ দেওয়া যে, ধৈর্য ধরো। এর বিনিময়ে তুমি আখিরাতে পুরস্কৃত হবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন, যার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেওয়া হয়, সে যদি সবর করে, তবে এর বিনিময়ে আখিরাতে জান্নাত লাভ করবে। পরকালের পুরস্কারলাভই মুমিন ব্যক্তির আসল কাম্যবস্তু। তাই তার জন্য যে-কোনও বিপদে ধৈর্যধারণ করার পক্ষে পরকালীন পুরস্কারের সুসংবাদদান অনেক বেশি সহায়ক হয়ে থাকে।
পার্থিব কল্যাণলাভের কারণে অভিনন্দন জানানোর উদাহরণ হল বিবাহের পর বর-কনেকে অভিনন্দন জানানো, সন্তান জন্মের পর পিতা-মাতাকে অভিনন্দন জানানো, পরীক্ষায় উত্তমরূপে উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে অভিনন্দন জানানো, ব্যবসায়ে সাফল্যলাভের জন্য অভিনন্দন জানানো, কোনও অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থতা লাভ করলে সেজন্য তাকে অভিনন্দন জানানো ও আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করা ইত্যাদি।
দীনী কল্যাণলাভের কারণে সাধারণত অভিনন্দন জানানোর রেওয়াজ নেই। অথচ এটা আরও বেশি জরুরি। যেমন কেউ কুরআন মাজীদের হাফেজ হলে, ইলমে দীন হাসিল করে যথারীতি আলেম হয়ে গেলে, কোনও অমুসলিম ইসলাম গ্রহণের তাওফীক লাভ করলে, কোনও বেনামাযী নামায শুরু করলে, কেউ হজ্জ করে দেশে ফিরে আসলে, এমনিভাবে যে-কোনও দীনী নি'আমত যদি কেউ হাসিল করে, তবে সেজন্য তাকে অভিনন্দন জানানো চাই।
সুসংবাদ ও অভিনন্দন জানানো মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনের পক্ষে কল্যাণকর। এর কল্যাণ বহুবিধ। সবচে' গুরুত্বপূর্ণ কথা হল এর দ্বারা মানুষের মধ্যে মহব্বত ও ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। সুসংবাদপ্রাপ্ত ব্যক্তি সুসংবাদদাতাকে এবং অভিনন্দিত ব্যক্তি অভিনন্দনদাতাকে তার বড় আপন মনে হয়। তার প্রতি তার অন্তরে কোনও হিংসা-বিদ্বেষ থাকলে তা এর মাধ্যমে দূর হয়ে যায়। কাজেই কাউকে আপন করে নেওয়ার জন্য সুসংবাদ ও অভিনন্দন জানানোটা অনেক বড় একটি উপায়। আমাদের সকলেরই উচিত এ উপায় অবলম্বন করা। কেননা পরস্পরের মধ্যে মহব্বত ও ভালোবাসার সম্পর্ক রাখাটা অতীব জরুরি। এটা ঈমানের দাবি এবং জান্নাতলাভের উপায়। আমাদের ইসলাম পারস্পরিক মহব্বত ও ভালোবাসার সম্পর্ক রাখার প্রতি নানাভাবে উৎসাহদান করেছে এবং তার বিভিন্ন উপায়ও বাতলে দিয়েছে। সুসংবাদদান ও অভিনন্দন জানানোটাও তার অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে প্রচুর আয়াত রয়েছে। আছে বহু হাদীছও। এ পরিচ্ছেদের আয়াত ও হাদীছসমূহ সে সম্পর্কেই।


‘(ভবিষ্যৎ) কল্যাণের জন্য সুসংবাদ দেওয়া…’ সম্পর্কিত কিছু আয়াত

এক নং আয়াত
فَبَشِّرْ عِبَادِ (17) الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ
অর্থ: সুতরাং আমার সেই বান্দাদেরকে সুসংবাদ শোনাও। যারা কথা শোনে মনোযোগ দিয়ে, অতঃপর তার মধ্যে যা-কিছু উত্তম তার অনুসরণ করে।’(সূরা যুমার (৩৯), আয়াত ১৭-১৮)

ব্যাখ্যা
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাদেরকে সুসংবাদ শোনাতে বলেছেন। এ হুকুম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। তিনি আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছিলেন। তাঁকে বলা হয়েছে-

فَبَشِّرْ عِبَادِ (সুসংবাদ শোনাও আমার বান্দাদেরকে)। এটা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এক প্রিয় সম্ভাষণ। ‘মানুষ’ না বলে বলেছেন ‘আমার বান্দা’। আল্লাহর বান্দা হওয়াটাই মানুষের জন্য সর্বোচ্চ মর্যাদাকর বিষয়। বোঝানো হচ্ছে, সুসংবাদ পাওয়ার উপযুক্ত যে-কোনও মানুষ নয়। বরং সেইসকল মানুষ, যারা আল্লাহ তা'আলার বান্দা হতে পেরেছে, তাঁর বান্দা হওয়ার মতো মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছতে পেরেছে। তাদেরকে কিসের সুসংবাদ দেওয়া হবে? আয়াতে তা উল্লেখ করা হয়নি। তা অনুল্লেখ রাখার দ্বারা ব্যাপকতা বোঝানো উদ্দেশ্য। আরবী ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী কর্মপদ অনুল্লেখ রাখার দ্বারা ব্যাপকতা বোঝানো উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। সে হিসেবে অর্থ হবে, সুসংবাদ শোনাও সর্বপ্রকার কল্যাণের। পার্থিব কল্যাণেরও এবং পরকালীন কল্যাণেরও।
সে সুসংবাদলাভের উপযুক্ত বান্দা হওয়ার জন্য যে বিশেষত্ব দরকার, আয়াতে সে নির্দেশনাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে-
الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ (যারা কথা শোনে মনোযোগ দিয়ে)। কেবল শোনে না; বরং মনোযোগ দিয়ে শোনে। কী মনোযোগ দিয়ে শোনে? বলা হয়েছে কথা শোনে। الْقَوْلَ এর অর্থ কথা, বাণী। কোন কথা বা কোন বাণী? নিশ্চয়ই যে-কোনও কথা শোনার কথা বলা হয়নি। সব কথা শোনা যায় না। শোনা উচিতও নয়। কুরআন ও হাদীছে সাধারণভাবে যে-কোনও কথা শুনতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে এটা কোন কথা, যা মনোযোগ দিয়ে শুনতে বলা হয়েছে? হাঁ, এ কথা হল কুরআন, আল্লাহর বাণী। কথার মতো কথা তো কেবল কুরআনই। যে কথা পরম সত্য। পরম কল্যাণকর। যাতে কোনও সন্দেহ নেই। যার অনুসরণ সর্ববিধ কল্যাণের কারণ। এমন কথা কুরআন ছাড়া আর কী আছে? কাজেই সাধারণভাবে যদি কথা বা বাণী শব্দ ব্যবহার করা হয়, তবে তা দ্বারা কেবল কুরআনকেই তো বুঝতে হবে বা কেবল কুরআনকেই তো বোঝা যেতে পারে। এর বিপরীতে আর কোনও কথা যেন কথাই নয়। আর কারও বাণী যেন বাণীই নয়। তাই এখানে কুরআন শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। বরং الْقَوْلُ বা কথা শব্দের ব্যবহারকেই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। কেননা যারা আল্লাহর বান্দা, তারা এ সত্য সম্পর্কে অনবহিত নয় যে, সত্যিকারের কথা কেবল কুরআনই। আর পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে যদি কোনও কথা শুনতে হয়, তা তো কেবল কুরআনেরই কথা।
তা কুরআনের কথা কেন শুনতে হবে? আল্লাহর বান্দাগণ কেন তা মনোযোগ দিয়ে শোনে? আয়াতের পরবর্তী অংশে রয়েছে তার উত্তর। বলা হয়েছে-
فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ (অতঃপর তার মধ্যে যা-কিছু উত্তম তার অনুসরণ করে)। অর্থাৎ পূর্ণ কুরআনের অনুসরণ করে। এমন নয় যে, তার আংশিক মানল আংশিক মানল না। বস্তুত কুরআনের যাবতীয় কথাই উত্তম। পূর্ণ কুরআন সর্বোত্তম কথা। যেমন ইরশাদ-
اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُتَشَابِهًا مَثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ ذَلِكَ هُدَى اللَّهِ
‘আল্লাহ নাযিল করেছেন সর্বোত্তম বাণী। এমন এক কিতাব, যার বিষয়বস্তুসমূহ পরস্পর সুসমঞ্জস, (যার বক্তব্যসমূহ) পুনরাবৃত্তিকৃত, যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, এর দ্বারা তাদের শরীর রোমাঞ্চিত হয়। তারপর তাদের দেহমন বিগলিত হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটা আল্লাহর হিদায়াত।'(সূরা যুমার (৩৯), আয়াত ২৩)

আয়াতটির শিক্ষা
ক. যে ব্যক্তি ভালো কিছু করে, তাকে তার সে ভালো কাজের সুফল সম্পর্কে সুসংবাদ শোনানো চাই।
খ. মানুষের জন্য আল্লাহর বান্দা হতে পারাটাই প্রকৃত মর্যাদা।
গ. কুরআন মাজীদ শুনতে হবে পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে।
ঘ. কুরআন মাজীদ সর্বোত্তম বাণী। এর প্রতিটি কথা অনুসরণীয়।

দুই নং আয়াত
يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُمْ بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَرِضْوَانٍ وَجَنَّاتٍ لَهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُقِيمٌ (21)
অর্থ: তাদের প্রতিপালক তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে রহমত, সন্তুষ্টি ও এমন উদ্যানসমূহের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার ভেতর তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী নি‘আমত।(সূরা তাওবা (৯), আয়াত ২১)

ব্যাখ্যা
এটি সূরা তাওবার ২১ নং আয়াত। এর আগের আয়াতে ঈমান, হিজরত ও জিহাদ সম্পর্কে জানানো হয়েছে যে, এ তিনটি গুণ যাদের মধ্যে আছে তারাই আল্লাহ তা'আলার কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী এবং তারাই সফলকাম। তারপর এ আয়াতে তাদেরকে তিনটি সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। তারা আল্লাহ তা'আলার বিশেষ রহমতের অধিকারী হবে। তারা আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভ করবে। তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী সুখ-শান্তির জান্নাত। সুতরাং যারা আল্লাহ তা'আলার বিশেষ রহমত, তাঁর সন্তুষ্টি ও জান্নাতলাভের প্রত্যাশী, তাদের কর্তব্য যেসকল বিষয়ে ঈমান ও বিশ্বাস রাখা জরুরি, তার প্রত্যেকটিতে খাঁটিমনে ঈমান আনা, নিজ ঈমানের হেফাজত করা এবং সেজন্য প্রয়োজন হলে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পরিত্যাগ করে যেখানে গেলে ঈমান রক্ষা হবে সেখানে চলে যাওয়া, বিশেষত আল্লাহর অপসন্দনীয় যাবতীয় বিষয় পরিত্যাগ করে আল্লাহর পসন্দনীয় বিষয়সমূহের প্রতি ধাবিত হওয়া এবং আল্লাহর পথে নিজ জান-মাল দিয়ে সংগ্রাম করা, বিশেষত জিন্ন শয়তান, মানব শয়তান ও নফসের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন সাধনা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া।

তিন নং আয়াত
وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ (30)
অর্থ: আর আনন্দিত হয়ে যাও সেই জান্নাতের জন্য, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেওয়া হত।(সূরা হা-মীম সাজদা (৪১), আয়াত ৩০)

ব্যাখ্যা
অর্থাৎ মুমিন বান্দাদের মৃত্যুকালে একদল ফিরিশতা অবতীর্ণ হয়। তারা মৃত্যুপথযাত্রীকে জান্নাতের সুসংবাদ শোনায়। যাতে তারা মৃত্যুর জন্য আতঙ্কিত না হয়। বরং জান্নাতে যাওয়ার আনন্দে মৃত্যুকে সহজভাবে বরণ করে নেয়। কারও কারও মতে এ সুসংবাদ শোনানো হবে সেই সময়, যখন মুমিন বান্দাকে তার কবর থেকে উঠানো হবে। দুনিয়ায় যে দুই ফিরিশতা সর্বদা তার সঙ্গে থাকে, তখন সেই দুই ফিরিশতা তার সঙ্গে মিলিত হবে। তারা তাকে বলবে, তুমি ভয় করো না। চিন্তিত হয়ো না। দুনিয়ায় তোমাকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেই জান্নাতে পৌছানোর জন্য তোমাকে কবর থেকে উঠানো হয়েছে। সুতরাং তুমি আনন্দিত হও। এভাবে আল্লাহ তা'আলা তখন তাকে ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করবেন।

চার নং আয়াত
فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ (101)
অর্থ: সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।(সূরা আস-সাফফাত (৩৭), আয়াত ১০১)

ব্যাখ্যা
এর আগের আয়াতে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দু'আ উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে এক সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন। আল্লাহ তা'আলা তাঁর সে দু'আ কবুল করেছেন এবং সুসংবাদ শুনিয়েছেন যে, এক সহনশীল পুত্রসন্তান তাঁকে দান করবেন। এ আয়াতে সেই সুসংবাদই উল্লেখ করা হয়েছে। সে পুত্র হলেন হযরত ইসমা'ঈল আলাইহিস সালাম। আয়াতে তাঁর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি হবে সহনশীল। হযরত ইসমা'ঈল আলাইহিস সালাম যে কত বড় সহনশীল ছিলেন, তা কুরবানীর ঘটনাই প্রমাণ করে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন তাঁকে জবাই করা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার হুকুম তাঁকে শুনিয়েছিলেন, তখন তিনি শান্তভাবে উত্তর দিয়েছিলেন-
يَاأَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ (102)
‘আব্বাজী! আপনাকে যার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে আপনি সেটাই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে সবরকারীদের একজন পাবেন।’(সূরা আস-সাফফাত (৩৭) আয়াত)

পাঁচ নং আয়াত
وَلَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَى
অর্থ: আর আমার দূতগণ ইবরাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে আসল।(সূরা হুদ (১১), আয়াত ৬৯)

ব্যাখ্যা
এটি সূরা হূদের ৬৯ নং আয়াত। এ আয়াতে 'দূত' বলে ফিরিশতাদের বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা ফিরিশতাদেরকে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করে থাকেন। কোনও কোনও ফিরিশতা সংবাদ বহনের কাজও করে। অর্থাৎ তারা আল্লাহ তা'আলার কাছ থেকে সংবাদ ও বার্তা নিয়ে নবী-রাসূলগণের কাছে পৌঁছিয়ে থাকেন। তাছাড়া তারা নবী-রাসূল ও নেককার বান্দাদের কাছে বিভিন্ন সুসংবাদও পৌঁছান। এ আয়াতে জানানো হয়েছে যে, একদল সংবাদবাহী ফিরিশতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন। কী ছিল সে সুসংবাদ? সামনে একই সূরার ৭১ নং আয়াতে তার ব্যাখ্যা রয়েছে। তাতে আছে-
وَامْرَأَتُهُ قَائِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَرَاءِ إِسْحَاقَ يَعْقُوبَ (71)
আর ইবরাহীমের স্ত্রী দাঁড়ানো ছিল। সে হেসে দিল। আমি তাকে ইসহাকের এবং ইসহাকের পর ইয়াকুবের জন্মের সুসংবাদ দিলাম।(সূরা হুদ (১১), আয়াত ৭১)
অর্থাৎ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্ত্রী হযরত সারা রাযি. পর্দার আড়ালে দাঁড়ানো ছিলেন। এ অবস্থায় আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ফিরিশতাগণ তাঁকে সুসংবাদ দিলেন যে, তাঁর গর্ভে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হবে। তার নাম হবে ইসহাক। পরে ইসহাক আলাইহিস সালামের ইয়াকুব নামে এক পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করবে। এ সুসংবাদে হযরত সারা রাযি. খুশিতে হেসে দেন। অথবা এ হাসির কারণ ছিল তাঁর বিস্ময়। কেননা তিনি ও তাঁর স্বামী উভয়ে ছিলেন বৃদ্ধ। কোনও কোনও বর্ণনা অনুযায়ী তখন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বয়স ছিল ১২০ বছর এবং হযরত সারা রাযি.-এর বয়স ৯০ বছর। তদুপরি তিনি ছিলেন বন্ধ্যা। এ অবস্থায় তাঁদের কীভাবে সন্তান জন্ম নিতে পারে, এ বিস্ময়ে তিনি হেসে দিয়েছিলেন। যেমনটা পরে ৭২ নং আয়াতে আছে। বলা হয়েছে-
قَالَتْ يَاوَيْلَتَا أَأَلِدُ وَأَنَا عَجُوزٌ وَهَذَا بَعْلِي شَيْخًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عَجِيبٌ (72)
‘সে বলতে লাগল, হায়! আমি এ অবস্থায় সন্তান জন্মাব, যখন আমি বৃদ্ধা এবং এই আমার স্বামী, যে নিজেও বার্ধক্যে উপনীত? বাস্তবিকই এটা বড় আশ্চর্য ব্যাপার।’
এর উত্তরে ফিরিশতাগণ বলেছিলেন-
قَالُوا أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ رَحْمَتُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ إِنَّهُ حَمِيدٌ مَجِيدٌ (73)
‘ফিরিশতাগণ বলল, আপনি কি আল্লাহর হুকুম সম্বন্ধে বিস্ময়বোধ করছেন? আপনাদের মতো সম্মানিত পরিবারবর্গের উপর রয়েছে আল্লাহর রহমত ও প্রভূত বরকত। নিশ্চয়ই তিনি সর্বময় প্রশংসার হকদার, অতি মর্যাদাবান।’

ছয় নং আয়াত
فَنَادَتْهُ الْمَلَائِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَى
অর্থ: সুতরাং (একদা) যাকারিয়া যখন ইবাদতখানায় সালাত আদায় করছিলেন, তখন ফিরিশতাগণ তাঁকে ডাক দিয়ে বলল, আল্লাহ আপনাকে ইয়াহইয়া (-এর জন্ম) সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন।(সূরা আলে ইমরান (৩) আয়াত ৩৯)

ব্যাখ্যা
এটি সূরা আলে ইমরানের ৩৯ নং আয়াত। এর আগের আয়াতে হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামের দু'আ বর্ণিত হয়েছে-
رَبِّ هَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ (38)
‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তোমার নিকট হতে কোনও পবিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয়ই তুমি দু'আ শ্রবণকারী।'
হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন অতিশয় বৃদ্ধ। তাঁর স্ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা। সন্তানলাভের বাহ্যিক কোনও অবস্থা ছিল না। মনে ছিল না আশাও। কিন্তু এ অবস্থায় তাঁর অন্তরে আশা সঞ্চারের একটি কারণ ঘটে গেল। তিনি তাঁর ভায়রা-কন্যা হযরত মারয়াম আলাইহাস সালামের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি মারয়াম আলাইহাস সালামের কাছে মৌসুমবিহীন ফল দেখতে পেয়েছিলেন। এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে হযরত মারয়াম আলাইহাস সালাম বলেছিলেন, এ ফল আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকেই তাঁর কাছে আসে। আর আল্লাহ তা'আলা যাকে চান, অকল্পনীয়ভাবে রিযিক দিয়ে থাকে। এ ঘটনা হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামের অন্তরে আলোড়ন তোলে। তিনি যেন এক অসম্ভব আশায় উদ্বেলিত হয়ে উঠলেন। যে আল্লাহ মারয়ামকে মৌসুমবিহীন ফল দিতে পারেন, তিনি তো আমাকে আমার এই বৃদ্ধ বয়সে, যা কিনা সন্তান জন্মানোর বয়স নয়, নেক সন্তান দান করতে পারেন। তখনই তিনি আল্লাহর কাছে সুসন্তান চেয়ে দু'আ করলেন। তাঁর সে দু'আ কবুলও হল, যা আলোচ্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি একদিন নিজ কক্ষে নামাযে দাঁড়ানো ছিলেন। এ অবস্থায় সুসংবাদবাহী ফিরিশতাগণ তাঁর কাছে হাজির হল এবং আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাঁকে এক পুত্রসন্তান জন্মের সুসংবাদ দিল। যে পুত্রের নাম হবে ইয়াহইয়া।

আট নং আয়াত
إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَامَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ
অর্থ: (সেই সময়ের কথাও স্মরণ করো) যখন ফিরিশতাগণ বলেছিল, হে মারয়াম! আল্লাহ তোমাকে নিজের এক কালিমার (জন্মগ্রহণের) সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হবে মাসীহ ঈসা ইবন মারয়াম।(সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ৪৫)

ব্যাখ্যা
হযরত মারয়াম আলাইহাস সালাম ছিলেন কুমারী। কারও সঙ্গে তাঁর কখনও বিবাহ হয়নি। তিনি ছিলেন এক সতী-সাধ্বী নারী। কখনও কোনও পুরুষ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে নিজের এক নিদর্শনের প্রকাশস্থলরূপে মনোনীত করেছিলেন। দুনিয়ায় সাধারণত সন্তানের জন্ম হয় পিতা-মাতা বা নর-নারীর মিলনের ধারায়। এ নিয়ম আল্লাহ তা'আলারই সৃষ্টি। মানবসৃষ্টির জন্য আল্লাহ তা'আলা এ নিয়মের মুখাপেক্ষী নন। তিনি চাইলে এ নিয়মের বাইরেও মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন। প্রথম মানব হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তো তিনি পিতা-মাতা ছাড়াই সৃষ্টি করেছিলেন। তারপর প্রজন্মের পর প্রজন্ম হাজারও বছর যাবৎ পিতা-মাতার ধারায় দুনিয়ায় মানুষের জন্ম হয়ে এসেছে। কেউ যাতে মনে না করে এটা অবধারিত প্রকৃতি। এই প্রাকৃতিক নিয়মেই মানুষের জন্ম হয়ে এসেছে। এতে কারও কোনও হাত নেই। এর বাইরে কোনওকিছু হওয়া সম্ভব নয়। ব্যস প্রকৃতিই শেষকথা। এই ভুল ধারণার মূলোৎপাটনের জন্য প্রয়োজন ছিল কুদরতের এমন এক নিদর্শন দেখানো, যাতে মানুষ বুঝতে পারে প্রকৃতিই শেষকথা নয়; বরং দৃশ্যমান প্রকৃতি আল্লাহ তা'আলারই সৃষ্টি। তিনি মানুষের জন্মের জন্য নর-নারী বা পিতা-মাতার ধারা প্রবর্তন করেছেন। তিনি চাইলে পিতা-মাতা ছাড়াই কিংবা তাদের কোনও একজন ছাড়া মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁর কুদরতের এ নিদর্শন দেখানোর জন্য হযরত মারয়াম আলাইহাস সালামকে বেছে নেন। তিনি কেবল নিজ হুকুম 'হও'-এর মাধ্যমে তাঁর গর্তে এক আদমসন্তানের জন্ম দেন। তাঁর নাম ঈসা।
এ আয়াতে 'আল্লাহর কালেমা' দ্বারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে। তাঁকে আল্লাহর কালেমা বলার কারণ তিনি পিতা ছাড়া কেবল অল্লাহ তা'আলার 'কুন' শব্দ দ্বারা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কালেমা মানে শব্দ।
আয়াতে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের উপাধি বলা হয়েছে 'মাসীহ'। ইংরেজিতে বলে 'ক্রাইস্ট', বাংলায় খ্রিষ্ট। ক্রাইস্ট শব্দটি হিব্রু 'মাসায়া' বা 'মোসায়া' এর অনুবাদ, যাকে আরবীতে বলে 'মাসীহ', অর্থাৎ অভিষেকপ্রাপ্ত বা পরিব্রাজক বা স্পর্শ দ্বারা চিকিৎসাকারী ইত্যাদি।
উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা রাযি.-কে জান্নাতের সুসংবাদ এবং তাঁর জান্নাতের বাড়ি
হাদীছ নং: ৭০৭

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আবূ আওফা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা রাযি.-কে জান্নাতে মুক্তার একটি ঘরের সুসংবাদ দিয়েছেন, যাতে কোনওরূপ শোরগোল থাকবে না এবং কষ্ট-ক্লেশও না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৭৯২; সহীহ মুসলিম: ২৪৩৩; জামে' তিরমিযী: ৩৮৭৬; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক : ৯৭১৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ৩২২৮৭; মুসনাদে আহমাদ: ১৭৫৯; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা ৮৩০২; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা ২০৪৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১৭৯)
كتاب الأدب
باب استحباب التبشير والتهنئة بالخير
قَالَ الله تَعَالَى: {فَبَشَّرْ عبادِ الذينَ يَسْتَمِعُونَ القَوْلَ فيتَّبِعُونَ أَحْسَنهُ} [الزمر: 17 - 18]، وقال تَعَالَى: {يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُمْ بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَرِضْوانٍ وَجَنَّاتٍ لَهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُقِيمٌ} [التوبة: 21]، وقال تَعَالَى: {وَأَبْشِرُوا بِالجَنَّةِ الَّتي كُنْتُم تُوعَدُونَ} [فصلت: 30]، وقال تَعَالَى: {فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلاَمٍ حَلِيمٍ} [الصافات: 101]، وقال تَعَالَى: {وَلَقدْ جَاءتْ رُسُلُنَا إبْراهِيمَ بِالبُشْرَى} [هود: 69]، وقال تَعَالَى: {وَامْرَأَتُهُ قَائِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَرَاءِ إسْحَاقَ يَعْقُوبَ} [هود: 71]، وقال تَعَالَى: {فَنَادَتْهُ المَلاَئِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي في المِحْرَابِ أَنَّ اللهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَى} [آل عمران: 39]، وقال تَعَالَى: {إِذْ قَالَتِ الْمَلاَئِكَةُ يَا مَرْيَمُ إنَّ اللهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِنْهُ اسْمُهُ الْمسِيحُ} [آل عمران: 45] الآية، والآيات في الباب كثيرة معلومة.
وأما الأحاديث فكثيرةٌ جِدًّا وهي مشهورة في الصحيح، مِنْهَا:
707 - عن أَبي إبراهيم، ويقال: أَبُو محمد، ويقال: أَبُو معاوية عبد اللهِ بن أَبي أوفى رضي الله عنهما: أنّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - بَشَّرَ خَدِيجَةَ رضي اللهُ عنها ببَيْتٍ في الجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ، لاَ صَخَبَ فِيهِ، وَلاَ نَصَبَ. متفقٌ عَلَيْهِ. (1) [ص:227]
«القَصَبُ»: هُنَا اللُّؤْلُؤُ الْمُجَوَّفُ. وَ «الصَّخَبُ»: الصِّياحُ وَاللَّغَطُ.
وَ «النَّصَبُ»: التَّعَبُ.
হাদীস নং: ৭০৮
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১২ (ভবিষ্যৎ) কল্যাণের জন্য সুসংবাদ দেওয়া এবং প্রাপ্ত কল্যাণের জন্য অভিনন্দন জানানো
বি’রে আরীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গমন ও প্রথম তিন খলীফা সম্পর্কে জান্নাতের সুসংবাদদান
হাদীছ নং: ৭০৮

হযরত আবু মূসা আশ'আরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি নিজ ঘরে ওযু করলেন। তারপর বের হয়ে পড়লেন। তিনি (মনে মনে) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সঙ্গে থাকব এবং আজকের পুরোটা দিন তাঁর সঙ্গেই কাটাব। সুতরাং তিনি মসজিদে আসলেন। (লোকজনকে) জিজ্ঞেস করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায়? তারা বলল, ওদিকে গেছেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর পদচিহ্ন ধরে বের হয়ে পড়লাম এবং তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে থাকলাম। পরিশেষে জানতে পারলাম তিনি বি’রে আরীসে (আরীস নামক কুয়ায়) প্রবেশ করেছেন। আমি কুয়াটির দরজায় বসে পড়লাম। তার দরজা ছিল খেজুর গাছের ডালের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে নিজ প্রয়োজন সেরে ওযু করলেন। আমি ওঠে তাঁর কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি তিনি বি'রে আরীসের উপর বসে আছেন। তিনি কুয়ার প্রাচীরে বসে দুই পা কুয়ার ভেতর ঝুলিয়ে রেখেছেন। তার দুই নলা অনাবৃত হয়ে আছে। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তারপর ফিরে গিয়ে দরজার কাছে বসে পড়লাম। (মনে মনে) বললাম, আজ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বাররক্ষী হব।একটু পরেই আবু বকর আসলেন এবং দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে? তিনি বললেন, আবু বকর। বললাম, অপেক্ষা করুন। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম। বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই যে আবু বকর আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, তাকে অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ শোনাও। আমি ফিরে এসে আবূ বকরকে বললাম, প্রবেশ করুন। আর শুনুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। অতঃপর আবু বকর প্রবেশ করলেন। তিনি এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডানদিকে কুয়ার প্রাচীরে তাঁর সঙ্গে বসে পড়লেন এবং পা দু'টি কুয়ার ভেতর ঝুলিয়ে দিলেন। ঠিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমনটি করেছেন। তিনিও তার দুই নলা উন্মুক্ত করে দিলেন। তারপর আমি ফিরে গেলাম এবং দরজায় বসে পড়লাম। ওদিকে আমি আমার ভাইকে রেখে এসেছিলাম। তিনি তখন ওযু করছিলেন। আমার সঙ্গে তাঁর যুক্ত হওয়ার কথা। আমি (মনে মনে) বললাম, আল্লাহ যদি তার কোনও কল্যাণ চান, তবে তিনি তাকে নিয়ে আসবেন। এমনই মুহূর্তে এক ব্যক্তি দরজায় নাড়া দিচ্ছিল। আমি বললাম, কে? বললেন, উমর ইবনুল খাত্তাব। আমি বললাম, একটু অপেক্ষা করুন। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। তাঁকে সালাম দিয়ে বললাম, এই যে উমর অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, তাকে অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ শোনাও। আমি উমরের কাছে এসে বললাম, তিনি অনুমতি দিয়েছেন। আপনি প্রবেশ করুন। আর শুনুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি প্রবেশ করলেন, তারপর কুয়ার প্রাচীরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বামপাশে বসে পড়লেন এবং দুই পা কুয়ার ভেতর ঝুলিয়ে দিলেন। আমি ফিরে এসে দরজায় বসে পড়লাম। (মনে মনে) বললাম, আল্লাহ যদি অমুকের (অর্থাৎ তাঁর ভাইয়ের) কল্যাণ চান, তবে তাকে নিয়ে আসবেন। এমনই মুহূর্তে এক ব্যক্তি দরজায় নাড়া দিল। আমি বললাম, কে? বললেন, উছমান ইবন আফফান। আমি বললাম, একটু অপেক্ষা করুন। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তার সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, তাকে অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। সেইসঙ্গে একটা বিপদে আক্রান্ত হওয়ার কথাও জানিয়ো। আমি ফিরে এসে বললাম, আপনি প্রবেশ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে আপনি একটা বিপদে আক্রান্ত হবেন বলেও জানিয়েছেন। তিনি প্রবেশ করলেন। গিয়ে দেখেন কুয়ার প্রাচীর ভরে গেছে। সুতরাং তিনি তাঁদের মুখোমুখি অপর প্রান্তে বসলেন। বর্ণনাকারী শারীক রহ. বলেন, সা'ঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. বলেছেন, আমি এর ব্যাখ্যা করেছি, (এটা ছিল) তাঁদের কবর (এরকমই হওয়ার ইঙ্গিত)। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৩৬৭৪; সহীহ মুসলিম: ২৪০৩; জামে তিরমিযী: ৩৭১০; মুসনাদুল বাযযার: ৩০৫১; জামে মা'মার ইবন রাশিদ: ২০৪০২; আল-আদাবুল মুফরাদ: ৯৬৫; বাগাবী, শারহুস সন্নাহ: ৩৯০৩)
অপর এক বর্ণনায় আরও আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দরজা পাহারা দেওয়ার হুকুম করলেন। তাতে আরও আছে, হযরত উছমান রাযি.-কে যখন সুসংবাদ দেওয়া হল, তখন তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করলেন এবং বললেন, আল্লাহই সাহায্যকারী।
كتاب الأدب
باب استحباب التبشير والتهنئة بالخير
708 - وعن أَبي موسى الأشعري - رضي الله عنه: أَنَّهُ تَوَضَّأ في بَيْتِهِ، ثُمَّ خَرَجَ، فَقَالَ: لأَلْزَمَنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - وَلأَكُونَنَّ مَعَهُ يَوْمِي هَذَا، فَجَاءَ الْمَسْجِدَ، فَسَألَ عَنِ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - فَقَالُوا وجَّهَ هاهُنَا، قَالَ: فَخَرَجْتُ عَلَى أثَرِهِ أسْألُ عَنْهُ، حَتَّى دَخَلَ بِئْرَ أريسٍ، فَجَلَسْتُ عِندَ البَابِ حتَّى قضى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - حاجتهُ وتوضأ، فقمتُ إليهِ، فإذا هو قد جلسَ على بئرِ أريسٍ وتوَسَّطَ قُفَّهَا، وكشَفَ عنْ ساقيهِ ودلاّهُما في البئرِ، فسلمتُ عَليهِ ثمَّ انصَرَفتُ، فجلستُ عِندَ البابِ، فَقُلْتُ: لأَكُونَنَّ بَوَّابَ رسولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - الْيَوْمَ، فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ - رضي الله عنه - فَدَفَعَ الْبَابَ، فقلتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: أَبُو بَكْرٍ، فقُلتُ: عَلَى رِسْلِكَ، ثُمَّ ذَهبْتُ، فقلتُ: يَا رسول الله، هَذَا أَبُو بَكْرٍ يَستَأْذِنُ، فَقَالَ: «ائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ» فَأقْبَلْتُ حَتَّى قُلْتُ لأَبي بَكْرٍ: ادْخُلْ وَرسول الله - صلى الله عليه وسلم - يُبَشِّرُكَ بِالجَنَّةِ، فَدَخَلَ أَبُو بَكرٍ حَتَّى جَلَسَ عَنْ يَمينِ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - مَعَهُ في القُفِّ، وَدَلَّى رِجْلَيْهِ في البِئْرِ كَمَا صَنَعَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ، ثُمَّ رَجَعْتُ وَجَلَسْتُ، وَقَدْ تَرَكْتُ أخِي يَتَوَضَّأ وَيَلْحَقُنِي، فقلتُ: إنْ يُرِدِ الله بِفُلانٍ - يُريدُ أخَاهُ - خَيْرًا يَأتِ بِهِ. فَإذَا إنْسَانٌ يُحَرِّكُ الْبَاب، فقلتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: عُمَرُ بن الخَطّابِ، فقلتُ: عَلَى رِسْلِكَ، ثُمَّ جِئْتُ إِلَى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ وَقُلْتُ: هَذَا عُمَرُ يَسْتَأذِنُ؟ فَقَالَ: «ائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بالجَنَّةِ» فَجِئْتُ عُمَرَ، فقلتُ: أَذِنَ وَيُبَشِّرُكَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - بِالجَنَّةِ، فَدَخَلَ فَجَلَسَ مَعَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - في القُفِّ عَنْ يَسَارِهِ وَدَلَّى رِجْلَيْهِ في البِئرِ، ثُمَّ رَجَعْتُ فَجَلَسْتُ، فَقُلتُ: إنْ يُرِدِ اللهُ بِفُلاَنٍ خَيْرًا - يَعْنِي أخَاهُ - يَأْتِ بِهِ، فَجَاءَ إنْسَانٌ فَحَرَّكَ الْبَابَ. فَقُلتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: عُثْمَانُ بن عَفَّانَ. فقلتُ: عَلَى رِسْلِكَ، وجِئْتُ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - فأخْبَرْتُهُ، فقالَ: «ائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالجَنَّةِ مَعَ بَلْوَى تُصِيبُهُ» فَجِئْتُ، فقلتُ: ادْخُلْ وَيُبَشِّرُكَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - بِالجَنَّةِ مَعَ بَلْوَى تُصيبُكَ، فَدَخَلَ فَوجَدَ الْقُفَّ قَدْ مُلِئَ، فجلس وِجَاهَهُمْ مِنَ الشِّقِّ الآخرِ. قَالَ سَعيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ: فَأوَّلْتُهَا قُبُورَهُمْ. متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
وزاد في رواية: وأمرني رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - بحفظِ الباب. وَفيها: أنَّ عُثْمانَ حِيْنَ بَشَّرَهُ حَمِدَ اللهَ تَعَالَى، ثُمَّ قَالَ: اللهُ المُسْتَعانُ. [ص:228]
وَقَوْلُه: «وَجَّهَ» بفتحِ الواوِ وتشديد الجيمِ. أيْ: تَوَجَّهَ. وَقَوْلُه: «بِئْر أَرِيْسٍ» هُوَ بفتح الهمزة وكسرِ الراءِ وبعدها ياءٌ مثناة من تحت ساكِنة ثُمَّ سِين مهملة وَهُوَ مصروف ومنهم من منع صرفه، وَ «القُفُّ» بضم القاف وتشديد الفاءِ: وَهُوَ المبنيُّ حول البئر. وَقَوْلُه: «عَلَى رِسْلِك» بكسر الراء عَلَى المشهور، وقيل: بفتحِهَا، أيْ: ارفق.
হাদীস নং: ৭০৯
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১২ (ভবিষ্যৎ) কল্যাণের জন্য সুসংবাদ দেওয়া এবং প্রাপ্ত কল্যাণের জন্য অভিনন্দন জানানো
ঈমানদার ব্যক্তির জন্য জান্নাতের সুসংবাদ
হাদীছ নং: ৭০৯

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারপাশে বসা ছিলাম। আমাদের সঙ্গে কতিপয় লোকসহ আবূ বকর ও উমরও ছিলেন। হঠাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝখান থেকে উঠে গেলেন। তারপর তিনি ফিরে আসতে দেরি করলেন। আমাদের আশঙ্কা হল, না জানি আমাদের অনুপস্থিতিতে তাঁর কোনও বিপদ ঘটে যায়! আমরা ঘাবড়ে গিয়ে উঠে পড়লাম। সবার আগে ঘাবড়ালাম আমিই। সুতরাং আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্ধানে বের হয়ে পড়লাম। যেতে যেতে আমি আনসারদের বনূ নাজ্জারের একটি বাগানে এসে পৌঁছলাম। আমি বাগানটির কোনও দরজা পাই কি না, সে লক্ষ্যে তার চারদিকে ঘুরতে লাগলাম। কিন্তু পেলাম না। হঠাৎ দেখি একটি ছোট নালা, যেটি বাইরের একটি কুয়া থেকে বাগানের ভেতর দিকে প্রবেশ করেছে। আমি সংকুচিত হলাম, যেভাবে শেয়াল সংকুচিত হয়। তারপর (সে নালা দিয়ে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রবেশ করলাম। তিনি বললেন, আবূ হুরায়রা! আমি বললাম, হাঁ ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বললেন, কী ব্যাপার? আমি বললাম, আপনি আমাদের মধ্যে ছিলেন। তারপর উঠে গেলেন। কিন্তু আমাদের কাছে ফিরে আসতে দেরি করলেন। আমরা আশঙ্কা করলাম না জানি আমাদের অনুপস্থিতিতে আপনার কোনও বিপদ ঘটে যায়। তাই আমরা ঘাবড়ে গেলাম। আমি সবার আগে ঘাবড়ে যাই। অবিলম্বে আমি এ বাগানে পৌঁছে গেলাম। তারপর শেয়াল যেমন সংকুচিত হয়, তেমনি সংকুচিত হয়ে আপনার কাছে প্রবেশ করলাম। ওই যে বাকি সব লোক আমার পেছনে। তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! এই বলে তিনি তাঁর জুতাজোড়া আমাকে দিলেন। তারপর বললেন, আমার এই জুতাজোড়া নিয়ে যাও। এই বাগানের বাইরে যার সাথেই তোমার সাক্ষাৎ হবে, সে যদি আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে 'আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বুদ নেই' বলে সাক্ষ্য দেয়, তবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ো। অতঃপর তিনি দীর্ঘ হাদীছটি বর্ণনা করেন। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ৩১; মুসনাদুল বাযযার: ৯৩৮৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৫৪৩)
كتاب الأدب
باب استحباب التبشير والتهنئة بالخير
709 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: كُنَّا قُعُودًا حَوْلَ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - وَمَعَنَا أَبُو بَكرٍ وَعُمَرُ رضي الله عنهما في نَفَرٍ، فَقَامَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - مِنْ بَيْنِ أظْهُرِنَا فَأبْطَأ عَلَيْنَا، وَخَشِينَا أَنْ يُقْتَطَعَ دُونَنَا وَفَزِعْنَا فَقُمْنَا، فَكُنْتُ أَوَّلَ مَنْ فَزِعَ، فَخَرَجْتُ أبْتَغِي رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - حَتَّى أتَيْتُ حَائِطًا للأنصَارِ لِبَني النَّجَارِ، فَدُرْتُ بِهِ هَلْ أجِدُ لَهُ بَابًا؟ فَلَمْ أجِدْ! فَإذَا رَبيعٌ يَدْخُلُ في جَوْفِ حَائِطٍ مِنْ بِئْرٍ خَارِجَهُ - وَالرَّبِيعُ: الجَدْوَلُ الصَّغِيرُ - فَاحْتَفَرْتُ، فَدَخَلْتُ عَلَى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: «أَبُو هُرَيْرَةَ؟» فقلتُ: نَعَمْ، يَا رسول اللهِ، قَالَ: «مَا شأنُكَ؟» قُلْتُ: كُنْتَ بَيْنَ أظْهُرِنَا فَقُمْتَ فَأبْطَأتَ عَلَيْنَا، فَخَشِينَا أَنْ تُقْتَطَعَ دُونَنَا، ففزعنا، فَكُنْتُ أوّلَ مَنْ فَزِعَ، فَأتَيْتُ هَذَا الحَائِطَ، فَاحْتَفَرْتُ كَمَا يَحْتَفِرُ الثَّعْلَبُ، وهؤلاء النَّاسُ وَرَائِي. فَقَالَ: «يَا أَبَا هُرَيرَةَ» وَأعْطَانِي نَعْلَيْهِ، فَقَالَ: «اذْهَبْ بِنَعْلَيَّ هَاتَيْنِ، فَمَنْ لَقِيتَ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الحَائِطِ يَشْهَدُ أَنْ لا إله إِلاَّ الله مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ، فَبَشِّرْهُ بِالجَنَّةِ ... » وَذَكَرَ الحديثَ بطوله، رواه مسلم. (1)
«الرَّبِيعُ»: النَّهْرُ الصَّغَيرُ، وَهُوَ الجَدْوَلُ - بفتح الجيمِ - كَمَا فَسَّرَهُ في الحديث. وَقَوْلُه: «احْتَفَرْتُ» روِي بالراء وبالزاي، ومعناه بالزاي: تَضَامَمْتُ وتَصَاغَرْتُ حَتَّى أمْكَنَنِي الدُّخُولُ.
হাদীস নং: ৭১০
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১২ (ভবিষ্যৎ) কল্যাণের জন্য সুসংবাদ দেওয়া এবং প্রাপ্ত কল্যাণের জন্য অভিনন্দন জানানো
হযরত আমর ইবনুল ‘আস রাযি.-এর বিদায়বেলা
হাদীছ নং: ৭১০

ইবনে শিমাসা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আমর ইবনুল 'আস রাযি.-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি মুমূর্ষু অবস্থায়। তিনি দীর্ঘক্ষণ কাঁদলেন। তারপর দেওয়ালের দিকে নিজ চেহারা ঘুরালেন। তাঁর পুত্র বলতে লাগলেন, আব্বাজান! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে এরূপ সুসংবাদ দেননি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে এরূপ সুসংবাদ দেননি? এ কথায় তিনি মুখ ফিরিয়ে বললেন, আমাদের সর্বোত্তম অবলম্বন হল 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ'-এর সাক্ষ্য। আমার জীবনে তিনটি পর্যায় রয়েছে। একটা পর্যায় ছিল এমন, যখন আমার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বেশি ঘৃণার পাত্র আর কেউ ছিল না এবং বাগে পেলে তাঁকে হত্যা করার চেয়ে অন্য কাউকে হত্যা করাও আমার বেশি পসন্দ ছিল না। ওই অবস্থায় যদি আমি মারা যেতাম, তবে নিশ্চিত জাহান্নামী হতাম। তারপর আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপিত করলেন, তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম। তাঁকে বললাম, আপনার ডান হাত বাড়ান। আমি আপনার নিকট বায়'আত গ্রহণ করব। তিনি তাঁর ডান হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু আমি আমার হাত গুটিয়ে নিলাম। তিনি বললেন, কী হল হে আমর? বললাম, আমি একটি শর্ত করে নিতে চাই। তিনি বললেন, তুমি কী শর্ত করে নিতে চাও? বললাম, আমাকে যেন ক্ষমা করা হয়! তিনি বললেন, তুমি কি জান না ইসলাম তার পূর্ববর্তী সবকিছু মিটিয়ে দেয়, হিজরত তার পূর্ববর্তী সবকিছু মিটিয়ে দেয় এবং হজ্জ তার পূর্ববর্তী সবকিছু মিটিয়ে দেয়? (আমি তাঁর হাতে বায়'আত গ্রহণ করলাম) এ সময়ে আমার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বেশি প্রিয় এবং আমার চোখে তাঁরচে' বেশি মর্যাদাবান আর কেউ রইল না। ভক্তি-শ্রদ্ধার আতিশয্যে আমি পূর্ণ দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারতাম না। সুতরাং আমাকে যদি তাঁর হুলিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, তবে আমি তা বর্ণনা করতে পারব না। কেননা আমি পূর্ণ দৃষ্টিতে কখনও তাঁর দিকে তাকাতাম না। ওই অবস্থায়ও যদি আমি মারা যেতাম, তবে অবশ্যই আমি জান্নাতবাসী হব বলে আশা রাখতে পারতাম। তারপর আমরা বিভিন্ন দায়-দায়িত্বে নিয়োজিত হই। আমি জানি না তাতে আমার অবস্থা কী হবে। (তারপর তিনি কিছু অসিয়ত করলেন। তিনি বললেন,) আমি যখন মারা যাব, তখন আমার জানাযায় যেন কোনও বিলাপকারিনী অংশ না নেয় এবং কোনও আগুনও যেন সঙ্গে নেওয়া না হয়। যখন আমাকে দাফন করবে, তখন আমার কবরে অল্প অল্প করে মাটি ফেলবে। তারপর আমার কবরের পাশে এতটুকু সময় অবস্থান করবে, যে সময়ের মধ্যে উট জবাই করে তার গোশত বণ্টন করা যায়। যাতে আমি তোমাদের দ্বারা নিঃসঙ্গতা কাটাতে পারি এবং ভেবে দেখতে পারি আমার প্রতিপালকের দূতগণের প্রশ্নের কী উত্তর দিই। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১২১; সহীহ ইবনে খুযায়মা ২৫১৫; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৮১৯০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৫২৩)
كتاب الأدب
باب استحباب التبشير والتهنئة بالخير
710 - وعن ابن شِمَاسَة، قَالَ: حَضَرْنَا عَمْرَو بنَ العَاصِ - رضي الله عنه - وَهُوَ في سِيَاقَةِ الْمَوْتِ، فَبَكَى طَوِيلًا، وَحَوَّلَ وَجْهَهُ إِلَى الجِدَارِ، فَجَعَلَ ابْنُهُ، يَقُولُ: يَا أبَتَاهُ، أمَا بَشَّرَكَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - بكَذَا؟ أمَا بَشَّرَكَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - بِكَذَا؟ فَأقْبَلَ بِوَجْهِهِ، فَقَالَ: إنَّ أفْضَلَ مَا نُعِدُّ شَهَادَةُ أَنْ لا إلهَ إِلاَّ الله، وَأنَّ مُحَمَّدًا رسول اللهِ، إنِّي قَدْ كُنْتُ عَلَى أطْبَاقٍ ثَلاَثٍ: لَقَدْ رَأيْتُنِي وَمَا أحَدٌ أشَدُّ بُغضًا لرسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - مِنِّي، وَلاَ أحَبَّ إليَّ مِنْ أَنْ أكُونَ قدِ اسْتَمكنتُ مِنْهُ فَقَتَلْتُه، فَلَوْ مُتُّ عَلَى تلكَ الحَالِ لَكُنْتُ مِنْ أهْلِ النَّارِ، فَلَمَّا جَعَلَ اللهُ [ص:229] الإسلامَ في قَلْبِي أتَيْتُ النبيَّ - صلى الله عليه وسلم - فقُلْتُ: ابسُطْ يَمِينَكَ فَلأُبَايِعُك، فَبَسَطَ يَمِينَهُ فَقَبَضْتُ يَدِي، فَقَالَ: «مَا لَكَ يَا عَمْرُو؟» قلتُ: أردتُ أَنْ أشْتَرِطَ، قَالَ: «تَشْتَرِط مَاذا؟» قُلْتُ: أَنْ يُغْفَرَ لِي، قَالَ: «أمَا عَلِمْتَ أن الإسلامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ، وَأن الهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبلَهَا، وَأنَّ الحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ؟» وَمَا كَانَ أحدٌ أحَبَّ إليَّ مِنْ رَسُولِ الله - صلى الله عليه وسلم - وَلاَ أجَلَّ في عَيني مِنْهُ وَمَا كُنْتُ أُطيقُ أن أملأ عَيني مِنْهُ؛ إجلالًا لَهُ، ولو سئلت أن أصفه مَا أطقت، لأني لَمْ أكن أملأ عيني مِنْهُ، ولو مُتُّ عَلَى تِلْكَ الحالِ لَرجَوْتُ أن أكُونَ مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ، ثُمَّ وَلِينَا أشْيَاءَ مَا أدْرِي مَا حَالِي فِيهَا؟ فَإذَا أنَا مُتُّ فَلاَ تَصحَبَنِّي نَائِحَةٌ وَلاَ نَارٌ، فَإذا دَفَنْتُمُونِي، فَشُنُّوا عَليَّ التُّرابَ شَنًّا، ثُمَّ أقِيمُوا حَوْلَ قَبْرِي قَدْرَ مَا تُنْحَرُ جَزورٌ، وَيُقْسَمُ لَحْمُهَا، حَتَّى أَسْتَأنِسَ بِكُمْ، وَأنْظُرَ مَا أُرَاجعُ بِهِ رسُلَ رَبّي. رواه مسلم. (1)
قَوْله: «شُنُّوا» رُوِي بالشّين المعجمة والمهملةِ، أيْ: صُبُّوه قَليلًا قَليلًا، والله سبحانه أعلم.
হাদীস নং: ৭১১
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আপনজনকে বিদায় দেওয়া, সফর বা অন্য কোনও উপলক্ষ্যে বিচ্ছেদকালে তাকে অসিয়ত করা, তার জন্য দু'আ করা এবং তার কাছে দু'আ চাওয়া

দুনিয়ায় মানুষের জীবন অবিচ্ছেদ্য নয়। নানা প্রয়োজনে একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়। দীনী বা দুনিয়াবি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের জন্য অনেক সময় দূর-দূরান্তের সফরেও যেতে হয়। আরেক স্থায়ী বিচ্ছেদ তো আছেই। তা হচ্ছে মৃত্যু। মৃত্যুতে একের থেকে অন্যের যে বিচ্ছেদ ঘটে, তারপর ইহলোকে আর মিলনের কোনও সম্ভাবনা থাকে না। তো দুনিয়ার অস্থায়ী বিচ্ছেদ হোক বা মৃত্যুর স্থায়ী বিচ্ছেদ, উভয়রকম বিচ্ছেদের মুহূর্তটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে মানুষের আবেগ উচ্ছ্বসিত হয়। একের প্রতি অন্যের মন বিগলিত হয়ে ওঠে। এ সময়ে পারস্পরিক যে কথাবার্তা হয়, তা অন্তরে খুব দাগ কাটে। এটা মানুষের এক স্বাভাবিক অবস্থা।
আমাদের ইসলাম এক মহান দীন। এ দীন মানুষের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকেও তার মনুষ্যত্ব বিকাশের মহান লক্ষ্যের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছে। প্রতিটি সুযোগকে মহৎ কাজে ব্যবহার করাই এ দীনের চরিত্র। পারস্পরিক বিচ্ছেদের আবেগঘন মুহূর্ত একটি সুযোগ। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার দ্বারা মানুষ তার উৎকর্ষ বিকাশের পথে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। তাই ইসলাম এ মুহূর্তটির বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বিচ্ছেদের আবেগ-অনুভূতি যাতে এমনি এমনিই নিঃশেষ না হয়ে যায়; বরং জীবনগঠনে তা ভূমিকা রাখতে পারে, সে লক্ষ্যে এ মুহূর্তের সঙ্গে অর্থবহ অসিয়ত-উপদেশের বিধান জুড়ে দিয়েছে।
ইসলামে অসিয়ত-উপদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা মানুষের অন্তরে প্রভাব বিস্তার করে। মানুষের জীবনবদলে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আবার এটা যদি হয় পারস্পরিক বিচ্ছেদকালে, তবে এর উপকার হয় সুদূরপ্রসারী। তাই সফরকালে বা মৃত্যুর আগে জীবনগঠনমূলক অসিয়ত করা উচিত। মৃত্যুর আগে তো মৃত্যুপথযাত্রী অসিয়ত করবে। আর সফরকালে বিদায়দাতা বা বিদায় গ্রহণকারী উভয়ের যে-কেউ অসিয়ত করতে পারে। তবে তাদের মধ্যে কেউ অভিভাবক হয়ে থাকলে তার দিক থেকে অসিয়ত করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অসিয়ত দ্বারাই যে সবকিছু হয়ে যাবে এটা অনিবার্য নয়। এর জন্য আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাওফীক লাভ করাটাও জরুরি। তাই বিদায়কালে অসিয়তের পাশাপাশি আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আও করতে হবে।
ইসলাম অন্যসব জরুরি বিষয়ে যেমন আমাদেরকে দিকনির্দেশনা দান করেছে, তেমনি বিদায়কালীন কর্তব্য তথা অসিয়ত ও দু'আ সম্পর্কেও শিক্ষাদান করেছে যে, অসিয়ত কেমন হওয়া দরকার এবং বিদায়কালে আমরা কেমন কেমন দু'আ করব। এ বিষয়টি যেমন কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে বিবৃত হয়েছে, তেমনি এ সম্পর্কে আছে বহু হাদীছও। এ পরিচ্ছেদের আয়াত ও হাদীছসমূহ মূলত সে সম্পর্কেই। এগুলো মনোযোগ ও চিন্তা-ফিকিরের সঙ্গে পড়লে আমরা আলোচ্য বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পেয়ে যাব। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তা বোঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন।


‘আপনজনকে বিদায় দেওয়া…’ সম্পর্কিত একটি আয়াত

وَوَصَّى بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَابَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى لَكُمُ الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ (132) أَمْ كُنْتُمْ شُهَدَاءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ الْمَوْتُ إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِنْ بَعْدِي قَالُوا نَعْبُدُ إِلَهَكَ وَإِلَهَ آبَائِكَ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ إِلَهًا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ (133)
অর্থ: ইবরাহীম তাঁর সন্তানদেরকে এ কথারই অসিয়ত করল এবং ইয়া‘কূবও (তাঁর সন্তানদেরকে) যে, হে আমার পুত্রগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দীন মনোনীত করেছেন। সুতরাং তোমাদের মৃত্যু যেন এ অবস্থায়ই আসে, যখন তোমরা মুসলিম থাকবে। তোমরা নিজেরা কি সেই সময় উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়া‘কূবের মৃত্যুক্ষণ এসে গিয়েছিল, যখন সে তার পুত্রদের বলেছিল, আমার পর তোমরা কার ইবাদত করবে? তারা সকলে বলেছিল, আমরা সেই এক আল্লাহরই ইবাদত করব, যিনি আপনার মাবুদ এবং আপনার বাপ-দাদা ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকেরও মাবুদ। আমরা কেবল তাঁরই অনুগত।(সূরা বাকারা (২), আয়াত ১৩২, ১৩৩)

ব্যাখ্যা
এ আয়াতের আগের আয়াতে অর্থাৎ সূরা বাকারা ১৩১ নং আয়াতে জানানো হয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দীন ছিল ইসলাম। তিনি জীবনভর এ দীনের উপর চলেছেন। এখানকার প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি ওফাতের সময় নিজ সন্তানদেরকে এ দীন আঁকড়ে ধরার অসিয়ত করেছিলেন। হযরত ইয়া'কূব আলাইহিস সালাম ছিলেন তাঁর নাতি। অর্থাৎ তাঁর পুত্র ইসহাক আলাইহিস সালামের সন্তান। তিনিও ওফাতকালে নিজ সন্তানদের ইসলাম ধর্মে প্রতিষ্ঠিত থাকার অসিয়ত করে গেছেন। তাঁদের উভয়ের অসিয়তের ভাষা হল-
إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى لَكُمُ الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ (আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দীন মনোনীত করেছেন। সুতরাং তোমাদের মৃত্যু যেন এ অবস্থায়ই আসে, যখন তোমরা মুসলিম থাকবে)। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যখন তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করেছেন, তখন তোমাদের কর্তব্য এরই উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা এবং এছাড়া অন্যসব মত ও পথ সর্বতোভাবে অগ্রাহ্য করা। তোমরা সর্বদা সকল ক্ষেত্রে এ দীনের উপর চলতে থাকবে। কখনও কোনও ক্ষেত্রেই এর থেকে বিমুখ হবে না। তবেই তোমাদের মৃত্যু তোমাদের মুসলিম থাকা অবস্থায় সংঘটিত হবে। মুসলিমরূপে মৃত্যুবরণ খুবই জরুরি। কেননা কবর-হাশর সকল ক্ষেত্রে মুক্তিলাভ করা এরই উপর নির্ভর করে। আল্লাহর কাছে যেহেতু ইসলামই একমাত্র মনোনীত দীন, তাই এছাড়া অন্য কোনও দিনের উপর মৃত্যুবরণ করলে আখিরাতে মুক্তিলাভ সম্ভব হবে না।
ইহুদিরা বলত, হযরত ইয়া'কুব আলাইহিস সালাম মৃত্যুকালে অসিয়ত করে গেছেন যেন তাঁর বংশধরগণ ইহুদিধর্মে প্রতিষ্ঠিত থাকে। তাদের এ দাবি যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা'আলা দ্বিতীয় আয়াতে বলছেন-
أَمْ كُنْتُمْ شُهَدَاءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ الْمَوْتُ (তোমরা নিজেরা কি সেই সময় উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়া'কূবের মৃত্যুক্ষণ এসে গিয়েছিল)? অর্থাৎ তোমরা তো তখন উপস্থিত ছিলে না। তাহলে কী করে বলছ তিনি ইহুদিধর্মে প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য অসিয়ত করেছিলেন? তোমাদের এ দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে তিনি অসিয়ত করেছিলেন তাঁর পূর্বপুরুষদের দীন ইসলামের উপর চলার জন্য। তিনি এ বিষয়ে তাঁর সন্তানদের থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছিলেন। এসব কথা আল্লাহ তা'আলার জানা আছে। তিনি ওহীর মাধ্যমে তাঁর আখেরী নবী মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা অবহিত করেছেন।
হযরত ইয়া'কুব আলাইহিস সালাম তাঁর সন্তানদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমার মৃত্যুর পর তোমরা কার ইবাদত করবে? অর্থাৎ তোমরা কোন দীনের উপর চলবে? এর উত্তরে তারা সকলেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল-
نَعْبُدُ إِلَهَكَ وَإِلَهَ آبَائِكَ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ إِلَهًا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ (আমরা সেই এক আল্লাহরই ইবাদত করব, যিনি আপনার মাবুদ এবং আপনার বাপ-দাদা ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকেরও মাবুদ। আমরা কেবল তাঁরই অনুগত)। অর্থাৎ আপনার পূর্বপুরুষগণ নিজেরা যে দীনের উপর ছিলেন এবং যে দীনের উপর আপনি নিজেও আছেন, আপনার পরে আমরাও সে দীন তথা ইসলামের উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকব। আমরা মুসলিম তথা আল্লাহর অনুগত বান্দারূপে জীবনযাপন করব।
লক্ষণীয়, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইয়া'কূব আলাইহিস সালাম ওফাতের সময় তাঁর সন্তানদের যে অসিয়ত করেছিলেন তা ছিল কেবলই দীন সম্পর্কিত। তাঁরা জীবদ্দশায়ও সন্তানদের দীনী তরবিয়াত করেছেন, তাদেরকে দীনের উপর পরিচালিত করেছেন। তারপর তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁরা যাতে দীনের উপর চলে, সে বিষয়েও সতর্ক থেকেছেন। অসিয়ত করাটা সে সতর্কতারই পরিচায়ক। এর মধ্যে

আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।
সাধারণত বাবা-মায়েরা সন্তানদের ভবিষ্যৎচিন্তায় তাদের জন্য টাকা-পয়সা জমা করে। নিজেদের মৃত্যুর পর যাতে তারা সচ্ছলভাবে চলতে পারে, তার ব্যবস্থা করে যায়। তাদের চিন্তা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ভবিষ্যৎকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। অথচ এরচে’ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল সমস্ত মানুষের আসল ভবিষ্যৎ আখিরাতের নাজাত ও সাফল্য কীভাবে লাভ হতে পারে সেই চিন্তা করা। এ চিন্তা নিজের জন্যও করা এবং সন্তানদের জন্যও। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
‘হে মুমিনগণ! নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা করো আগুন থেকে।’(সূরা তাহরীম (৬৬), আয়াত ৬)
পিতার জীবিতকালে তো ছেলেমেয়েরা তার তত্ত্বাবধানে থাকে। সে তাদের দীনী চালচলনের প্রতি লক্ষ রাখে এবং তা রাখা সম্ভব হয়। কিন্তু মৃত্যুর পর তারা কেমন চলবে তা তো জানা নেই। তাই মৃত্যুকালে বিশেষভাবে এ বিষয়ে অসিয়ত করে যাওয়া উচিত। সাধারণত সন্তান-সন্ততি অসিয়তের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কাজেই অসিয়ত যদি দীন সম্পর্কে হয়, তবে আশা থাকে তারা সে অসিয়ত রক্ষা করে দীনের উপর চলার চেষ্টা করবে। ফলে তারা আখিরাতে নাজাত পেয়ে যাবে এবং দীনদার পিতা-মাতার সঙ্গে মিলিত হতে পারবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার তাওফীক দান করুন।

আয়াতটির শিক্ষা
ক. ইসলাম আল্লাহ তা'আলার একমাত্র মনোনীত দীন।
খ. সর্বাবস্থায় সকল ক্ষেত্রে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে। তাতে মুসলিমরূপে মৃত্যুর আশা থাকে।
গ. জীবদ্দশায় যেমন সন্তানদের দীনী তরবিয়াতে সচেষ্ট থাকা জরুরি, তেমনি তারা যাতে মৃত্যুর পরও দীনের উপর চলে সেই অসিয়ত করাও একান্ত কাম্য।
ঘ. পূর্বপুরুষগণ যদি দীনদার হয়, তবে তাদের অনুসরণ করাটা মোটেই দূষণীয় নয়: বরং সেটাই কাম্য এবং একে নিন্দা করাটাই নিন্দনীয়।
ঙ. দলীল-প্রমাণ ছাড়া মনগড়াভাবে বা অনুমান করে কোনও দাবি করা উচিত নয়। এরূপ দাবি করাটা ইহুদিদের চরিত্র।
চ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতীতের বিভিন্ন বিষয়ে আমাদেরকে অবহিত করেছেন। অথচ এসব বিষয়ে তাঁর জ্ঞানলাভের বাহ্যিক কোনও মাধ্যম ছিল না। এটা প্রমাণ করে আল্লাহ তা'আলা তাঁকে ওহীর মাধ্যমে তা জানিয়েছেন। সুতরাং তিনি নিঃসন্দেহে সত্যনবী।
কুরআনের অনুসরণ ও আহলে বায়তের মর্যাদা রক্ষা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসিয়ত
হাদীছ নং: ৭১১

হযরত যায়দ ইবন আরকাম রাযি. বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার হাম্দ ও গুণগান করার পর আমাদের উপদেশ দিলেন ও নসিহত করলেন। তারপর বললেন, হে লোক সকল! আমি একজন মানুষমাত্র। হয়তো অচিরেই আমার প্রতিপালকের দূত এসে যাবে এবং আমি তাঁর ডাকে সাড়া দেব। আমি তোমাদের মধ্যে দু'টি ভার রেখে যাচ্ছি। তার প্রথমটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। তাতে আছে হিদায়াত ও আলো। তোমরা আল্লাহর কিতাব ধরে রেখো এবং তা শক্তভাবে ধরো। এভাবে তিনি আল্লাহর কিতাবের প্রতি উৎসাহ দিলেন ও তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন। তারপর বললেন, আর (দ্বিতীয়টি হচ্ছে) আমার আহলে বায়ত (পরিবারবর্গ)। আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বায়তের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৪০৮; মুসনাদে আহমাদ: ১৯২৬৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা : ১০৭১২; নাসাঈ, আসসুনানুল কুবরা: ৮১১৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা: ২৩৫৭; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৫০২৮; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা ১৩২৩৮)
كتاب الأدب
باب وداع الصاحب ووصيته عند فراقه للسفر وغيره والدعاء لَهُ وطلب الدعاء مِنْهُ
قَالَ الله تَعَالَى: {وَوَصَّى بِهَا إبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَا بَنِيَّ إنَّ اللهَ اصْطَفَى لَكُمُ الدّينَ فَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ أَمْ كُنْتُمْ شُهَدَاءَ إذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ المَوْتُ إذْ قَالَ لِبَنيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِنْ بَعْدِي قَالُوا نَعْبُدُ إلهَكَ وَإلهَ آبَائِكَ إبْراهِيمَ وَإسْمَاعِيلَ وَإسْحاقَ إلهًا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ} [البقرة: 132 - 133].
711 - حديث زيد بن أرقم - رضي الله عنه - الَّذِي سبق في بَابِ إكرام أهْلِ بَيْتِ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: قَامَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - فِينَا خَطِيبًا، فَحَمِدَ الله، وَأثْنَى عَلَيْهِ، وَوَعَظَ وَذَكَّرَ، ثُمَّ قَالَ: «أمَّا بَعْدُ، ألاَ أيُّهَا النَّاسُ، إنَّمَا أنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأتِيَ رَسُولُ رَبِّي فَأُجِيبَ، وَأنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ، أوَّلَهُمَا: كِتَابُ اللهِ، فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ، فَخُذُوا بِكِتَابِ اللهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ»، فَحَثَّ عَلَى كِتَابِ اللهِ، وَرَغَّبَ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ: «وَأَهْلُ بَيْتِي، أذَكِّرُكُمُ اللهَ في أهْلِ بَيْتِي». رواه مسلم، (1) وَقَدْ سَبَقَ بِطُولِهِ.
হাদীস নং: ৭১২
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১৩ আপনজনকে বিদায় দেওয়া, সফর বা অন্য কোনও উপলক্ষ্যে বিচ্ছেদকালে তাকে অসিয়ত করা, তার জন্য দু'আ করা এবং তার কাছে দু'আ চাওয়া
এক প্রতিনিধিদলকে বিদায় দেওয়ার সময় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাদেরকে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের নির্দেশ
হাদীছ নং: ৭১২

হযরত আবূ সুলায়মান মালিক ইবনুল হুওয়ায়রিছ রাযি. বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। আমরা সবাই ছিলাম কাছাকাছি বয়সের যুবক। আমরা তাঁর কাছে বিশ দিন থাকলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও কোমল চরিত্রের। তিনি ভাবলেন, আমরা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে পড়েছি। আমরা পরিবার-পরিজনের যাদেরকে রেখে এসেছি তাদের সম্পর্কে তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন। আমরা তাঁকে সে সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের পরিবারবর্গের কাছে ফিরে যাও। তাদের মধ্যে অবস্থান করো। তাদেরকে শিক্ষাদান করো। তাদেরকে (দীনের উপর চলতে) আদেশ করো আর অমুক নামায অমুক সময়ে, অমুক নামায অমুক সময়ে আদায় করো। নামাযের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের মধ্যে একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে যে সকলের বড় সে তোমাদের ইমামত করবে। -বুখারী ও মুসলিম
বুখারীর অপর এক বর্ণনায় আছে, তোমরা নামায পড়বে, যেরূপ আমাকে পড়তে দেখেছ।
(সহীহ বুখারী: ৬৩১; সহীহ মুসলিম: ৬৭৪; সুনানে নাসাঈ ৬৩৫; সহীহ ইবনে হিব্বান: ১৬৫৮; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর ৬৩৭; সুনানে দারা কুতনী: ১০৬৮; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ২২৬৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা ৫৮৬; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৭২৫)
كتاب الأدب
باب وداع الصاحب ووصيته عند فراقه للسفر وغيره والدعاء لَهُ وطلب الدعاء مِنْهُ
712 - وعن أَبي سليمان مالِك بن الحُوَيْرِثِ - رضي الله عنه - قَالَ: أَتَيْنَا رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - وَنَحْنُ شَبَبَةٌ مُتَقَارِبُونَ، فَأقَمْنَا عِنْدَهُ عِشْرِينَ لَيْلَةً، وَكَانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - رَحِيمًا رَفيقًا، فَظَنَّ أنّا قد اشْتَقْنَا أهْلَنَا، فَسَألَنَا عَمَّنْ تَرَكْنَا مِنْ أهْلِنَا، فَأخْبَرْنَاهُ، فَقَالَ: «ارْجِعُوا إِلَى أهْلِيكُمْ، فَأقِيمُوا فِيهمْ، وَعَلِّمُوهُم وَمُرُوهُمْ، وَصَلُّوا صَلاَةَ كَذَا فِي حِيْنِ كَذَا، وَصَلُّوا كَذَا في حِيْنِ كَذَا، فَإذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أكْبَرُكُمْ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
زاد البخاري في رواية لَهُ: «وَصَلُّوا كَمَا رَأيْتُمُونِي أُصَلِّي».
وَقَوْلُه: «رحِيمًا رَفِيقًا» رُوِيَ بِفاءٍ وقافٍ، وَرُوِيَ بقافينِ.
হাদীস নং: ৭১৩
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১৩ আপনজনকে বিদায় দেওয়া, সফর বা অন্য কোনও উপলক্ষ্যে বিচ্ছেদকালে তাকে অসিয়ত করা, তার জন্য দু'আ করা এবং তার কাছে দু'আ চাওয়া
উমরা আদায়ের জন্য হযরত উমর রাযি.-এর অনুমতি প্রার্থনা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাঁর কাছে দু‘আ চাওয়া
হাদীছ নং: ৭১৩

হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উমরা আদায়ের অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন আর বললেন, হে আমার প্রিয় ভাই! তোমার দু‘আয় আমাদেরকে ভুলো না। তিনি এমন একটি কথা বললেন, যার বিনিময়ে সারাটা দুনিয়া আমার হয়ে গেলেও তা আমার জন্য আনন্দদায়ক হতো না।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি আমাকে বললেন, হে আমার প্রিয় ভাই! তোমার দু‘আয় আমাদের শরীক রেখো। -আবু দাউদ ও তিরমিযী
(সুনানে আবূ দাউদ: ১৪৯৮; জামে তিরমিযী: ৩৫৫৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ২৮৯৪; মুসনাদে আহমাদ: ১৯৫; মুসনাদে আবূ দাউদ তয়ালিসী: ১০; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১০৩১৫; মুসনাদুল বাযযার: ১১৯; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৫৫৫০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৩৯৭)
كتاب الأدب
باب وداع الصاحب ووصيته عند فراقه للسفر وغيره والدعاء لَهُ وطلب الدعاء مِنْهُ
713 - وعن عمرَ بن الخطاب - رضي الله عنه - قَالَ: اسْتأذَنْتُ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - في العُمْرَةِ، فَأذِنَ، وقال: «لاَ تَنْسَانَا يَا أُخَيَّ مِنْ دُعَائِكَ» فقالَ كَلِمَةً ما يَسُرُّنِي أنَّ لِي بِهَا الدُّنْيَا.
وفي رواية قَالَ: «أشْرِكْنَا يَا أُخَيَّ في دُعَائِكَ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح». (1)
হাদীস নং: ৭১৪
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১৩ আপনজনকে বিদায় দেওয়া, সফর বা অন্য কোনও উপলক্ষ্যে বিচ্ছেদকালে তাকে অসিয়ত করা, তার জন্য দু'আ করা এবং তার কাছে দু'আ চাওয়া
বিদায় জানানোর দু‘আ
হাদীছ নং: ৭১৪

সালিম ইবন আব্দুল্লাহ ইবন উমর বলেন, কোনও লোক যখন সফরের ইচ্ছা করত, তখন আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. তাকে বলতেন, আমার কাছে এসো। যাতে আমি তোমাকে বিদায় দিতে পারি, যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিদায় দিতেন। তিনি বলতেন- أسْتَوْدِعُ اللَّهَ دِيْنَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيْمَ عَمَلِكَ (আমি তোমার দীন, তোমার আমানত ও তোমার শেষ আমলসমূহ আল্লাহর নিকট গচ্ছিত রাখছি)। -তিরমিযী
(জামে' তিরমিযী: ৩৪৩৮; সুনানে আবূ দাউদ: ২৬০০; মুসনাদে আহমাদ: ৪৫২৩; সুনানে ইবন মাজাহ: ২৮২৫; মুসনাদুল বাযযার ৬০৮০; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৮৭৫৪ সহীহ ইবনে খুযায়মা ২৫৩১; হাকিম, আল মুস্তাদরাক ১৬১৭; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১০৩১২)
كتاب الأدب
باب وداع الصاحب ووصيته عند فراقه للسفر وغيره والدعاء لَهُ وطلب الدعاء مِنْهُ
714 - وعن سالم بنِ عبدِ الله بنِ عمر: أنَّ عبدَ اللهِ بن عُمَرَ رضي الله عنهما، كَانَ يَقُولُ للرَّجُلِ إِذَا أرَادَ سَفَرًا: ادْنُ مِنِّي حَتَّى أُوَدِّعَكَ كَمَا كَانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - يُوَدِّعُنَا، فَيَقُولُ: «أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكَ، وَأمَانَتَكَ، وَخَواتِيمَ عَمَلِكَ». رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث حسن صحيح».
হাদীস নং: ৭১৫
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১৩ আপনজনকে বিদায় দেওয়া, সফর বা অন্য কোনও উপলক্ষ্যে বিচ্ছেদকালে তাকে অসিয়ত করা, তার জন্য দু'আ করা এবং তার কাছে দু'আ চাওয়া
বিদায় জানানোর দু‘আ
হাদীছ নং: ৭১৫

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন ইয়াযীদ আল-খাতমী রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনও সেনাদলকে বিদায় দেওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكُمْ وَأَمَانَتَكُمْ وَخَوَاتِيمَ أَعْمَالِكُمْ (আমি তোমাদের আমানত ও তোমাদের শেষ আমলসমূহ আল্লাহর নিকট গচ্ছিত রাখছি)। -আবু দাউদ
(সুনানে আবু দাউদ: ২৬০১; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ১০২৬৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৫৯৪২; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ ৫০৪; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ২৪৭৮)

বর্ণনাকারী সাহাবীদ্বয়ের পরিচয় হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর পরিচয় ৪র্থ খণ্ডের ২৩৩ নং হাদীছের অধীনে গত হয়েছে।
كتاب الأدب
باب وداع الصاحب ووصيته عند فراقه للسفر وغيره والدعاء لَهُ وطلب الدعاء مِنْهُ
715 - وعن عبدِ الله بن يزيدَ الخطْمِيِّ الصحابيِّ - رضي الله عنه - قَالَ: كَانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا أرَادَ أَنْ يُوَدِّعَ الجَيشَ، قَالَ: «أسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكُمْ، وَأمَانَتَكُمْ، وَخَواتِيمَ أعْمَالِكُمْ» حديث صحيح، رواه أَبُو داود وغيره بإسناد صحيح. (1)
হাদীস নং: ৭১৬
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১৩ আপনজনকে বিদায় দেওয়া, সফর বা অন্য কোনও উপলক্ষ্যে বিচ্ছেদকালে তাকে অসিয়ত করা, তার জন্য দু'আ করা এবং তার কাছে দু'আ চাওয়া
সফরে গমনেচ্ছু ব্যক্তির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিনটি দু‘আ
হাদীছ নং: ৭১৬

হযরত আনাস রাযি. বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি সফরের ইচ্ছা করেছি। আমাকে পাথেয় দিন। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাকে তাকওয়ার পাথেয় দান করুন। সে বলল, আমাকে আরও বেশি কিছু দিন। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমার গুনাহ মাফ করুন। সে বলল, আরও বেশি দিন। তিনি বললেন, তুমি যেখানেই থাক, আল্লাহ তোমার জন্য কল্যাণপ্রাপ্তি সহজ করুন। -তিরমিযী
(জামে' তিরমিযী: ৩৪৪৪; মুসনাদুল বাযযার ৬৯৩৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা ২৫৩২; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ: ৫০২; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ২৪৭৭)
كتاب الأدب
باب وداع الصاحب ووصيته عند فراقه للسفر وغيره والدعاء لَهُ وطلب الدعاء مِنْهُ
716 - وعن أنسٍ - رضي الله عنه - قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النبي - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: يَا رسولَ الله، إنّي أُرِيدُ سَفَرًا، فَزَوِّدْنِي، فَقَالَ: «زَوَّدَكَ الله التَّقْوَى» قَالَ: زِدْنِي قَالَ: «وَغَفَرَ ذَنْبَكَ» قَالَ: زِدْنِي، قَالَ: «وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ». رواه الترمذي (1)، وقال: «حديث حسن».
হাদীস নং: ৭১৭
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ইস্তিখারা ও মাশওয়ারা

اَلْإِسْتِخَارَةُ অর্থ কল্যাণ প্রার্থনা করা। আমরা যে কাজ করতে চাই, সেটি আমার জন্য কল্যাণকর কি না, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত কিছু বলতে পারি না। আমাদের জ্ঞান বড় কম। তাই আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ
‘এটা তো খুবই সম্ভব যে, তোমরা একটা জিনিসকে মন্দ মনে কর, অথচ তোমাদের পক্ষে তা মঙ্গলজনক। আর এটাও সম্ভব যে, তোমরা একটা জিনিসকে পসন্দ কর, অথচ তোমাদের পক্ষে তা মন্দ।’(সূরা বাকারা (২), আয়াত ২১৬)
আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা। প্রকাশ্য-গুপ্ত যাবতীয় বিষয়ে তিনি পরিপূর্ণ অবহিত। আমাদের জন্য কোনটা মঙ্গলজনক কোনটা ক্ষতিকর, তার পরিপূর্ণ জ্ঞান কেবল তাঁরই আছে। তাই আমরা যে কাজ করতে চাই সে বিষয়ে চূড়ান্ত ফয়সালার ভার আল্লাহর উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত। অর্থাৎ তাঁর কাছে এই দু'আ করা যে, কাজটি করার মধ্যে যদি কল্যাণ নিহিত থাকে, তবে তিনি যেন সেটি করিয়ে দেন। আর যদি কল্যাণ থাকে তা না করার ভেতর, তবে তিনি যেন তা সরিয়ে দেন। এ দু'আকে ইস্তিখারা বলা হয়। যে-কোনও কাজ করা না করা কিংবা একাধিক বিষয়ের মধ্যে কোনও একটি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কেবল নিজ বুদ্ধি-বিবেকের উপর নির্ভরশীল না হয়ে ইস্তিখারা করা অর্থাৎ আল্লাহর কাছে দু'আ করার মাধ্যমেই আমাদেরকে সামনে বাড়তে বলা হয়েছে। তাতে সে কাজ বা সে বিষয়টি যত সাধারণই হোক না কেন। কেননা আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ এমন বহু কাজই আছে, যা করার মধ্যে বিপুল ক্ষতি নিহিত থাকে। অপরদিকে এমন বহু তুচ্ছ বিষয়ই আছে, যা না করা হলে অনেক বড় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়। তাই যাবতীয় বিষয়েই ইস্তিখারা করে নেওয়া বাঞ্ছনীয়। বলা হয়ে থাকে, ওই ব্যক্তি কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, যে ইস্তিখারার সঙ্গে কাজ করে। কাজেই ইস্তিখারা করতে অলসতা করা উচিত নয়। কোনও কারণে পূর্ণাঙ্গ ইস্তিখারা করতে না পারলে অন্তত এই দু'আর সঙ্গে কাজ করা উচিত যে- اَللّهُمَّ خِرْ لِي وَاخْتَرْ لِي (হে আল্লাহ! আমার জন্য কল্যাণের ফয়সালা করুন এবং আমার যা করণীয়, আপনিই তা নির্ধারণ করুন)।(জামে' তিরমিযী: ৩৫১৬; মুসনাদুল বাযযার ৫৯; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৪৪)
প্রকাশ থাকে যে, শরী'আতে যে কাজের সুস্পষ্ট আদেশ করা হয়েছে বা নিষেধ করা হয়েছে, তাতে ইস্তিখারা নেই। যেমন নামায পড়ব কি পড়ব না, হজ্জ আদায় করব কি করব না, সুদ-ঘুষ পরিহার করব কি না, এ বিষয়ে ইস্তিখারা করা জায়েযই নয়। হাঁ, হজ্জের বেলায় এ বিষয়ে ইস্তিখারা করা যেতে পারে যে, হজ্জ এ বছর করব না আগামী বছর, জাহাজে যাব না প্লেনে।
যে কাজে শরী'আতের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোনও হুকুম নেই, বরং তা করা না করার বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, ইস্তিখারা কেবল এরকম কাজেই মুস্তাহাব। যেমন কোনও চাকরির বেলায় সেটি করা বা না করা সম্পর্কে ইস্তিখারা করা। বিবাহে কোনও পাত্র বা পাত্রী সম্পর্কে আলোচনা হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি হবে না, তা নিয়ে ইস্তিখারা করা। কোনও জমি ক্রয়ের ইচ্ছা করা হলে সেটি কিনব কি কিনব না, এ বিষয়ে ইস্তিখারা করা ইত্যাদি।
ইস্তিখারার নিয়ম হল দু'রাকাত নফল নামায পড়ে হাদীছে বর্ণিত দু'আটি পড়া। ইস্তিখারায় স্বপ্নে দেখার বিষয়টি কোনও হাদীছে নেই। অনেকে মনে করে ইস্তিখারার পর যা স্বপ্নে দেখা হবে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এ ধারণার কোনও ভিত্তি নেই। এমনিভাবে ইস্তিখারা করলে কোনও একদিকে মন ঝুঁকতে হবে এমন কোনও কথাও নেই। কোনও কোনও বর্ণনায় এরূপ কথা থাকলেও সে বর্ণনা সহীহ নয়।
প্রকৃতপক্ষে কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত মাশওয়ারার ভিত্তিতে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় শরী'আত মাশওয়ারার খুব গুরুত্ব দিয়েছে। কাজেই একইসঙ্গে ইস্তিখারা ও মাশওয়ারা উভয়ই করা চাই। করা হবে তাই, যা মাশওয়ারায় ফয়সালা হয়। ইস্তিখারার ফায়দা হল সে ফয়সালাটি যদি মঙ্গলজনক হয়, তবে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তা সম্পন্ন করার তাওফীক লাভ হবে। আর মঙ্গলজনক না হলে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এমন কোনও বাধা দাঁড়িয়ে যাবে, যদ্দরুন সে কাজটি করা হবে না। তাছাড়া ইস্তিখারা করলে মাশওয়ারার ভেতরেও বরকত হবে। অর্থাৎ মাশওয়ারার ফয়সালাটি মঙ্গলজনক হবে। তাই কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজে মাশওয়ারা করতে কিছুতেই অবহেলা করতে নেই।
পরামর্শ খুবই কল্যাণকর। কেননা বুদ্ধি-বিবেচনায় সকল লোক সমান নয়। একজন অপেক্ষা অন্যজন বেশি বুদ্ধিমান ও বেশি বিচক্ষণ হয়ে থাকে। কাজেই কোনও বিষয়ে বিজ্ঞজনদের সঙ্গে পরামর্শ করা হলে সে বিষয়ের সকল দিক সামনে চলে আসে। সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম দিকসমূহ পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে বিষয়টি সম্পর্কে তুলনামূলক নিখুঁত ও যথোপযুক্ত সিদ্ধান্তগ্রহণ সহজ হয়। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি কোনও কাজ করার ইচ্ছা করে এবং পরামর্শের ভিত্তিতে সে তা করা বা না করার সিদ্ধান্ত নেয়, আল্লাহর পক্ষ থেকে সে যথার্থ ও উপকারী পন্থার নির্দেশনা লাভ করে। অপর এক বর্ণনায় আছে, যদি সঠিক পথের দিশা পেতে চাও, তবে বুদ্ধিমান ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করো। তোমরা বুদ্ধিমান ব্যক্তির মতামত প্রত্যাখ্যান করো না। তাহলে পস্তাতে হবে।
ইস্তিখারা ও মাশওয়ারার কল্যাণকরতা ও বহুবিধ ফায়দা একটি পরীক্ষিত বিষয়। কুরআন ও হাদীছে আমাদেরকে এর উপর আমল করার নির্দেশ ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। রিয়াযুস সালেহীনের এ পরিচ্ছেদটি সে সম্পর্কেই।


‘ইস্তিখারা ও মাশওয়ারা’ সম্পর্কিত দুটি আয়াত

এক নং আয়াত
وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ
অর্থ: এবং (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ করতে থাকো।(সূরা আলে ‘ইমরান (৩), আয়াত ১৫৯)

ব্যাখ্যা
এ আয়াতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। الْأَمْرِ শব্দের অর্থ গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তা লেনদেন বিষয়ে হোক, শাসনকার্য সম্পর্কে হোক বা অন্য কোনও বিষয়ে। এখানে প্রশ্ন হতে পারে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তো ওহী আসত, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিনি ওহীর অপেক্ষা করতে পারতেন, আল্লাহ তা'আলাই ওহীর মাধ্যমে তাঁকে নির্দেশনা দান করতেন, এ অবস্থায় অন্য কারও সঙ্গে তাঁর পরামর্শ করার প্রয়োজন হবে কেন? কেউ কেউ বলেছেন, তাঁর নিজের পরামর্শের কোনও প্রয়োজন ছিল না। তাঁকে এ হুকুম করা হয়েছে সাহাবায়ে কেরামের মনস্তুষ্টির জন্য। কিন্তু প্রকৃত বিষয় তা নয়। এমনিতে তো দীনী বিষয়সমূহে সাধারণত আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাঁকে ওহীর মাধ্যমেই নির্দেশনা দান করা হত। তবে ক্ষেত্রবিশেষে সিদ্ধান্তগ্রহণের বিষয়টি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজ বিবেচনার উপর ছেড়ে দেওয়া হত। এ আয়াতে হুকুম করা হয়েছে, তিনি যেন এরূপ ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তাই করতেন। যেমন বদরের যুদ্ধে তিনি তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বদরের যুদ্ধবন্দীদের বিষয়েও তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন।
ওহীর জ্ঞান ছাড়াও আল্লাহ তা'আলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতা দান করেছিলেন। এ ক্ষেত্রেও তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ছিলেন। অন্যের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই যে-কোনও বিষয়ে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর ছিল। তা সত্ত্বেও যে তাঁকে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করার হুকুম দেওয়া হয়েছে, এর একটা উদ্দেশ্য উম্মতকে শিক্ষাদান করা যে, তারা যেন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শের মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
প্রকাশ থাকে যে, পরামর্শ করার এ আদেশ কেবল এমনসব বিষয়ে প্রযোজ্য, যে বিষয়ে কুরআন ও হাদীছে সুস্পষ্ট কোনও নির্দেশনা নেই। যেসব বিষয়ে কুরআন ও হাদীছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে, তাতে পরামর্শের কোনও প্রয়োজন নেই। বরং এরূপ বিষয়ে পরামর্শ করা জায়েযই নয়।

আয়াতটির শিক্ষা
কুরআন ও হাদীছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিজ্ঞজনদের সঙ্গে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

দুই নং আয়াত
وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ
অর্থ: এবং যাদের কাজকর্ম পারস্পরিক পরামর্শক্রমে সম্পন্ন হয়।(সূরা শূরা (৪২), আয়াত ৩৮)

ব্যাখ্যা
অর্থাৎ আখিরাতে আল্লাহ তা'আলার কাছে কল্যাণপ্রাপ্ত লোকদের আরেকটা গুণ হল, তারা পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করে। যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কুরআন-হাদীছে সুনির্দিষ্ট বিধান দেওয়া হয়নি, তাতে তারা পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তা রাষ্ট্রীয় বিষয় হোক বা পারিবারিক বিষয়। রাষ্ট্রীয় বিষয়ে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এটা ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ ধারা। শাসকের জন্য এ ধরার অনুসরণ অপরিহার্য। ফকীহগণের মতে যে শাসক পরামর্শের তোয়াক্কা করে না, তার ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকার থাকে না। সে বরখাস্তের উপযুক্ত হয়ে যায়।
রাষ্ট্র পরিচালনা ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রেও পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করা উচিত। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছুতেই পরামর্শ ছাড়া এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন নয়। ইমাম জাসসাস রহ. আহকামুল কুরআন গ্রন্থে বলেন, এ আয়াত দ্বারা পরামর্শের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন কোনও কাজে তাড়াহুড়া না করে পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিই। নিজের মতকে প্রাধান্য না দিয়ে বিজ্ঞজনদের সঙ্গে পরামর্শ করি।
পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করলে ভুলত্রুটি কম হয়। তাতে কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়। সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থাটি পরামর্শের দ্বারাই খুঁজে পাওয়া যায়। কোনও ব্যক্তি যত বুদ্ধিমানই হোক, প্রত্যেক বিষয়ের ভালোমন্দ সকল দিক স্পষ্ট হয়ে ওঠা অনিবার্য নয়। বিজ্ঞজনদের সঙ্গে পরামর্শ করলে সকল দিক সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়। তাই সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বার্থে পরামর্শকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পরামর্শ পারস্পরিক সম্প্রীতি রক্ষায়ও সহায়ক। কেননা যার সঙ্গে পরামর্শ করা হয় সে উপলব্ধি করতে পারে যে, তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং তার মতামতকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এতে করে পরামর্শপ্রার্থীর প্রতি স্বাভাবিকভাবেই তার অন্তরে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। এভাবে পরামর্শ উভয়কে কাছাকাছি নিয়ে আসে। পারিবারিক সম্প্রীতিতেও পরামর্শ বিশেষ ভূমিকা রাখে। যেসব পরিবার পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়, সেসব পরিবারে শান্তি-শৃঙ্খলা তুলনামূলক বেশি থাকে। তাই সুখী পরিবার গড়ার লক্ষ্যে পরামর্শকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এতে করে কেবল দুনিয়ার সুখই নয়; পরকালীন কল্যাণও নিশ্চিত হয়। ঝগড়াঝাটি কেবল ইহজীবনেই ক্ষতি বয়ে আনে না; পরকালকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। সে ক্ষতি থেকে বাঁচাটা বেশি জরুরি। সুতরাং সে লক্ষ্যেও পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করতে অভ্যস্ত হওয়া দরকার।

আয়াতটির শিক্ষা
পরামর্শ করা প্রকৃত মুমিনের গুণ। এ গুণ মানুষের ইহলোক ও পরলোকের সাফল্য বয়ে আনে। তাই আমাদেরকে অবশ্যই এ গুণের চর্চা করতে হবে।
হাদীছ নং: ৭১৮
হযরত জাবির রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাবতীয় বিষয়ে আমাদেরকে ইস্তিখারার শিক্ষাদান করতেন ঠিক কুরআন মাজীদের সূরার মতো। তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন কোনও কাজের ইচ্ছা করে, তখন যেন ফরযের অতিরিক্ত দু'রাকাত নামায পড়ে নেয়, তারপর বলে- হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণ চাই আপনার জ্ঞানের সাহায্যে, আপনার কাছে শক্তি চাই আপনার শক্তির সাহায্যে, এবং আপনার কাছে আপনার মহা অনুগ্রহ থেকে অনুগ্রহ কামনা করি। আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতা রাখেন। আমি কোনও ক্ষমতা রাখি না। আপনি জানেন, আমি জানি না। আপনি যাবতীয় গুপ্ত বিষয়ে মহাজ্ঞানী। হে আল্লাহ! আপনার জ্ঞান অনুযায়ী যদি এ বিষয়টি আমার পক্ষে আমার দীন, আমার জীবিকা ও আমার পরিণামের দিক থেকে কল্যাণকর হয়, অথবা বলেছেন, আমার দুনিয়া ও আখিরাতের পক্ষে (কল্যাণকর হয়), তবে আমার জন্য এর ব্যবস্থা করে দিন এবং আমার পক্ষে এটা সহজ করে দিন। তারপর এতে আমাকে বরকত দান করুন। পক্ষান্তরে আপনার জ্ঞান অনুযায়ী যদি এ বিষয়টি আমার পক্ষে আমার দীন, আমার জীবিকা ও আমার পরিণামের দিক থেকে অনিষ্টকর হয়, অথবা বলেছেন, আমার দুনিয়া ও আখিরাতের পক্ষে (অনিষ্টকর হয়), তবে এটা আমার থেকে সরিয়ে দিন এবং আমাকেও এর থেকে সরিয়ে দিন। এবং আমার জন্য কল্যাণের ব্যবস্থা করুন, তা যেখানেই থাকে। তারপর আমাকে তাতে সন্তুষ্ট করে দিন। বর্ণনাকারী বলেন, এতে নিজ প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করবে। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৬৩৮২; সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৮; সুনানে নাসাঈ: ৩২৫৩; জামে' তিরমিযী: ৪৮০; সুনানে ইবন মাজাহ ১৩৮৪; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৯৪০২; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৮৮২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর ১০০১২; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৪৯২১)
كتاب الأدب
باب الاستِخارة والمشاورة
قَالَ الله تَعَالَى: {وَشَاوِرْهُمْ فِي الأَمْرِ} [آل عمران: 159]، وقال الله تَعَالَى: {وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ} [الشورى: 38] أيْ: يَتَشَاوَرُونَ بَيْنَهُمْ فِيهِ.
717 - وعن جابر - رضي الله عنه - قَالَ: كَانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - يُعَلِّمُنَا الاسْتِخَارَةَ في الأمُورِ كُلِّهَا كَالسُّورَةِ مِنَ القُرْآنِ، يَقُولُ: «إِذَا هَمَّ أحَدُكُمْ بِالأمْرِ، فَلْيَركعْ ركْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الفَرِيضَةِ، ثُمَّ ليقل: اللَّهُمَّ إنِّي أسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وأسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيْمِ، فَإنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أعْلَمُ، وَأنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ. اللَّهُمَّ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هَذَا الأمْرَ خَيْرٌ لِي في دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أمْرِي» أَوْ قَالَ: «عَاجِلِ أمْرِي وَآجِلِهِ، فاقْدُرْهُ لي وَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ. وَإنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي في دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي» أَوْ قَالَ: «عَاجِلِ أمْرِي وَآجِلِهِ؛ فَاصْرِفْهُ عَنِّي، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِيَ الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أرْضِنِي بِهِ» قَالَ: «وَيُسَمِّيْ حَاجَتَهُ». رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ৭১৮
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১৫ ঈদগাহে যাওয়া, রোগী দেখতে যাওয়া, হজ্জ, জিহাদ, জানাযা এবং অনুরূপ নেককাজে এক পথে যাওয়া ও অন্য পথে ফেরা যাতে ইবাদতের স্থান বৃদ্ধি পায়
হাদীছ নং: ৭১৮
হযরত জাবির রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন আসা-যাওয়ায় পথের পার্থক্য করতেন (এক পথে যেতেন আরেক পথে ফিরতেন)। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৯৮৬; সুনানে ইবন মাজাহ ১২৯৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১১০৮)
كتاب الأدب
باب استحباب الذهاب إِلَى العيد وعيادة المريض والحج والغزو والجنازة ونحوها من طريق، والرجوع من طريق آخر لتكثير مواضع العبادة
718 - عن جابر - رضي الله عنه - قَالَ: كَانَ النبي - صلى الله عليه وسلم - إِذَا كَانَ يومُ عيدٍ خَالَفَ الطَّريقَ. رواه البخاري. (1)
قَوْله: «خَالَفَ الطَّريقَ» يعني: ذَهَبَ في طريقٍ، وَرَجَعَ في طريقٍ آخَرَ.
হাদীস নং: ৭১৯
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১৫ ঈদগাহে যাওয়া, রোগী দেখতে যাওয়া, হজ্জ, জিহাদ, জানাযা এবং অনুরূপ নেককাজে এক পথে যাওয়া ও অন্য পথে ফেরা যাতে ইবাদতের স্থান বৃদ্ধি পায়
হাদীছ নং: ৭১৯
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাজারার পথ দিয়ে বের হতেন এবং মু‘আররাসের পথ দিয়ে প্রবেশ করতেন। আর যখন মক্কায় প্রবেশ করতেন, ছানিয়া 'উলয়া দিয়ে প্রবেশ করতেন এবং ছানিয়া সুফলা দিয়ে বের হতেন। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৫৩৩; সহীহ মুসলিম: ১২৫৭; সুনানে আবু দাউদ: ১৮৬৬, ১৮৬৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ২৯৪১; সুনানে নাসাঈ ২৮৬৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা ৯৬১; মুসনাদে আহমাদ: ৪৮৪২; মুসনাদুল বাযযার: ৫৬৭৩; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১৫৮২৮)
كتاب الأدب
باب استحباب الذهاب إِلَى العيد وعيادة المريض والحج والغزو والجنازة ونحوها من طريق، والرجوع من طريق آخر لتكثير مواضع العبادة
719 - وعن ابن عُمَرَ رضي الله عنهما: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - كَانَ يَخْرُجُ مِنْ طَريق الشَّجَرَةِ، وَيَدْخُلُ مِنْ طَريقِ الْمُعَرَّسِ (1)، وَإِذَا دَخَلَ مَكَّةَ، دَخَلَ مِن الثَّنِيَّةِ (2) الْعُلْيَا، وَيَخْرُجُ مِنَ الثَّنِيَّةِ السُّفْلَى. متفقٌ عَلَيْهِ. (3)