ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার
فقه السنن و الآثار (أدلة السادات الاحناف)
৬. হজ্ব - উমরার অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ১ টি
অনুসন্ধান করুন...
হাদীস নং:১৪৭১
নবী (ﷺ) এর হজ্জের বিবরণ
(১৪৭১) তাবি'-তাবিয়ি জা'ফর সাদিক (১৪৮ হি.) বলেন, আমার পিতা (তাবিয়ি) মুহাম্মাদ বাকির (১১৪ হি.) বলেছেন, আমরা জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রা.র মাজলিসে প্রবেশ করলাম (তখন জাবির রা. দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন)। তিনি উপস্থিত মানুষদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করছিলেন । যখন আমার পালা এল তখন আমি বললাম, আমি মুহাম্মাদ ইবন আলী ইবন হুসাইন (ইমাম হুসাইনের পুত্র আলী আসগার যাইনুল আবেদ্বীনের পুত্র মুহাম্মাদ)। তিনি তখন (আমার পরিচয় পেয়ে আবেগ-উদ্বেলিত হয়ে স্নেহ-ভালবাসায়) তার হাত আমার মাথার উপর রাখলেন। এরপর তিনি আমার জামার উপরের বোতামটি খুললেন। এরপর নীচের বোতামটি খুললেন। এরপর তিনি তার হাতের তালু আমার বুকে দুই স্তনের মাঝে রাখলেন। আমি তখন কেবল কৈশোরোত্তীর্ণ যুবক । এরপর তিনি বললেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র, তোমাকে সুস্বাগতম! তুমি যা ইচ্ছা জিজ্ঞাসা করো। তখন তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছেন । আমি তাকে প্রশ্ন করলাম- আর তখন সালাতের সময় উপস্থিত হল। তিনি একটি তাতে বোনা চাদর গায়ে জড়িয়ে সালাতে দাঁড়ালেন। চাদরটি এত ছোট ছিল যে, তিনি যখনই তা কাঁধের উপর রাখছিলেন, তার দুইপ্রান্ত (কাঁধ থেকে নেমে) তার কাছে ফিরে আসছিল। তার বড় চাদরটি তার পাশেই আলনার উপরে ছিল। এভাবে তিনি আমাদের নিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করলেন।
তারপর আমি বললাম, আপনি আমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হজ্জের বিষয়ে বলুন তখন তিনি হাত দিয়ে ইশারা করে নয় সংখ্যার গিরা দিলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (মদীনায়) নয় বছর অবস্থান করলেন হজ্জ করলেন না অতঃপর তিনি দশম বছরে মানুষদের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, এবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হজ্জ করবেন। তখন অনেক মানুষ মদীনায় আগমন করলেন। সকলেই চান যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অনুকরণ-অনুসরণ করে হজ্জ করবেন এবং তিনি যা করেন তাই করবেন। তখন আমরা তাঁর সাথে বের হলাম আমরা যুল হুলাইফা আগমন করলে (আবু বাকরের স্ত্রী) আসমা বিনতু উমাইস মুহাম্মাদ ইবন আবু বাকরকে প্রসব করেন। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট দূত প্রেরণ করে জানতে চান যে, তিনি কী করবেন? তিনি বলেন, তুমি গোসল করো, (রক্ত নিয়ন্ত্রণের জন্য) শক্ত করে একটি কাপড় বেঁধে নাও এবং ইহরাম করো। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (যুল হুলাইফার) মসজিদে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি তার 'কাসওয়া' নামের উষ্ট্রীতে আরোহণ করেন। তখন তাঁর উষ্ট্রী তাঁকে নিয়ে বাইদার সমভূমিতে স্থিত হল তখন আমি আমার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত তাঁর সামনে তাকিয়ে দেখলাম শুধু আরোহী বা পদাতিক। তাঁর ডানে একই অবস্থা। তাঁর বামে একই অবস্থা । তাঁর পেছনেও একই অবস্থা । রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের মধ্যে রয়েছেন । তাঁর উপর কুরআন নাযিল হচ্ছে। তিনি তার ব্যাখ্যা জানেন। তিনি যা করবেন আমরা তাই করব । তখন তিনি আল্লাহর তাওহীদ বা একত্ববাদের তালবিয়া পাঠ করলেন: ‘বান্দা হাযির, হে আল্লাহ, বান্দা হাযির। বান্দা হাযির। আপনার কোনো শরীক নেই । বান্দা হাযির। প্রশংসা এবং নিআমত আপনারই এবং রাজত্ব । আপনার কোনো শরীক নেই'। অন্যান্য মানুষ তারা যে তালবিয়া পাঠ করেন তা পাঠ করছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের তালবিয়ার কিছু নিষেধ করেন নি । আর তিনি তাঁর (উল্লিখিত) তালবিয়াটিই পাঠ করতে থাকেন
।
জাবির রা. বলেন, আমরা হজ্জ ছাড়া আর কিছুরই নিয়্যাত করি নি। আমরা উমরার (উমরাহ করতে হবে বলে) কিছুই জানতাম না। এই অবস্থাতেই আমরা তাঁর সাথে বাইতুল্লাহয় আগমন করলাম। তখন তিনি হাজারে আসওয়াদের কোণ স্পর্শ করলেন। এরপর তাওয়াফের তিন চক্কর দৌড়ালেন এবং চার চক্কর হ্যাঁটলেন। এরপর তিনি মাকামে ইবরাহীমের দিকে গেলেন। তখন তিনি পাঠ করলেন: 'এবং তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ করো' । অতঃপর তিনি মাকামে ইবরাহীমকে তাঁর ও বাইতুল্লাহর মাঝে রাখলেন (রেখে তাওয়াফের দুই রাকআত সালাত আদায় করলেন) । জা'ফর সাদিক বলতেন, আমার পিতা বলতেন, আমার জানামতে তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কর্ম হিসাবেই বলতেন যে, তিনি (তাওয়াফের) রাকআতদ্বয়ে সূরা ইখলাস ও সূরা কাফিরূন পাঠ করতেন। অতঃপর তিনি ফিরে এসে আবার হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করেন। অতঃপর তিনি মসজিদে হারামের দরজা দিয়ে সাফা পাহাড়ে দিকে বেরিয়ে যান ।
সাফার নিকটবর্তী হয়ে তিনি পাঠ করেন: ‘সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম' আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন আমি তা দিয়েই শুরু করব। তখন তিনি সাফা থেকে শুরু করেন। তিনি সাফা পাহাড়ের উপরে আরোহণ করেন। উঠতে উঠতে যখন তিনি বাইতুল্লাহকে দেখতে পেলেন তখন কিবলার দিকে মুখ করে আল্লাহর একত্ব ঘোষণা করলেন এবং তাকবীর বললেন । তিনি বললেন, 'আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই । তিনি একক । তাঁর কোনো অংশীদার নেই। এবং রাজত্ব তাঁরই ও প্রশংসা তাঁরই । এবং তিনি সবকিছুর উপর শক্তিমান। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক । তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন। এবং তিনি তাঁর দাসকে সাহায্য করেছেন। এবং তিনি একাই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেছেন’ । অতঃপর এর মাঝে তিনি দুআ করেন। এভাবে তিনি তিনবার বলেন ।
অতঃপর তিনি মারওয়া পাহাড় অভিমুখে নেমে গেলেন। যখন তাঁর পদযুগল নিম্নভূমির উপর দাঁড়াল তখন তিনি দৌড়াতে থাকলেন। যখন তিনি নিম্নভূমি থেকে উঠে পড়লেন তখন হ্যাঁটতে লাগলেন। যখন তিনি মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছালেন তখন সাফার উপরে যেরূপ করেছেন মারওয়ার উপরেও তদ্রূপ করলেন । যখন তাঁর শেষ আবর্তন (সাঈ) মারওয়ার উপরে শেষ হল তখন তিনি বললেন, আমি পরে যা বুঝেছি তা আগে বুঝতে পারলে আমি হজ্জের পশু (হাদ্ঈ) নিয়ে আসতাম না এবং আমি এটিকে (এই তাওয়াফ ও সাঈকে) উমরাহ বানিয়ে দিতাম। কাজেই তোমাদের মধ্যে যার সাথে হজ্জের পশু (হাদ্ঈ) নেই সে যেন হালাল হয়ে যায় এবং এটিকে উমরাহ বানিয়ে দেয়। তখন সুরাকা ইবন মালিক ইবন জুশউম উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, এই নিয়মটি (হজ্জের নিয়তে তাওয়াফ ও সাঈ করে তাকে উমরাহতে রূপান্তরিত করা ) কী শুধু আমাদের এই বছরের জন্য না সদা সর্বদার জন্য? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো একটির মধ্যে আরেকটি প্রবেশ করিয়ে বললেন, উমরাহ হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করেছে, দুইবার (বললেন); না, (এই বিধান) সদা সর্বদার জন্য, সদা সর্বদার জন্য।
আর আলী রা. ইয়ামান থেকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কিছু উট নিয়ে আসেন । তিনি (মক্কায় এসে) দেখেন যে, (তাঁর স্ত্রী) ফাতিমা রা.ও হালাল হয়েছেন। তিনি সুগন্ধি মিশ্রিত রং্গিন পোশাক পরিধান করেছেন এবং সুরমা ব্যবহার করেছেন । আলী রা. ফাতিমার এই কর্মে আপত্তি করেন। তখন তিনি (ফাতিমা) বলেন যে, আমার আব্বা আমাকে এরূপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন । জাবির রা. বলেন, (পরবর্তীকালে) আলী রা. তার খিলাফতকালে (৩৫-৪০ হি.) ইরাকে অবস্থানের সময় বলতেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট গিয়ে ফাতিমার এই কর্মের বিরুদ্ধে তাঁকে উত্তেজিত করতে লাগলাম । ফাতিমা তাঁর নামে যা বলেছে সে বিষয়ে আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট ফাতওয়া চাইলাম । আর আমি তাঁকে জানালাম যে, আমি ফাতিমার এই কর্মের প্রতিবাদ করেছি । তখন তিনি বলেন, সে (ফাতিমা) সত্যই বলেছে, সে সত্যই বলেছে । তুমি হজ্জের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় কী বলেছিলে? আলী বলেন, আমি বলেছিলাম, ‘হে আল্লাহ, আপনার রাসূল যে হজ্জের ইহরাম করেছেন আমি সেই হজ্জের ইহরাম করছি'। তিনি বলেন, আমার সাথে হজ্জের পশু বা হাদঈ রয়েছে; কাজেই তুমি হালাল হতে পারবে না। আলী যে হজ্জের পশুগুলো ইয়ামান থেকে নিয়ে আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যেগুলো নিয়ে এসেছিলেন সব মিলে একশতটি পশু হয়েছিল। জাবির বলেন, তখন সকল মানুষ হালাল হয়ে গেলেন এবং মাথার চুল ছাটলেন। শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং যাদের সাথে হজ্জের পশু ছিল তারা হালাল হলেন না।
যখন তারবিয়াহর দিন (জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ) এসে গেল তখন সকলেই মিনার দিকে রাওয়ানা দিলেন। তখন তারা হজ্জের জন্য ইহরাম করলেন । রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর বাহনে আরোহণ করেন (মিনায় গমন করেন) এবং মিনায় যুহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও (৯ তারিখ সকালের) ফজরের সালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি সূর্যোদয় পর্যন্ত অল্পকিছু সময় অপেক্ষা করেন । তিনি তাঁর জন্য (আরাফার উপকণ্ঠে) নামিরা প্রান্তরে একটি তাঁবু খাটাতে নির্দেশ দেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) চলতে শুরু করেন। কুরাইশ বংশের মানুষেরা নিশ্চিত ছিল যে, তিনি (মুযদালিফায়) মাশআরুল হারামের নিকটেই অবস্থান করবেন। জাহিলি যুগে কুরাইশরা এইরূপই করত । কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুযদালিফার প্রান্ত অতিক্রম করে চলে গেলেন এবং আরাফায় পৌছে গেলেন । তথায় তিনি দেখতে পেলেন যে, নামিরা প্রান্তরে তার জন্য তাঁবু খাটানো হয়েছে । তখন তিনি সেই তাঁবুতে অবতরণ করেন ।
যখন সূর্য মধ্যাকাশ থেকে পশ্চিমে গড়িয়ে গেল তখন তাঁর নির্দেশে তাঁর ‘কাসওয়া’ নামের উষ্ট্রীকে প্রস্তুত করা হয়। তখন তিনি নিম্নভূমির মধ্যভাগে গমন করেন এবং মানুষদের উদ্দেশ্যে খুতবা (বক্তৃতা) প্রদান করেন। তিনি বলেন, এই শহরে এই মাসে আজকের এই দিনটি যেমন মহাপবিত্র এবং এর সামান্যতম সম্মানহানি নিষিদ্ধ, তদ্রূপভাবে তোমাদের (পরস্পরের) জীবন ও সম্পদ তোমাদের উপর মহাসম্মানিত এবং সামান্যতম ক্ষতি নিষিদ্ধ তোমরা জেনে রাখো! জাহিলি যুগের সকল কিছু আমার পদদ্বয়ের তলে বাতিল ও পরিত্যক্ত হল। জাহিলি যুগের রক্ত বা প্রতিশোধের দাবি বাতিল হল। আমাদের (আব্দুল মুত্তালিব) বংশের রক্তই সর্বপ্রথম বাতিল করছি। তা হল রাবিআ বিন হারিসের পুত্রের রক্ত বা প্রতিশোধের দাবি, যে বনু সা'দ গোত্রে দুগ্ধপোষ্য হিসাবে ছিল।
এমতাবস্থায় হুযাইল গোত্র তাকে হত্যা করে। জাহিলি যুগের প্রাপ্য সুদ বাতিল করা হল। সর্বপ্রথম যে প্রাপ্য সুদ বাতিল করছি তা আমাদের (বনু আব্দুল মুত্তালিব) বংশের সুদ। তা হল আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিবের সুদ। তা সবই বাতিল । আর তোমরা নারীদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করবে। কারণ তোমরা আল্লাহর নিরাপত্তায় তাদেরকে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর বাক্য দিয়ে তাদের উপভোগ বৈধ করেছ। তাদের উপর তোমাদের অধিকার ও দাবি হল, তোমরা অপছন্দ কর এমন কাউকে তোমাদের বিছানায় উঠাবে না। যদি তারা এরূপ করে তাহলে তোমরা তাদেরকে কষ্ট না দিয়ে আঘাত করতে পার। আর তোমাদের উপর তাদের অধিকার ও দাবি হল যে, তোমরা তাদের সম্মানজনকভাবে জীবন-জীবিকা ও পোশাকাদির ব্যবস্থা করবে। আর আমি তোমাদের মধ্যে এমন কিছু রেখে যাচ্ছি যা সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনোই তার পরে বিভ্রান্ত হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব আর তোমাদেরকে আমার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে, তখন তোমরা কী বলবে? উপস্থিত মানুষেরা বলেন, 'আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি প্রচার করেছেন, পালন করেছেন এবং নসীহত করেছেন'। তখন তিনি তাঁর শাহাদত আঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করে আসমানের দিকে উঠালেন এবং মানুষের দিকে নিচু করলেন ও বললেন, 'হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন। তিন বার'।
অতঃপর আযান দেওয়া হল। এরপর ইকামত দেওয়া হল। তখন তিনি যুহরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর ইকামত দেওয়া হল। তখন তিনি আসরের সালাত আদায় করলেন। উভয়ের মধ্যে তিনি কোনো প্রকার (সুন্নত নফল) সালাত আদায় করলেন না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাহনে আরোহণ করে ( আরাফার প্রান্তরে) অবস্থানস্থলে আগমন করলেন। সেখানে তিনি তাঁর ‘কাসওয়া' উস্ট্রীর পেট পাথরগুলোর (পাহাড়ের) দিকে রাখলেন এবং পথচারীদের রাস্তাকে তাঁর সামনে রাখলেন এবং কিবলামুখি হলেন । এভাবেই তিনি সূর্য অস্ত গিয়ে হলুদাভা কিছুটা দূরীভূত হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করলেন অবশেষে সূর্য পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে গেল । এবং তিনি উসামা রা.কে উটের পিঠে তাঁর পেছনে বসালেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (মুযদালিফা অভিমুখে) যাত্রা শুরু করলেন। তিনি (গতির ধীরতা আনার জন্য) ‘কাসওয়া’ উষ্ট্রীর লাগাম এমনভাবে টেনে ধরে ছিলেন যে, উষ্ট্রীর মুখ পা-দানির সাথে লেগে যাচ্ছিল । তিনি তাঁর ডানহাত দিয়ে ইশার করে বলছিলেন, হে মানুষেরা, শান্তভাবে, শান্তভাবে । যখন কোনো বালুর টিলার নিকট আগমন করছিলেন তখন লাগাম কিছুটা ঢিলা করছিলেন, যেন উষ্ট্রীটি উপরে উঠে টিলাটি অতিক্রম করতে পারে । এভাবে তিনি মুযদালিফায় আগমন করলেন।
তখন তিনি সেখানে এক আযান ও দুই ইকামতে মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করলেন। তিনি উভয় সালাতের মাঝে কোনো সুন্নত নফল সালাত আদায় করলেন না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শয়ন করলেন প্রভাতের উন্মেষ পর্যন্ত যখন প্রভাতের আলো ফুটে উঠল তখন তিনি এক আযান ও এক ইকামতে ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি ‘কাসওয়া’য় আরোহণ করে মাশআরুল হারাম প্রান্তরে আগমন করেন। তথায় তিনি কিবলামুখি হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, আল্লাহর তাকবীর বলেন, তাহলীল করেন (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেন) ও তাওহীদ বর্ণনা করেন (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু... বলেন)। এভাবে তিনি অবস্থান করেন একেবারে ফর্সা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ।
এরপর তিনি সূর্য উদয়ের আগে (মিনা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। (এ সময়ে) তিনি ফাল ইবন আব্বাসকে উটের পিঠে তাঁর পেছনে বসান । ফাল সুন্দর চুল বিশিষ্ট ফর্সা আকর্ষণীয় যুবক ছিলেন। যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যাত্রা করলেন তখন মহিলারা দৌড়ে দৌড়ে তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন । ফাল তাদের দিকে তাকাতে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর নিজের হাত ফাদলের মুখের উপর রাখলেন। ফাদল মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেখতে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর হাত অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফাদলের মুখের উপর রাখলেন। তিনি তার মুখ অন্যদিক থেকে ঘুরিয়ে দিয়ে তাকাচ্ছিলেন। এভাবে তিনি ‘মুহাসসার' প্রান্তরে এসে পড়েন। তখন তিনি একটু দ্রুত চললেন। অতঃপর বড় জামরার দিকে বেরিয়ে যাওয়া মাঝের রাস্তা ধরলেন। অবশেষে তিনি গাছের পাশের জামরাটির (জামরাতুল আকাবার) নিকট আগমন করেন। তিনি সেখানে সাতটি কাঁকর নিক্ষেপ করেন। প্রত্যেক কঙ্করের সাথে তিনি তাকবীর বলছিলেন । কাঁকরগুলো ছিল ছোট ছোট দানার মতো। তিনি নিম্নভূমি থেকে কঙ্করগুলো নিক্ষেপ করেন।
অতঃপর তিনি পশু জবাই করার স্থানে গমন করেন। তিনি নিজ হাতে ৬৩টি উট নাহর (জবাই) করেন। অতঃপর তিনি আলী রা.কে প্রদান করেন । তিনি বাকি উটগুলো নাহর (জবাই) করেন। তিনি আলীকে তাঁর হজ্জের পশুতে অংশী করেন। অতঃপর তাঁর নির্দেশে প্রত্যেক জবাইকৃত উট থেকে একটি টুকরো নিয়ে একটি পাত্রে রেখে তা রান্না করা হয়। তাঁরা উভয়ে সেই রান্নাকরা গোশত ভক্ষণ করেন এবং তার ঝোল পান করেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাহনে আরোহণ করে বাইতুল্লাহয় গমন করে তাওয়াফে ইফাদা আদায় করেন। তিনি মক্কায় যুহরের সালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি যমযম কূপের নিকট গমন করেন, যেখানে আব্দুল মুত্তালিব বংশের লোকেরা (হাজিদেরকে) পানি পান করাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, হে আব্দুল মুত্তালিবে সন্তানেরা, তোমরা পানি উঠাতে থাকো। যদি মানুষেরা তোমাদের থেকে পানি পান করানোর কাজটি কেড়ে না নিত তাহলে আমি নিজে তোমাদের সাথে পানি উত্তোলন করতাম। তখন তারা তাঁকে এক বালতি পানি প্রদান করলেন এবং তিনি তা থেকে পান করলেন।
তারপর আমি বললাম, আপনি আমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হজ্জের বিষয়ে বলুন তখন তিনি হাত দিয়ে ইশারা করে নয় সংখ্যার গিরা দিলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (মদীনায়) নয় বছর অবস্থান করলেন হজ্জ করলেন না অতঃপর তিনি দশম বছরে মানুষদের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, এবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হজ্জ করবেন। তখন অনেক মানুষ মদীনায় আগমন করলেন। সকলেই চান যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অনুকরণ-অনুসরণ করে হজ্জ করবেন এবং তিনি যা করেন তাই করবেন। তখন আমরা তাঁর সাথে বের হলাম আমরা যুল হুলাইফা আগমন করলে (আবু বাকরের স্ত্রী) আসমা বিনতু উমাইস মুহাম্মাদ ইবন আবু বাকরকে প্রসব করেন। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট দূত প্রেরণ করে জানতে চান যে, তিনি কী করবেন? তিনি বলেন, তুমি গোসল করো, (রক্ত নিয়ন্ত্রণের জন্য) শক্ত করে একটি কাপড় বেঁধে নাও এবং ইহরাম করো। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (যুল হুলাইফার) মসজিদে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি তার 'কাসওয়া' নামের উষ্ট্রীতে আরোহণ করেন। তখন তাঁর উষ্ট্রী তাঁকে নিয়ে বাইদার সমভূমিতে স্থিত হল তখন আমি আমার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত তাঁর সামনে তাকিয়ে দেখলাম শুধু আরোহী বা পদাতিক। তাঁর ডানে একই অবস্থা। তাঁর বামে একই অবস্থা । তাঁর পেছনেও একই অবস্থা । রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের মধ্যে রয়েছেন । তাঁর উপর কুরআন নাযিল হচ্ছে। তিনি তার ব্যাখ্যা জানেন। তিনি যা করবেন আমরা তাই করব । তখন তিনি আল্লাহর তাওহীদ বা একত্ববাদের তালবিয়া পাঠ করলেন: ‘বান্দা হাযির, হে আল্লাহ, বান্দা হাযির। বান্দা হাযির। আপনার কোনো শরীক নেই । বান্দা হাযির। প্রশংসা এবং নিআমত আপনারই এবং রাজত্ব । আপনার কোনো শরীক নেই'। অন্যান্য মানুষ তারা যে তালবিয়া পাঠ করেন তা পাঠ করছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের তালবিয়ার কিছু নিষেধ করেন নি । আর তিনি তাঁর (উল্লিখিত) তালবিয়াটিই পাঠ করতে থাকেন
।
জাবির রা. বলেন, আমরা হজ্জ ছাড়া আর কিছুরই নিয়্যাত করি নি। আমরা উমরার (উমরাহ করতে হবে বলে) কিছুই জানতাম না। এই অবস্থাতেই আমরা তাঁর সাথে বাইতুল্লাহয় আগমন করলাম। তখন তিনি হাজারে আসওয়াদের কোণ স্পর্শ করলেন। এরপর তাওয়াফের তিন চক্কর দৌড়ালেন এবং চার চক্কর হ্যাঁটলেন। এরপর তিনি মাকামে ইবরাহীমের দিকে গেলেন। তখন তিনি পাঠ করলেন: 'এবং তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ করো' । অতঃপর তিনি মাকামে ইবরাহীমকে তাঁর ও বাইতুল্লাহর মাঝে রাখলেন (রেখে তাওয়াফের দুই রাকআত সালাত আদায় করলেন) । জা'ফর সাদিক বলতেন, আমার পিতা বলতেন, আমার জানামতে তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কর্ম হিসাবেই বলতেন যে, তিনি (তাওয়াফের) রাকআতদ্বয়ে সূরা ইখলাস ও সূরা কাফিরূন পাঠ করতেন। অতঃপর তিনি ফিরে এসে আবার হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করেন। অতঃপর তিনি মসজিদে হারামের দরজা দিয়ে সাফা পাহাড়ে দিকে বেরিয়ে যান ।
সাফার নিকটবর্তী হয়ে তিনি পাঠ করেন: ‘সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম' আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন আমি তা দিয়েই শুরু করব। তখন তিনি সাফা থেকে শুরু করেন। তিনি সাফা পাহাড়ের উপরে আরোহণ করেন। উঠতে উঠতে যখন তিনি বাইতুল্লাহকে দেখতে পেলেন তখন কিবলার দিকে মুখ করে আল্লাহর একত্ব ঘোষণা করলেন এবং তাকবীর বললেন । তিনি বললেন, 'আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই । তিনি একক । তাঁর কোনো অংশীদার নেই। এবং রাজত্ব তাঁরই ও প্রশংসা তাঁরই । এবং তিনি সবকিছুর উপর শক্তিমান। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক । তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন। এবং তিনি তাঁর দাসকে সাহায্য করেছেন। এবং তিনি একাই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেছেন’ । অতঃপর এর মাঝে তিনি দুআ করেন। এভাবে তিনি তিনবার বলেন ।
অতঃপর তিনি মারওয়া পাহাড় অভিমুখে নেমে গেলেন। যখন তাঁর পদযুগল নিম্নভূমির উপর দাঁড়াল তখন তিনি দৌড়াতে থাকলেন। যখন তিনি নিম্নভূমি থেকে উঠে পড়লেন তখন হ্যাঁটতে লাগলেন। যখন তিনি মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছালেন তখন সাফার উপরে যেরূপ করেছেন মারওয়ার উপরেও তদ্রূপ করলেন । যখন তাঁর শেষ আবর্তন (সাঈ) মারওয়ার উপরে শেষ হল তখন তিনি বললেন, আমি পরে যা বুঝেছি তা আগে বুঝতে পারলে আমি হজ্জের পশু (হাদ্ঈ) নিয়ে আসতাম না এবং আমি এটিকে (এই তাওয়াফ ও সাঈকে) উমরাহ বানিয়ে দিতাম। কাজেই তোমাদের মধ্যে যার সাথে হজ্জের পশু (হাদ্ঈ) নেই সে যেন হালাল হয়ে যায় এবং এটিকে উমরাহ বানিয়ে দেয়। তখন সুরাকা ইবন মালিক ইবন জুশউম উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, এই নিয়মটি (হজ্জের নিয়তে তাওয়াফ ও সাঈ করে তাকে উমরাহতে রূপান্তরিত করা ) কী শুধু আমাদের এই বছরের জন্য না সদা সর্বদার জন্য? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো একটির মধ্যে আরেকটি প্রবেশ করিয়ে বললেন, উমরাহ হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করেছে, দুইবার (বললেন); না, (এই বিধান) সদা সর্বদার জন্য, সদা সর্বদার জন্য।
আর আলী রা. ইয়ামান থেকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কিছু উট নিয়ে আসেন । তিনি (মক্কায় এসে) দেখেন যে, (তাঁর স্ত্রী) ফাতিমা রা.ও হালাল হয়েছেন। তিনি সুগন্ধি মিশ্রিত রং্গিন পোশাক পরিধান করেছেন এবং সুরমা ব্যবহার করেছেন । আলী রা. ফাতিমার এই কর্মে আপত্তি করেন। তখন তিনি (ফাতিমা) বলেন যে, আমার আব্বা আমাকে এরূপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন । জাবির রা. বলেন, (পরবর্তীকালে) আলী রা. তার খিলাফতকালে (৩৫-৪০ হি.) ইরাকে অবস্থানের সময় বলতেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট গিয়ে ফাতিমার এই কর্মের বিরুদ্ধে তাঁকে উত্তেজিত করতে লাগলাম । ফাতিমা তাঁর নামে যা বলেছে সে বিষয়ে আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট ফাতওয়া চাইলাম । আর আমি তাঁকে জানালাম যে, আমি ফাতিমার এই কর্মের প্রতিবাদ করেছি । তখন তিনি বলেন, সে (ফাতিমা) সত্যই বলেছে, সে সত্যই বলেছে । তুমি হজ্জের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় কী বলেছিলে? আলী বলেন, আমি বলেছিলাম, ‘হে আল্লাহ, আপনার রাসূল যে হজ্জের ইহরাম করেছেন আমি সেই হজ্জের ইহরাম করছি'। তিনি বলেন, আমার সাথে হজ্জের পশু বা হাদঈ রয়েছে; কাজেই তুমি হালাল হতে পারবে না। আলী যে হজ্জের পশুগুলো ইয়ামান থেকে নিয়ে আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যেগুলো নিয়ে এসেছিলেন সব মিলে একশতটি পশু হয়েছিল। জাবির বলেন, তখন সকল মানুষ হালাল হয়ে গেলেন এবং মাথার চুল ছাটলেন। শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং যাদের সাথে হজ্জের পশু ছিল তারা হালাল হলেন না।
যখন তারবিয়াহর দিন (জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ) এসে গেল তখন সকলেই মিনার দিকে রাওয়ানা দিলেন। তখন তারা হজ্জের জন্য ইহরাম করলেন । রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর বাহনে আরোহণ করেন (মিনায় গমন করেন) এবং মিনায় যুহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও (৯ তারিখ সকালের) ফজরের সালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি সূর্যোদয় পর্যন্ত অল্পকিছু সময় অপেক্ষা করেন । তিনি তাঁর জন্য (আরাফার উপকণ্ঠে) নামিরা প্রান্তরে একটি তাঁবু খাটাতে নির্দেশ দেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) চলতে শুরু করেন। কুরাইশ বংশের মানুষেরা নিশ্চিত ছিল যে, তিনি (মুযদালিফায়) মাশআরুল হারামের নিকটেই অবস্থান করবেন। জাহিলি যুগে কুরাইশরা এইরূপই করত । কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুযদালিফার প্রান্ত অতিক্রম করে চলে গেলেন এবং আরাফায় পৌছে গেলেন । তথায় তিনি দেখতে পেলেন যে, নামিরা প্রান্তরে তার জন্য তাঁবু খাটানো হয়েছে । তখন তিনি সেই তাঁবুতে অবতরণ করেন ।
যখন সূর্য মধ্যাকাশ থেকে পশ্চিমে গড়িয়ে গেল তখন তাঁর নির্দেশে তাঁর ‘কাসওয়া’ নামের উষ্ট্রীকে প্রস্তুত করা হয়। তখন তিনি নিম্নভূমির মধ্যভাগে গমন করেন এবং মানুষদের উদ্দেশ্যে খুতবা (বক্তৃতা) প্রদান করেন। তিনি বলেন, এই শহরে এই মাসে আজকের এই দিনটি যেমন মহাপবিত্র এবং এর সামান্যতম সম্মানহানি নিষিদ্ধ, তদ্রূপভাবে তোমাদের (পরস্পরের) জীবন ও সম্পদ তোমাদের উপর মহাসম্মানিত এবং সামান্যতম ক্ষতি নিষিদ্ধ তোমরা জেনে রাখো! জাহিলি যুগের সকল কিছু আমার পদদ্বয়ের তলে বাতিল ও পরিত্যক্ত হল। জাহিলি যুগের রক্ত বা প্রতিশোধের দাবি বাতিল হল। আমাদের (আব্দুল মুত্তালিব) বংশের রক্তই সর্বপ্রথম বাতিল করছি। তা হল রাবিআ বিন হারিসের পুত্রের রক্ত বা প্রতিশোধের দাবি, যে বনু সা'দ গোত্রে দুগ্ধপোষ্য হিসাবে ছিল।
এমতাবস্থায় হুযাইল গোত্র তাকে হত্যা করে। জাহিলি যুগের প্রাপ্য সুদ বাতিল করা হল। সর্বপ্রথম যে প্রাপ্য সুদ বাতিল করছি তা আমাদের (বনু আব্দুল মুত্তালিব) বংশের সুদ। তা হল আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিবের সুদ। তা সবই বাতিল । আর তোমরা নারীদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করবে। কারণ তোমরা আল্লাহর নিরাপত্তায় তাদেরকে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর বাক্য দিয়ে তাদের উপভোগ বৈধ করেছ। তাদের উপর তোমাদের অধিকার ও দাবি হল, তোমরা অপছন্দ কর এমন কাউকে তোমাদের বিছানায় উঠাবে না। যদি তারা এরূপ করে তাহলে তোমরা তাদেরকে কষ্ট না দিয়ে আঘাত করতে পার। আর তোমাদের উপর তাদের অধিকার ও দাবি হল যে, তোমরা তাদের সম্মানজনকভাবে জীবন-জীবিকা ও পোশাকাদির ব্যবস্থা করবে। আর আমি তোমাদের মধ্যে এমন কিছু রেখে যাচ্ছি যা সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনোই তার পরে বিভ্রান্ত হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব আর তোমাদেরকে আমার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে, তখন তোমরা কী বলবে? উপস্থিত মানুষেরা বলেন, 'আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি প্রচার করেছেন, পালন করেছেন এবং নসীহত করেছেন'। তখন তিনি তাঁর শাহাদত আঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করে আসমানের দিকে উঠালেন এবং মানুষের দিকে নিচু করলেন ও বললেন, 'হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন। তিন বার'।
অতঃপর আযান দেওয়া হল। এরপর ইকামত দেওয়া হল। তখন তিনি যুহরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর ইকামত দেওয়া হল। তখন তিনি আসরের সালাত আদায় করলেন। উভয়ের মধ্যে তিনি কোনো প্রকার (সুন্নত নফল) সালাত আদায় করলেন না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাহনে আরোহণ করে ( আরাফার প্রান্তরে) অবস্থানস্থলে আগমন করলেন। সেখানে তিনি তাঁর ‘কাসওয়া' উস্ট্রীর পেট পাথরগুলোর (পাহাড়ের) দিকে রাখলেন এবং পথচারীদের রাস্তাকে তাঁর সামনে রাখলেন এবং কিবলামুখি হলেন । এভাবেই তিনি সূর্য অস্ত গিয়ে হলুদাভা কিছুটা দূরীভূত হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করলেন অবশেষে সূর্য পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে গেল । এবং তিনি উসামা রা.কে উটের পিঠে তাঁর পেছনে বসালেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (মুযদালিফা অভিমুখে) যাত্রা শুরু করলেন। তিনি (গতির ধীরতা আনার জন্য) ‘কাসওয়া’ উষ্ট্রীর লাগাম এমনভাবে টেনে ধরে ছিলেন যে, উষ্ট্রীর মুখ পা-দানির সাথে লেগে যাচ্ছিল । তিনি তাঁর ডানহাত দিয়ে ইশার করে বলছিলেন, হে মানুষেরা, শান্তভাবে, শান্তভাবে । যখন কোনো বালুর টিলার নিকট আগমন করছিলেন তখন লাগাম কিছুটা ঢিলা করছিলেন, যেন উষ্ট্রীটি উপরে উঠে টিলাটি অতিক্রম করতে পারে । এভাবে তিনি মুযদালিফায় আগমন করলেন।
তখন তিনি সেখানে এক আযান ও দুই ইকামতে মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করলেন। তিনি উভয় সালাতের মাঝে কোনো সুন্নত নফল সালাত আদায় করলেন না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শয়ন করলেন প্রভাতের উন্মেষ পর্যন্ত যখন প্রভাতের আলো ফুটে উঠল তখন তিনি এক আযান ও এক ইকামতে ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি ‘কাসওয়া’য় আরোহণ করে মাশআরুল হারাম প্রান্তরে আগমন করেন। তথায় তিনি কিবলামুখি হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, আল্লাহর তাকবীর বলেন, তাহলীল করেন (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেন) ও তাওহীদ বর্ণনা করেন (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু... বলেন)। এভাবে তিনি অবস্থান করেন একেবারে ফর্সা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ।
এরপর তিনি সূর্য উদয়ের আগে (মিনা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। (এ সময়ে) তিনি ফাল ইবন আব্বাসকে উটের পিঠে তাঁর পেছনে বসান । ফাল সুন্দর চুল বিশিষ্ট ফর্সা আকর্ষণীয় যুবক ছিলেন। যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যাত্রা করলেন তখন মহিলারা দৌড়ে দৌড়ে তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন । ফাল তাদের দিকে তাকাতে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর নিজের হাত ফাদলের মুখের উপর রাখলেন। ফাদল মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেখতে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর হাত অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফাদলের মুখের উপর রাখলেন। তিনি তার মুখ অন্যদিক থেকে ঘুরিয়ে দিয়ে তাকাচ্ছিলেন। এভাবে তিনি ‘মুহাসসার' প্রান্তরে এসে পড়েন। তখন তিনি একটু দ্রুত চললেন। অতঃপর বড় জামরার দিকে বেরিয়ে যাওয়া মাঝের রাস্তা ধরলেন। অবশেষে তিনি গাছের পাশের জামরাটির (জামরাতুল আকাবার) নিকট আগমন করেন। তিনি সেখানে সাতটি কাঁকর নিক্ষেপ করেন। প্রত্যেক কঙ্করের সাথে তিনি তাকবীর বলছিলেন । কাঁকরগুলো ছিল ছোট ছোট দানার মতো। তিনি নিম্নভূমি থেকে কঙ্করগুলো নিক্ষেপ করেন।
অতঃপর তিনি পশু জবাই করার স্থানে গমন করেন। তিনি নিজ হাতে ৬৩টি উট নাহর (জবাই) করেন। অতঃপর তিনি আলী রা.কে প্রদান করেন । তিনি বাকি উটগুলো নাহর (জবাই) করেন। তিনি আলীকে তাঁর হজ্জের পশুতে অংশী করেন। অতঃপর তাঁর নির্দেশে প্রত্যেক জবাইকৃত উট থেকে একটি টুকরো নিয়ে একটি পাত্রে রেখে তা রান্না করা হয়। তাঁরা উভয়ে সেই রান্নাকরা গোশত ভক্ষণ করেন এবং তার ঝোল পান করেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাহনে আরোহণ করে বাইতুল্লাহয় গমন করে তাওয়াফে ইফাদা আদায় করেন। তিনি মক্কায় যুহরের সালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি যমযম কূপের নিকট গমন করেন, যেখানে আব্দুল মুত্তালিব বংশের লোকেরা (হাজিদেরকে) পানি পান করাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, হে আব্দুল মুত্তালিবে সন্তানেরা, তোমরা পানি উঠাতে থাকো। যদি মানুষেরা তোমাদের থেকে পানি পান করানোর কাজটি কেড়ে না নিত তাহলে আমি নিজে তোমাদের সাথে পানি উত্তোলন করতাম। তখন তারা তাঁকে এক বালতি পানি প্রদান করলেন এবং তিনি তা থেকে পান করলেন।
عن جعفر بن محمد عن أبيه قال: دخلنا على جابر بن عبد الله رضي الله عنهما فسأل عن القوم حتى انتهى إلي فقلت أنا محمد بن علي بن حسين فأهوى بيده إلى رأسي فنزع زري الأعلى ثم نزع زري الأسفل ثم وضع كفه بين ثديي وأنا يومئذ غلام شاب فقال مرحبا بك يا ابن أخي سل عما شئت. فسألته وهو أعمى وحضر وقت الصلاة فقام في نساجة ملتحفا بها كلما وضعها على منكبه رجع طرفاها إليه من صغرها ورداؤه إلى جنبه على المشجب فصلى بنا فقلت أخبرني عن حجة رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال بيده فعقد تسعا فقال إن رسول الله صلى الله عليه وسلم مكث تسع سنين لم يحج. ثم أذن في الناس في العاشرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم حاج فقدم المدينة بشر كثير كلهم يلتمس أن يأتم برسول الله صلى الله عليه وسلم ويعمل مثل عمله فخرجنا معه حتى أتينا ذا الحليفة فولدت أسماء بنت عميس محمد بن أبي بكر فأرسلت إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم كيف أصنع قال اغتسلي واستغفري بثوب وأحرمي. فصلى رسول الله صلى الله عليه وسلم في المسجد ثم ركب القصواء حتى إذا استوت به ناقته على البيداء نظرت إلى مد بصري بين يديه من راكب وماش وعن يمينه مثل ذلك وعن يساره مثل ذلك ومن خلفه مثل ذلك ورسول الله صلى الله عليه وسلم بين أظهرنا وعليه ينزل القرآن وهو يعرف تأويله وما عمل به من شيء عملنا به. فأهل بالتوحيد: لبيك اللهم لبيك لبيك لا شريك لك لبيك إن الحمد والنعمة لك والملك لا شريك لك وأهل الناس بهذا الذي يهلون به فلم يرد رسول الله صلى الله عليه وسلم عليهم شيئا منه ولزم رسول الله صلى الله عليه وسلم تلبيته. قال جابر رضي الله عنه لسنا ننوي إلا الحج لسنا نعرف العمرة حتى إذا أتينا البيت معه استلم الركن فرمل ثلاثا ومشى أربعا ثم نفذ إلى مقام إبراهيم فقرأ: واتخذوا من مقام إبراهيم مصلى فجعل المقام بينه وبين البيت فكان أبي يقول ولا أعلمه ذكره إلا عن النبي صلى الله عليه وسلم كان يقرأ في الركعتين قل هو الله أحد وقل يا أيها الكافرون ثم رجع إلى الركن فاستلمه. ثم خرج من الباب إلى الصفا فلما دنا من الصفا قرأ: إن الصفا والمروة من شعائر الله أبدأ بما بدأ الله به فبدأ بالصفا فرقي عليه حتى رأى البيت فاستقبل القبلة فوحد الله وكبره وقال: لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير لا إله إلا الله وحده أنجز وعده ونصر عبده وهزم الأحزاب وحده ثم دعا بين ذلك قال مثل هذا ثلاث مرات ثم نزل إلى المروة حتى إذا انصبت قدماه في بطن الوادي سعى حتى إذا صعدتا مشى حتى أتى المروة ففعل على المروة كما فعل على الصفا حتى إذا كان آخر طوافه على المروة فقال لو أني استقبلت من أمري ما استدبرت لم أسق الهدي وجعلتها عمرة فمن كان منكم ليس معه هدي فليحل وليجعلها عمرة فقام سراقة بن مالك بن جعشم فقال يا رسول الله العامنا هذا أم لأبد؟ فشبك رسول الله صلى الله عليه وسلم أصابعه واحدة في الأخرى وقال دخلت العمرة في الحج مرتين لا بل لأبد أبد. وقدم علي رضي الله عنه من اليمن ببدن النّبي صلى الله عليه وسلم فوجد فاطمة رضي الله عنها ممن حل ولبست ثيابا صبيغا واكتحلت فأنكر ذلك عليها فقالت إن أبي أمرني بهذا قال فكان علي يقول بالعراق فذهبت إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم محرشا على فاطمة للذي صنعت مستفتيا لرسول الله صلى الله عليه وسلم فيما ذكرت عنه فأخبرته أني أنكرت ذلك عليها فقال صدقت صدقت. ماذا قلت حين فرضت الحج؟ قال قلت اللهم إني أهل بما أهل به رسولك قال فإن معي الهدي فلا تحل قال فكان جماعة الهدي الذي قدم به علي من اليمن والذي أتى به النبي صلى الله عليه وسلم مائة قال فحل الناس كلهم وقصروا إلا النبي صلى الله عليه وسلم ومن كان معه هدي، فلما كان يوم التروية توجهوا إلى منى فأهلوا بالحج وركب رسول الله صلى الله عليه وسلم فصلى بها الظهر والعصر والمغرب والعشاء والفجر ثم مكث قليلا حتى طلعت الشمس وأمر بقبة من شعر تضرب له بنمرة فسار رسول الله صلى الله عليه وسلم ولا تشك قريش إلا أنه واقف عند المشعر الحرام كما كانت قريش تصنع في الجاهلية فأجاز رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى أتى عرفة فوجد القبة قد ضربت له بنمرة فنزل بها. حتى إذا زاغت الشمس أمر بالقصواء فرحلت له فأتى بطن الوادي فخطب الناس وقال إن دماءكم وأموالكم حرام عليكم كحرمة يومكم هذا في شهركم هذا في بلدكم هذا ألا كل شيء من أمر الجاهلية تحت قدمي موضوع ودماء الجاهلية موضوعة وإن أول دم أضع من دمائنا دم ابن ربيعة بن الحارث كان مسترضعا في بني سعد فقتلته هذيل وربا الجاهلية موضوع وأول ربا أضع ربانا ربا عباس بن عبد المطلب فإنه موضوع كله. فاتقوا الله في النساء فإنكم أخذتموهن بأمان الله واستحللتم فروجهن بكلمة الله ولكم عليهن أن لا يوطئن فرشكم أحدا تكرهونه فإن فعلن ذلك فاضربوهن ضربا غير مبرح ولهن عليكم رزقهن وكسوتهن بالمعروف. وقد تركت فيكم ما لن تضلوا بعده إن اعتصمتم به كتاب الله وأنتم تسألون عني فما أنتم قائلون؟ قالوا نشهد أنك قد بلغت وأديت ونصحت فقال بإصبعه السبابة يرفعها إلى السماء وينكتها إلى الناس: اللهم اشهد اللهم اشهد ثلاث مرات. ثم أذن ثم أقام فصلى الظهر ثم أقام فصلى العصر ولم يصل بينهما شيئا ثم ركب رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى أتى الموقف فجعل بطن ناقته القصواء إلى الصخرات وجعل حبل المشاة بين يديه واستقبل القبلة فلم يزل واقفا حتى غربت الشمس وذهبت الصفرة قليلا حتى غاب القرص. وأردف أسامة خلفه ودفع رسول الله صلى الله عليه وسلم وقد شنق للقصواء الزمام حتى إن رأسها ليصيب مورك رحله ويقول بيده اليمنى أيها الناس السكينة السكينة كلما أتى حبلا من الحبال أرخى لها قليلا حتى تصعد حتى أتى المزدلفة فصلى بها المغرب والعشاء بأذان واحد وإقامتين ولم يسبح بينهما شيئا. ثم اضطجع رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى طلع الفجر وصلى الفجر حين تبين له الصبح بأذان وإقامة ثم ركب القصواء حتى أتى المشعر الحرام فاستقبل القبلة فدعاه وكبره وهلله ووحده فلم يزل واقفا حتى أسفر جدا فدفع قبل أن تطلع الشمس وأردف الفضل بن عباس وكان رجلا حسن الشعر أبيض وسيما. فلما دفع رسول الله صلى الله عليه وسلم مرت به ظعن يجرين فطفق الفضل ينظر إليهن فوضع رسول الله صلى الله عليه وسلم يده على وجه الفضل فحول الفضل وجهه إلى الشق الآخر ينظر فحول رسول الله صلى الله عليه وسلم يده من الشق الآخر على وجه الفضل يصرف وجهه من الشق الآخر ينظر حتى أتى بطن محسر فحرك قليلا. ثم سلك الطريق الوسطى التي تخرج على الجمرة الكبرى حتى أتى الجمرة التي عند الشجرة فرماها بسبع حصيات يكبر مع كل حصاة منها مثل حصى الخذف رمى من بطن الوادي ثم انصرف إلى المنحر فنحر ثلاثا وستين بيده ثم أعطى عليا فنحر ما غبر وأشركه في هديه ثم أمر من كل بدنة ببضعة فجعلت في قدر فطبخت فأكلا من لحمها وشربا من مرقها. ثم ركب رسول الله صلى الله عليه وسلم فأفاض إلى البيت فصلى بمكة الظهر فأتى بني عبد المطلب يسقون على زمزم فقال انزعوا بني عبد المطلب فلولا أن يغلبكم الناس على سقايتكم لنزعت معكم فناولوه دلوا فشرب منه

তাহকীক:
তাহকীক চলমান