মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ১ টি
অনুসন্ধান করুন
হাদীস নংঃ ৫৮৬১

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ
৫৮৬১। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আবু সুফিয়ান ইবনে হরব অন্য কোন ব্যক্তির মাধ্যম ছাড়াই হাদীসটি সরাসরি আমাকে বলিয়াছেন। তিনি বলেন, আমার ও রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর মধ্যে সন্ধি (অর্থাৎ, হোদায়বিয়ার সন্ধি) কালে আমি (তেজারতী সফর উপলক্ষে) সিরিয়া সফর করি। সেই সময় তথায় রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নামে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর একখানা চিঠি আসিল। আবু সুফিয়ান বলেন ; উক্ত চিঠিখানা দেহইয়া কালবীই আনিয়াছিলেন। দেহ্ইয়া কালবী পত্রখানা বুসরার শাসনকর্তার নিকট প্রদান করিলেন এবং বুসরার শাসনকর্তা তখন পত্রখানা হিরাক্লিয়াসের নিকটে পেশ করিলেন। তখন হিরাক্লিয়াস উপস্থিত লোকজনকে বলিল, এই যে আরব কুরাইশের এক ব্যক্তি নবুওতের দাবী করেন, বর্তমানে এইখানে (অর্থাৎ সিরিয়ায়) তাহার কওমের কোন লোক আছে কি? লোকেরা বলিল, হ্যাঁ, আছে। আবু সুফিয়ান বলেন, কুরাইশদের একটি দলের সহিত আমাকেও (হিরাক্লিয়াসের দরবারে) ডাকা হইল। আমরা হিরাক্লিয়াসের নিকট গেলে আমাদিগকে তাহার সম্মুখেই বসান হইল। অতঃপর সে আমাদিগকে লক্ষ্য করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, যেই ব্যক্তি নিজেকে নবী বলিয়া দাবী করেন তোমাদের মধ্যে বংশের দিক হইতে কে তাহার নিকটতম ? আবু সুফিয়ান বলিলেন, আমি। তখন (সম্রাটের নির্দেশে) লোকেরা আমাকে তাহার একেবারে নিকট-সম্মুখে আনিয়া বসাইয়া দিল। আর আমার সঙ্গীদিগকে আমার পশ্চাতে বসাইল। অতঃপর সম্রাট তাহার দোভাষীকে ডাকিল এবং বলিল, তুমি এই লোকদিগকে (আবু সুফিয়ানের সঙ্গীদিগকে) বল, আমি তাহাকে (আবু সুফিয়ানকে) ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু কথা জিজ্ঞাসা করিব, যিনি নবী বলিয়া দাবী করেন। যদি ইনি মিথ্যা বলেন, তবে তাহারা যেন তাহাকে মিথ্যাবাদী প্ৰতিপন্ন করে। আবু সুফিয়ান বলেন; আল্লাহর কসম! লোকেরা আমার নামে মিথ্যা রটাইবে বলিয়া যদি আমার ভয় না হইত, তাহা হইলে আমি নিশ্চয়ই তাঁহার (রাসূলুল্লাহর) সম্পর্কে মিথ্যা বলিতাম ।
অতঃপর সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাহার দোভাষীকে বলিল ; তাহাকে (আবু সফিয়ানকে) জিজ্ঞাসা কর, ‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির (নবুওতের দাবীদারের) বংশ মর্যাদা কেমন ?' আমি বলিলাম, তিনি আমাদের মধ্যে উচ্চ বংশজাত। সে জিজ্ঞাসা করিল; তাঁহার বাপ-দাদাদের মধ্যে কেহ কি বাদশাহ্ ছিলেন? আমি বলিলাম, 'না'। সে জিজ্ঞাসা করিল, তোমরা কি তাঁহাকে তাঁহার এই কথা বলিবার পূর্বে কোন বিষয়ে মিথ্যার অপবাদ দিতে? আমি বলিলাম 'না'। সে জিজ্ঞাসা করিল, সম্ভ্রান্ত লোকেরা তাঁহার অনুসরণ করে, না দুর্বল ও নিম্নশ্রেণীর লোকেরা ? আমি বলিলাম বরং দুর্বল লোকেরা। সে জিজ্ঞাসা করিল, তাহার অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাইতেছে না কমিতেছে ? আমি বলিলাম বরং বাড়িতেছে। সে জিজ্ঞাসা করিল; তাহাদের মধ্যে কেহ কি উক্ত দ্বীনে প্রবেশ করিবার পর উহার প্রতি অসন্তুষ্ট বা বীতশ্রদ্ধ হইয়া উহা ত্যাগ করে ? আমি বলিলাম, 'না'। সে জিজ্ঞাসা করিল, তাঁহার সহিত তোমরা কখনও যুদ্ধ করিয়াছ কি ? আমি বলিলাম হ্যাঁ করিয়াছি। সে জিজ্ঞাসা করিল; তাঁহার সহিত যুদ্ধে তোমাদের ফলাফল কেমন হইয়াছে ? আমি বলিলাম তাঁহার ও আমাদের মধ্যে যুদ্ধের অবস্থা হইয়াছে পালাক্রমে পানির বালতির মত। কখনও তিনি পান আর কখনও আমরা পাই। কখনও কখনও তিনি আমাদের পক্ষ হইতে আক্রান্ত হন, আবার কখনও কখনও তাঁহার পক্ষ হইতে আমরা আক্রান্ত হই। সে জিজ্ঞাসা করিল, তিনি কি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন ? আমি বলিলাম, 'না'। তবে আমরা তাঁহার সঙ্গে একটি সন্ধি-চুক্তিতে আব্দ্ধ আছি (অর্থাৎ, হোদাইবিয়ার সন্ধি)। জানি না, তিনি এই সময়ের মধ্যে কি করিবেন। আবু সুফিয়ান বলেন, এই শেষোক্ত কথাটি ব্যতীত তাঁহার বিরুদ্ধে অন্য কিছু বলার সুযোগ আমি পাই নাই। সে জিজ্ঞাসা করিল, তোমাদের মধ্য হইতে কেহ কি তাঁহার পূর্বে কখনও এই ধরনের কথা বলিয়াছিল ? আমি বলিলাম, 'না'। ইহার পর হিরাক্লিয়াস তাহার দোভাষীকে বলিল ; এবার তুমি তাহাকে (আবু সুফিয়ানকে) বল—আমি তোমাকে তাঁহার বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম। তুমি উত্তরে বলিয়াছ, তিনি তোমাদের মধ্যে উচ্চ বংশজাত। বস্তুতঃ এইরূপই নবী-রাসূলদিগকে তাহাদের জাতির উচ্চ বংশেই পাঠান হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম তাঁহার বাপ-দাদাদের মধ্যে কেহ বাদশাহ্ ছিল কিনা? তুমি বলিয়াছ, 'না'। ইহাতে আমি বলিব, যদি তাঁহার বাপ-দাদাদের মধ্যে কেহ বাদশাহ্ থাকিত, তবে আমি বলিতাম, তিনি এমন এক ব্যক্তি যিনি তাঁহার পিতৃরাজ্য পুনরুদ্ধার করিতে চান। আমি তোমাকে তাঁহার অনুসারীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম, তাহারা কি কওমের মধ্যে দুর্বল নাকি শরীফ-সম্ভ্রান্ত ? তুমি বলিয়াছ; বরং দুর্বল লোকেরাই তাঁহার অনুসারী। আসলে (প্রথমাবস্থায়) এইরূপ লোকেরাই রাসূলগণের অনুসারী হইয়া থাকে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম; তাঁহার এই কথা বলিবার পূর্বে তোমরা কখনও তাঁহাকে মিথ্যায় অভিযুক্ত করিয়াছ কি ? তুমি বলিয়াছ 'না'। অতএব, আমি বুঝিতে পারিলাম, তিনি মানুষের সহিত মিথ্যা পরিহার করিয়া চলেন; আর আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলিতে যাইবেন ইহা কখনও হইতে পারে না। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম, কেহ কি তাঁহার দ্বীনে দাখিল হওয়ার পর তাঁহার প্রতি অসন্তুষ্ট হইয়া তাহা ত্যাগ করে? তুমি বলিয়াছ 'না' । প্রকৃতপক্ষে ঈমানের দীপ্তি ও সজীবতা অন্তরের সাথে মিশিয়া গেলে তখন এইরূপই হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তাঁহার অনুসারী লোকের সংখ্যা বাড়িতেছে নাকি কমিতেছে ? তুমি বলিয়াছ ; বরং বাড়িতেছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের অবস্থা এইরূপই হয়, অবশেষে উহা পূর্ণতা লাভ করে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তাঁহার সহিত তোমরা কোন যুদ্ধ করিয়াছ কি? জবাবে তুমি বলিয়াছ, হ্যাঁ, যুদ্ধ হইয়াছে এবং উহার ফলাফল পালাক্রমে পানির বালতির মত। কখনও তিনি লাভবান হন আর কখনও তোমরা লাভবান হও। আসলে এইভাবে রাসূলদিগকে পরীক্ষা করা হয়। পরিণামে বিজয় তাঁহাদেরই জন্য। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তিনি কখনও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন কি? তুমি বলিয়াছ ‘না’, ভঙ্গ করেন না। রাসূলদের চরিত্র এইরূপই হয়ঃ যে, তাঁহারা কখনও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তোমাদের মধ্য হইতে কেহ কি তাঁহার পূর্বে কখনও এমন কথা (নবী হওয়ার কথা) বলিয়াছিল ? তুমি বলিয়াছ “না” । ইহাতে আমি বুঝিতে পারিলাম, তাঁহার পূর্বে কেহ যদি এই কথা (নবী হওয়ার কথা) বলিয়া থাকিত, তবে আমি বলিতাম এই ব্যক্তি পূর্বের কথার অনুবৃত্তি করিয়াছে।
আবু সুফিয়ান বলেন, ইহার পর সে জিজ্ঞাসা করিল, তিনি তোমাদিগকে কি বিষয়ে আদেশ দেন? আমরা বলিলাম, তিনি আমাদিগকে নামায পড়ার, যাকাত দেওয়ার, আত্মীয়-স্বজনদের সহিত সদ্ব্যবহার করিবার এবং যাবতীয় পাপাচার হইতে বাঁচিয়া থাকিবার জন্য নির্দেশ করেন। এতদশ্রবণে হিরাক্লিয়াস বলিল, তুমি এই যাবত যাহাকিছু বলিয়াছ, তাহা যদি সত্য হয়, তাহা হইলে তিনি নিশ্চয় নবী। অবশ্য আমি জানিতাম তিনি আবির্ভূত হইবেন। কিন্তু তিনি তোমাদের (আরবদের) মধ্য হইতে বাহির হইবেন আমার এই ধারণা ছিল না। আর আমি যদি তাঁহার নিকট পর্যন্ত পৌঁছিতে পারিব বলিয়া বিশ্বাস করিতাম, তাহা হইলে আমি অবশ্যই তাঁহার সাক্ষাতের প্রত্যাশী হইতাম। আর যদি আমি তাহার কাছে থাকিতাম, তবে নিশ্চয়ই তাহার পদদ্বয় ধুইয়া দিতাম। (জানিয়া রাখ!) অচিরেই তাঁহার রাজত্ব আমার এই দুই পায়ের নীচ পর্যন্ত পৌঁছিয়া যাইবে। অর্থাৎ, তিনি অল্প দিনের মধ্যেই গোটা রোম সাম্রাজ্যের মালিক হইবেন। আবু সুফিয়ান বলেন; ইহার পর সে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সেই চিঠি আনাইয়া পাঠ করিল। —মোত্তাঃ। পূর্ণ হাদীসটি باب الكتاب إلى الكفار “কাফেরদের নিকট হুযুর (ﷺ)-এর পত্র প্রেরণ” অধ্যায়ে পূর্বেই বর্ণনা করা হইয়াছে।
অতঃপর সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাহার দোভাষীকে বলিল ; তাহাকে (আবু সফিয়ানকে) জিজ্ঞাসা কর, ‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির (নবুওতের দাবীদারের) বংশ মর্যাদা কেমন ?' আমি বলিলাম, তিনি আমাদের মধ্যে উচ্চ বংশজাত। সে জিজ্ঞাসা করিল; তাঁহার বাপ-দাদাদের মধ্যে কেহ কি বাদশাহ্ ছিলেন? আমি বলিলাম, 'না'। সে জিজ্ঞাসা করিল, তোমরা কি তাঁহাকে তাঁহার এই কথা বলিবার পূর্বে কোন বিষয়ে মিথ্যার অপবাদ দিতে? আমি বলিলাম 'না'। সে জিজ্ঞাসা করিল, সম্ভ্রান্ত লোকেরা তাঁহার অনুসরণ করে, না দুর্বল ও নিম্নশ্রেণীর লোকেরা ? আমি বলিলাম বরং দুর্বল লোকেরা। সে জিজ্ঞাসা করিল, তাহার অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাইতেছে না কমিতেছে ? আমি বলিলাম বরং বাড়িতেছে। সে জিজ্ঞাসা করিল; তাহাদের মধ্যে কেহ কি উক্ত দ্বীনে প্রবেশ করিবার পর উহার প্রতি অসন্তুষ্ট বা বীতশ্রদ্ধ হইয়া উহা ত্যাগ করে ? আমি বলিলাম, 'না'। সে জিজ্ঞাসা করিল, তাঁহার সহিত তোমরা কখনও যুদ্ধ করিয়াছ কি ? আমি বলিলাম হ্যাঁ করিয়াছি। সে জিজ্ঞাসা করিল; তাঁহার সহিত যুদ্ধে তোমাদের ফলাফল কেমন হইয়াছে ? আমি বলিলাম তাঁহার ও আমাদের মধ্যে যুদ্ধের অবস্থা হইয়াছে পালাক্রমে পানির বালতির মত। কখনও তিনি পান আর কখনও আমরা পাই। কখনও কখনও তিনি আমাদের পক্ষ হইতে আক্রান্ত হন, আবার কখনও কখনও তাঁহার পক্ষ হইতে আমরা আক্রান্ত হই। সে জিজ্ঞাসা করিল, তিনি কি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন ? আমি বলিলাম, 'না'। তবে আমরা তাঁহার সঙ্গে একটি সন্ধি-চুক্তিতে আব্দ্ধ আছি (অর্থাৎ, হোদাইবিয়ার সন্ধি)। জানি না, তিনি এই সময়ের মধ্যে কি করিবেন। আবু সুফিয়ান বলেন, এই শেষোক্ত কথাটি ব্যতীত তাঁহার বিরুদ্ধে অন্য কিছু বলার সুযোগ আমি পাই নাই। সে জিজ্ঞাসা করিল, তোমাদের মধ্য হইতে কেহ কি তাঁহার পূর্বে কখনও এই ধরনের কথা বলিয়াছিল ? আমি বলিলাম, 'না'। ইহার পর হিরাক্লিয়াস তাহার দোভাষীকে বলিল ; এবার তুমি তাহাকে (আবু সুফিয়ানকে) বল—আমি তোমাকে তাঁহার বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম। তুমি উত্তরে বলিয়াছ, তিনি তোমাদের মধ্যে উচ্চ বংশজাত। বস্তুতঃ এইরূপই নবী-রাসূলদিগকে তাহাদের জাতির উচ্চ বংশেই পাঠান হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম তাঁহার বাপ-দাদাদের মধ্যে কেহ বাদশাহ্ ছিল কিনা? তুমি বলিয়াছ, 'না'। ইহাতে আমি বলিব, যদি তাঁহার বাপ-দাদাদের মধ্যে কেহ বাদশাহ্ থাকিত, তবে আমি বলিতাম, তিনি এমন এক ব্যক্তি যিনি তাঁহার পিতৃরাজ্য পুনরুদ্ধার করিতে চান। আমি তোমাকে তাঁহার অনুসারীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম, তাহারা কি কওমের মধ্যে দুর্বল নাকি শরীফ-সম্ভ্রান্ত ? তুমি বলিয়াছ; বরং দুর্বল লোকেরাই তাঁহার অনুসারী। আসলে (প্রথমাবস্থায়) এইরূপ লোকেরাই রাসূলগণের অনুসারী হইয়া থাকে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম; তাঁহার এই কথা বলিবার পূর্বে তোমরা কখনও তাঁহাকে মিথ্যায় অভিযুক্ত করিয়াছ কি ? তুমি বলিয়াছ 'না'। অতএব, আমি বুঝিতে পারিলাম, তিনি মানুষের সহিত মিথ্যা পরিহার করিয়া চলেন; আর আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলিতে যাইবেন ইহা কখনও হইতে পারে না। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম, কেহ কি তাঁহার দ্বীনে দাখিল হওয়ার পর তাঁহার প্রতি অসন্তুষ্ট হইয়া তাহা ত্যাগ করে? তুমি বলিয়াছ 'না' । প্রকৃতপক্ষে ঈমানের দীপ্তি ও সজীবতা অন্তরের সাথে মিশিয়া গেলে তখন এইরূপই হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তাঁহার অনুসারী লোকের সংখ্যা বাড়িতেছে নাকি কমিতেছে ? তুমি বলিয়াছ ; বরং বাড়িতেছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের অবস্থা এইরূপই হয়, অবশেষে উহা পূর্ণতা লাভ করে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তাঁহার সহিত তোমরা কোন যুদ্ধ করিয়াছ কি? জবাবে তুমি বলিয়াছ, হ্যাঁ, যুদ্ধ হইয়াছে এবং উহার ফলাফল পালাক্রমে পানির বালতির মত। কখনও তিনি লাভবান হন আর কখনও তোমরা লাভবান হও। আসলে এইভাবে রাসূলদিগকে পরীক্ষা করা হয়। পরিণামে বিজয় তাঁহাদেরই জন্য। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তিনি কখনও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন কি? তুমি বলিয়াছ ‘না’, ভঙ্গ করেন না। রাসূলদের চরিত্র এইরূপই হয়ঃ যে, তাঁহারা কখনও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তোমাদের মধ্য হইতে কেহ কি তাঁহার পূর্বে কখনও এমন কথা (নবী হওয়ার কথা) বলিয়াছিল ? তুমি বলিয়াছ “না” । ইহাতে আমি বুঝিতে পারিলাম, তাঁহার পূর্বে কেহ যদি এই কথা (নবী হওয়ার কথা) বলিয়া থাকিত, তবে আমি বলিতাম এই ব্যক্তি পূর্বের কথার অনুবৃত্তি করিয়াছে।
আবু সুফিয়ান বলেন, ইহার পর সে জিজ্ঞাসা করিল, তিনি তোমাদিগকে কি বিষয়ে আদেশ দেন? আমরা বলিলাম, তিনি আমাদিগকে নামায পড়ার, যাকাত দেওয়ার, আত্মীয়-স্বজনদের সহিত সদ্ব্যবহার করিবার এবং যাবতীয় পাপাচার হইতে বাঁচিয়া থাকিবার জন্য নির্দেশ করেন। এতদশ্রবণে হিরাক্লিয়াস বলিল, তুমি এই যাবত যাহাকিছু বলিয়াছ, তাহা যদি সত্য হয়, তাহা হইলে তিনি নিশ্চয় নবী। অবশ্য আমি জানিতাম তিনি আবির্ভূত হইবেন। কিন্তু তিনি তোমাদের (আরবদের) মধ্য হইতে বাহির হইবেন আমার এই ধারণা ছিল না। আর আমি যদি তাঁহার নিকট পর্যন্ত পৌঁছিতে পারিব বলিয়া বিশ্বাস করিতাম, তাহা হইলে আমি অবশ্যই তাঁহার সাক্ষাতের প্রত্যাশী হইতাম। আর যদি আমি তাহার কাছে থাকিতাম, তবে নিশ্চয়ই তাহার পদদ্বয় ধুইয়া দিতাম। (জানিয়া রাখ!) অচিরেই তাঁহার রাজত্ব আমার এই দুই পায়ের নীচ পর্যন্ত পৌঁছিয়া যাইবে। অর্থাৎ, তিনি অল্প দিনের মধ্যেই গোটা রোম সাম্রাজ্যের মালিক হইবেন। আবু সুফিয়ান বলেন; ইহার পর সে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সেই চিঠি আনাইয়া পাঠ করিল। —মোত্তাঃ। পূর্ণ হাদীসটি باب الكتاب إلى الكفار “কাফেরদের নিকট হুযুর (ﷺ)-এর পত্র প্রেরণ” অধ্যায়ে পূর্বেই বর্ণনা করা হইয়াছে।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান