মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৩ টি
অনুসন্ধান করুন
হাদীস নংঃ ৫৮৫৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ
৫৮৫৯। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়শঃ উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রাঃ)-এর বাড়ীতে যাওয়া-আসা করিতেন। (তিনি হুযুরের দুধ-খালা হিসাবে মাহরাম ছিলেন।) উম্মে হারাম ছিলেন প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত উবাদাহ ইবনে সামেত (রাঃ)-এর স্ত্রী। একদিন নবী (ছাঃ) তাহার বাড়ীতে গেলে উম্মে হারাম তাহাকে খানা খাওয়াইলেন। অতঃপর উম্মে হারাম হুযূর (ছাঃ)-এর মাথার উকুন দেখিতে বসিলেন। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ঘুমাইয়া পড়িলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি হাসিতে হাসিতে জাগিয়া উঠিলেন। উম্মে হারাম বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করিলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আপনাকে কিসে হাসাইতেছে? তিনি বলিলেনঃ এইমাত্র স্বপ্নে আমার উম্মতের কিছুসংখ্যক
লোককে আল্লাহর পথে যুদ্ধরত অবস্থায় আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়। তাহারা বাদশাহী জাঁকজমকে অথবা বলিয়াছেন বাদশাহর ন্যায় জাঁকজমকে সমুদ্রের বুকে সফর করিতেছে। উম্মে হারাম বলেন, তখন আমি বলিলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আল্লাহর কাছে দো'আ করুন, যেন আল্লাহ্ আমাকেও তাহাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন তিনি তাহার জন্য দোআ করিলেন। ইহার পর তিনি মাথা রাখিয়া আবার ঘুমাইয়া পড়িলেন এবং কিছুক্ষণ পরে পুনরায় হাসিমুখে জাগিয়া উঠিলেন। উম্মে হারাম বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করিলাম; ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি কি কারণে হাসিতেছেন? জবাবে তিনি বলিলেন এইমাত্র স্বপ্নে আমার উম্মতের কতিপয় লোককে জিহাদরত অবস্থায় আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়.... ঠিক তেমনই বলিয়াছেন যেমনটি তিনি প্রথমবার বলিয়াছিলেন। উম্মে হারাম বলেন, আমি আরয করিলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আল্লাহর কাছে দো'আ করুন যেন তিনি আমাকে তাহাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। জবাবে তিনি বলিলেন, তুমি তাহাদের প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত। রাবী বলেন, অতঃপর উম্মে হারাম হযরত মুআবিয়া (রাঃ)-এর শাসনকালে জিহাদের উদ্দেশ্যে সমুদ্র সফরে যাত্রা করেন এবং সমুদ্র হইতে অবতরণের পর সওয়ারীর পৃষ্ঠ হইতে পড়িয়া ইনতেকাল করে। — মোত্তাঃ
লোককে আল্লাহর পথে যুদ্ধরত অবস্থায় আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়। তাহারা বাদশাহী জাঁকজমকে অথবা বলিয়াছেন বাদশাহর ন্যায় জাঁকজমকে সমুদ্রের বুকে সফর করিতেছে। উম্মে হারাম বলেন, তখন আমি বলিলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আল্লাহর কাছে দো'আ করুন, যেন আল্লাহ্ আমাকেও তাহাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন তিনি তাহার জন্য দোআ করিলেন। ইহার পর তিনি মাথা রাখিয়া আবার ঘুমাইয়া পড়িলেন এবং কিছুক্ষণ পরে পুনরায় হাসিমুখে জাগিয়া উঠিলেন। উম্মে হারাম বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করিলাম; ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি কি কারণে হাসিতেছেন? জবাবে তিনি বলিলেন এইমাত্র স্বপ্নে আমার উম্মতের কতিপয় লোককে জিহাদরত অবস্থায় আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়.... ঠিক তেমনই বলিয়াছেন যেমনটি তিনি প্রথমবার বলিয়াছিলেন। উম্মে হারাম বলেন, আমি আরয করিলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আল্লাহর কাছে দো'আ করুন যেন তিনি আমাকে তাহাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। জবাবে তিনি বলিলেন, তুমি তাহাদের প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত। রাবী বলেন, অতঃপর উম্মে হারাম হযরত মুআবিয়া (রাঃ)-এর শাসনকালে জিহাদের উদ্দেশ্যে সমুদ্র সফরে যাত্রা করেন এবং সমুদ্র হইতে অবতরণের পর সওয়ারীর পৃষ্ঠ হইতে পড়িয়া ইনতেকাল করে। — মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৫৮৬০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ
৫৮৬০। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, 'আদে শানুয়া' গোত্রের 'যিমাদ' নামে এক ব্যক্তি একদা মক্কায় আগমন করিল । যিমাদ মন্ত্র দ্বারা জ্বিন-ভূতের ঝাড়-ফুঁক করিত। সে মক্কার জাহেল নির্বোধ লোকদের কাছে শুনিতে পাইল যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) পাগল হইয়া গিয়াছে। ইহা শুনিয়া সে বলিল; যদি আমি ঐ ব্যক্তিকে [অর্থাৎ, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে] দেখিতাম তাহা হইলে চিকিৎসা করিতাম। হয়তো আমার চিকিৎসায় আল্লাহ্ তাহাকে আমার হাতে সুস্থ করিয়া দিতে পারেন। রাবী বলেন, অতঃপর 'যিমাদ' রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর খেদমতে আসিল এবং বলিল, হে মুহাম্মাদ! আমি জ্বিন-ভূতের মন্ত্র পড়িয়া ঝাড়-ফুঁক করি। যদি তুমি বল আমি তোমার চিকিৎসা করিব। তাহার কথা শুনিয়া রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করিলেন: (অর্থাৎ,) “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আমি তাঁহারই প্রশংসা করি এবং তাঁহার সাহায্য কামনা করি। তিনি যাহাকে হেদায়ত দান করেন তাহাকে কেহই গোমরাহ করিতে পারে না। আর তিনি যাহাকে পথভ্রষ্ট করেন তাহাকে কেহই সোজা পথ দেখাইতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন মা'বূদ নাই এবং তিনি একক, তাহার কোন শরীক নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, মুহাম্মাদ তাঁহার বান্দা ও রাসূল।” অতঃপর [রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) এই পর্যন্ত বলার পর] যিমাদ বলিল, আপনি উক্ত বাক্যগুলি আমাকে পুনরায় শুনান। তখন রাসুলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাক্যগুলি তিনবার পাঠ করিলেন। এতদশ্রবণে যিমাদ বলিল, আমি গণকের কথাও শুনিয়াছি, জাদুকরের কথাও শুনিয়াছি এবং কবিদের কথাও শুনিয়াছি। কিন্তু আপনার এই বাক্য গুলির মত এমন বাক্য আমি আর কখনও শুনিতে পাই নাই। বস্তুতঃ আপনার প্রতিটি বাক্য অথৈ সাগরের তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছিয়া গিয়াছে। (মোটকথা, ইহা কোন পাগলের প্রলাপ হইতে পারে না।) সুতরাং আপনি আপনার হাতখানা প্রশস্ত করুন। আমি আপনার হাতে ইসলামের বায়আত করিব। রাবী বলেন, তখনই সে হুযুরের হাতে বায়আত করিল। —মুসলিম। ( গ্রন্থকার বলেন,) মাছাবীহের কোন কোন নোসখায় بلغنا قاموس البحر -এর স্থলে بلغنا ناعوس البحر রহিয়াছে। আলোচ্য বিষয়ে হযরত আবু হোরায়রার বর্ণিত হাদীস يهلك كسرى এবং হযরত জাবেরের বর্ণিত হাদীস ليفتحن عصابة মালাহেম অধ্যায়ে বর্ণিত হইয়াছে। [এই অধ্যায়ে দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ নাই]

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৫৮৬২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা
৫৮৬২। কাতাদাহ হযরত আনাস ইবনে মালেক হইতে, তিনি হযরত মালেক ইবনে সাসাআ (রাঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেই রাত্রে মে'রাজ (আকাশ ভ্রমণ) করান হইয়াছিল, সেই রাত্রের বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি তাহাদিগকে (সাহাবীদিগকে) বলিয়াছেন: একদা আমি কা'বার হাতীম অংশে কাত হইয়া শুইয়াছিলাম। রাবী (কাতাদাহ) কখনও কখনও (হাতীমের স্থলে) 'হিজর' শব্দ বলিয়াছেন (বস্তুত উভয়টি একই স্থানের নাম)। এমন সময় হঠাৎ একজন আগন্তুক আমার কাছে আসিলেন এবং তিনি এই স্থান হইতে এই স্থান পর্যন্ত চিরিয়া ফেলিলেন। অর্থাৎ, হলকুমের নিম্নভাগ হইতে নাভির উপরিভাগ পর্যন্ত বিদীর্ণ করিলেন। অতঃপর তিনি আমার কলব বাহির করিলেন। তারপর ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের থালা আমার কাছে আনা হইল, ইহার পর আমার কলবকে ধৌত করা হয়, তারপর উহাকে ঈমানে পরিপূর্ণ করিয়া আবার পূর্বের জায়গায় রাখা হয়। অপর এক বর্ণনায় আছে অতঃপর যমযমের পানি দ্বারা পেট ধৌত করা হয়, পরে ঈমান ও হিকমতে উহাকে পরিপূর্ণ করা হয়। তারপর আকারে খচ্চরের চাইতে ছোট এবং গাধা অপেক্ষা বড় এক সাদা বর্ণের বাহন আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়। উহাকে বলা হয় 'বোরাক'। উহার দৃষ্টি যতদূর যাইত, সেখানে উহা পা রাখিত। (অর্থাৎ, উহার পথ অতিক্রমের গতিবেগ ছিল দৃষ্টিশক্তির গতিবেগের সমান।) নবী (ছাঃ) বলেন, অতঃপর আমাকে উহার উপরে আরোহণ করান হইল। এইবার হযরত জিবরাঈল আমাকে সঙ্গে লইয়া (উর্ধ্বলোকে) যাত্রা করিলেন এবং নিকটতম আসমানে পৌঁছিয়া দরজা খুলিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কে? বলিলেন, (আমি) জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে। তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল,তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তখন বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাঁহার আগমন কতই না উত্তম। ইহার পর দরজা খুলিয়া দেওয়া হইল। যখন আমি ভিতরে পৌঁছিলাম, তখন সেইখানে দেখিতে পাইলাম হযরত আদম (আঃ)-কে। (তাহার দিকে ইংগিত করিয়া) জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হইলেন আপনার পিতা আদম, তাহাকে সালাম করুন। তখন আমি তাহাকে সালাম করিলাম। তিনি সালামের জওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।
অতঃপর হযরত জিবরাঈল আমাকে লইয়া আরও উর্ধ্বে আরোহণ করিলেন এবং দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছিয়া দরজা খুলিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কে? তিনি বলিলেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তখন বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাহার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলিয়া দেওয়া হইল। যখন আমি ভিতরে প্রবেশ করিলাম, তখন সেইখানে দেখিতে পাইলাম হযরত ইয়াহ্ইয়া ও ঈসা (আঃ)-কে। তাহারা দুইজন পরস্পর খালাত ভাই। জিবরাঈল (আমাকে) বলিলেন, ইনি হইলেন ইয়াহ্ইয়া আর উনি হইলেন ঈসা (আঃ), আপনি তাহাদিগকে সালাম করুন। যখন আমি সালাম করিলাম, তাহারা উভয়ে সালামের জাওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।
অতঃপর হযরত জিবরাঈল আমাকে লইয়া তৃতীয় আসমানে উঠিলেন এবং দরজা খুলিয়া দিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কে। তিনি বলিলেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাহার আগমন বড়ই শুভ। অতঃপর দরজা খুলিয়া দেওয়া হইল। ভিতরে প্রবেশ করিয়া আমি সেইখানে হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। হযরত জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হইলেন হযরত ইউসুফ (আঃ), তাহাকে সালাম করুন। আমি তাঁহাকে সালাম করিলাম। তিনি সালামের জওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।
অতঃপর হযরত জিবরাঈল আমাকে লইয়া আরও উর্ধ্বলোকে যাত্রা করিলেন এবং চতুর্থ আসমানে আসিয়া দরজা খুলিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কে? বলিলেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে? বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হইল,তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাহার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলিয়া দেওয়া হইল। আমি ভিতরে প্রবেশ করিয়া দেখিলাম, সেইখানে হযরত ইদ্রীস (আঃ) জিবরাঈল (আঃ) বলিলেন, ইনি হযরত ইদ্রীস, তাহাকে সালাম করুন। আমি তাহাকে সালাম করিলাম, অতঃপর তিনি জওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।
ইহার পর জিবরাঈল আমাকে লইয়া উর্ধ্বে আরোহন করিলেন এবং পঞ্চম আসমানে আসিয়া দরজা খুলিয়া দিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল কে? বলিলেন, (আমি) জিবরাঈল। পুনঃ জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে? বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাহার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলিয়া দিলে আমি যখন ভিতরে পৌঁছিলাম, সেইখানে হযরত হারুন (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হযরত হারুন (আঃ), তাহাকে সালাম করুন। আমি তাহাকে সালাম করিলে তিনি জওয়াব দিলেন। অতঃপর বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।
অতঃপর জিবরাঈল আমাকে সঙ্গে লইয়া আরও উর্ধ্বলোকে উঠিলেন এবং ষষ্ঠ আসমানে আসিয়া দরজা খুলিয়া দিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, কে ? বলিলেন, জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাহার আগমন কতই না উত্তম। তারপর দরজা খুলিয়া দিলে আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করিলাম, তখন সেইখানে হযরত মুসা (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হইলেন মুসা (আঃ), তাহাকে সালাম করুন। আমি তাহাকে সালাম করিলে তিনি উহার জাওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন। অতঃপর আমি যখন তাহাকে অতিক্রম করিয়া অগ্রসর হইলাম, তখন তিনি কাদিয়া ফেলিলেন। তাহাকে জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কাঁদিতেছেন কেন? তিনি বলিলেন, আমি এই জন্য কাঁদিতেছি যে, আমার পরে এমন একজন যুবককে (নবী বানাইয়া) পাঠান হইল, যাহার উম্মত আমার উম্মত অপেক্ষা অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করিবে।
অতঃপর জিবরাঈল (আঃ) আমাকে লইয়া সপ্তম আসমানে আরোহণ করিলেন। অনন্তর হযরত জিবরাঈল দরজা খুলিতে বলিলে জিজ্ঞাসা করা হইল, কে? তিনি বলিলেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। ইহার পর বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাহার আগমন কতই না উত্তম। অতঃপর আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করিলাম, সেইখানে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হইলেন আপনার পিতা ইবরাহীম (আঃ), তাহাকে সালাম করুন। তখন আমি তাহাকে সালাম করিলাম। তিনি সালামের জওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।
অতঃপর আমাকে “সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠান হইল। আমি দেখিতে পাইলাম, উহার ফল হাজার নামক অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং উহার পাতা হাতীর কানের মত। জিবরাঈল বলিলেন, ইহাই সিদরাতুল মুনতাহা। আমি (তথায়) আরও দেখিতে পাইলাম চারিটি নহর। দুইটি নহর অপ্রকাশ্য, আর দুইটি প্রকাশ্য। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, হে জিবরাঈল। এই নহরের তাৎপর্য কি। তিনি বলিলেন, অপ্রকাশ্য দুইটি হইল জান্নাতে প্রবাহিত দুইটি নহর। আর প্রকাশ্য দুইটি হইল (মিসরের নীল এবং (ইরাকের) ফোরাত নদী। অতঃপর আমাকে "বায়তুল মা'মুর" দেখান হইল। তারপর আমার সামনে হাযির করা হইল এক পাত্র মদ, এক পাত্র দুধ ও এক পাত্র মধু। ইহার মধ্য হইতে আমি দুধ গ্রহণ করিলাম (এবং উহা পান করিলাম)। তখন জিবরাঈল বলিলেন, ইহা 'ফেতরত'-এর (স্বভাব-ধর্মের) নিদর্শন। আপনি এবং আপনার উম্মত ইহার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকিবেন।
অতঃপর আমার উপর দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করা হইল। আমি (ইহা গ্রহণ করিয়া) প্রত্যাবর্তন করিলাম। হযরত মুসা (আঃ)-এর সম্মুখ দিয়া যাইবার সময় তিনি (আমাকে) বলিলেন, আপনাকে কি করিতে আদেশ করা হইয়াছে? আমি বলিলাম, দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামাযের আদেশ করা হইয়াছে। তিনি বলিলেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায সম্পাদনে সক্ষম হইবে না। আল্লাহর কসম! আপনার পূর্বে আমি (বনী ইসরাঈলের) লোকদিগকে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি এবং বনী ইসরাঈলদের হেদায়তের জন্য আমি যথাসাধ্য পরিশ্রম করিয়াছি। অতএব, (সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই আপনাকে বলিতেছি,) আপনি আপনার রবের কাছে ফিরিয়া যান এবং আপনার উম্মতের পক্ষে (নামায) আরও হ্রাস করিবার জন্য আবেদন করুন। তখন আমি ফিরিয়া গেলাম (এবং ঐভাবে প্রার্থনা জানাইলে) আল্লাহ্ আমার উপর হইতে দশ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিলেন। তারপর আমি হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিলাম। তিনি এইবারও অনুরূপ কথা বলিলেন। ফলে আমি পুনরায় আল্লাহর কাছে ফিরিয়া গেলাম। তিনি আমার উপর হইতে আরও দশ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিলেন। আবার আমি মুসার নিকট ফিরিয়া আসিলাম। তিনি অনুরূপ কথাই বলিলেন। তাই আমি (আবার) ফিরিয়া গেলাম। তখন আল্লাহ্ আরও দশ (ওয়াক্ত নামায) মাফ করিয়া দিলেন। অতঃপর আমি মুসার নিকট ফিরিয়া আসিলে আবারও তিনি ঐ কথাই বলিলেন। আমি আবার ফিরিয়া গেলাম। আল্লাহ্ আমার জন্য দশ (ওয়াক্ত নামায) কম করিয়া দিলেন এবং আমাকে প্রত্যহ দশ (ওয়াক্ত) নামাযের আদেশ করা হইল। আমি মুসার নিকট ফিরিয়া আসিলাম। এইবারও তিনি অনুরূপ কথাই বলিলেন। ফলে আমি পুনরায় ফিরিয়া গেলে আমাকে প্রত্যহ পাঁচ (ওয়াক্ত) নামাযের আদেশ করা হইল। আমি মুসার কাছে আবার ফিরিয়া আসিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনাকে (সর্বশেষ) কি করিতে আদেশ করা হইল। আমি বলিলাম, আমাকে দৈনিক পাঁচ (ওয়াক্ত) নামাযের আদেশ করা হইয়াছে। তিনি বলিলেন, আপনার উম্মত প্রত্যহ পাঁচ (ওয়াক্ত) নামায সমাপনে সক্ষম হইবে না। আপনার পূর্বে আমি (বনী ইসরাঈলের) লোকদিগকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি এবং বনী ইসরাঈলের হেদায়তের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা ও কষ্ট স্বীকার করিয়াছি, তাই আপনি আপনার রবের নিকট ফিরিয়া যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরও হ্রাস করিবার প্রার্থনা করুন। নবী (ছাঃ) বলিলেন, আমি আমার রবের কাছে (কর্তব্য হ্রাসের জন্য) এত অধিকবার প্রার্থনা জানাইয়াছি যে, পুনর্বার প্রার্থনা জানাইতে আমি লজ্জাবোধ করিতেছি, বরং আমি (আল্লাহর এই নির্দেশের উপর) সন্তুষ্ট এবং আমি (আমার ও আমার উম্মতের ব্যাপার) আল্লাহর উপর সপর্দ করিতেছি। নবী (ছাঃ) বলেন, আমি যখন মুসাকে অতিক্রম করিয়া সম্মুখে অগ্রসর হইলাম, তখন (আল্লাহর পক্ষ হইতে) ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি আমি জারি করিয়া দিলাম এবং আমার বান্দাদের জন্য সহজ করিয়া দিলাম। মোত্তাঃ
অতঃপর হযরত জিবরাঈল আমাকে লইয়া আরও উর্ধ্বে আরোহণ করিলেন এবং দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছিয়া দরজা খুলিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কে? তিনি বলিলেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তখন বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাহার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলিয়া দেওয়া হইল। যখন আমি ভিতরে প্রবেশ করিলাম, তখন সেইখানে দেখিতে পাইলাম হযরত ইয়াহ্ইয়া ও ঈসা (আঃ)-কে। তাহারা দুইজন পরস্পর খালাত ভাই। জিবরাঈল (আমাকে) বলিলেন, ইনি হইলেন ইয়াহ্ইয়া আর উনি হইলেন ঈসা (আঃ), আপনি তাহাদিগকে সালাম করুন। যখন আমি সালাম করিলাম, তাহারা উভয়ে সালামের জাওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।
অতঃপর হযরত জিবরাঈল আমাকে লইয়া তৃতীয় আসমানে উঠিলেন এবং দরজা খুলিয়া দিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কে। তিনি বলিলেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাহার আগমন বড়ই শুভ। অতঃপর দরজা খুলিয়া দেওয়া হইল। ভিতরে প্রবেশ করিয়া আমি সেইখানে হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। হযরত জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হইলেন হযরত ইউসুফ (আঃ), তাহাকে সালাম করুন। আমি তাঁহাকে সালাম করিলাম। তিনি সালামের জওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।
অতঃপর হযরত জিবরাঈল আমাকে লইয়া আরও উর্ধ্বলোকে যাত্রা করিলেন এবং চতুর্থ আসমানে আসিয়া দরজা খুলিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কে? বলিলেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে? বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হইল,তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাহার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলিয়া দেওয়া হইল। আমি ভিতরে প্রবেশ করিয়া দেখিলাম, সেইখানে হযরত ইদ্রীস (আঃ) জিবরাঈল (আঃ) বলিলেন, ইনি হযরত ইদ্রীস, তাহাকে সালাম করুন। আমি তাহাকে সালাম করিলাম, অতঃপর তিনি জওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।
ইহার পর জিবরাঈল আমাকে লইয়া উর্ধ্বে আরোহন করিলেন এবং পঞ্চম আসমানে আসিয়া দরজা খুলিয়া দিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল কে? বলিলেন, (আমি) জিবরাঈল। পুনঃ জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে? বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাহার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলিয়া দিলে আমি যখন ভিতরে পৌঁছিলাম, সেইখানে হযরত হারুন (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হযরত হারুন (আঃ), তাহাকে সালাম করুন। আমি তাহাকে সালাম করিলে তিনি জওয়াব দিলেন। অতঃপর বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।
অতঃপর জিবরাঈল আমাকে সঙ্গে লইয়া আরও উর্ধ্বলোকে উঠিলেন এবং ষষ্ঠ আসমানে আসিয়া দরজা খুলিয়া দিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, কে ? বলিলেন, জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাহার আগমন কতই না উত্তম। তারপর দরজা খুলিয়া দিলে আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করিলাম, তখন সেইখানে হযরত মুসা (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হইলেন মুসা (আঃ), তাহাকে সালাম করুন। আমি তাহাকে সালাম করিলে তিনি উহার জাওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন। অতঃপর আমি যখন তাহাকে অতিক্রম করিয়া অগ্রসর হইলাম, তখন তিনি কাদিয়া ফেলিলেন। তাহাকে জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কাঁদিতেছেন কেন? তিনি বলিলেন, আমি এই জন্য কাঁদিতেছি যে, আমার পরে এমন একজন যুবককে (নবী বানাইয়া) পাঠান হইল, যাহার উম্মত আমার উম্মত অপেক্ষা অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করিবে।
অতঃপর জিবরাঈল (আঃ) আমাকে লইয়া সপ্তম আসমানে আরোহণ করিলেন। অনন্তর হযরত জিবরাঈল দরজা খুলিতে বলিলে জিজ্ঞাসা করা হইল, কে? তিনি বলিলেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। ইহার পর বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাহার আগমন কতই না উত্তম। অতঃপর আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করিলাম, সেইখানে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হইলেন আপনার পিতা ইবরাহীম (আঃ), তাহাকে সালাম করুন। তখন আমি তাহাকে সালাম করিলাম। তিনি সালামের জওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।
অতঃপর আমাকে “সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠান হইল। আমি দেখিতে পাইলাম, উহার ফল হাজার নামক অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং উহার পাতা হাতীর কানের মত। জিবরাঈল বলিলেন, ইহাই সিদরাতুল মুনতাহা। আমি (তথায়) আরও দেখিতে পাইলাম চারিটি নহর। দুইটি নহর অপ্রকাশ্য, আর দুইটি প্রকাশ্য। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, হে জিবরাঈল। এই নহরের তাৎপর্য কি। তিনি বলিলেন, অপ্রকাশ্য দুইটি হইল জান্নাতে প্রবাহিত দুইটি নহর। আর প্রকাশ্য দুইটি হইল (মিসরের নীল এবং (ইরাকের) ফোরাত নদী। অতঃপর আমাকে "বায়তুল মা'মুর" দেখান হইল। তারপর আমার সামনে হাযির করা হইল এক পাত্র মদ, এক পাত্র দুধ ও এক পাত্র মধু। ইহার মধ্য হইতে আমি দুধ গ্রহণ করিলাম (এবং উহা পান করিলাম)। তখন জিবরাঈল বলিলেন, ইহা 'ফেতরত'-এর (স্বভাব-ধর্মের) নিদর্শন। আপনি এবং আপনার উম্মত ইহার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকিবেন।
অতঃপর আমার উপর দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করা হইল। আমি (ইহা গ্রহণ করিয়া) প্রত্যাবর্তন করিলাম। হযরত মুসা (আঃ)-এর সম্মুখ দিয়া যাইবার সময় তিনি (আমাকে) বলিলেন, আপনাকে কি করিতে আদেশ করা হইয়াছে? আমি বলিলাম, দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামাযের আদেশ করা হইয়াছে। তিনি বলিলেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায সম্পাদনে সক্ষম হইবে না। আল্লাহর কসম! আপনার পূর্বে আমি (বনী ইসরাঈলের) লোকদিগকে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি এবং বনী ইসরাঈলদের হেদায়তের জন্য আমি যথাসাধ্য পরিশ্রম করিয়াছি। অতএব, (সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই আপনাকে বলিতেছি,) আপনি আপনার রবের কাছে ফিরিয়া যান এবং আপনার উম্মতের পক্ষে (নামায) আরও হ্রাস করিবার জন্য আবেদন করুন। তখন আমি ফিরিয়া গেলাম (এবং ঐভাবে প্রার্থনা জানাইলে) আল্লাহ্ আমার উপর হইতে দশ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিলেন। তারপর আমি হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিলাম। তিনি এইবারও অনুরূপ কথা বলিলেন। ফলে আমি পুনরায় আল্লাহর কাছে ফিরিয়া গেলাম। তিনি আমার উপর হইতে আরও দশ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিলেন। আবার আমি মুসার নিকট ফিরিয়া আসিলাম। তিনি অনুরূপ কথাই বলিলেন। তাই আমি (আবার) ফিরিয়া গেলাম। তখন আল্লাহ্ আরও দশ (ওয়াক্ত নামায) মাফ করিয়া দিলেন। অতঃপর আমি মুসার নিকট ফিরিয়া আসিলে আবারও তিনি ঐ কথাই বলিলেন। আমি আবার ফিরিয়া গেলাম। আল্লাহ্ আমার জন্য দশ (ওয়াক্ত নামায) কম করিয়া দিলেন এবং আমাকে প্রত্যহ দশ (ওয়াক্ত) নামাযের আদেশ করা হইল। আমি মুসার নিকট ফিরিয়া আসিলাম। এইবারও তিনি অনুরূপ কথাই বলিলেন। ফলে আমি পুনরায় ফিরিয়া গেলে আমাকে প্রত্যহ পাঁচ (ওয়াক্ত) নামাযের আদেশ করা হইল। আমি মুসার কাছে আবার ফিরিয়া আসিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনাকে (সর্বশেষ) কি করিতে আদেশ করা হইল। আমি বলিলাম, আমাকে দৈনিক পাঁচ (ওয়াক্ত) নামাযের আদেশ করা হইয়াছে। তিনি বলিলেন, আপনার উম্মত প্রত্যহ পাঁচ (ওয়াক্ত) নামায সমাপনে সক্ষম হইবে না। আপনার পূর্বে আমি (বনী ইসরাঈলের) লোকদিগকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি এবং বনী ইসরাঈলের হেদায়তের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা ও কষ্ট স্বীকার করিয়াছি, তাই আপনি আপনার রবের নিকট ফিরিয়া যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরও হ্রাস করিবার প্রার্থনা করুন। নবী (ছাঃ) বলিলেন, আমি আমার রবের কাছে (কর্তব্য হ্রাসের জন্য) এত অধিকবার প্রার্থনা জানাইয়াছি যে, পুনর্বার প্রার্থনা জানাইতে আমি লজ্জাবোধ করিতেছি, বরং আমি (আল্লাহর এই নির্দেশের উপর) সন্তুষ্ট এবং আমি (আমার ও আমার উম্মতের ব্যাপার) আল্লাহর উপর সপর্দ করিতেছি। নবী (ছাঃ) বলেন, আমি যখন মুসাকে অতিক্রম করিয়া সম্মুখে অগ্রসর হইলাম, তখন (আল্লাহর পক্ষ হইতে) ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি আমি জারি করিয়া দিলাম এবং আমার বান্দাদের জন্য সহজ করিয়া দিলাম। মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান