মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৪ টি
অনুসন্ধান করুন
হাদীস নংঃ ৫৮৬৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা
৫৮৬৩। হযরত সাবেত আল-বুনানী হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন আমার সম্মুখে 'বোরাক' উপস্থিত করা হইল। উহা শ্বেত বর্ণের লম্বা কায়াবিশিষ্ট একটি জানোয়ার, গাধার চাইতে বড় এবং খচ্চর অপেক্ষা ছোট। উহার দৃষ্টি যতদূর যাইত সেইখানে পা রাখিত। আমি উহাতে আরোহণ করিয়া বায়তুল মুকাদ্দাসে আসিয়া পৌঁছিলাম এবং অন্যান্য নবীগণ যেই স্থানে নিজেদের সওয়ারী বাঁধিতেন, আমিও আমার বাহনকে তথায় বাধিলাম। নবী (ছাঃ) বলেন, অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদে প্রবেশ করিয়া তথায় দুই রাকআত নামায পড়িলাম। তারপর মসজিদ হইতে বাহিরে আসিলাম, তখন হযরত জিবরাঈল আমার কাছে এক পাত্র মদ ও এক পাত্র দুধ লইয়া আসিলেন। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করিলাম। তখন জিবরাঈল বলিলেন, আপনি (ইসলামরূপী) ফেতরত (স্বভাব-ধর্ম ইসলাম) গ্রহণ করিয়াছেন।
অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে আসমানের দিকে লইয়া চলিলেন, ইহার পরবর্তী অংশ সাবেত বুনানী হযরত আনাস (রাঃ) হইতে পূর্বে বর্ণিত হাদীসটির মর্মানুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। (অবশ্য ইহাতে রহিয়াছে,) নবী (ছাঃ) বলেন, হঠাৎ আমি আদম (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। তিনি আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানাইলেন এবং আমার জন্য নেক দোআ করিলেন। নবী (ছাঃ) ইহাও বলিয়াছেন যে, তিনি তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সাক্ষাৎ লাভ করিয়াছেন। তিনি এমন ব্যক্তি যে, তাহাকে (গোটা পৃথিবীর) অর্ধেক সৌন্দর্য দান করা হইয়াছে। তিনিও আমাকে সাদর অভিনন্দন জানাইয়া আমার জন্য নেক দো'আ করিলেন। সাবেত বলেন এবং ইহাতে মুসা (আঃ)-এর কান্নার বিষয়টির উল্লেখ নাই। নবী (ছাঃ) আরও বলিয়াছেন, সপ্তম আকাশে আমি হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম যে, তিনি বায়তুল মা'মুরের সহিত পিঠ লাগাইয়া বসিয়া আছেন। সেই গৃহে দৈনিক সত্তর হাজার ফিরিশতা প্রবেশ করেন। যাঁহারা একবার বাহির হইয়াছেন, তাহারা পুনরায় আর প্রবেশ করিবার সুযোগ পাইবেন না। অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় লইয়া গেলেন। উহার পাতা গুলি হাতীর কানের মত এবং উহার ফল মটকার ন্যায়। এরপর উক্ত বৃক্ষটি আল্লাহ্ তা'আলার নির্দেশে এমন একটি আবৃতকারী বস্তু দ্বারা আবৃত হয়, যাহাতে উহার অবস্থা (উত্তমরূপে ) পরিবর্তিত হয় যে, আল্লাহর সৃষ্ট কোন মাখলুক যাহার সৌন্দর্যের কোন প্রকার বর্ণনা দিতে সক্ষম হইবে না। ইহার পর আল্লাহ্ আমার নিকট ওহী পাঠাইলেন, যাহা তিনি পাঠাইয়াছেন এবং আমার উপরে দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করিলেন। ফিরিবার সময় আমি হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট আসিলে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনার পরওয়ারদেগার আপনার উম্মতের উপর কি ফরয করিয়াছেন? আমি বলিলাম, দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করিয়াছেন। তিনি আমাকে (পরামর্শস্বরূপ) বলিলেন, আপনি আপনার রবের কাছে ফিরিয়া যান এবং (নামাযের সংখ্যা হ্রাস করিবার জন্য তাঁহার কাছে আবেদন করুন। কেননা, আপনার উম্মত ইহা (দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায) সম্পাদন করিতে সক্ষম হইবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি। নবী (ছাঃ) বলেন, তখন আমি আমার রবের কাছে ফিরিয়া গেলাম এবং বলিলাম; হে আমার পরওয়ারদেগার! আমার উম্মতের উপর হইতে হ্রাস করিয়া দিন। তখন আমার উপর হইতে পাঁচ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিলেন। অতঃপর আমি হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিয়া বলিলাম, আল্লাহ্ তা'আলা আমার উপর হইতে পাঁচ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিয়াছেন। হযরত মুসা বলিলেন, আপনার উম্মত ইহা সম্পাদনেও সমর্থ হইবে না। কাজেই আপনি পুনরায় আপনার রবের কাছে যান এবং আরও হ্রাস করিবার জন্য আবেদন করুন। নবী (ছাঃ) বলেন, আমি এইভাবে আমার রব ও হযরত মুসা (আঃ)-এর মাঝখানে আসা-যাওয়া করিতে থাকিলাম [ এবং বার বার নামাযের সংখ্যা কমাইয়া আনিতে রহিলাম। নবী (ছাঃ) বলেন,] সর্বশেষ আমার রব বলিলেন: হে মুহাম্মাদ। দৈনিক ফরয তো এই পাঁচ নামায এবং প্রত্যেক নামাযের সওয়াব দশ দশ নামাযের সমান। ফলে ইহা (পাঁচ ওয়াক্ত) পঞ্চাশ নামাযের সমান। (আমার নীতি হইল, যেই ব্যক্তি কোন একটি নেক কাজ করিবার সংকল্প করিবে; কিন্তু তাহা সম্পাদন করে নাই, তাহার জন্য একটি নেকী লেখা হইবে এবং সেই কাজটি সম্পাদন করিলে তাহার জন্য দশটি নেকী লেখা হইবে। আর যেই ব্যক্তি কোন একটি মন্দ কাজ করিবার সংকল্প করিয়া উহাকে বাস্তবায়ন না করে, তাহার জন্য কিছুই লেখা হইবে না। অবশ্য যদি সে উক্ত কাজটি বাস্তবায়ন করে, তবে তাহার জন্য একটি গোনাহই লেখা হইবে। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর আমি অবতরণ করিয়া যখন হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট পৌঁছিলাম, তখন তাঁহাকে পূর্ণ বিবরণ জানাইলাম। তখন তিনি আমাকে বলিলেন, আবারও আপনার রবের কাছে যান এবং আরও কিছু কমাইয়া দেওয়ার জন্য অনুরোধ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, আমি বলিলাম, আমি আমার রবের কাছে বার বার গিয়াছি। এখন পুনরায় যাইতে আমার লজ্জা হইতেছে। মুসলিম
অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে আসমানের দিকে লইয়া চলিলেন, ইহার পরবর্তী অংশ সাবেত বুনানী হযরত আনাস (রাঃ) হইতে পূর্বে বর্ণিত হাদীসটির মর্মানুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। (অবশ্য ইহাতে রহিয়াছে,) নবী (ছাঃ) বলেন, হঠাৎ আমি আদম (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। তিনি আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানাইলেন এবং আমার জন্য নেক দোআ করিলেন। নবী (ছাঃ) ইহাও বলিয়াছেন যে, তিনি তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সাক্ষাৎ লাভ করিয়াছেন। তিনি এমন ব্যক্তি যে, তাহাকে (গোটা পৃথিবীর) অর্ধেক সৌন্দর্য দান করা হইয়াছে। তিনিও আমাকে সাদর অভিনন্দন জানাইয়া আমার জন্য নেক দো'আ করিলেন। সাবেত বলেন এবং ইহাতে মুসা (আঃ)-এর কান্নার বিষয়টির উল্লেখ নাই। নবী (ছাঃ) আরও বলিয়াছেন, সপ্তম আকাশে আমি হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম যে, তিনি বায়তুল মা'মুরের সহিত পিঠ লাগাইয়া বসিয়া আছেন। সেই গৃহে দৈনিক সত্তর হাজার ফিরিশতা প্রবেশ করেন। যাঁহারা একবার বাহির হইয়াছেন, তাহারা পুনরায় আর প্রবেশ করিবার সুযোগ পাইবেন না। অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় লইয়া গেলেন। উহার পাতা গুলি হাতীর কানের মত এবং উহার ফল মটকার ন্যায়। এরপর উক্ত বৃক্ষটি আল্লাহ্ তা'আলার নির্দেশে এমন একটি আবৃতকারী বস্তু দ্বারা আবৃত হয়, যাহাতে উহার অবস্থা (উত্তমরূপে ) পরিবর্তিত হয় যে, আল্লাহর সৃষ্ট কোন মাখলুক যাহার সৌন্দর্যের কোন প্রকার বর্ণনা দিতে সক্ষম হইবে না। ইহার পর আল্লাহ্ আমার নিকট ওহী পাঠাইলেন, যাহা তিনি পাঠাইয়াছেন এবং আমার উপরে দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করিলেন। ফিরিবার সময় আমি হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট আসিলে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনার পরওয়ারদেগার আপনার উম্মতের উপর কি ফরয করিয়াছেন? আমি বলিলাম, দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করিয়াছেন। তিনি আমাকে (পরামর্শস্বরূপ) বলিলেন, আপনি আপনার রবের কাছে ফিরিয়া যান এবং (নামাযের সংখ্যা হ্রাস করিবার জন্য তাঁহার কাছে আবেদন করুন। কেননা, আপনার উম্মত ইহা (দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায) সম্পাদন করিতে সক্ষম হইবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি। নবী (ছাঃ) বলেন, তখন আমি আমার রবের কাছে ফিরিয়া গেলাম এবং বলিলাম; হে আমার পরওয়ারদেগার! আমার উম্মতের উপর হইতে হ্রাস করিয়া দিন। তখন আমার উপর হইতে পাঁচ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিলেন। অতঃপর আমি হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিয়া বলিলাম, আল্লাহ্ তা'আলা আমার উপর হইতে পাঁচ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিয়াছেন। হযরত মুসা বলিলেন, আপনার উম্মত ইহা সম্পাদনেও সমর্থ হইবে না। কাজেই আপনি পুনরায় আপনার রবের কাছে যান এবং আরও হ্রাস করিবার জন্য আবেদন করুন। নবী (ছাঃ) বলেন, আমি এইভাবে আমার রব ও হযরত মুসা (আঃ)-এর মাঝখানে আসা-যাওয়া করিতে থাকিলাম [ এবং বার বার নামাযের সংখ্যা কমাইয়া আনিতে রহিলাম। নবী (ছাঃ) বলেন,] সর্বশেষ আমার রব বলিলেন: হে মুহাম্মাদ। দৈনিক ফরয তো এই পাঁচ নামায এবং প্রত্যেক নামাযের সওয়াব দশ দশ নামাযের সমান। ফলে ইহা (পাঁচ ওয়াক্ত) পঞ্চাশ নামাযের সমান। (আমার নীতি হইল, যেই ব্যক্তি কোন একটি নেক কাজ করিবার সংকল্প করিবে; কিন্তু তাহা সম্পাদন করে নাই, তাহার জন্য একটি নেকী লেখা হইবে এবং সেই কাজটি সম্পাদন করিলে তাহার জন্য দশটি নেকী লেখা হইবে। আর যেই ব্যক্তি কোন একটি মন্দ কাজ করিবার সংকল্প করিয়া উহাকে বাস্তবায়ন না করে, তাহার জন্য কিছুই লেখা হইবে না। অবশ্য যদি সে উক্ত কাজটি বাস্তবায়ন করে, তবে তাহার জন্য একটি গোনাহই লেখা হইবে। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর আমি অবতরণ করিয়া যখন হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট পৌঁছিলাম, তখন তাঁহাকে পূর্ণ বিবরণ জানাইলাম। তখন তিনি আমাকে বলিলেন, আবারও আপনার রবের কাছে যান এবং আরও কিছু কমাইয়া দেওয়ার জন্য অনুরোধ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, আমি বলিলাম, আমি আমার রবের কাছে বার বার গিয়াছি। এখন পুনরায় যাইতে আমার লজ্জা হইতেছে। মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৫৮৬৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা
৫৮৬৪। ইবনে শিহাব (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আবু যর (রাঃ) বর্ণনা করিতেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: আমি মক্কায় থাকাকালীন এক রাত্রে আমার ঘরের ছাদ বিদীর্ণ করা হইল এবং জিবরাঈল (আঃ) অবতরণ করিলেন, ইহার পর আমার বক্ষ বিদীর্ণ করিলেন। তারপর উহাকে যমযমের পানি দ্বারা ধৌত করিলেন। অতঃপর জ্ঞান ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণ-পাত্র আনিয়া উহাকে বক্ষের মধ্যে ঢালিয়া দিলেন। তারপর উহাকে বন্ধ করিয়া দিলেন। অতঃপর তিনি (জিবরাঈল) আমার হাত ধরিয়া আমাকে আকাশের দিকে লইয়া গেলেন। যখন আমি নিকটবর্তী আকাশে উপনীত হইলাম, তখন জিবরাঈল আসমানের দ্বাররক্ষীকে বলিলেন, দরজা খোল। সে বলিল, (আপনি) কে? তিনি বলিলেন, জিবরাঈল। সে বলিল, আপনার সঙ্গে আর কেহ আছে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সে বলিল, তাহাকে কি ডাকা হইয়াছে ? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তারপর যখন সে দরজা খুলিল, তখন আমরা নিকটবর্তী আসমানে আরোহণ করিয়া দেখিলাম, তথায় এক ব্যক্তি বসিয়া আছেন, তাঁহার ডান পার্শ্বে বহু মানবাকৃতি এবং তাঁহার বাম পার্শ্বেও অনেক মানবাকৃতি। তিনি ডান দিকে তাকাইলে হাসেন এবং যখন বাম দিকে তাকান, তখন কাঁদেন। তিনি বলিলেন, খোশ আমদেদ, হে নেককার নবী। হে পুণ্যবান সন্তান। আমি জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করিলাম, ইনি কে? বলিলেন, ইনি হযরত আদম (আঃ)। ডানে ও বামে এইগুলি তাঁহার সন্তানের রূহসমূহ। ডান দিকের এইগুলি বেহেশতী এবং বাম দিকের এইগুলি দোযখী। এই জন্য তিনি যখন ডান দিকে তাকান, তখন হাসেন এবং যখন বাম দিকে তাকান, তখন কাদেন। অতঃপর তিনি আমাকে লইয়া দ্বিতীয় আসমানের দিকে উঠিলেন এবং দ্বাররক্ষীকে বলিলেন, দরজা খোল। তখন সে প্রথন দ্বাররক্ষীর ন্যায় জিজ্ঞাসা করিল (তারপর দরজা খুলিল)। হযরত আনাস বলেন, বর্ণনাকারী হযরত আবু যর (রাঃ) বলিয়াছেন, নবী (ছাঃ) আসমানসমূহে হযরত আদম, ইদ্রীস, মুসা, ঈসা এবং ইবরাহীম (আঃ)-কে পাইয়াছেন কিন্তু তিনি (আবু যর) তাহাদের অবস্থানের কথা নির্দিষ্টভাবে বলেন নাই। শুধু এইটুকু বর্ণনা করিয়াছেন যে, নবী (ছাঃ) হযরত আদম (আঃ)-কে নিকটবর্তী আকাশে এবং হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে ষষ্ঠ আসমানে পাইয়াছেন। ইবনে শিহাব বলেন, ইবনে হাযম আমাকে বলিয়াছেন যে, ইবনে আব্বাস ও আবু হাব্বাহ আনসারী—তাহারা উভয়ে বলিতেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, অতঃপর আমাকে উর্ধ্বলোকে লইয়া যাওয়া হইল এবং আমি এক সমতল স্থানে পৌঁছিলাম। তথায় আমি কলমের লেখার শব্দ শুনিতে পাইলাম। ইবনে হাযম ও আনাস (রাঃ) বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, তখন মহান আল্লাহ্ আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করিলেন। আমি উহা লইয়া প্রত্যাবর্তন করিলাম। যখন মুসা (আঃ)-এর নিকট পৌঁছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনার উম্মতের উপর আল্লাহ্ তা'আলা কি ফরয করিয়াছেন। আমি বলিলাম, পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, আপনার রবের নিকট ফিরিয়া যান। কেননা, আপনার উম্মত (এত নামায আদায় করিতে) সক্ষম হইবে না। অতঃপর মুসা (আঃ) আমাকে ফেরৎ পাঠাইলেন। (সুতরাং আমি আমার রবের কাছে গেলাম।) ফলে আল্লাহ্ কিছু অংশ কম করিয়া দিলেন। অতঃপর আমি পুনরায় মুসা (আঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিলাম এবং বলিলাম, কিছু নামায কম করিয়া দিয়াছেন। তিনি পুনরায় বলিলেন, আবারও যান। কেননা, আপনার উম্মত ইহাও আদায় করিতে সক্ষম হইবে না। সুতরাং আমি আবারও আমার রবের কাছে ফিরিয়া গেলাম। আল্লাহ্ আবারও কিছু নামায মাফ করিয়া দিলেন। আমি পুনরায় মুসা (আঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিলে তিনি বলিলেন, আবার যান। আরও কিছু নামায হ্রাস করাইয়া আনেন। কেননা, আপনার উম্মত ইহাও আদায় করিতে সক্ষম হইবে না। সুতরাং আমি পুনরায় আমার রবের কাছে গেলাম। এইবার আল্লাহ্ বলিলেন এই পাঁচ নামাযই ফরয, আর ইহা (মূলত সওয়াবের দিক দিয়া) পঞ্চাশ নামাযের সমান। আমার কথার পরিবর্তন হয় না। অতঃপর আমি হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিলাম। তিনি বলিলেন, আবারও আপনি আপনার রবের কাছে যান। এইবার আমি বলিলাম, পুনরায় আমার রবের কাছে যাইতে আমি লজ্জাবোধ করিতেছি। অতঃপর জিবরাঈল আমাকে লইয়া রওয়ানা হইলেন এবং "সিদরাতুল মুনতাহায়" পৌঁছাইলেন। উক্ত বৃক্ষটিকে বিভিন্ন রংয়ে ঢাকিয়া ফেলিল। প্রকৃতপক্ষে উহা কি, তাহা আমি জানি না। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান হইল। দেখিতে পাইলাম উহাতে মুক্তার গুম্বজসমূহ এবং উহার মাটি মেশকের। মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৫৮৬৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা
৫৮৬৫। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, যেই রাত্রে রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভ্রমণ করান হয়, তাহাকে সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছান হইয়াছে। আর তাহা ষষ্ঠ আসমানে অবস্থিত। (উহাকে সিদরাতুল মুনতাহা এই জন্য বলা হয় যে, ) ভূপৃষ্ঠ হইতে যাহাকিছু উর্ধ্বজগতে উত্থিত হয়, উহাই তাহার শেষ সীমা এবং সেইখান হইতে কোন মাধ্যম ব্যতীত তাহা উপরে উঠাইয়া নেওয়া হয়। (কারণ, ফিরিশতাগণ উহার উর্ধ্বে যাইতে পারেন না।) আর উর্ধ্বজগত হইতে যাহাকিছু অবতরণ করা হয়, তাহা সেই স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং তথা হইতে গ্রহণ করা হয় (অর্থাৎ, ফিরিশতাগণ লইয়া যান)। ইহার পর হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) কুরআন মজীদের এই আয়াতটি পাঠ করিলেন, إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى "যখন বৃক্ষটি যদ্দ্বারা আচ্ছাদিত হইবার ছিল তদ্বারা আচ্ছাদিত হয়।" (ইহার ব্যাখ্যায়) তিনি বলিলেন, এইগুলি ছিল স্বর্ণের পতঙ্গ। অতঃপর ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, মে'রাজের রাত্রে রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনটি জিনিস প্রদান করা হইয়াছে। (এক) পাঁচ ওয়াক্ত নামায, (দুই) সুরা-বাকারার শেষ কয়েকটি আয়াত এবং (তিন) নবী (ছাঃ)-এর উম্মতের মধ্য হইতে যাহারা আল্লাহর সহিত কাহাকেও শরীক করে নাই, তাহাদের মাফ করার ওয়াদা দেওয়া হয়। -মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৫৮৬৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা
৫৮৬৬। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: আমি নিজেকে কা'বাঘরের হাতীমে দণ্ডায়মান দেখিলাম। আর কোরাইশের লোকেরা আমাকে আমার মে'রাজের ঘটনাবলী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিতেছিল। তাহারা আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাস সম্পর্কে এমন কিছু প্রশ্ন করিল, যাহা আমার স্মরণে ছিল না। ফলে আমি এমন অস্থির হইয়া পড়িলাম যে, ইহার পূর্বে অনুরূপ অস্থির আর কখনও হই নাই। তখন আল্লাহ্ তাআলা বায়তুল মুকাদ্দাসকে আমার সম্মুখে উপস্থিত করিয়া দিলেন, ফলে আমি উহার দিকে চাহিয়া রহিলাম এবং তাহারা যে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করিত, আমি উহা দেখিয়া উত্তর দিতে থাকিলাম। আর আমি (মে'রাজের রাতে) নিজেকে নবীদের এক জমাআতের মধ্যে দেখিতে পাইলাম। তখন দেখি হযরত মুসা (আঃ) দাড়াইয়া নামায পড়িতেছেন। তিনি একজন মধ্যম কদের সামান্য লম্বা, মনে হইল যেন (ইয়ামন দেশের) শানুয়া গোত্রের লোক। আর হযরত ঈসা (আঃ)-কে দাড়াইয়া নামায পড়িতে দেখিলাম। লোকদের মধ্যে উরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফী হইলেন তাঁহার অধিক সাদৃশ্য। আবার হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কেও দাড়ান অবস্থায় নামায পড়িতে দেখিলাম। লোকদের মধ্যে তোমাদের সঙ্গী অর্থাৎ, হুযূর (ছাঃ) নিজেই তাহার নিকটতম সাদৃশ্য। ইত্যবসরে নামাযের সময় হইল এবং আমি নামাযে তাহাদের ইমামতি করিলাম। অতঃপর যখন আমি নামায শেষ করিলাম, তখন কেহ আমাকে বলিলেন, হে মুহাম্মাদ। ইনি হইলেন দোযখের দ্বাররক্ষী মালেক, তাঁহাকে সালাম করুন। নবী (ছাঃ) বলেন, আমি তাঁহার দিকে ফিরিয়া তাকাইতেই তিনি আমাকে আগেই সালাম দিলেন। মুসলিম
[এই অধ্যায়ে দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ নাই।]
[এই অধ্যায়ে দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ নাই।]

তাহকীক:
তাহকীক চলমান