মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৪ টি
হাদীস নং: ৫৮৩০
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮৩০। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন বসিয়া কথা-বার্তা বলিতেন, তখন তিনি বার বার আকাশের দিকে দৃষ্টি উঠাইতেন। –আবু দাউদ
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَامٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا جَلَسَ يَتَحَدَّثُ يُكْثِرُ أَنْ يَرْفَعَ طَرْفَهُ إِلَى السَّمَاء. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৮৩১
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮৩১। আমর ইবনে সাঈদ হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বর্ণনা করেন, সন্তানসন্তুতির প্রতি অত্যধিক স্নেহ-মমতা পোষণকারী রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর চাইতে অধিক আমি আর কাহাকেও দেখি নাই। তাঁহার পুত্র ইবরাহীম মদীনার উঁচু প্রান্তে (এক মহল্লায়) ধাত্রী মায়ের কাছে দুধ পান করিত। তিনি প্রায়শঃ তথায় গমন করিতেন এবং আমরাও তাঁহার সঙ্গে যাইতাম । তিনি উক্ত গৃহে প্রবেশ করিতেন, অথচ সেই গৃহটি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হইয়া থাকিত। কারণ, ইবরাহীমের ধাত্রী মায়ের স্বামী ছিল একজন কর্মকার। হুযূর (ﷺ) ইবরাহীমকে কোলে তুলিয়া লইতেন এবং আদর করিয়া চুমু দিতেন, অতঃপর চলিয়া আসিতেন। বর্ণনাকারী আমর বলেন, যখন ইবরাহীমের ওফাত হইয়া গেল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ ইবরাহীম আমার পুত্র। সে দুগ্ধ (পানের) বয়সে মৃত্যুবরণ করিয়াছে। সুতরাং বেহেশতে তাহার জন্য দুই জন ধাত্রী রহিয়াছে, যাহারা তাহাকে দুগ্ধ পানের মুদ্দত পূর্ণ করিবে। —মুসলিম
كتاب الفضائل والشمائل
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
عَنْ عَمْرِو بْنِ سَعِيدٍ عَنْ أَنَسٍ قَالَ: مَا رَأَيْتُ أَحَدًا كَانَ أَرْحَمَ بِالْعِيَالِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِبْرَاهِيمُ ابْنُهُ مُسْتَرْضَعًا فِي عَوَالِي الْمَدِينَةِ فَكَانَ يَنْطَلِقُ وَنَحْنُ مَعَهُ فَيَدْخُلُ الْبَيْتَ وَإِنَّهُ لَيُدَّخَنُ وَكَانَ ظِئْرُهُ قَيْنًا فَيَأْخُذُهُ فَيُقَبِّلُهُ ثُمَّ يَرْجِعُ. قَالَ عَمْرٌو: فَلَمَّا تُوُفِّيَ إِبْرَاهِيمُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ إِبْرَاهِيمَ ابْنِي وَإِنَّهُ مَاتَ فِي الثَّدْيِ وَإِنَّ لَهُ لَظِئْرَيْنِ تُكْمِلَانِ رَضَاعَهُ فِي الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৮৩২
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮৩২। হযরত আলী (রাঃ) হইতে বর্ণিত, অমুক পাদ্রী নামে এক ইহুদীর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর উপর কিছু দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ঋণ ছিল। একদা সে আসিয়া নবী (ﷺ)-এর কাছে উহা চাহিয়া বসিল। জওয়াবে হুযূর (ﷺ) তাহাকে বলিলেনঃ হে ইহুদী! তোমাকে দেওয়ার মত আমার কাছে কিছুই নাই। ইহুদী বলিল, যে পর্যন্ত তুমি হে মুহাম্মাদ! আমার ঋণ পরিশোধ করিবে না, আমিও তোমাকে ছাড়িয়া যাইব না। এইবার রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন; আচ্ছা, আমিও তোমার কাছে বসিয়া থাকিব। এই বলিয়া তিনি তাহার কাছে বসিয়া পড়িলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সেই একই স্থানে যোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং পরদিন ফজরের নামায আদায় করিলেন। এদিকে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সাহাবীগণ ইহুদী লোকটিকে ধমকাইতেছিলেন এবং ভয় দেখাইতেছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সাহাবীদের গতিবিধি বুঝিতে পারিলেন। (তিনি তাহাদিগকে ইহুদীর সহিত কোন প্রকারের অসদাচরণ করিতে নিষেধ করিলেন।) তখন সাহাবীগণ বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! একটি ইহুদী কি আপনাকে আটকাইয়া রাখিবে? তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন ; আমার রব আমাকে কোন যিম্মী ইত্যাদির উপর যুগ্ম করিতে নিষেধ করিয়াছেন। অতঃপর যখন দিনের বেলা বাড়িয়া গেল, তখন ইহুদী বলিল, “আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মা'বূদ নাই এবং ইহাও সাক্ষ্য দিতেছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল।” আমি আমার মাল-সম্পদের অর্ধেক আল্লাহর রাস্তায় দান করিলাম। মূলতঃ আমি আপনার সাথে যেই আচরণ করিয়াছি, তাহা এই উদ্দেশ্যেই করিয়াছি যে, দেখি তওরাত কিতাবে আপনার স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে যেই সমস্ত গুণাবলীর কথা উল্লেখ রহিয়াছে, তাহা আপনার মধ্যে পাওয়া যায় কিনা ? আপনার সম্পর্কে লিখা আছে— মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ্, তিনি মক্কায় জন্মগ্রহণ করিবেন ও মদীনায়ে তাইয়্যেবায় হিজরত করিবেন। সিরিয়া পর্যন্ত তাঁহার রাজত্ব হইবে। তিনি অশ্লীলভাষী ও কঠোরমনা হইবেন না। হাটে-বাজারে চীৎকার করিবেন না এবং অশালীনরূপ ধারণ করিবেন না। তিনি অশোভন উক্তি করিবেন না। (আমি এই সমস্ত কিছু যথাযথভাবে আপনার মধ্যে বিদ্যমান পাইয়াছি।) আমি দৃঢ় প্রত্যয়ে সাক্ষ্য দিতেছি যে, “আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মা'বুদ নাই এবং আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল।” আর এই আমার মাল, আল্লাহর মর্জিমত আপনি যথায় ইচ্ছা তাহা খরচ করিতে পারেন। বর্ণনাকারী বলেন, উক্ত ইহুদী লোকটি ছিল বহু মাল-সম্পদের মালিক। —বায়হাকী তাঁহার দালায়েলুন নবুওত গ্রন্থে
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَن عَليّ أَنَّ يهوديّاً يُقَالُ لَهُ: فُلَانٌ حَبْرٌ كَانَ لَهُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي دَنَانِيرُ فَتَقَاضَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُ: «يَا يَهُودِيُّ مَا عِنْدِي مَا أُعْطِيكَ» . قَالَ: فَإِنِّي لَا أُفَارِقُكَ يَا مُحَمَّدُ حَتَّى تُعْطِيَنِي. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذًا أَجْلِسُ مَعَكَ» فَجَلَسَ مَعَهُ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ الْآخِرَةَ وَالْغَدَاةَ وَكَانَ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَهَدَّدُونَهُ وَيَتَوَعَّدُونَهُ فَفَطِنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا الَّذِي يَصْنَعُونَ بِهِ. فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ يَهُودِيٌّ يَحْبِسُكَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنَعَنِي رَبِّي أَنْ أَظْلِمَ مُعَاهِدًا وَغَيْرَهُ» فَلَمَّا تَرَجَّلَ النَّهَارُ قَالَ الْيَهُودِيُّ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ وَشَطْرُ مَالِي فِي سبيلِ الله أَمَا وَاللَّهِ مَا فَعَلْتُ بِكَ الَّذِي فَعَلْتُ بِكَ إِلَّا لِأَنْظُرَ إِلَى نَعْتِكَ فِي التَّوْرَاةِ: مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ مَوْلِدُهُ بِمَكَّةَ وَمُهَاجَرُهُ بِطَيْبَةَ وَمُلْكُهُ بِالشَّامِ لَيْسَ بِفَظٍّ وَلَا غَلِيظٍ وَلَا سَخَّابٍ فِي الْأَسْوَاقِ وَلَا مُتَزَيٍّ بِالْفُحْشِ وَلَا قَوْلِ الْخَنَا أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ وَهَذَا مَالِي فَاحْكُمْ فِيهِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ وَكَانَ الْيَهُودِيُّ كَثِيرَ المالِ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي «دَلَائِل النُّبُوَّة»
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৮৩৩
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮৩৩। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আবু আওফা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বেশী বেশী আল্লাহর যিকর করিতেন। নিরর্থক কথা খুব কমই বলিতেন, নামাযকে দীর্ঘায়িত করিতেন, কিন্তু খুতবা সংক্ষেপে দিতেন। তিনি কোন বিধবা নারী বা গরীব-মিসকীনদের সহিত চলিতে কোন রকম সংকোচ মনে করিতেন না। এমন কি তাহাদের প্রয়োজন মিটাইতেন। —নাসাঈ ও দারেমী
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ الذِّكْرَ وَيُقِلُّ اللَّغْوَ وَيُطِيلُ الصَّلَاةَ وَيُقْصِرُ الْخُطْبَةَ وَلَا يَأْنَفُ أَنْ يَمْشِيَ مَعَ الْأَرْمَلَةِ والمسكين فَيَقْضِي الْحَاجة. رَوَاهُ النَّسَائِيّ والدارمي
তাহকীক: