মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
২০- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ১২ টি
অনুসন্ধান করুন
হাদীস নংঃ ৩৮৫৭

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৫৭। হযরত আলী, আবুদ্দারদা, আবু হুরায়রা, আবু উমামা, আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর, আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ্ ও ইমরান ইবনে হুসায়ন রাযিআল্লাহু আনহুম আজমাঈন হইতে বর্ণিত, তাঁহারা সকলেই বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় (জেহাদে) খরচের জন্য আর্থিক সাহায্য পাঠাইল; কিন্তু নিজে বাড়ীতে রহিয়া গেল, সে ব্যক্তি তাহার প্রেরিত সাহায্যের প্রত্যেক দেরহামের বিনিময়ে সাত শত দেরহামের সওয়াব পাইবে। আর যে ব্যক্তি স্বয়ং জেহাদে অংশ গ্রহণ করে এবং উহাতে মালও ব্যয় করে, সে ব্যক্তি প্রত্যেক দেরহামের বিনিময়ে সাত লাখ দেরহামের সওয়াব পাইবে। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি তেলাওয়াত করিলেন— واللَّهُ يُضاعفُ لمنْ يشاءُ অর্থঃ “আর আল্লাহ্ যাহার জন্য ইচ্ছা করেন, অধিক পরিমাণে প্রতিদান দেন।” – ইবনে মাজাহ্

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৮৫৮

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৫৮। হযরত ফাযালা ইবনে ওবায়দ বলেন, আমি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, আমি শুনিয়াছি, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ শহীদ চার প্রকারের (লোক ) হয়। এক—এমন ব্যক্তি যে পরিপূর্ণ ঈমানদার, সে শত্রুর মুকাবেলায় যুদ্ধে রত হইয়া আল্লাহর প্রতিজ্ঞা পূরণ করিয়াছে, শেষ নাগাদ নিজে শহীদ হইয়া গিয়াছে। এই ব্যক্তি এমন এক উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হইবে, যাহার দিকে কিয়ামতের দিন লোকেরা এইভাবে চক্ষু তুলিয়া তাকাইবে। এবং (এই কথা বলিয়া) তাঁহার মাথা খুব উপরের দিকে উঠাইলেন যে, মাথা হইতে টুপীটি নীচে পড়িয়া গেল। (অধস্তন বর্ণনাকারী বলেন,) আমি জানি না, বর্ণনাকারী (ফায়ালা)-এর উদ্দেশ্য কি হযরত ওমরের মাথা হইতে টুপীটি নীচে পড়িয়া গিয়াছিল না কি হুযূর (ﷺ)-এর মাথা হইতে টুপীটি পড়িয়া গিয়াছিল ? দুই ঐ ব্যক্তি, যে পাক্কা ঈমানদার বটে; কিন্তু শত্রুর সম্মুখীন হয় এমন অবস্থায় যে, ভীরুতার দরুন সে ধারণা করিতে থাকে, যেন তাহার শরীরে কন্টক বৃক্ষের কাঁটা বিধিতেছে। এমন সময় হঠাৎ একটি তীর আসিয়া তাহাকে ঘায়েল করিল, অমনিই সে শহীদ হইয়া গেল। এই ব্যক্তি দ্বিতীয় শ্রেণীর শহীদ। তিন—এমন মু'মিন, যে ভালো মন্দ উভয় প্রকারের কাজে লিপ্ত ছিল, পরে জেহাদে অংশগ্রহণ করিয়া আল্লাহর প্রতিজ্ঞাকে সত্যে পরিণত করিল, (অর্থাৎ, মনে-প্রাণে লড়াই করিল।) অবশেষে নিজেই শহীদ হইয়া গেল। এই ব্যক্তি তৃতীয় শ্রেণীর শহীদ। চার—এমন ব্যক্তি যে মু'মিন বটে, তবে সে নিজের উপর সীমাহীন অনাচার করিয়াছে। অতঃপর জেহাদে শরীক হইয়া আল্লাহর ওয়াদাকে সত্যে প্রমাণিত করিয়াছে, শেষ নাগাদ সে শহীদ হইয়া গিয়াছে। এই লোক চতুর্থ শ্রেণীর শহীদ। —তিরমিযী এবং তিনি বলিয়াছেন, এই হাদীসটি হাসান ও গরীব।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৮৫৯

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৫৯। হযরত ওতবা ইবনে আব্দ আসসুলামী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ জেহাদে যেই সমস্ত লোক মারা যায় তাহারা তিন প্রকারের। এক—সেই খাঁটি মু'মিন, যে নিজের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে, শত্রুর সাথে যখন মোকাবেলায় লিপ্ত হয়, তখন প্রাণপণ লড়াই করে, অবশেষে শহীদ হইয়া যায়, এই জাতীয় শহীদের ব্যাপারে নবী (ﷺ) বলিয়াছেন, এই শহীদই (ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার) পরীক্ষায় পুরাপুরি উত্তীর্ণ হইয়াছে। সুতরাং এমন শহীদ আরশের নীচে আল্লাহর তাঁবুতে অবস্থান করিবে। নবী-রাসূলগণের মর্যাদা ঐ সমস্ত শহীদের চেয়ে শুধু নবুওতের মর্যাদা ব্যতীত আর কোন দিক দিয়া বেশী হইবে না। দুই—যেই মু'মিন তাহার আমলকে ভাল ও মন্দ মিশ্রিত করিয়া অতঃপর সে নিজের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদে অবতীর্ণ হয় এবং যখন শত্রুর সম্মুখীন হয়, তখন প্রাণপণ লড়াই করিয়া শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়। এই জাতীয় শহীদ সম্পর্কে নবী (ﷺ) বলিয়াছেন, এই ধরনের শাহাদত হইল পবিত্রতাকারী, গুনাহ্-খাতাকে মুছিয়া দেয়। বস্তুতঃ তলোয়ার হইল গুনাহ্-খাতা মোচনকারী। ফলে এই ধরনের শহীদকে বেহেশতের যে কোন দ্বার দিয়া সে প্রবেশ করিতে চাহিবে উহা দিয়া প্রবেশ করান হইবে। আর তৃতীয় প্রকারের ব্যক্তি হইল – মোনাফেক। নিজের জান ও মাল দ্বারা জেহাদে অবতীর্ণ হয়, অতঃপর যখন শত্রুর সম্মুখীন হয়, তখন এই পর্যন্ত লড়াই করে যে নিজেই নিহত হয়। মৃত্যুর পর এমন ব্যক্তির ঠিকানা হইল জাহান্নাম। কেননা, তলোয়ার (মোনাফেকের) নেফাককে মিটায় না। – দারেমী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৮৬০

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৬০। হযরত ইবনে আয়েয (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এক ব্যক্তির জানাযা পড়িবার উদ্দেশ্যে বাহির হইলেন। যখন জানাযা (সম্মুখে) রাখা হইল, তখন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব ([রাঃ] প্রতিবাদস্বরূপ) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আপনি এই ব্যক্তির জানাযার নামায পড়াইবেন না। কেননা, লোকটি বদ্কার, পাপী। এই কথা শুনার পর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) লোকদের দিকে তাকাইয়া বলিলেনঃ তোমাদের কেহ এই লোকটিকে ইসলামের কোন কাজ করিতে দেখিয়াছ কি ? তখন এক ব্যক্তি বলিয়া উঠিল, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। লোকটি এক রাত্রিতে আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দিয়াছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাহার জানাযার নামায পড়াইলেন এবং নিজের হাতেই তাহার উপর মাটি দিলেন। এই সময় তিনি (উক্ত মৃত ব্যক্তিকে লক্ষ্য করিয়া) বলিলেন, তোমার সঙ্গী-সাথীদের ধারণা যে, তুমি দোযখী। আর আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, তুমি বেহেশতী। অতঃপর তিনি (ওমর [রাঃ]-কে লক্ষ্য করিয়া) বলিলেনঃ হে ওমর! তোমাকে মানুষের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হইবে না; বরং তোমাকে জিজ্ঞাসা করা হইবে, দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে। —বায়হাকী শোআবুল ঈমানে

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৮৬১

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬১। হযরত ওকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি (মসজিদে নববীর) মিম্বরে দাঁড়াইয়া বলিয়াছেন: তোমরা তোমাদের শত্রুদের (মোকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি অর্জন কর। জানিয়া রাখ, প্রকৃত শক্তি হইল তীর নিক্ষেপ করা, প্রকৃত শক্তি হইল তীর নিক্ষেপ করা, প্রকৃত শক্তি হইল তীর নিক্ষেপ করা। —মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৮৬২

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬২। হযরত ওকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলিতে শুনিয়াছি, অচিরেই রোম সাম্রাজ্য তোমাদের জন্য বিজিত হইবে। আল্লাহ্ই তোমাদের সাহায্যের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং তোমাদের কেহই যেন তাঁর পরিচালনা শিক্ষা করার মধ্যে অলসতা না করে। – মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৮৬৩

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬৩। হযরত ওকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি তীর পরিচালনা শিখার পর উহা বর্জন করিয়া দেয়,সে আমাদের দলভুক্ত নহে। অথবা বলিয়াছেন, সে নাফরমানী করিল। —মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৮৬৪

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬৪। হযরত সালামা ইবনে আকওয়া (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আস্লাম গোত্রের একদল লোকের নিকট গমন করেন, তাহারা বাজারের মধ্যে তীর নিক্ষেপণ প্রতিযোগিতায় রত ছিল। হুযূর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাদের উদ্দেশ্যে বলিলেনঃ হে ইসমাঈলের বংশধর। তোমরা তীর চালনা কর, কেননা, তোমাদের পিতামহ তীরন্দাজ ছিলেন। আর (তিনি উভয়দলের একদলের সাথে মিশিয়া বলিলেন) আমি অমুক গোত্রের পক্ষে আছি। ইহার পর অপর দল তীর চালনা বন্ধ করিয়া দিল। তখন হুযূর (ছাঃ) বলিলেন, তোমাদের কি হইল (যে, তোমরা তীর চালনায় বিরত রহিলে) ? উত্তরে তাহারা বলিল, আমরা কেমন করিয়া তীর ছুঁড়িতে পারি, আপনি যে অমুক দলের সাথে রহিয়াছেন ? এইবার হুযুর (ছাঃ) বলিলেন, আচ্ছা, তোমরা তীর চালাইতে থাক, আমি তোমাদের সকলের সঙ্গেই আছি। -বুখারী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৮৬৫

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬৫। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, (ওহুদ যুদ্ধে) হযরত আবু তালহা (রাঃ) নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে একই ঢালের আড়ালে আত্মরক্ষা করিতেছিলেন। আর আবু তালহা ছিলেন একজন সুদক্ষ তীরন্দাজ। যখন তিনি তীর নিক্ষেপ করিতেন, তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উকি মারিয়া নিক্ষিপ্ত তীর পতিত হওয়ার জায়গা লক্ষ্য করিতেন। —বুখারী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৮৬৬

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬৬। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: ঘোড়ার কপালে (অর্থাৎ, ঘোড়ার মধ্যে) বরকত রহিয়াছে।-মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৮৬৭

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬৭। হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখিয়াছি যে, তিনি তাহার হাতের অঙ্গুলী দ্বারা ঘোড়ার কপালের কেশগুলি মোড়াইতেছেন এবং তখন এই কথাটি বলিতেছেন: ঘোড়ার কপালে কিয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ বাধা রহিয়াছে। অর্থাৎ, (আখেরাতে) পুরস্কার এবং (দুনিয়াতে) মালে গনীমত। — মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৩৮৬৮

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৬৮। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান এবং তাহার প্রতিশ্রুতির উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখিয়া আল্লাহর পথে (জেহাদের জন্য) ঘোড়া আব্দ্ধ রাখে (পালন করে), কিয়ামতের দিন ঘোড়ার পরিতৃপ্ত খানা-পিনা এবং উহার গোবর পেশাবও ঐ ব্যক্তির (আমলের) পাল্লায় ওজন করা হইবে। (অর্থাৎ, উহার বিনিময়ে সওয়াব ও কল্যাণ দান করা হইবে।) বুখারী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান