মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
৭- যাকাতের অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ১২ টি
অনুসন্ধান করুন
হাদীস নংঃ ১৮৭৮

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৭৮। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, বনি ইস্বায়ীলের মধ্যে তিন ব্যক্তি—এক শ্বেতকুষ্ঠ রোগী, এক মাথায় টাক পড়া ব্যক্তি ও এক অন্ধ, ইহাদিগকে আল্লাহ্ পরীক্ষা করিতে ইচ্ছা করিলেন এবং এক ফিরিশতাকে তাহাদের নিকট পাঠাইলেন। ফিরিশতা প্রথমে কুষ্ঠীর নিকট আসিয়া বলিলেন, তোমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বস্তু কি? সে বলিল, উত্তম রং ও উত্তম চর্ম এবং লোক আমাকে যাহার কারণে ঘৃণা করে, আমা হইতে তাহা দূর হইয়া যাওয়া। হুযূর বলেন, ফিরিশতা তাহার গায়ে হাত বুলাইলেন আর তাহার ঘৃণার জিনিস দূর হইয়া গেল এবং তাহাকে ভাল রং ও ভাল চর্ম দেওয়া হইল। অতঃপর ফিরিশতা জিজ্ঞাসা করিলেন, কোন্ মাল তোমার নিকট অধিক প্রিয়? সে বলিল, উট অথবা গরু। (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) বর্ণনাকারী রাবী ইসহাক সন্দেহ করিয়া বলেন যে, কুষ্ঠ রোগী অথবা মাথায় টাক পড়া ব্যক্তি—এই দুইয়ের মধ্যে একজন উট এবং অপরজন গরু চাহিয়াছিল। হুযূর বলেন, সুতরাং তাহাকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী মাদী উট দেওয়া হইল এবং ফিরিশতা দো'আ করিলেন, আল্লাহ্ তোমার ইহাতে যেন বরকত দেন।
হুযূর (দঃ) বলেন, অতঃপর ফিরিশতা টাকওয়ালার নিকট আসিয়া বলিলেন, তোমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বস্তু কি? সে বলিল, উত্তম চুল এবং যাহার কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে তাহা আমা হইতে দূর হইয়া যাওয়া। হুযূর বলেন, ফিরিশতা তাহার মাথায় হাত বুলাইলেন, যাহাতে তাহার টাক দূর হইয়া গেল এবং তাহাকে উত্তম চুল দান করা হইল। অতঃপর ফিরিশতা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার নিকট কোন্ মাল অধিক প্রিয়? সে বলিল, গরু। সুতরাং তাহাকে একটি গর্ভবতী গাভী দান করা হইল এবং ফিরিশতা দোআ করিলেন, আল্লাহ্ যেন তোমার মালে বরকত দেন।
হুযূর বলেন, অতঃপর ফিরিশতা অন্ধ ব্যক্তির নিকট আসিয়া বলিলেন, তোমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বস্তু কি? সে উত্তর করিল, আল্লাহ্ যেন আমার চোখের জ্যোতি ফিরাইয়া দেন যাহাতে আমি লোকদিগকে দেখিতে পাই। হুযূর বলেন, ফিরিশতা তাহার চোখের উপর হাত ফিরাইলেন আর আল্লাহ্ তা'আলা তাহার জ্যোতি ফিরাইয়া দিলেন। অতঃপর ফিরিশতা জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার নিকট কোন্ মাল অধিক প্রিয়? সে বলিল, ছাগল ভেড়া। সুতরাং তাহাকে একটি আসন্ন প্রসবা ছাগল দেওয়া হইল। অতঃপর (সে দুই ব্যক্তির) উট, গরু বাচ্চা জন্ম দিল এবং ইহার ছাগল ছানা প্রসব করিল যাহাতে উহার এক মাঠ উট, ইহার এক মাঠ গরু আর এই ব্যক্তির এক মাঠ ছাগল ভেড়া হইয়া গেল ।
হুযূর বলেন, অতঃপর (পরীক্ষার জন্য) সেই ফিরিশতা আপন পূর্ব অবয়ব ও পূর্ব বেশে সেই শ্বেত-কুষ্ঠ রোগীর নিকট আসিয়া বলিলেন, আমি একজন দরিদ্র মিসকীন ব্যক্তি, সফরে আমার সমস্ত সামর্থ্য শেষ হইয়া গিয়াছে। এখন আল্লাহর মেহেরবানী ছাড়া ঘরে পৌঁছার আমার কোন উপায় নাই, অতঃপর আপনার সাহায্য। আমি আপনার নিকট আল্লাহর নামে যিনি আপনাকে এই সুন্দর রং, এই সুন্দর চর্ম এবং এত সকল উট দান করিয়াছেন একটি উট ভিক্ষা চাহিতেছি যদ্বারা আমি আমার সফর হইতে ঘরে পৌঁছিতে পারি। (অথবা যাহাকে আমি আমার সফরে পাথেয় করিতে পারি।) সে উত্তর করিল, আমার অনেক দেয় রহিয়াছে। ফিরিশতা বলিলেন, মনে হয় যেন আমি তোমাকে চিনি। তুমি কি দরিদ্র কুষ্ঠী ছিলে না, যাহাতে লোক তোমায় ঘৃণা করিত। অতঃপর আল্লাহ্ তোমাকে ধন-সম্পদ দান করিয়াছেন ? তখন সে বলিল, (বল কি ?) এসকল মাল তো আমি বংশানুক্রমে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করিয়াছি। তখন ফেরেস্তা বলিলেন, যদি তুমি মিথ্যুক হও, তবে আল্লাহ্ তোমাকে তোমার সে অবস্থায় ফিরাইয়া নিন, যে অবস্থায় তুমি পূর্বে ছিলে।
হুযূর বলেন, অতঃপর ফিরিশতা আপন পূর্ণ অবয়বে টাকওয়ালার নিকট আসিলেন এবং তাহার নিকট জ্ঞাপন করিলেন যাহা ইহার নিকট জ্ঞাপন করিয়াছিলেন তাহার অনুরূপ এবং তাহার উত্তরে উত্তর করিলেন যাহা ইহার উত্তরে উত্তর করিয়াছিলেন তাহার অনুরূপ। অতঃপর বলিলেন, যদি তুমি মিথ্যুক হও, তবে আল্লাহ্ তোমাকে তোমার সে অবস্থায় ফিরাইয়া দিন, যে অবস্থায় তুমি পূর্বে ছিল।
হুযূর বলেন, (অবশেষে) ফিরিশতা আপন পূর্ব বেশে অন্ধ ব্যক্তির নিকট আসিয়া বলিলেন, আমি একজন দরিদ্র ও মুসাফির। সফরে আমার সামর্থ্য ফুরাইয়া গিয়াছে, এখন আল্লাহ্ ব্যতীত ঘরে পৌঁছার আমার কোন উপায় নাই, অতঃপর আপনার সাহায্য। আমি আল্লাহর নামে যিনি আপনাকে আপনার জ্যোতি ফিরাইয়া দিয়াছেন আপনার নিকট একটি ছাগল ভিক্ষা চাহি যদ্বারা আমি আমার সফর হইতে ঘরে পৌঁছিতে পারি (অথবা সফরে পাথেয় করিতে পারি)। তখন সে বলিল, সত্যই আমি অন্ধ ছিলাম। আল্লাহ্ আমাকে চক্ষু দান করিয়াছেন, তুমি যাহা ইচ্ছা গ্রহণ কর আর যাহা ইচ্ছা রাখিয়া যাও। খোদার কসম আল্লাহ্র নামে আজ তুমি যাহা নিতে চাহিবে, আমি অস্বীকার করিব না এবং তোমাকে কষ্টে নিক্ষেপ করিব না। তখন ফিরিশতা বলিলেন, তুমি তোমার মাল রাখিয়া দাও ! (আল্লাহর পক্ষ হইতে) তোমাদের পরীক্ষা করা হইল এবং তিনি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হইলেন আর তোমার সাথীদ্বয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট। — মোত্তাঃ
হুযূর (দঃ) বলেন, অতঃপর ফিরিশতা টাকওয়ালার নিকট আসিয়া বলিলেন, তোমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বস্তু কি? সে বলিল, উত্তম চুল এবং যাহার কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে তাহা আমা হইতে দূর হইয়া যাওয়া। হুযূর বলেন, ফিরিশতা তাহার মাথায় হাত বুলাইলেন, যাহাতে তাহার টাক দূর হইয়া গেল এবং তাহাকে উত্তম চুল দান করা হইল। অতঃপর ফিরিশতা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার নিকট কোন্ মাল অধিক প্রিয়? সে বলিল, গরু। সুতরাং তাহাকে একটি গর্ভবতী গাভী দান করা হইল এবং ফিরিশতা দোআ করিলেন, আল্লাহ্ যেন তোমার মালে বরকত দেন।
হুযূর বলেন, অতঃপর ফিরিশতা অন্ধ ব্যক্তির নিকট আসিয়া বলিলেন, তোমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বস্তু কি? সে উত্তর করিল, আল্লাহ্ যেন আমার চোখের জ্যোতি ফিরাইয়া দেন যাহাতে আমি লোকদিগকে দেখিতে পাই। হুযূর বলেন, ফিরিশতা তাহার চোখের উপর হাত ফিরাইলেন আর আল্লাহ্ তা'আলা তাহার জ্যোতি ফিরাইয়া দিলেন। অতঃপর ফিরিশতা জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার নিকট কোন্ মাল অধিক প্রিয়? সে বলিল, ছাগল ভেড়া। সুতরাং তাহাকে একটি আসন্ন প্রসবা ছাগল দেওয়া হইল। অতঃপর (সে দুই ব্যক্তির) উট, গরু বাচ্চা জন্ম দিল এবং ইহার ছাগল ছানা প্রসব করিল যাহাতে উহার এক মাঠ উট, ইহার এক মাঠ গরু আর এই ব্যক্তির এক মাঠ ছাগল ভেড়া হইয়া গেল ।
হুযূর বলেন, অতঃপর (পরীক্ষার জন্য) সেই ফিরিশতা আপন পূর্ব অবয়ব ও পূর্ব বেশে সেই শ্বেত-কুষ্ঠ রোগীর নিকট আসিয়া বলিলেন, আমি একজন দরিদ্র মিসকীন ব্যক্তি, সফরে আমার সমস্ত সামর্থ্য শেষ হইয়া গিয়াছে। এখন আল্লাহর মেহেরবানী ছাড়া ঘরে পৌঁছার আমার কোন উপায় নাই, অতঃপর আপনার সাহায্য। আমি আপনার নিকট আল্লাহর নামে যিনি আপনাকে এই সুন্দর রং, এই সুন্দর চর্ম এবং এত সকল উট দান করিয়াছেন একটি উট ভিক্ষা চাহিতেছি যদ্বারা আমি আমার সফর হইতে ঘরে পৌঁছিতে পারি। (অথবা যাহাকে আমি আমার সফরে পাথেয় করিতে পারি।) সে উত্তর করিল, আমার অনেক দেয় রহিয়াছে। ফিরিশতা বলিলেন, মনে হয় যেন আমি তোমাকে চিনি। তুমি কি দরিদ্র কুষ্ঠী ছিলে না, যাহাতে লোক তোমায় ঘৃণা করিত। অতঃপর আল্লাহ্ তোমাকে ধন-সম্পদ দান করিয়াছেন ? তখন সে বলিল, (বল কি ?) এসকল মাল তো আমি বংশানুক্রমে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করিয়াছি। তখন ফেরেস্তা বলিলেন, যদি তুমি মিথ্যুক হও, তবে আল্লাহ্ তোমাকে তোমার সে অবস্থায় ফিরাইয়া নিন, যে অবস্থায় তুমি পূর্বে ছিলে।
হুযূর বলেন, অতঃপর ফিরিশতা আপন পূর্ণ অবয়বে টাকওয়ালার নিকট আসিলেন এবং তাহার নিকট জ্ঞাপন করিলেন যাহা ইহার নিকট জ্ঞাপন করিয়াছিলেন তাহার অনুরূপ এবং তাহার উত্তরে উত্তর করিলেন যাহা ইহার উত্তরে উত্তর করিয়াছিলেন তাহার অনুরূপ। অতঃপর বলিলেন, যদি তুমি মিথ্যুক হও, তবে আল্লাহ্ তোমাকে তোমার সে অবস্থায় ফিরাইয়া দিন, যে অবস্থায় তুমি পূর্বে ছিল।
হুযূর বলেন, (অবশেষে) ফিরিশতা আপন পূর্ব বেশে অন্ধ ব্যক্তির নিকট আসিয়া বলিলেন, আমি একজন দরিদ্র ও মুসাফির। সফরে আমার সামর্থ্য ফুরাইয়া গিয়াছে, এখন আল্লাহ্ ব্যতীত ঘরে পৌঁছার আমার কোন উপায় নাই, অতঃপর আপনার সাহায্য। আমি আল্লাহর নামে যিনি আপনাকে আপনার জ্যোতি ফিরাইয়া দিয়াছেন আপনার নিকট একটি ছাগল ভিক্ষা চাহি যদ্বারা আমি আমার সফর হইতে ঘরে পৌঁছিতে পারি (অথবা সফরে পাথেয় করিতে পারি)। তখন সে বলিল, সত্যই আমি অন্ধ ছিলাম। আল্লাহ্ আমাকে চক্ষু দান করিয়াছেন, তুমি যাহা ইচ্ছা গ্রহণ কর আর যাহা ইচ্ছা রাখিয়া যাও। খোদার কসম আল্লাহ্র নামে আজ তুমি যাহা নিতে চাহিবে, আমি অস্বীকার করিব না এবং তোমাকে কষ্টে নিক্ষেপ করিব না। তখন ফিরিশতা বলিলেন, তুমি তোমার মাল রাখিয়া দাও ! (আল্লাহর পক্ষ হইতে) তোমাদের পরীক্ষা করা হইল এবং তিনি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হইলেন আর তোমার সাথীদ্বয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট। — মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৮৭৯

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৭৯। হযরত উম্মে বুজায়দ (রাঃ) বলেন, আমি বলিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! কখনও মিসকীন আমার দ্বারে দাঁড়ায় যাহাকে আমি লজ্জাবোধ করি অথচ আমার ঘরে এমন কিছু থাকে না যাহা আমি তাহার হাতে দিতে পারি। হুযূর (ﷺ) বলিলেনঃ তাহার হাতে দিতে চেষ্টা কর যদিও (গরু ছাগলের) একটা পোড়া খুরও হয় (অর্থাৎ, সামান্য জিনিসও হয়)। —আহমদ, আবু দাউদ ও তিরমিযী। তিরমিযী বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ্ ।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৮৮০

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৮০। হযরত ওসমান গনীর এক ভৃত্য হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, উম্মুল মু'মিনীন বিবি উম্মে সালামাকে কিছু গোত হাদিয়া দেওয়া হইয়াছিল। আর নবী করীম (ﷺ)-এর গোশত পছন্দ ছিল। অতএব, উম্মে সালামা আপন খাদেমাকে বলিলেন, উহা ঘরে রাখিয়া দাও! নবী করীম (ﷺ) উহা খাইতে পারেন। সুতরাং খাদেমা উহা ঘরের একটি তাকে রাখিয়া দিল। এ সময় একটি ভিক্ষুক আসিয়া দরজায় দাড়াইল এবং বলিল, আমাকে কিছু দিন! আল্লাহ্ আপনাদের বরকত দিবেন! ঘরওয়ালারা উত্তর দিলেন, আল্লাহ্ তোমাকে বরকত দিন! সুতরাং ভিক্ষুকটি চলিয়া গেল। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) ঘরে প্রবেশ করিলেন এবং বলিলেনঃ হে উম্মে সালামা! তোমাদের নিকট কিছু আছে যাহা আমি খাইতে পারি? উত্তরে উম্মে সালামা বলিলেন, হ্যাঁ, আছে। অতঃপর উম্মে সালামা আপন খাদেমাকে বলিলেন, যাও সেই গোগুলি হুযূর (ﷺ)-কে আনিয়া দাও। সুতরাং খাদেমা গেল; কিন্তু তাকে এক খণ্ড পাথর ছাড়া কিছুই পাইল না। দেখিয়া নবী করীম (ﷺ) বলিলেন, সেই গোশত খণ্ডই পাথর খণ্ড হইয়া গিয়াছে, যেহেতু তোমরা উহা ভিক্ষুককে দাও নাই। – বায়হাকী দালায়েলে নবুওতে

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৮৮১

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৮১। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) একদা বলিলেন, আমি কি তোমাদের বলিব না সর্বাপেক্ষা মন্দস্তরের ব্যক্তি কে? উত্তরে বলা হইল, হ্যাঁ, বলুন হুযূর। হুযূর বলিলেনঃ সে ব্যক্তি যাহার নিকট আল্লাহর নামে কিছু চাওয়া হয় আর সে তাঁহার নামে কিছু দেয় না। —আমদ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৮৮২

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৮২। হযরত আবু যর গেফারী (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, একদা তিনি খলীফা হযরত ওসমানের দরবারে প্রবেশ করিতে অনুমতি চাহিলেন। খলীফা তাঁহাকে অনুমতি দিলেন আর তিনি তথায় প্রবেশ করিলেন। তখন তাঁহার হাতে ছিল একটি ছড়ি। এ সময় হযরত ওসমান হযরত কা'বে আহবারকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আব্দুর রহমান মারা গিয়াছেন এবং অনেক ধন সম্পত্তি রাখিয়া গিয়াছেন, এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? কা'ব উত্তর করিলেন, যদি তিনি আল্লাহর (নির্ধারিত) হক আদায় করিয়া থাকেন, তাহা হইলে ইহাতে কোন ভয় নাই। ইহা শুনিয়া হযরত আবু যর ছড়ি উঠাইলেন এবং কা'বের গায়ে মারিলেন আর বলিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলিয়াছেনঃ যদি এই পাহাড় পরিমাণ সোনাও আমার হয় অতঃপর আমি উহা দান করিতে থাকি আর আমা হইতে উহা কবুলও করা হয়—তাহা হইলেও আমি পছন্দ করি না যে, উহার মাত্র ছয় উকিয়া সোনাও আমি ছাড়িয়া যাই (অর্থাৎ, আমি মনে করিব না যে, এত অর্থ যখন কবুল হইয়াছে এই সামান্য কিছু না হয় থাকুক)। হে ওসমান! আমি আপনাকে খোদার কসম দিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছি, আপনি কি উহা শুনেন নাই? তিনি ইহা তিনবার জিজ্ঞাসা করিলেন। হযরত ওসমান বলিলেন, হ্যাঁ। – আহমদ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৮৮৩

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৮৩। হযরত উকবা ইবনে হারেস (রাঃ) বলেন, একদা আমি মদীনায় নবী করীম (ﷺ)-এর পিছনে আসরের নামায পড়িলাম। (দেখিলাম,) তিনি সালাম ফিরাইলেন অতঃপর তাড়াতাড়ি উঠিয়া দাঁড়াইলেন এবং মানুষের ঘাড় ডিঙ্গাইয়া তাঁহার কোন এক বিবির হুজার দিকে গেলেন। তাঁহার এই তাড়াতাড়ি প্রস্থানে লোকগণ বিস্মিত হইল। অতঃপর তিনি তাহাদের নিকট আসিলেন এবং দেখিলেন যে, তাঁহার এত তাড়াতাড়ি যাওয়ার কারণে তাহারা বিস্মিত হইয়াছেন। তখন হুযূর বলিলেনঃ আমাদের ঘরে কিছু স্বর্ণ আছে, যাহার কথা এখন আমার মনে পড়িল। আমি নাপছন্দ করিলাম যে, ইহা (আমার নিকট থাকিবে এবং) আমাকে (আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ হইতে) বাধা দিবে। তাই আমি উহা বন্টন করিয়া দিতে বলিয়া আসিলাম। বুখারী। তাঁহার অন্য বর্ণনায় আছে, হুযূর বলিলেনঃ আমি ঘরে কিছু যাকাতের স্বর্ণ রাখিয়া আসিয়াছিলাম; কিন্তু আমি নাপছন্দ করিলাম যে, রাতে উহা আমার নিকট রাখি।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৮৮৪

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৮৪। হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর শেষ রোগে আমার নিকট তাঁহার ছয় কি সাতটি দীনার ছিল। এবং উহা বন্টন করিয়া দেওয়ার জন্য তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়াছিলেন; কিন্তু নবী (ﷺ)-এর রোগ আমাকে উহা বন্টন করা হইতে বিরত রাখিয়াছিল। অতঃপর তিনি আমাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলেন এবং বলিলেনঃ সেই ছয় বা সাতটি দীনারের কি হইল ? আয়েশা বলিলেন, বন্টন করা হয় নাই। খোদার কসম! আপনার রোগই আমাকে উহা হইতে বিরত রাখিয়াছে। ইহা শুনিয়া হুযূর উহা আনাইয়া লইলেন, অতঃপর উহা নিজের পবিত্র হাতে রাখিয়া বলিলেন, বল দেখি। আল্লাহর নবীর কি অবস্থা হইবে, যদি তিনি এখন আল্লাহর সহিত সাক্ষাৎ করেন (অর্থাৎ, মৃত্যুবরণ করেন) আর তাঁহার নিকট দীনারগুলি থাকিয়া যায়। —আহমদ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৮৮৫

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৮৫। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (ﷺ) একদিন বেলালের নিকট পৌঁছিলেন, তখন তাহার নিকট খেজুরের একটি স্তূপ ছিল। হুযূর তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, বেলাল! এটি কি? বেলাল বলিলেন, সামান্য জিনিস, আগামী দিনের জন্য সঞ্চয় করিয়াছি। হুযূর বলিলেনঃ তুমি কি ভয় কর না যে, কাল কিয়ামতের দিন দোযখের আগুনে তুমি ইহার ধোয়া দেখিতে পাইবে ? বেলাল, ইহা দান করিয়া ফেল এবং আরশের মালিকের পক্ষ হইতে তোমাকে অভাবগ্রস্ত করিয়া দেওয়ার ভয় করিও না।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৮৮৬

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৮৬। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ দানশীলতা বেহেশতের একটি বৃক্ষস্বরূপ। যে ব্যক্তি দানশীল সে যেন উহার একটি শাখা ধরিয়াছে আর শাখা তাহাকে ছাড়িবে না, যে পর্যন্ত না তাহাকে বেহেশতে পৌঁছাইয়া দেয়। এবং কৃপণতা হইতেছে দোযখের একটি বৃক্ষ। যে ব্যক্তি কৃপণ সে যেন উহার একটি শাখা ধরিয়াছে আর শাখা তাহাকে ছাড়িবে না, যে পর্যন্ত না তাহাকে দোযখে পৌঁছাইয়া দেয়। —বায়হাকী এই হাদীস দুইটি শোআবুল ঈমানে বর্ণনা করিয়াছেন ।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৮৮৭

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৮৭। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ তোমরা দানের ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করিবে। কেননা, বিপদাপদ উহাকে অতিক্রম করিতে পারে না। (অর্থাৎ, দানে বিপদ দূরীভূত হয়।) —রযীন

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৮৮৯

পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা
১৮৮৯। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ দান ধন কমায় না, ক্ষমা দ্বারা আল্লাহ্ কোন বন্দার সম্মান বৃদ্ধি ছাড়া হ্রাস করেন না এবং যে কেহ আল্লাহর ওয়াস্তে বিনয় প্রকাশ করে, আল্লাহ্ তাহাকে উন্নত করেন। —মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ১৮৯০

পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা
১৮৯০। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি কোন জিনিসের এক জোড়া আল্লাহর রাস্তায় দান করিবে, তাহাকে (কিয়ামতের দিন) বেহেশতের সকল দরজা হইতে আহ্বান করা হইবে অথচ বেহেশতের দরজা রহিয়াছে অনেক (আট); সুতরাং যে ব্যক্তি নামাযীদের অন্তর্গত হইবে, তাহাকে নামাযের দরজা হইতে আহবান করা হইবে। যে ব্যক্তি মুজাহিদদের অন্তর্গত হইবে, তাহাকে জেহাদের দরজা হইতে আহ্বান করা হইবে এবং যে দাতাদের অন্তর্গত হইবে, তাহাকে দানের দরজা হইতে আহ্বান করা হইবে, আর যে ব্যক্তি রোযাদারদের অন্তর্গত হইবে, তাহাকে রাইয়ান (তৃপ্তি) দরজা হইতে আহ্বান করা হইবে। ইহা শুনিয়া হযরত আবু বকর (রাঃ) বলিলেন, যে (ভাগ্যবান) ব্যক্তিকে বেহেশতের দিকে আহ্বান করা হইবে, তাহার পক্ষে সকল দরজা হইতে আহুত হওয়ার কোন আবশ্যকতা নাই (এক দরজা হইতে আহুত হওয়াই যথেষ্ট। তবে কি কেহ সকল দরজা হইতে আহুত হইবে? হুযুর (ছাঃ) বলিলেনঃ হ্যাঁ, আর আমি আশা করি, আপনি তাহাদের মধ্যে একজন হইবেন। — মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান