প্রবন্ধ
মোয়াশারা বা সহঅবস্থানের নীতি, আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার ইসলামী শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। খাঁটি মুসলমান হওয়ার জন্য ইসলামী মোয়াশারার অনুসরণ অনুকরণ একান্ত অপরিহার্য। সহঅবস্থানের ক্ষেত্রে পারস্পরিক আচার ব্যবহারের যে রীতিনীতি ও সংস্কৃতি ইসলাম শিক্ষা দেয়, তাকেই ‘আদাবে মোয়াশারা’ বলে। যেমন মাতা-পিতার সঙ্গে সন্তানের আচরণ কেমন হবে, সন্তানের প্রতি পিতামাতার ব্যবহার কী রকম হবে এক ভাই অপর ভায়ের সঙ্গে কীভাবে চলবে, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে কেমন সুনীতি অনুযায়ী জীবন যাপন করবে, ছোট বড়র সাথে, বড় ছোটর সাথে কী আদব মেনে চলবে, ধনী গরীবের সঙ্গে, গরীব ধনীর সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবে, মালিকের প্রতি শ্রমিকের, শ্রমিকের প্রতি মালিকের অধিকার ও দায়িত্ব কী হবে ইত্যাদি।
মোটকথা দুনিয়াতে চলতে গিয়ে যত স্তরের মানুষের সঙ্গে আমাদের উঠাবসা হয়, তাদের সকলের সঙ্গে শানিতপূর্ণ সহঅবস্থানের যে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা এবং উজ্জ্বল নির্দেশনা ইসলাম দান করেছে, তা এক কথায় অতুলনীয়। এই পাঠে তার কিছু বিবরণ আমরা তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।
১. মা বাবার হক
এ পৃথিবীতে প্রথম সম্পর্ক এবং সবচে গভীর ও মজবুত সম্পর্ক মাতা-পিতার সঙ্গে। ইসলাম ধর্মে সৃষ্টিকর্তার পরই পিতামাতার হক সবচেয়ে বড়। কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক বলেন,
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا. وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
আর আপনার পালনকর্তা এ বিধান স্থির করেছেন যে, তোমরা কেবলি এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং মাতাপিতার সঙ্গে নম্র ব্যবহার করবে, তাদের দুজনের কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার সামনে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের কোনো আচরণে বিরক্ত হয়ে উহ্ শব্দটিও করবে না, ধমকের সুরে কোন কথা বলবে না, বরং তাদের সঙ্গে সম্মানজনক ভাষায় কথা বলবে। আর বুকভরা দয়া ও ভালোবাসা নিয়ে বিনয় বিগলিত সহজ আচরণের ডানা তাদের পদতলে বিছিয়ে দেবে এবং অন্তর থেকে দুআ করবে, হে আমার পালনকর্তা মালিক! শৈশবে যেমন মা-বাবা আমাকে লালনপালন করেছেন, তুমিও আজ তোমার রহমতের কোলে তাদের প্রতিপালন করো। সূরা বনি ইসরাঈল ১৭/২৩-২৪
অন্যত্র আল্লাহপাক বলেন,
وَإِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
তোমার পিতামাতা যদি অজ্ঞতাবশত তোমাকে কুফর-শিরকে লিপ্ত হতে চাপ প্রয়োগ করে তাহলে তো তাদের কথা তুমি ধরবে না। তবে হ্যাঁ, দুনিয়াতে তাদের খোঁজ খবর রাখবে এবং তাদের সেবা করে যাবে। সূরা আনকাবুত ২৯/৮
হাদীস শরীফেও মাতাপিতার কথা মান্য করা এবং তাদের খেদমত করার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, তাদের মনে কষ্ট দেওয়া ও তাদের অবাধ্য হওয়াকে কঠিন গোনাহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এক হাদীসে এসেছে,
رِضَى الرَّبِّ فِي رِضَى الوَالِدِ، وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ.
পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মাঝে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি নিহিত। আর তাদের অসন্তুষ্টির ভিতর আল্লাহ তাআলার গজব লুকায়িত। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ১৮৯৯
অন্য এক হাদীসে এসেছে,
أَنَّ رَجُلاً قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا؟ قَالَ: هُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ. قال البوصري: هذا إسناد ضعيف
এক ব্যক্তি নবীজীর কাছে জানতে চাইলো, সন্তানের উপর মাতা-পিতার কী হক রয়েছে? নবীজী এরশাদ করলেন, মা-বাবা হলো সন্তানের জান্নাত কিংবা জাহান্নাম অর্থাৎ তাদের সেবা করে সন্তান জান্নাত অর্জন করতে পারে, আবার তাদেরকে কষ্ট দিয়ে জাহান্নামীও হতে পারে। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩৬৬২
আরেক হাদীসে নবীজী বলেন,
مَا مِنْ وَلَدٍ بَارٍّ يَنْظُرُ نَظْرَةَ رَحْمَةٍ إِلَّا كَتَبَ اللهُ بِكُلِّ نَظْرَةٍ حَجَّةً مَبْرُورَةً، قَالُوا: وَإِنْ نَظَرَ كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، اللهُ أَكْبَرُ وَأَطْيَبُ. إسناده ضعيف جدا. (وقد جاء في رواية: إِذَا نَظَرَ الْوَالِدُ إِلَى وَلَدِهِ فَسَرَّهُ كَانَ لِلْوَلَدِ عِتْقُ نَسَمَةٍ. قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ فَإِنْ نَظَرَ ثَلَاثَمِائَةٍ وَسِتِّينَ نَظْرَةً قَالَ: اللهُ أَكْثَرُ. إسناده حسن)
পিতা-মাতার সন্তোষভাজন সন্তান যতবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে মাতা-পিতার দিকে তাকাবে, প্রতিবারের বিনিময়ে আল্লাহ পাক তাকে একটি করে কবুল হজ্বের সওয়াব দান করবেন। সাহাবীরা আরজ করলেন, সন্তান যদি প্রতিদিন শতবার তাকায়, তবু কি প্রতিবারের বদলে সে একেকটি কবুল হজ্বের সওয়াব পেতে থাকবে? নবীজী বললেন, হ্যাঁ তাই পাবে। আল্লাহ তো অনেক বড়! যাকে যত চান দিতে পারেন। তার ভা-ারে কোনো ক্ষয় নেই। তিনি ক্ষয় থেকে পবিত্র। শুআবুল ঈমান, হাদীস নং ৭৪৭২ (৭৪৭৩)
প্রসিদ্ধ হাদীসে আছে,
الكَبَائِرُ: الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَاليَمِينُ الغَمُوسُ
সবচেয়ে বড় গোনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য ও কসম দেওয়া। সহীহ বোখারী, হাদীস নং ৬৬৭৫
অন্য হাদীসে নবীজী বলেন,
ثَلَاثَةٌ لَا يَنْظُرُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ
কেয়ামতের দিন তিন প্রকার লোক আল্লাহ পাকের রহমতের দৃষ্টি লাভ করতে পারবে না, তার এক প্রকার হলো পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান। সুনানে নাসাঈ, হাদীস নং ২৫৬২
২. সন্তানের হক ও অধিকার
সন্তানের উপর পিতামাতার যেমন আল্লাহ প্রদত্ত কিছু অধিকার রয়েছে, তেমনি মা-বাবার উপরও সন্তানের কিছু মানবিক প্রাপ্য ও অধিকার রয়েছে। সন্তানের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ইত্যাদি মৌলিক প্রয়োজন পুরণের দায়িত্ব মা-বাবার উপর। এটা এখানে তেমন ভেঙ্গে বলার প্রয়োজন নেই, কারণ এই দায়িত্ববোধ সকল পিতামাতার স্বভাব ও প্রকৃতির মাঝে নিহিত। ফলে সন্তানের এই হকগুলি আদায়ের বিষয়ে কম আর বেশ সবাই সচেতন। কিন্তু যে হক আদায়ের ব্যাপারে ব্যাপক অসচেতনতা লক্ষ্য করা যায়, তা হলো সন্তানের ধর্মীয় শিক্ষা এবং চারিত্রিক দীক্ষা লাভের হক ও অধিকার।
সন্তান ও পরিবার পরিজনের দেখভাল তো এমনভাবে করা উচিৎ, যাতে তারা বখাটে হয়ে না যায়, মৃত্যুর পর জাহান্নামী হয়ে না যায়। এটা পিতা-মাতার উপর ফরজ দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
হে ঈমানদার বান্দা! জাহান্নাম থেকে নিজেকে এবং আপন পরিবার-পরিজনকে বাঁচানোর চেষ্টা করো। সূরা তাহরীম ৬৬/৬
সঠিক শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যমে সন্তানকে সুশীল, আদর্শবান ও ধর্মপ্রিয়রূপে গড়ে তোলার বিষয়ে নবীজী এরশাদ করেন,
مَا نَحَلَ وَالِدٌ وَلَدًا مِنْ نَحْلٍ أَفْضَلَ مِنْ أَدَبٍ حَسَنٍ. قال المباركفورى: هذا عندي حسن مرسل
সুশিক্ষায় শিক্ষিত ও মার্জিত করে গড়ে তোলার চেয়ে বড় কোনো দান বা উপহার মাতা-পিতার পক্ষ থেকে সন্তানের জন্য হতে পারে না। সুনানে তিরমিযী ২/১৬
অনেকে মেয়ে সন্তানদের লালন-পালন ও শিক্ষা-দীক্ষার বিষয়ে উদাসীন থাকে, মেয়েদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করে। কিন্তু ছেলেদের বিষয়ে ঠিক এর উল্টো। এমন দ্বিমুখী আচরণ খুবই দুঃখজনক এবং লজ্জাস্কর। এজন্যই হাদীস শরীফে কন্যা সন্তানের যতœ নেয়ার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে,
مَنْ عَالَ ثَلَاثَ بَنَاتٍ، فَأَدَّبَهُنَّ، وَزَوَّجَهُنَّ، وَأَحْسَنَ إِلَيْهِنَّ، فَلَهُ الْجَنَّةُ
যার তিনটি (অথবা দুইটি এমনকি একটি) কন্যাসন্তান আছে, সে যদি তাদেরকে যথাযথভাবে প্রতিপালন করে বড় করে তোলে, আদব-কায়দা শিক্ষা দেয় এবং তাদেরকে উপযুক্ত পাত্র যোগাড় করে দেয়, তাদের প্রতি সদাচরণ করে, তবে নিশ্চিত যে, এর বিনিময়ে আল্লাহ পাক তাকে জান্নাত দান করবেন। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১৪৭
৩. স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক হকসমূহ
মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের মাঝে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অতিগুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য সম্পর্ক। সুতরাং এ ব্যাপারেও ইসলামের সুষ্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনাগুলোর সারমর্ম হচ্ছে, একজন স্ত্রী তার স্বামীর আনুগত্য এবং কল্যাণকামিতার ব্যাপারে পূর্ণ সচেতন থাকবে। আল্লাহ পাক বলেন,
فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ
সতী নারী আনুগত্যশীল হয় এবং অনুপস্থিত স্বামীর আমানতের ব্যাপারে হেফাযতকারী হয়ে থাকে। সূরা নিসা ৪/৩৪
আর স্বামী তার স্ত্রীকে মন উজাড় করে ভালোবাসবে, সামর্থ অনুযায়ী ভালো খাওয়াবে, ভালো পরাবে এবং তার মন রক্ষা করে চলবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদ্ভাবে আন্তরিকতাপূর্ণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত হও। সূরা নিসা ৪/১৯
নবীজী স্বীমী-স্ত্রীর প্রতি একে অপরকে সন্তুুষ্ট রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বহু হাদীস বয়ান করেছেন। এক হাদীসে নবীজী বলেন,
خِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ.
তোমাদের মাঝে ভালো সে-ই, যে তার স্ত্রীর কাছে ভালো। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৯৭৮
বিদায় হজ্জের ভাষণে লাখো মানুষের সামনে নবীজী বলেন,
فَاتَّقُوا اللهَ فِي النِّسَاءِ
নারীদের প্রতি হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে তোমরা আল্লাকে ভয় করো। (আমি তোমাদেরকে নারীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করার অসিয়ত করছি। তোমরা আমার এই অন্তিম নসীহত ভুলে যেও না।) সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮
একটি হাদীসে নবীজী বলেন,
إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَأَلْطَفُهُمْ بِأَهْلِهِ.
মুসলমানদের মাঝে পূর্ণাঙ্গ মুমিন সে, যার চরিত্র ভালো এবং ঘরের স্ত্রীর সঙ্গে যে সবচে বেশি কোমল ও মুহাব্বতপূর্ণ আচরণ করে। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২৬১২
অপর দিকে নারীদের লক্ষ্য করে নবীজী বলেন,
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا تُؤَدِّي الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّيَ حَقَّ زَوْجِهَا
কসম ঐ আল্লাহর, যার হাতে আমার প্রাণ! নারী ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ পাকের হক আদায়কারী বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ না সে তার স্বামীর ন্যায়ানুগ হকগুলি আদায় করবে। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৮৫৩
অন্য হাদিসে নবীজী এরশাদ করেন,
إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا لَعَنَتْهَا المَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ
স্বামী যদি তার স্ত্রীকে প্রেমের শয্যায় আহ্বান করে কিন্তু অকারণে সেই স্ত্রী তার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, তবে রাতভর ফেরেশতারা ঐ নারীর উপর অভিশাপ দিতে থাকে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২৩৭
আরেক হাদীসে নবীজী বলেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ مَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَنْهَا رَاضٍ دَخَلَتِ الجَنَّةَ.
যে নারী প্রিয় স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে মৃত্যু বরণ করে, সে নারী সোজা গিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করে। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ১১৬
৪. আত্মীয়-স্বজনের হক
মা-বাবা, সন্তান-সন্ততি এবং স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও সাধারণ আত্মীয়দের সঙ্গে একটি বিশেষ সম্পর্ক বিরাজমান থাকে। এই সম্পর্ক রক্ষা করার উপরও ইসলামে সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কোরআন শরীফে বিভিন্ন জায়াগায় ‘যাবিল কুরবা’ বলে আত্মীয়তা বজায় রাখার আদেশ দেয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি আত্মীয়তা রক্ষা করে না, হাদীস শরীফে তাকে জঘণ্য অপরাধী এবং মহাপাপী সাব্যস্ত করা হয়েছে। নবীজী বলেন,
لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ قَاطِعٌ
যে ব্যক্তি আত্মীয়তার হক পদদলিত করে, তাদের হকের কোনো রেয়াত করে না, সে জান্নাতে যেতে পারবে না। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৮৪
আত্মীয়তা রক্ষার ব্যাপারে নবীজীর একটি বিশেষ শিক্ষা এই যে, কেউ যদি তোমার সঙ্গে আত্মীয়তা ছিন্নও করে, তোমার হক আদায় নাও করে, তবু তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে না, বরং তার হক তুমি আদায় করে যাবে ।
হাদীসে এসেছে,
صِلْ مَنْ قَطَعَكَ، وَأَعْطِ مَنْ حَرَمَكَ
তোমাদের কোনো নিকটজন যদি তোমার সঙ্গে সস্পর্ক ছিন্ন করে এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করে, আত্মীয়তার দাবি পূরণ না করে, তোমাকে বঞ্চিত করে, তাহলে তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করো না; বরং আত্মীয়তার হক আদায় করতে থাকো, ভদ্রতা বজায় রাখো। মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৭৪৫২
৫. ছোট ও বড়র পারস্পরিক হকসমূহ
ইসলামের একটি সাধারণ নীতি এই যে, সম্পর্কের সকল ধারায় সকল ছোট ঐ ধারার অপেক্ষাকৃত সকল বড়র প্রতি সশ্রদ্ধ আচরণ করবে। এমনিভাবে সকল ধারার বড়জন ঐ ধারার অপেক্ষাকৃত ছোটজনের প্রতি সস্নেহ আচরণ করবে। ছোটজন আদব-লেহাজ বজায় চলবে, বড়জন সব সময় ¯েœহময় থাকবে। সম্পর্কের ভিত্তি আত্মীয়তা হোক আর যাই হোক সকলে এই রীতি পালন করে যাবে। এই রীতি মেনে চলার গুরুত্ব এত বেশী যে, নবীজী ইরশাদ করেন,
مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا، وَيَعْرِفْ حَقَّ كَبِيرِنَا فَلَيْسَ مِنَّا
যে বড় ছোটকে স্নেহ করে না আর যে ছোট বড়কে শ্রদ্ধা করে না, তার হক বুঝে না, সে নীতিগতভাবে আমাদের দলভূক্ত না। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯৪৩
এক হাদীসে এসেছে,
مَا أَكْرَمَ شَابٌّ شَيْخًا لِسِنِّهِ إِلاَّ قَيَّضَ اللَّهُ لَهُ مَنْ يُكْرِمُهُ عِنْدَ سِنِّهِ. هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
যে যুবক কোনো বৃদ্ধকে শুধু বয়সের প্রতি লক্ষ্য করেই শ্রদ্ধা করবে, আল্লাহ তাআলা ঐ যুবকের জন্যও বৃদ্ধবয়সে তাকে শ্রদ্ধা করার মতো যুবকদল প্রস্তুত করে দেবেন। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২০২২
৬. প্রতিবেশীর হক
আত্মীয়স্বজন ছাড়াও পাড়াপড়শির সঙ্গে মানুষের বিশেষ বন্ধন গড়ে উঠে। এই বন্ধন রক্ষা করার উপরও ইসলামের পৃথক নির্দেশনা রয়েছে। কোরআন মাজীদে যেখানে মা-বাবা, পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের কথা এসেছে, সেখানে বিশেষ প্রাসঙ্গিকতার সাথে প্রতিবেশীর কথাও এসেছে। আল্লাহ পাক বলেন,
وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ
সূরা নিসা, ৪/৩৬। এই আয়াতে তিন প্রকার পড়শির কথা বলা হয়েছে এবং সবার সঙ্গে সদাচণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে,
এক. যারা আত্মীয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়শিও,
দুই. আত্মীয় নয়, তবে একসঙ্গে বসবাসকারী প্রতিবেশী,
তিন. জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে কিছু সময় বা কিছু দিন যাদের সঙ্গ গ্রহণ করতে হয়। যেমন সফর সঙ্গী, সহপাঠী, সহকর্মী, কর্মচারী ইত্যাদি। এদের মাঝে অমুসলিমও হতে পারে। হাদীস শরীফে নবীজী এরশাদ করেন,
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ
যার ভিতর আল্লাহ ও আখেরাতের বিশ্বাস আছে, সে যেন কোনো প্রকার প্রতিবেশীকে কোনো কষ্ট না দেয়। সহীহ বোখারী, হাদীস নং ৬০১৮
অন্য হাদীসে এসেছে,
لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالَّذِي يَشْبَعُ، وَجَارُهُ جَائِعٌ. رِجَالُهُ ثِقَاتٌ.
সেতো মুসলমানই নয়, যে তৃপ্তি ভরে খায় অথচ পাশে তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত রয়ে যায়। মুজামে কাবীর, হাদীস নং ১২৭৪১
একবার নবীজী বড় জালাল ও ত্যাজের সঙ্গে বললেন,
وَاللَّهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللَّهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللَّهِ لاَ يُؤْمِنُ. قِيلَ: وَمَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: الَّذِي لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَايِقَهُ
কসম খোদার! ঐ ব্যাক্তি মুমিন নয়, আল্লাহর কসম! সেই লোক কামেল মুমিন নয় এবং খোদার কসম সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন নয়! বলা হলো, হে রাসুল! কে সেই ব্যক্তি? ইরশাদ করলেন, সেই ব্যক্তি মুমিন নয়, যার দুষ্কৃতি থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০১৬
অন্য হাদীসে বলেন,
لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ
সে ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার পড়শি নিরাপদ হতে পারে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬
অপর এক হাদীসে এসেছে,
قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ فُلَانَةَ يُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلَاتِهَا، وَصِيَامِهَا، وَصَدَقَتِهَا، غَيْرَ أَنَّهَا تُؤْذِي جِيرَانَهَا بِلِسَانِهَا، قَالَ: هِيَ فِي النَّارِ، قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، فَإِنَّ فُلَانَةَ يُذْكَرُ مِنْ قِلَّةِ صِيَامِهَا، وَصَدَقَتِهَا، وَصَلَاتِهَا، وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنَ الْأَقِطِ، وَلَا تُؤْذِي جِيرَانَهَا بِلِسَانِهَا، قَالَ: هِيَ فِي الْجَنَّةِ. إسناده حسن
এক সাহাবী আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! লোকে বলে, অমুক মেয়েলোক বড় নামাযী ও রোযাদার এবং খুবই দানশীল। আবার মুখের কথায় সে প্রতীবেশীকে কষ্টও দেয়। নবীজী বললেন, এই মহিলা দোযখের শাস্তি ভোগ করবে। সাহাবী পুনরায় আরজ করলেন, আরেক মহিলা সম্পর্কে শোনা যায়, নফল রোযা-নামায, দান-খয়রাত সে তত করে না, কিন্তু নিজের যবানে আশাপাশের কাউকে কষ্টও দেয় না। নবীজী এরশাদ করলেন, এই মহিলা জান্নাতে প্রবেশ করবে। মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯৬৭৫
৭. অভাবী ও দুর্বল মানুষের হক
উপরে যাদের আলোচনা করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে আমাদের আত্মীয়তা রয়েছে কিংবা জীবনের প্রয়োজনে আমাদেরকে তাদের মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু সমাজের ঐ সকল দুর্বল ও অভাবী মানুষ, আমাদের জীবনে যাদের প্রসঙ্গ তেমন একটা আসে না, ইসলাম তাদেরও কিছু হক আমাদের উপর নির্ধারণ করেছে। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা সমাজের এই পিছিয়ে পড়া মানুষদের খোঁজ-খবর নেবে, জানমাল নিয়ে সমাজ-সেবায় আত্মনিয়োগ করবে, নিজের টাকাকড়ি ও সহায় সম্পত্তিতে গরীবের হক আছে বলে বিশ্বাস করবে।
কোরআন শরীফের বহু জায়গায় এতিম-গরিব, মিসকিন-মোসাফির এবং সমাজের অন্যান্য অবহেলিত, অনাথ-অসহায় মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করার কথা বর্ণিত হয়েছে। ক্ষুধার্তকে অন্নদান ও বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দানের কথা এসেছে। এক হাদীসে নবীজী তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন,
أَنَا وَكَافِلُ اليَتِيمِ فِي الجَنَّةِ هَكَذَا وَقَالَ بِإِصْبَعَيْهِ السَّبَّابَةِ وَالوُسْطَى
যে ব্যক্তি কোন পিতৃহীন-এতিম শিশুর দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নেবে, কেয়ামতের দিন এদুটি আঙ্গুলের মতো সে আমার কাছাকাছি থাকবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০০৫
অন্য হাদীসে নবীজী বলেন,
السَّاعِي عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالمِسْكِينِ كَالْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، أَوْ: كَالَّذِي يَصُومُ النَّهَارَ وَيَقُومُ اللَّيْلَ
বিধবা-গরীব এবং অসহায়-নিরীহ মানুষের প্রয়োজনে যারা দৌড়ঝাপ করে, বিপদেআপদে তাদের পাশে দাড়ায়, তারা ধর্মযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীর সমান মর্যাদা লাভ করে এবং যে ব্যক্তি দিনে রোযা রাখে আর রাতভর নফল নামায পড়ে, তার সমান সওয়াব প্রাপ্ত হয়। বুখারী, হাদীস নং ৬০০৬
একটি হাদীসে নবীজী আদেশ করে বলেন,
فُكُّوا العَانِيَ، يَعْنِي: الأَسِيرَ، وَأَطْعِمُوا الجَائِعَ، وَعُودُوا المَرِيضَ
বন্দি ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে আনো, ভূখাকে খাবার দাও, রুগণ ব্যক্তির খবর নাও। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৪৬
উক্ত হাদীসগুলিতে মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে কোন পার্থক্য টানা হয়নি। বরং নবীজী তো পশুপাখির প্রতিও রহমদিল হওয়ার জোর নির্দেশ দিয়েছেন। বোবা প্রাণীর প্রতি সদয় ব্যক্তিকে আল্লাহ পাকের রহমত লাভের সুসংবাদ শুনিয়েছেন। আসলেই ইসলাম সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত স্বরূপ। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত জগতের জন্য শান্তির অগ্রদূত। কিন্তু আমরা মুসলমানরা নবীজীর শিক্ষা থেকে দূরে সরে পড়েছি। হায়! আমরাও যদি সত্যিকারের মুসলমান হতাম! নবীজীর ন্যায় জগদ্বাসীর জন্য শান্তির বার্তাবাহী হতে পারতাম!
৮. এক মুসলমানের উপর অন্য মুসলমানের হক
আত্মীয়তা, প্রতিবেশিত্ব এবং সবার উপর সবার যে মানবিক হকসমুহ রয়েছে তার বাইরে এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের কিছু ধর্মীয় অধিকার রয়েছে। নবীজী ইরশাদ করেন,
المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِمِ، لاَ يَظْلِمُهُ، وَلاَ يُسْلِمُهُ، وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ، كَانَ اللهُ فِي حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً، فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ القِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا، سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ.
প্রত্যেক মুসলমান পরস্পরে ভাই ভাই। কেউ কারো উপর কোনো প্রকার জুলুম করবে না, কেউ জুলুমের শিকার হলে তাকে একা ফেলে কেটে পড়বে না (বরং যথাসম্ভব সাহায্য করবে)। তোমাদের যেজন তার ভায়ের প্রয়োজনে আত্মনিয়োগ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পুরনের দায়িত্ব নেবেন। যে তার ভায়ের কোন সংকট নিরসণের চেষ্টা করবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তার সংকট বিদূরণে এগিয়ে আসবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষক্রটি গোপন করবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলাও তার গোনাহখাতা ঢেকে ফেলবেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৪২
একটি হাদীসে নবীজী বলেন,
لاَ تَبَاغَضُوا، وَلاَ تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا، وَلاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ
তোমরা একে অন্যের ব্যাপারে শক্রতা পোষণ কোরো না, মনে হিংসা লালন করো না। দোষচর্চা করে মনোমালিন্য সৃষ্টি করো না, বরং তোমরা আল্লাহ তাআলার দাস ও গোলামের সারিতে ভাই-ভাই হয়ে থাকো। তোমাদের কারো জন্য অন্যের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সালাম-কালাম বর্জন করার অনুমতি নেই। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৬৫
অন্য হাদীসে এসেছে,
كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ، دَمُهُ، وَمَالُهُ، وَعِرْضُهُ
এক মুসলমানের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রু (-তে হস্তক্ষেপ) অন্য মুসলমানের জন্য সম্পূর্ণ হারাম। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৬৪
সহ-অবস্থানের আদব ও হকসমুহের বিষয়ে সর্ব শেষ একটি হাদীস উল্লেখ করছি, যা শুনলেও শরীরে কাঁপুনি এসে যায়। নবীজী সাহাবায়ে কেরামকে সম্বোধন করে বললেন,
أَتَدْرُونَ مَنِ الْمُفْلِسُ؟ قَالُوا: الْمُفْلِسُ فِينَا يَا رَسُولَ اللهِ مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ وَلاَ مَتَاعَ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْمُفْلِسُ مِنْ أُمَّتِي مَنْ يَأْتِي يَوْمَ القِيَامَةِ بِصَلاَتِهِ وَصِيَامِهِ وَزَكَاتِهِ، وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا، وَضَرَبَ هَذَا فَيَقْعُدُ فَ يَقْتَصُّ هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْتَصّ مَا عَلَيْهِ مِنَ الخَطَايَا أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ.
বলো দেখি, একেবারে নিঃস্বম্বল কে? সাহাবীরা বললেন, হে রাসুল! যার টাকা-পয়সা নেই, সে হলো নিঃস্বম্বল ফকির। নবীজী ইরশাদ করলেন, না না। আমাদের মাঝে প্রকৃত সর্বহারা সে, যে কেয়ামতের ময়দানে নামায-রোযা ও দান-খয়রাতের ভা-ার নিয়ে উঠবে। কিন্তু ঘটনা এই হবে যে, দুনিয়াতে সে কাউকে গালি দিয়েছিলো, কাউকে অপবাদ দিয়েছিলো, কাউকে অহেতুক মারধর করেছিলো, কারো মাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করেছিলো। তার হিসাবের সময়, তার বাদীরা এসে উপস্থিত হবে। তখন ঐ ব্যক্তির নেকী হতে এদেরকে হক অনুযায়ী দিয়ে দেয়া হবে। এক পর্যায়ে তার সব নেকী ফুরিয়ে যাবে। এরপর হকদারদের গোনাহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সুনানে তিরমিযি, হাদীস নং ২৪১৮
আমার ভাই ও বোন!
একটু ভেবে দেখুন, হাদীসটির বিষয়বস্তু নিয়ে একটু চিন্তা করুন, কারো হক নষ্ট করা, কাউকে গালমন্দ করা, কারো দোষচর্চা করা কত বড় সর্বনাশের কারণ!
হে মানুষ!
তোমার কাছে যদি কারো পাওনা থাকে, তবে দুনিয়াতে তার হিসাব চুকে ফেলো, বদলা দিয়ে দাও, মাফ করিয়ে নাও। সামনের জন্য সতর্ক হও। অন্যথায় আখেরাতে বড় করুণ হবে তোমার পরিণতি। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে হেফাজত করুন, আমীন!
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
অধীনস্তদের অধিকার ও বর্তমান সমাজ
আল-কুরআনুল কারীমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন, 'তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্...
মুজাহাদা কেন করবেন? কীভাবে করবেন?
আল্লাহ তাআলা জাহান্নামে যাওয়ার উপকরণসমূহকে মানুষের সামনে লোভনীয় করে দিয়েছেন। যে কারণে মানুষের মন সর্...
اُسوہٴ حسنہ کی جامعیت
دُنیا میں جتنے بھی رسول اور بنی تشریف لائے ہیں ہم ان سب کو سچا مانتے اور اُن پر سچے دِل سے ایمان لات...
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন