ফয়জুল কালাম

রাসুল ﷺ এর চরিত্র -এর বিষয়সমূহ

টি হাদীস

জামে' তিরমিযী

হাদীস নং:২০১৫
আন্তর্জাতিক নং: ২০১৫
নবী (ﷺ) এর চরিত্র।
২০২১. কুতায়বা (রাহঃ) ......... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দশ বৎসর খেদমত করেছি। তিনি কখনো আমাকে উফ’’ পর্যন্ত বলেন নি। কোন কিছু করে ফেললে সে সম্পর্কে কখনো বলেন নি কেন তুমি করলে? কোন কাজ না করলে কখনো বলেন নি, কেন তা করলে না? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের মানুষ। রেশম বা খায বা অন্য যই হোক রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাতের তালু অপেক্ষা কোমল কিছু আমি কখনো স্পর্শ করিনি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ঘাম অপেক্ষা সুঘ্রাণ যুক্ত কোন আতরের কখনও গন্ধ নেইনি আমি।
باب مَا جَاءَ فِي خُلُقِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ الضُّبَعِيُّ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ خَدَمْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَشْرَ سِنِينَ فَمَا قَالَ لِي أُفٍّ قَطُّ وَمَا قَالَ لِشَيْءٍ صَنَعْتُهُ لِمَ صَنَعْتَهُ وَلاَ لِشَيْءٍ تَرَكْتُهُ لِمَ تَرَكْتَهُ وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ أَحْسَنِ النَّاسِ خُلُقًا وَلاَ مَسِسْتُ خَزًّا قَطُّ وَلاَ حَرِيرًا وَلاَ شَيْئًا كَانَ أَلْيَنَ مِنْ كَفِّ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلاَ شَمَمْتُ مِسْكًا قَطُّ وَلاَ عِطْرًا كَانَ أَطْيَبَ مِنْ عَرَقِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم . قَالَ أَبُو عِيسَى وَفِي الْبَابِ عَنْ عَائِشَةَ وَالْبَرَاءِ . وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

শামাঈলে তিরমিযী

হাদীস নং:৩৪৮
রাসূলুল্লাহ্ -এর চরিত্র মাধুর্যের বিবরণ
৩৪৮। হারূন ইবন ইসহাক আল-হামদানী (রাহঃ).... 'আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কখনো স্বীয় হাত দ্বারা কাকেও প্রহার করেননি, না কোন দাস-দাসী বা স্ত্রীলোককে। কেবল একমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ করেছেন।
حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ إِسْحَاقَ الْهَمْدَانِيُّ قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدَةُ ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ شَيْئًا قَطُّ إِلاَ أَنْ يُجَاهِدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ، وَلاَ ضَرَبَ خَادِمًا أَوِ امْرَأَةً.

শামাঈলে তিরমিযী

হাদীস নং:৩৫১
রাসূলুল্লাহ্ -এর চরিত্র মাধুর্যের বিবরণ
৩৫১। সুফয়ান ইবন ওয়াকী' (রাহঃ)..... হাসান ইবন 'আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ হুসায়ন ইবন আলী বলেছেন, আমি আমার পিতাকে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর মজলিসি চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তৎপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ছিলেন সদাহাস্যকারী ও বিনম্র স্বভাবের অধিকারী। তিনি রূঢ়ভাষী বা কঠিন হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন না। তিনি উচ্চৈস্বরে কথা বলতেন না, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতেন না, অপরের দোষ খুঁজে বেড়াতেন না এবং বখীল ছিলেন না। তিনি অশ্রাব্য কথা থেকে বিরত থাকতেন। তিনি যেমন কাউকে নিরাশ করতেন না, তেমনি কাউকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিতেন না। তিনটি বিষয় থেকে তিনি দূরে থাকতেন : ঝগড়া বিবাদ করা, অহংকার করা এবং অযথা কথাবার্তা বলা। তিনটি কাজ থেকে লোকদেরকে বিরত রাখতেনঃ কাউকে নিন্দাবাদ করতেন না, কাউকে অপবাদ দিতেন না, কারো দোষ-ত্রুটি তালাশ করতেন না। যে কথায় ছওয়াব হয়, তা ছাড়া অন্য কোন কথা বলতেন না। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন উপস্থিত শ্রোতাদের মনোযোগ এমনভাবে আকর্ষণ করতেন যে, তাদের মাথায় যেন পাখি বসে আছে। তিনি কথা বলা শেষ করলে অন্যান্যরা তাঁকে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা জিজ্ঞেস করতে পারত। তাঁর কথায় কেউ বাদানুবাদ করতেন না। কেউ কোন কথা বলা শুরু করলে তার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি চুপ থাকতেন। কেউ কোন কথায় হাসলে বা বিস্ময় প্রকাশ করলে তিনিও হাসতেন কিংবা বিস্ময় প্রকাশ করতেন। অপরিচিত ব্যক্তির রূঢ় আচরণ কিংবা কঠোর উক্তি তিনি ধৈর্য্যের সঙ্গে সহ্য করতেন। অযথা প্রশ্ন বা বেয়াদবিতেও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করতেন না। কখনো কখনো সাহাবীরা অপরিচিত লোক নিয়ে আসতেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলতেন, কারো কোন প্রয়োজন দেখলে তা সমাধা করতে তোমরা সাহায্য করবে। কেউ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তিনি চুপ করে থাকতেন। কেউ কথা বলতে থাকলে তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজে কথা বলা আরম্ভ করতেন না। অবশ্য কেউ অযথা কথা বলতে থাকলে তাকে থামিয়ে দিতেন। অথবা মজলিস থেকে উঠে যেতেন, যাতে বক্তা নিজেই চুপ হয়ে যায়।
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ قَالَ : حَدَّثَنَا جُمَيْعُ بْنُ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْعِجْلِيُّ قَالَ : أَنْبَأَنَا رَجُلٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ مِنْ وَلَدِ أَبِي هَالَةَ زَوْجِ خَدِيجَةَ وَيُكْنَى أَبَا عَبْدِ اللَّهِ ، عَنِ ابْنٍ لِأَبِي هَالَةَ ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ : قَالَ الْحُسَيْنُ : سَأَلْتُ أَبِي ، عَنْ سِيرَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جُلَسَائِهِ ، فَقَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَائِمَ الْبِشْرِ ، سَهْلَ الْخُلُقِ ، لَيِّنَ الْجَانِبِ ، لَيْسَ بِفَظٍّ وَلاَ غَلِيظٍ ، وَلاَ صَخَّابٍ وَلاَ فَحَّاشٍ ، وَلاَ عَيَّابٍ وَلاَ مُشَاحٍ ، يَتَغَافَلُ عَمَّا لاَ يَشْتَهِي ، وَلاَ يُؤْيِسُ مِنْهُ رَاجِيهِ وَلاَ يُخَيَّبُ فِيهِ ، قَدْ تَرَكَ نَفْسَهُ مِنْ ثَلاَثٍ : الْمِرَاءِ وَالإِكْثَارِ وَمَا لاَ يَعْنِيهِ ،وَتَرَكَ النَّاسَ مِنْ ثَلاَثٍ : كَانَ لاَ يَذُمُّ أَحَدًا وَلاَ يَعِيبُهُ ، وَلاَ يَطْلُبُ عَوْرتَهُ ، وَلاَ يَتَكَلَّمُ إِلَّا فِيمَا رَجَا ثَوَابَهُ ، وَإِذَا تَكَلَّمَ أَطْرَقَ جُلَسَاؤُهُ كَأَنَّمَا عَلَى رُءُوسِهِمُ الطَّيْرُ ، فَإِذَا سَكَتَ تَكَلَّمُوا لاَ يَتَنَازَعُونَ عِنْدَهُ الْحَدِيثَ ، وَمَنْ تَكَلَّمَ عِنْدَهُ أَنْصَتُوا لَهُ حَتَّى يَفْرُغَ ، حَدِيثُهُمْ عِنْدَهُ حَدِيثُ أَوَّلِهِمْ ، يَضْحَكُ مِمَّا يَضْحَكُونَ مِنْهُ ، وَيَتَعَجَّبُ مِمَّا يَتَعَجَّبُونَ مِنْهُ ، وَيَصْبِرُ لِلْغَرِيبِ عَلَى الْجَفْوَةِ فِي مَنْطِقِهِ وَمَسْأَلَتِهِ حَتَّى إِنْ كَانَ أَصْحَابُهُ لَيَسْتَجْلِبُونَهُمْ وَيَقُولُ : إِذَا رَأَيْتُمْ طَالِبَ حَاجَةٍ يِطْلُبُهَا فَأَرْفِدُوهُ ، وَلاَ يَقْبَلُ الثَّنَاءَ إِلَّا مِنْ مُكَافِئٍ وَلاَ يَقْطَعُ عَلَى أَحَدٍ حَدِيثَهُ حَتَّى يَجُوزَ فَيَقْطَعُهُ بِنَهْيٍ أَوْ قِيَامٍ.

শামাঈলে তিরমিযী

হাদীস নং:৩৩৬
রাসূলুল্লাহ্ -এর বিনয়ের বিবরণ
৩৩৬। সুফয়ান ইবন ওয়াকি' (রাহঃ)... হাসান ইবন 'আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন : আমি আমার মামা হিন্দ ইবন আবু হালা-কে, যিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর অবস্থা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে বর্ণনা করতেন - রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর অবস্থা জানার আগ্রহে তাঁকে জিঞ্জেস করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর দেহাকৃতি ছিল উচ্চ ও মর্যাদা সম্পন্ন। তাঁর চেহারা ছিল পূর্ণিমার রাতের চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল । অতঃপর পূর্ণ বিবরণ পেশ করেন। হাসান (রাযিঃ) বলেন, এই হাদীছ হুসায়ন (রাযিঃ)-এর কাছে বেশ কিছুকাল বর্ণনা করা হয়নি। পরে বলা হলে জানা গেল যে, তিনি আমার আগেই এই হাদীসটি শুনেছেন। শুধু তাই নয় যে, তিনি কেবল মামার কাছ থেকে এই হাদীসটি এনেছেন। উপরন্তু পিতা আলী (রাযিঃ)-এর কাছ থেকেও তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর ঘরে প্রবেশ করা, বাইরে যাওয়া ও অন্যান্য রীতিনীতি জানতে পেরেছেন। হুসায়ন (রাযিঃ) বলেন, আমি আমার পিতা আলী (রাযিঃ)-কে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর গৃহে প্রবেশ করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন গৃহে প্রবেশ করতেন, তখন তাঁর গৃহে অবস্থানকে তিনটি ভাগে ভাগ করতেন। এক ভাগ আল্লাহর ইবাদতের জন্য, এক ভাগ পরিবার-পরিজনদের জন্য এবং এক ভাগ নিজের কাজকর্মের জন্য। এই কাজকর্মের সময়কেও তিনি দুই ভাগে বিভক্ত করেন। এক ভাগে নেহায়েতই নিজের জন্য এবং এক ভাগ অন্য লোকদের জন্য। এই সময়ে বিশেষ বিশেষ সাহাবীগণ তাঁর কাছে আসতেন। তাদের দ্বারা তিনি তাঁর বাণী সর্বসাধারণের মধ্যে প্রচার করতেন। তাদের কাছে কোন কিছুই অব্যক্ত থাকত না। এই সকল লোকের মধ্যে আলিমগণ প্রথমে আসার অনুমতি পেতেন। তাদের ধর্মীয় মর্যাদার বিচারে তাদেরকে সময় দিতেন। কেউ এক কেউ বা দুই আবার কেউ বা ততোধিক প্রয়োজন নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর কাছে আসতেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সকলের প্রয়োজন মিটিয়ে দিতেন এবং তাদেরকে এমন কাজের নির্দেশ দিতেন, যা তাদের নিজেদের এবং পুরো উম্মতের উপকারে আসে। এই সময় তিনি সমবেতদের লক্ষ্য করে বলতেন, তোমরা যারা এখানে উপস্থিত আছ, তারা আমার বাণী অনুপস্থিতদের কাছে পৌছিয়ে দেবে। যারা কোন কারণে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারেনি, তোমরা তাদের জিজ্ঞাস্য আমার কাছ থেকে জেনে নিয়ে তাদেরকে জানিয়ে দেবে। কেননা যে ব্যক্তি এমন কোন লোকের নিবেদন বাদশাহের কাছে পৌঁছায়। এ যে বাদশাহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না, আল্লাহ্ তা'আলা কিয়ামতের দিন তাকে দৃঢ়পদ রাখবেন। তোমরা এ ব্যাপারে সতর্ক থেকো। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর মজলিসে কেবল এইসব আলোচনাই চলত। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সাহাবীদের কাছ থেকে এইসব আলাপ-আলোচনাই শুনতেন। সেখানে কোন প্রকার বাহুল্য কথাবার্তা হতো না। সাহাবীরা ধর্মীয় জ্ঞান আহরণের আগ্রহ নিয়ে আসতেন এবং মঙ্গলজনক অবস্থায় ফিরে যেতেন। হুসায়ন (রাযিঃ) বলেন, আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বাইরে যাওয়ার সময় কিরূপ করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) অহেতুক কথাবার্তা থেকে স্বীয় রসনাকে সংযত রাখতেন। আগন্তুকদের আন্তরিকতার সঙ্গে মনোরঞ্জন করতেন। তাদেরকে কোনভাবেই ভগ্নোৎসাহ করতেন না। সকল গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান করতেন এবং তাদের মধ্য থেকে তাদের নেতা মনোনীত করতেন। লোকদের আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখাতেন। তাঁর আচার-আচরণে যাতে কারো কোন ক্ষতি না হয়, তিনি নিজেও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতেন। স্বীয় সঙ্গীদের খোঁজ-খবর রাখতেন এবং লোকদের পারস্পরিক সম্পর্ক অনুসন্ধান করে (কোনপ্রকার জটিলতা থাকলে) তা সংশোধন করে দিতেন। ভালকে সুসমন্বিত করে তাকে শক্তিশালী করতেন এবং খারাপকে খারাপ বলে প্রতিহত করতেন। কোনপ্রকার মতবিরোধ সৃষ্টি না করে সবকিছুতেই মধ্য পন্থা অনুসরণ করতেন। লোকদের সংশোধন করতে কোনপ্রকার অলসতা করতেন না। অজ্ঞতাবশতঃ লোকেরা যেন অলস হয়ে না পড়ে, তিনি সেই দিকেও খেয়াল রাখতেন। প্রত্যেক কাজের জন্য তাঁর কাছে বিশেষ ব্যবস্থা থাকত। সত্যের ব্যাপারে কোনপ্রকার সংকীর্ণতা ছিল না, সীমা অতিক্রম করা হতো না। যে সমস্ত লোক তাঁর কাছে আসত, তারা উৎকৃষ্ট লোকে পরিণত হত। যে ব্যক্তি অপরের মঙ্গল কামনা করত, সে-ই তাঁর নিকট উত্তম ব্যক্তিরূপে সম্মানিত হত এবং সে-ই ব্যক্তিই তাঁর কাছে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরূপে প্রতিভাত হত- যে অন্যান্যদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতায় অতি উৎসাহী ছিল। হুসায়ন (রাযিঃ) বলেন, আমি আমার মামার কাছে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর মজলিস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) উঠা-বসায় সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকরে মশগুল থাকতেন। যখন কোথাও যেতেন, যেখানেই তাঁকে বসতে দিত, তিনি সেখানেই বসতেন। অন্যদেরকেও অনুরূপ করার নির্দেশ দিতেন। তিনি লোকের মাথা ডিঙ্গিয়ে যেতে নিষেধ করেন। এ কথা সত্য যে, তিনি যে আসনেই বসতেন, তা-ই সভাণতির আসনে পরিণত হতো। তিনি উপস্থিত সকলেরই কথা শুনতেন। উপস্থিত সকলেই মনে করত রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাকে অধিক মর্যাদা দিচ্ছেন। তাঁর কাছে কেউ বসলে সে নিজে উঠে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি উঠতেন না। কেউ তাঁর কাছে কিছু চাইলে তা না দিয়ে তিনি তাকে ফিরিয়ে দিতেন না। না থাকলে নম্রভাবে বুঝিয়ে বলতেন। তাঁর দান সবার জন্যেই অবারিত ছিল। মায়া-মমতায় তিনি সকলের পিতা স্বরূপ ছিলেন। ন্যায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর নিকট সবাই সমান ছিল। তাঁর মজলিস ছিল জ্ঞান, লজ্জা, ধৈর্য ও আমানতের। সেখানে কোনপ্রকার হট্টগোল হতো না, না কারো মান-সম্ভ্রমের ক্ষতি হতো। সকলেই সমান মর্যাদা পেতেন। তবে তাকওয়ার বিচারে একে অন্যের উপর মর্যাদাসম্পন্ন হতেন। একে অন্যের সঙ্গে বিনম্র ব্যবহার করতেন। বড়কে শ্রদ্ধা ও ছোটকে স্নেহ করতেন। প্রয়োজনধারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতো এবং পরদেশীকে হেফাযত করা হতো।
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ قَالَ : حَدَّثَنَا جُمَيْعُ بْنُ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْعِجْلِيُّ قَالَ : أَنْبَأَنَا رَجُلٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ مِنْ وَلَدِ أَبِي هَالَةَ زَوْجِ خَدِيجَةَ يُكْنَى أَبَا عَبْدِ اللَّهِ ، عَنِ ابْنٍ لِأَبِي هَالَةَ ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ : سَأَلْتُ خَالِي هِنْدَ بْنَ أَبِي هَالَةَ ، وَكَانَ وَصَّافًا عَنْ حِلْيَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَأَنَا أَشْتَهِي أَنْ يَصِفَ لِي مِنْهَا شَيْئًا ، فَقَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَخْمًا مُفَخَّمًا ، يَتَلَأْلَأُ وَجْهُهُ تَلَأْلُؤَ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ فَذَكَرَ الْحَدِيثَ بِطُولِهِ قَالَ الْحَسَنُ : فَكَتَّمْتُهَا الْحُسَيْنَ زَمَانًا ، ثُمَّ حَدَّثْتُهُ فَوَجَدْتُهُ قَدْ سَبَقَنِي إِلَيْهِ . فَسَأَلَهُ عَمَّا سَأَلْتُهُ عَنْهُ وَوَجَدْتُهُ قَدْ سَأَلَ أَبَاهَا عَنْ مَدْخَلِهِ وَمَخْرَجِهِ وَشَكْلِهِ فَلَمْ يَدَعْ مِنْهُ شَيْئًا.
قَالَ الْحُسَيْنُ : فَسَأَلْتُ أَبِي ، عَنْ دُخُولِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى مَنْزلِهِ جَزَّأَ دُخُولَهُ ثَلاَثَةَ أَجْزَاءٍ ، جُزْءًا لِلَّهِ ، وَجُزْءًا لِأَهْلِهِ ، وَجُزْءًا لِنَفْسِهِ ، ثُمَّ جَزَّأَ جُزْأَهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّاسِ ، فَيَرُدُّ ذَلِكَ بِالْخَاصَّةِ عَلَى الْعَامَّةِ ، وَلاَ يَدَّخِرُ عَنْهُمْ شَيْئًا ، وَكَانَ مِنْ سِيرَتِهِ فِي جُزْءِ الْأُمَّةِ إِيثَارُ أَهْلِ الْفَضْلِ بِإِذْنِهِ وَقَسْمِهِ عَلَى قَدْرِ فَضْلِهِمْ فِي الدِّينِ ، فَمِنْهُمْ ذُو الْحَاجَةِ ، وَمِنْهُمْ ذُو الْحَاجَتَيْنِ ، وَمِنْهُمْ ذُو الْحَوَائِجِ ، فَيَتَشَاغَلُ بِهِمْ وَيَشْغَلُهُمْ فِيمَا يُصْلِحُهُمْ وَالْأُمَّةَ مِنْ مُسَاءَلَتِهِمْ عَنْهُ وَإِخْبَارِهِمْ بِالَّذِي يَنْبَغِي لَهُمْ وَيَقُولُ : لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ مِنْكُمُ الْغَائِبَ ، وَأَبْلِغُونِي حَاجَةَ مَنْ لاَ يَسْتَطِيعُ إِبْلاَغَهَا ، فَإِنَّهُ مَنْ أَبْلَغَ سُلطَانًا حَاجَةَ مَنْ لاَ يَسْتَطِيعُ إِبْلاَغَهَا ثَبَّتَ اللَّهُ قَدمَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، لاَ يُذْكَرُ عِنْدَهُ إِلاَ ذَلِكَ ، وَلاَ يُقْبَلُ مِنْ أَحَدٍ غَيْرِهِ ، يَدْخُلُونَ رُوَّادًا وَلاَ يَفْتَرِقُونَ إِلاَ عَنْ ذَوَاقٍ ، وَيُخْرِجُونَ أَدِلَّةً يَعْنِي عَلَى الْخَيْرِ.
قَالَ : فَسَأَلْتُهُ عَنْ مَخْرَجِهِ كَيْفَ يَصْنَعُ فِيهِ ؟ قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرِنُ لِسَانُهُ إِلاَ فِيمَا يَعْنِيهِ ، وَيُؤَلِّفُهُمْ وَلاَ يُنَفِّرُهُمْ ، وَيُكْرِمُ كَرَيمَ كُلِّ قَوْمٍ وَيُوَلِّيهِ عَلَيْهِمْ ، وَيُحَذِّرُ النَّاسَ وَيَحْتَرِسُ مِنْهُمْ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَطْوِيَ عَنْ أَحَدٍ مِنْهُمْ بِشْرَهُ وَخُلُقَهُ ، وَيَتَفَقَّدُ أَصْحَابَهُ ، وَيَسْأَلُ النَّاسَ عَمَّا فِي النَّاسِ ، وَيُحَسِّنُ الْحَسَنَ وَيُقَوِّيهِ ، وَيُقَبِّحُ الْقَبِيحَ وَيُوَهِّيهِ ، مُعْتَدِلُ الأَمْرِ غَيْرُ مُخْتَلِفٍ ، لاَ يَغْفُلُ مَخَافَةَ أَنْ يَغْفُلُوا أَوْ يَمِيلُوا ، لِكُلِّ حَالٍ عِنْدَهُ عَتَادٌ ، لاَ يُقَصِّرُ عَنِ الْحَقِّ وَلاَ يُجَاوِزُهُ . الَّذِينَ يَلُونَهُ مِنَ النَّاسِ خِيَارُهُمْ ، أَفْضَلُهُمْ عِنْدَهُ أَعَمُّهُمْ نَصِيحَةً ، وَأَعْظَمُهُمْ عِنْدَهُ مَنْزِلَةً أَحْسَنُهُمْ مُوَاسَاةً وَمُؤَازَرَةً.
قَالَ : فَسَأَلْتُهُ عَنْ مَجْلِسِهِ ، فَقَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَقُومُ وَلاَ يَجَلِسُ إِلاَ عَلَى ذِكْرٍ ، وَإِذَا انْتَهَى إِلَى قَوْمٍ جَلَسَ حَيْثُ يَنْتَهِي بِهِ الْمَجْلِسُ وَيَأْمُرُ بِذَلِكَ ، يُعْطِي كُلَّ جُلَسَائِهِ بِنَصِيبِهِ ، لاَ يَحْسَبُ جَلِيسُهُ أَنَّ أَحَدًا أَكْرَمُ عَلَيْهِ مِنْهُ ، مَنْ جَالَسَهُ أَوْ فَاوَضَهُ فِي حَاجَةٍ صَابَرَهُ حَتَّى يَكُونَ هُوَ الْمُنْصَرِفُ عَنْهُ ، وَمَنْ سَأَلَهُ حَاجَةً لَمْ يَرُدَّهُ إِلاَ بِهَا أَوْ بِمَيْسُورٍ مِنَ الْقَوْلِ ، قَدْ وَسِعَ النَّاسَ بَسْطُهُ وَخُلُقُهُ ، فَصَارَ لَهُمْ أَبًا وَصَارُوا عِنْدَهُ فِي الْحَقِّ سَوَاءً ، مَجْلِسُهُ مَجْلِسُ عِلْمٍ وَحِلْمٍ وَحَيَاءٍ وَأَمَانَةٍ وَصَبْرٍ ، لاَ تُرْفَعُ فِيهِ الأَصْوَاتُ وَلاَ تُؤْبَنُ فِيهِ الْحُرَمُ ، وَلاَ تُثَنَّى فَلَتَاتُهُ مُتَعَادِلِينَ ، بَلْ كَانُوا يَتَفَاضَلُونَ فِيهِ بِالتَّقْوَى ، مُتَوَاضِعِينَ يُوقِّرُونَ فِيهِ الْكَبِيرَ وَيَرْحَمُونَ فِيهِ الصَّغِيرَ ، وَيُؤْثِرُونَ ذَا الْحَاجَةِ وَيَحْفَظُونَ الْغَرِيبَ.
tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

শামাঈলে তিরমিযী

হাদীস নং:৩৪৩
৪৮- রাসূলুল্লাহ্ -এর চরিত্র মাধুর্যের বিবরণ
৩৪৩। 'আব্বাস ইবন মুহাম্মাদ আদ্-দাওরী (রাযিঃ)... খারিজা ইবন যায়দ ইবন ছাবিত (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: একদল লোক যায়দ ইবন ছাবিতের কাছে এলো এবং বলল, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত করুন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সম্পর্কে কি বলব? আমি তাঁর সংস্পর্শে ছিলাম। তাঁর উপর যখন ওহী নাযিল হতো, তখন তিনি আমাকে ডেকে পাঠাতেন, আমি তা লিখে রাখতাম। আমরা যখন পার্থিব কোন বিষয়ে আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত হতাম, তখন তিনিও আমাদের সঙ্গে যোগ দিতেন। আবার আমরা যখন পরকাল সম্পর্কিত কোন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতাম, তখনো সে বিষয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে যোগ দিতেন। পানাহার সম্পর্কিত কোন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা, তাতেও তিনি অংশগ্রহণ করতেন। এই সবই হলো রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সম্পর্কিত ঘটনাবলী ।
بَابُ مَا جَاءَ فِي خُلُقِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
حَدَّثَنَا عَبَّاسُ بْنُ مُحَمَّدٍ الدُّورِيُّ قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ الْمُقْرِئِ قَالَ : حَدَّثَنَا لَيْثُ بْنُ سَعْدٍ قَالَ : حَدَّثَنِي أَبُو عُثْمَانَ الْوَلِيدُ بْنُ أَبِي الْوَلِيدِ ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ خَارِجَةَ ، عَنْ خَارِجَةَ بْنِ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ : دَخَلَ نَفَرٌ عَلَى زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ ، فَقَالُوا لَهُ : حَدِّثْنَا أَحَادِيثَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَاذَا أُحَدِّثُكُمْ ؟ كُنْتُ جَارَهُ فَكَانَ إِذَا نَزَلَ عَلَيْهِ الْوَحْيُ بَعَثَ إِلَيَّ فَكَتَبْتُهُ لَهُ ، فَكُنَّا إِذَا ذَكَرْنَا الدُّنْيَا ذَكَرَهَا مَعَنَا ، وَإِذَا ذَكَرْنَا الآخِرَةَ ذَكَرَهَا مَعَنَا ، وَإِذَا ذَكَرْنَا الطَّعَامَ ذَكَرَهُ مَعَنَا ، فَكُلُّ هَذَا أُحَدِّثُكُمْ عَنِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান