আশ-শামাঈলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ- ইমাম তিরমিযী রহঃ

শামাইলে নববীর পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ৩৫১
রাসূলুল্লাহ্ -এর চরিত্র মাধুর্যের বিবরণ
৩৫১। সুফয়ান ইবন ওয়াকী' (রাহঃ)..... হাসান ইবন 'আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ হুসায়ন ইবন আলী বলেছেন, আমি আমার পিতাকে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর মজলিসি চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তৎপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ছিলেন সদাহাস্যকারী ও বিনম্র স্বভাবের অধিকারী। তিনি রূঢ়ভাষী বা কঠিন হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন না। তিনি উচ্চৈস্বরে কথা বলতেন না, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতেন না, অপরের দোষ খুঁজে বেড়াতেন না এবং বখীল ছিলেন না। তিনি অশ্রাব্য কথা থেকে বিরত থাকতেন। তিনি যেমন কাউকে নিরাশ করতেন না, তেমনি কাউকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিতেন না। তিনটি বিষয় থেকে তিনি দূরে থাকতেন : ঝগড়া বিবাদ করা, অহংকার করা এবং অযথা কথাবার্তা বলা। তিনটি কাজ থেকে লোকদেরকে বিরত রাখতেনঃ কাউকে নিন্দাবাদ করতেন না, কাউকে অপবাদ দিতেন না, কারো দোষ-ত্রুটি তালাশ করতেন না। যে কথায় ছওয়াব হয়, তা ছাড়া অন্য কোন কথা বলতেন না। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন উপস্থিত শ্রোতাদের মনোযোগ এমনভাবে আকর্ষণ করতেন যে, তাদের মাথায় যেন পাখি বসে আছে। তিনি কথা বলা শেষ করলে অন্যান্যরা তাঁকে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা জিজ্ঞেস করতে পারত। তাঁর কথায় কেউ বাদানুবাদ করতেন না।

কেউ কোন কথা বলা শুরু করলে তার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি চুপ থাকতেন। কেউ কোন কথায় হাসলে বা বিস্ময় প্রকাশ করলে তিনিও হাসতেন কিংবা বিস্ময় প্রকাশ করতেন। অপরিচিত ব্যক্তির রূঢ় আচরণ কিংবা কঠোর উক্তি তিনি ধৈর্য্যের সঙ্গে সহ্য করতেন। অযথা প্রশ্ন বা বেয়াদবিতেও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করতেন না। কখনো কখনো সাহাবীরা অপরিচিত লোক নিয়ে আসতেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলতেন, কারো কোন প্রয়োজন দেখলে তা সমাধা করতে তোমরা সাহায্য করবে। কেউ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তিনি চুপ করে থাকতেন। কেউ কথা বলতে থাকলে তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজে কথা বলা আরম্ভ করতেন না। অবশ্য কেউ অযথা কথা বলতে থাকলে তাকে থামিয়ে দিতেন। অথবা মজলিস থেকে উঠে যেতেন, যাতে বক্তা নিজেই চুপ হয়ে যায়।
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ قَالَ : حَدَّثَنَا جُمَيْعُ بْنُ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْعِجْلِيُّ قَالَ : أَنْبَأَنَا رَجُلٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ مِنْ وَلَدِ أَبِي هَالَةَ زَوْجِ خَدِيجَةَ وَيُكْنَى أَبَا عَبْدِ اللَّهِ ، عَنِ ابْنٍ لِأَبِي هَالَةَ ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ : قَالَ الْحُسَيْنُ : سَأَلْتُ أَبِي ، عَنْ سِيرَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جُلَسَائِهِ ، فَقَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَائِمَ الْبِشْرِ ، سَهْلَ الْخُلُقِ ، لَيِّنَ الْجَانِبِ ، لَيْسَ بِفَظٍّ وَلاَ غَلِيظٍ ، وَلاَ صَخَّابٍ وَلاَ فَحَّاشٍ ، وَلاَ عَيَّابٍ وَلاَ مُشَاحٍ ، يَتَغَافَلُ عَمَّا لاَ يَشْتَهِي ، وَلاَ يُؤْيِسُ مِنْهُ رَاجِيهِ وَلاَ يُخَيَّبُ فِيهِ ، قَدْ تَرَكَ نَفْسَهُ مِنْ ثَلاَثٍ : الْمِرَاءِ وَالإِكْثَارِ وَمَا لاَ يَعْنِيهِ ،وَتَرَكَ النَّاسَ مِنْ ثَلاَثٍ : كَانَ لاَ يَذُمُّ أَحَدًا وَلاَ يَعِيبُهُ ، وَلاَ يَطْلُبُ عَوْرتَهُ ، وَلاَ يَتَكَلَّمُ إِلَّا فِيمَا رَجَا ثَوَابَهُ ، وَإِذَا تَكَلَّمَ أَطْرَقَ جُلَسَاؤُهُ كَأَنَّمَا عَلَى رُءُوسِهِمُ الطَّيْرُ ، فَإِذَا سَكَتَ تَكَلَّمُوا لاَ يَتَنَازَعُونَ عِنْدَهُ الْحَدِيثَ ، وَمَنْ تَكَلَّمَ عِنْدَهُ أَنْصَتُوا لَهُ حَتَّى يَفْرُغَ ، حَدِيثُهُمْ عِنْدَهُ حَدِيثُ أَوَّلِهِمْ ، يَضْحَكُ مِمَّا يَضْحَكُونَ مِنْهُ ، وَيَتَعَجَّبُ مِمَّا يَتَعَجَّبُونَ مِنْهُ ، وَيَصْبِرُ لِلْغَرِيبِ عَلَى الْجَفْوَةِ فِي مَنْطِقِهِ وَمَسْأَلَتِهِ حَتَّى إِنْ كَانَ أَصْحَابُهُ لَيَسْتَجْلِبُونَهُمْ وَيَقُولُ : إِذَا رَأَيْتُمْ طَالِبَ حَاجَةٍ يِطْلُبُهَا فَأَرْفِدُوهُ ، وَلاَ يَقْبَلُ الثَّنَاءَ إِلَّا مِنْ مُكَافِئٍ وَلاَ يَقْطَعُ عَلَى أَحَدٍ حَدِيثَهُ حَتَّى يَجُوزَ فَيَقْطَعُهُ بِنَهْيٍ أَوْ قِيَامٍ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এটি একটি অত্যন্ত মূল্যবান হাদীছ। দীনী আদব-কায়দা ও চালচলন সম্পর্কে এর দ্বারা একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে ইসলামী শিক্ষার এক-চতুর্থাংশ এবং কেউ অর্ধাংশ সাব্যস্ত করেছেন। কেউ তো বলেন, সম্পূর্ণ দীনই এর মধ্যে এসে গেছে।

হাদীছটির অর্থ হচ্ছে- যার ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেছে, সে অনর্থক সকল কথা ও সকল কাজ পরিহার করে চলে। অনর্থক মানে অপ্রয়োজনীয়। অর্থাৎ যা দুনিয়া এবং আখিরাতে কোনও কাজে লাগে না। কোনও উপকারে আসে না। যা কোনও উপকারে আসে না, তা অবশ্যই ক্ষতিকর। এরকম কাজ হয়তো হারাম হবে, নয়তো মাকরূহ হবে, নয়তো সন্দেহযুক্ত। এসবই অহেতুক তো বটেই, সেইসংগে সরাসরি পাপকর্মও। আর কিছু না হোক অন্তত পক্ষে পাপকর্মের দিকে টেনে তো নেয়ই।

কিছু ফজুল কাজ এমন আছে, যে সম্পর্কে মনে করা হয় তাতে ছওয়াব ও পাপ কিছুই নেই, যেমন ফালতু গল্পগুজব করা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় এতে কোনও ক্ষতি নেই। প্রকৃতপক্ষে এটাও ক্ষতিকর। কেননা আর কিছু না হোক, অন্তত সময় তো নষ্ট হয় তাতে। সময় মানুষের অমূল্য সম্পদ। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞেস করবেন, তোমার আয়ু কী কাজে ব্যয় করেছ? আয়ু তো সময়ই। তো যে বিষয়ে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে, তা অহেতুক নষ্ট করার অবকাশ কোথায়? টাকা-পয়সা অপচয় করা যদি নাজায়েয হয়, তবে সময়ের অপচয় কী করে বৈধ হয়? তাছাড়া সময় জীবনের পুঁজি। পুঁজি খরচ হল, অথচ অর্জন কিছু হল না। এটা কি কম ক্ষতি? সুতরাং একজন সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ
মুসলিমের কর্তব্য অপ্রয়োজনীয় সবকিছু থেকে বিরত থাকা।

কোনটা প্রয়োজনীয় এবং কোনটা অপ্রয়োজনীয়, তা কিভাবে বোঝা যাবে? বোঝা খুব সহজ। মানুষের যাবতীয় কথা ও কাজের সম্পর্ক হয়তো পার্থিব জীবনের সংগে হবে, নয়তো আখিরাতের সাথে। যখনই কোনও কথা বলা হয় বা কোনও কাজ করা হয়, দেখতে হবে এটা না করলে পার্থিব জীবনের বা পরকালীন জীবনের কোনও ক্ষতি আছে কি না। যদি দেখা যায় ক্ষতি নেই, তবে মনে করতে হবে সেটাই ফযুল ও অপ্রয়োজনীয়।

ইমাম গাযালী রহ. বলেন, যে কথা না বলে চুপ থাকলে কোনও গুনাহ হয় না এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কোনও ক্ষতি হয় না, সেটাই অহেতুক কথা। এতে লিপ্ত হওয়া মানে সময় নষ্ট করা। এরূপ কথা বলা মানে জবানের অপব্যবহার করা। এর পরিবর্তে যদি যিক্র বা দু'আ করা হয়, তবে প্রভূত ছওয়াব ও কল্যাণ অর্জিত হবে।

যে ব্যক্তি দীনী ও দুনিয়াবী উভয় ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় সবকিছু পরিহার করবে, তার জীবন সৌন্দর্যমণ্ডিত হবে এবং সকল অশান্তি ও অনিষ্ট থেকে বেঁচে যাবে। তার সময় মাটি হবে না, অর্থের অপচয় হবে না, কারও সংগে ঝগড়া-বিবাদ দেখা দেবে না, সময় ও সম্পদে বরকত হবে এবং জ্ঞান, কর্ম, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে জীবন পরিপূর্ণতা লাভ করবে।

অহেতুকতা পরিহারের উপায়
দীন ও দুনিয়া সংক্রান্ত অপ্রয়োজনীয় সবকিছু পরিহার করা সম্ভব মুরাকাবার মাধ্যমে। মুরাকাবা দ্বারা অন্তরে লজ্জা জাগ্রত হয়। অর্থাৎ যদি চিন্তা করা হয় আমি আল্লাহর দৃষ্টির সামনে আছি, তিনি আমার সব কাজ দেখছেন ও সব কথা শুনছেন, তখন অপ্রয়োজনীয় কাজ করতে লজ্জাবোধ হবে এবং লজ্জা লাগবে অর্থহীন কথা বলতেও। উদাহরণত, কেউ যখন মুরুব্বীস্থানীয় কারও সামনে থাকে, তখন যে-কোনও ফালতু কথা ও ফালতু কাজ করতে লজ্জাবোধ হয়। মুরাকাবার বিষয়টাও এরকমই। আল্লাহর সামনে আছি এ কথা চিন্তা করলে যে-কোনও অঙ্গেরই অন্যায় ব্যবহার করতে লজ্জাবোধ হবে। বিশেষত যখন জানা আছে, তাঁর ফিরিশতাগণ সবকিছু লিখে রাখছেন এবং আখিরাতে এসবের জবাবদিহিতাও আছে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

ما يلفظ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ

অর্থ : মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত আছে, (যে লেখার জন্য) সদা প্রস্তুত।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

أَمْ يَحْسَبُونَ أَنَّا لَا تَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَلَجُوبُهُمْ بَلَى وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُونَ

অর্থ : তারা কি মনে করছে আমি তাদের গোপন কথাবার্তা ও তাদের কানাকানি শুনতে পাই না? অবশ্যই পাই। তাছাড়া আমার ফেরেশতাগণ তাদের কাছেই রয়েছে, যারা (সবকিছু) লিপিবদ্ধ করছে।

আরও ইরশাদ-

وَمَا تَكُونُ في شَأْنٍ : مَا تَتْلُوا مِنْهُ مِن قَزانٍ وَلَا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ تُفِيضُونَ فِيهِ وَمَا يَعْرُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِن مِثْقَالِ رَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَلَا أَصْغَرَ مِنْ ذلِكَ وَلَا البر إلا في كتب مبين

অর্থ : (হে নবী!) তুমি যে-অবস্থায়ই থাক এবং কুরআনের যে-অংশই তিলাওয়াত কর এবং (হে মানুষ!) তোমরা যে কাজই কর, তোমরা যখন তাতে লিপ্ত থাক, তখন আমি তোমাদের দেখতে থাকি। তোমার প্রতিপালকের কাছে অণু পরিমাণ জিনিসও গোপন থাকে না- না পৃথিবীতে, না আকাশে এবং তার চেয়ে ছোট এবং তার চেয়ে বড় এমন কিছু নেই, যা এক স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই।

প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় যা-কিছুই বলা হয় ও যা-কিছুই করা হয়, লিপিবদ্ধ হয়ে যায় সবকিছুই। কিয়ামতের দিন তা সবই সামনে তুলে ধরা হবে। তখন কী অবস্থা হবে? ইরশাদ হয়েছে-

و وضع الكتب فترى المُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يُوَيْتَنَا مَالٍ هَذَا الْكِتَبِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَ لَا لَبِيْدَةُ إِلَّا أَحْضُهَا وَوَجَدُوا مَا عَبِلُوا حَاضِرًا وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًان

অর্থ : আর 'আমলনামা' সামনে রেখে দেওয়া হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে, তাতে যা (লেখা) আছে, তার কারণে তারা আতঙ্কিত এবং তারা বলছে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! এটা কেমন কিতাব, যা আমাদের ছোট-বড় যত কর্ম আছে, সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে রেখেছে, তারা তাদের সমস্ত কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে। তোমার প্রতিপালক কারও প্রতি কোনও জুলুম করবেন না।

হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. বলেন, যে ব্যক্তি তার কথাকে তার কাজ বলে গণ্য করে, তার কথা বলা অবশ্যই কমে যাবে। সে কেবল প্রয়োজনীয় কথাই বলবে। আমরা সাধারণত অহেতুক কথাকে গুরুত্ব দেই না। অথচ অহেতুক কথা দীন- দুনিয়ার অশেষ ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে।

হযরত সাহল তুসতারী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি অহেতুক কথা বলে, সে সততা থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।
মা'রুফ কারখী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি অহেতুক কথায় লিপ্ত হয়, সে আল্লাহর তাওফীক থেকে বঞ্চিত হয়।

লুকমান হাকীম রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি না অমুক গোত্রের একজন দাস ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি না অমুক পাহাড়ের পাদদেশে ছাগল চরাতেন? উত্তর দিলেন, তাই করতাম। তারপর জিজ্ঞেস করা হল, আপনি বর্তমান মর্যাদায় পৌঁছলেন কী করে? তিনি বললেন, সত্য কথা বলা এবং অপ্রয়োজনীয় কথা হতে বিরত থাকার দ্বারা।

জনৈক সাহাবীর মৃত্যু হলে এক ব্যক্তি বলেছিল, জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, তুমি কী করে জান? হয়তো সে কোনও অহেতুক কথা বলেছিল কিংবা অপ্রয়োজনে কৃপণতা করেছিল।

সারকথা, অহেতুক কথা বলা ও অহেতুক কাজ করার দ্বারা দীন-দুনিয়ার অশেষ ক্ষতি হয়ে যায়। এর থেকে বিরত থাকতে পারলে জীবন হয় সৌন্দর্যমণ্ডিত। তাতে দুনিয়ার জীবনও শান্তিময় হয় এবং তা আখিরাতের সাফল্য অর্জনেও সহায়ক হয়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে এর উপর আমল করার তাওফীক দান করুন- আমীন।

অহেতুক যত পড়াশোনা
প্রকাশ থাকে যে, কোনও কোনও কথা ও কাজ যেমন অহেতুক হয়ে থাকে, তেমনি কোনও কোনও শিক্ষাও এমন আছে, যার দীনী ও দুনিয়াবী কোনও ফায়দা নেই। অনেক শিক্ষা এমন আছে, যা দ্বারা কেবল অর্থ উপার্জনই হয় আর সেদিকে লক্ষ করে মানুষ সে শিক্ষাকে লাভজনক মনে করে, কিন্তু তা দ্বারা মানুষের ব্যক্তিচরিত্র এবং পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি-শৃংখলার যে ক্ষতি সাধিত হয়, সেদিকে লক্ষ করলে এরূপ শিক্ষাকে কিছুতেই উপকারী মনে করা যায় না। এরূপ শিক্ষা কেবল ফযুলই নয়, সরাসরি ক্ষতিকরও। তা থেকে বিরত থাকা জরুরি, যেমন নাচ-গান শিক্ষা, বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার শিক্ষা, জাদু শিক্ষা ইত্যাদি।

অনুরূপ অধিকাংশ লোকের জন্য নভেল-নাটক ও গল্প-উপন্যাসের বই পাঠ একটি ফযুল ও ক্ষতিকর কাজ। এর দ্বারা সময় তো নষ্ট হয়ই, ক্ষেত্রবিশেষে চরিত্রেরও অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। বর্তমানকালে মোবাইল ফোনের যত্রতত্র যথেচ্ছা ব্যবহার একটি মারাত্মক ফযুল কাজ। এর দ্বারা ব্যক্তিচরিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইদানীং অনৈতিকতা ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ মুঠোফোনের অসংযত ব্যবহার। আজ এর কারণে পারিবারিক শান্তি-শৃংখলা ধ্বংস হচ্ছে এবং সমাজে পাপ-পঙ্কিলতার ক্রমবিস্তার ঘটছে। সুতরাং আধুনিক এ যন্ত্রটির ব্যবহারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ আমাদেরকে সবরকম অপ্রয়োজনীয় কথা ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকার শিক্ষা দান করে।

খ. নিজের দ্বারা অহেতুক কথা ও অহেতুক কাজ হতে দেখলে মনে করতে হবে ইসলামের অনুসরণে ত্রুটি রয়ে গেছে। ফলে নিজের ভেতর এখনও পর্যন্ত ইসলামী সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটতে পারেনি।

গ. অহেতুক সবকিছু পরিহারের পক্ষে এই ধ্যান সহায়ক যে, সবই আল্লাহ দেখছেন, সবকিছু আমলনামায় লেখা হচ্ছে। হাশরের ময়দানে সব সামনে তুলে ধরা হবে এবং এর জন্য আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
শামাঈলে তিরমিযী - হাদীস নং ৩৫১ | মুসলিম বাংলা