مَا کَانَ لِنَبِیٍّ اَنۡ یَّکُوۡنَ لَہٗۤ اَسۡرٰی حَتّٰی یُثۡخِنَ فِی الۡاَرۡضِ ؕ تُرِیۡدُوۡنَ عَرَضَ الدُّنۡیَا ٭ۖ وَاللّٰہُ یُرِیۡدُ الۡاٰخِرَۃَ ؕ وَاللّٰہُ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ
তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী
৪৯. বদরের যুদ্ধে কুরাইশদের সত্তর জন লোক বন্দী হয়েছিল। তাদেরকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে মদীনায় নিয়ে আসা হয়। তাদের সঙ্গে কি আচরণ করা হবে এ নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কিরামের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। হযরত উমর (রাযি.)-সহ কতিপয় সাহাবীর রায় ছিল তাদেরকে হত্যা করে ফেলা। কেননা মুসলিমদের প্রতি তারা যে উৎপীড়ন চালিয়েছিল, সে কারণে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। অন্যান্য সাহাবীগণ মত দিলেন, তাদেরকে ফিদয়ার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হোক (ফিদয়া বলে সেই অর্থকে, যার বিনিময়ে যুদ্ধবন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়)। যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ সাহাবীগণ এই দ্বিতীয় মতেরই পক্ষে ছিলেন, তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ অনুসারেই ফায়সালা দান করলেন। সুতরাং কয়েদীদেরকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল। সে পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। আয়াতে এ ফায়সালার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে এবং তার কারণ বলা হয়েছে এই যে, বদর যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল কাফেরদের দর্প চূর্ণ করা ও তাদের মেরুদণ্ড সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে দেওয়া। আর এভাবে যারা বছরের পর বছর কেবল সত্য দীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং মুসলিমদের প্রতি বর্বরোচিত জুলুম-নির্যাতনও চালিয়ে গেছে, তাদের মধ্যে মুসলিমদের প্রতাপ বসিয়ে দেওয়া। এর জন্য দরকার ছিল তাদের প্রতি কোনরূপ দয়া না দেখিয়ে বরং সকলকে হত্যা করে ফেলা, যাতে কেউ ওয়াপস গিয়ে মুসলিমদের জন্য নতুন করে বিপদের কারণ হতে না পারে এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক পরিণতি দেখে অন্যরাও শিক্ষালাভ করতে পারে। প্রকাশ থাকে যে, যুদ্ধবন্দীকে মুক্তি দানের কারণে যে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে, এটা বদর যুদ্ধের উপরিউক্ত লক্ষ্য-উদ্দেশ্যর সাথে সম্পৃক্ত। পরবর্তীকালে সূরা মুহাম্মাদের ৪৭ : ৪নং আয়াতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, এখন যেহেতু কাফেরদের সামরিক শক্তি ভেঙ্গে গেছে, তাই এখন আর তাদের যুদ্ধবন্দীকে হত্যা করা জরুরী নয়; বরং এখন ফিদয়ার বিনিময়েও তাদেরকে মুক্তি দেওয়া জায়েয। এমনকি প্রয়োজনবোধে ফিদয়াবিহীন মুক্তি দানের ঔদার্যও তাদের প্রতি প্রদর্শন করা যেতে পারে।