وَمَاۤ اَرۡسَلۡنَا فِیۡ قَرۡیَۃٍ مِّنۡ نَّبِیٍّ اِلَّاۤ اَخَذۡنَاۤ اَہۡلَہَا بِالۡبَاۡسَآءِ وَالضَّرَّآءِ لَعَلَّہُمۡ یَضَّرَّعُوۡنَ
তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী
৫৫. বলা হচ্ছে যে, আল্লাহ তাআলা যাদেরকে শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করেছেন, তাদেরকে যে আকস্মিক রাগের বশে ধ্বংস করেছেন এমন নয়। বরং তাদেরকে সঠিক পথে আসার জন্য বছরের পর বছর সুযোগ দিয়েছেন এবং সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। প্রথমত তাদের কাছে নবী পাঠিয়েছেন, যে নবী তাদেরকে বছরের পর বছর সাবধান করতে থেকেছেন। তারপর তাদেরকে আর্থিক কষ্ট ও বিভিন্ন রকমের বালা-মুসিবতে ফেলেছেন, যাতে তাদের মন কিছুটা নরম হয়। কেননা বহু লোক এ রকম অবস্থায় আল্লাহর দিকে রুজু হয় এবং কষ্ট-ক্লেশের ভেতর অনেক সময় সত্য গ্রহণের যোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। এরূপ ক্ষেত্রে যখন নবী তাদেরকে এই বলে সতর্ক করেন যে, এখনও সময় আছে তোমরা শুধরে যাও, আল্লাহ তাআলা এ মুসিবত দ্বারা একটা সংকেত দিয়েছেন মাত্র, এটা যে কোনও সময় মহাশাস্তির রূপও নিতে পারে, তখন কোনও কোনও লোকের মন ঠিকই নরম হয়। অপর দিকে কিছু লোক এমনও থাকে, সুখণ্ডসাচ্ছন্দ্য লাভ হলে যাদের অন্তরে আল্লাহ তাআলার দয়া ও কৃপার অনুভূতি জাগ্রত হয় এবং তখন সত্য গ্রহণের জন্য তারা অপেক্ষাকৃত বেশি আগ্রহী হয়। সুতরাং তাদেরকে দুঃখণ্ডদৈন্যের পর সুখণ্ডসাচ্ছন্দ্যও দান করা হয়ে থাকে, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ পায়। অবস্থার এ পরিবর্তন দ্বারা কিছু লোক তো অবশ্যই শিক্ষা গ্রহণ করে এবং সঠিক পথে চলে আসে, কিন্তু জেদী চরিত্রের কিছু এমন লোকও থাকে, যারা এসব দ্বারা কোনও শিক্ষা গ্রহণ করে না। বরং তারা বলে, এরূপ সুখণ্ডদুঃখ ও ঠাণ্ডা-গরমের পালাবদল আমাদের বাপ-দাদাদের জীবনেও দেখা দিয়েছে। কাজেই এসবকে অহেতুকভাবে আল্লাহ তাআলার কোনও সংকেত সাব্যস্ত করার দরকার কী? এভাবে যখন তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার সব রকমের প্রমাণ চূড়ান্ত হয়ে যায়, তখন এক সময় আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে আযাব এসে পড়ে। তখন তাদেরকে এমন আকস্মিকভাবে ধরা হয় যে, তারা আগে থেকে কিছুই টের করতে পারে না।