وَاِلٰی ثَمُوۡدَ اَخَاہُمۡ صٰلِحًا ۘ قَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰہٍ غَیۡرُہٗ ؕ قَدۡ جَآءَتۡکُمۡ بَیِّنَۃٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ ؕ ہٰذِہٖ نَاقَۃُ اللّٰہِ لَکُمۡ اٰیَۃً فَذَرُوۡہَا تَاۡکُلۡ فِیۡۤ اَرۡضِ اللّٰہِ وَلَا تَمَسُّوۡہَا بِسُوۡٓءٍ فَیَاۡخُذَکُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ
তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী
৪৪. ছামুদও ছিল আদ জাতিরই বংশধর। দৃশ্যত হযরত হুদ আলাইহিস সালাম ও তাঁর যে সকল সঙ্গী আযাব থেকে রক্ষা পেয়েছিল, এরা তাদেরই আওলাদ ছিল। ছামুদ তাদের ঊর্ধ্বতন পূর্বপুরুষের নাম। তাই এ জাতিকে দ্বিতীয় আদও বলা হয়ে থাকে। আরব ও শামের মধ্যবর্তী যে অঞ্চলকে তখন ‘হিজর’ বলা হত এবং বর্তমানে ‘মাদাইনে সালিহ’ বলা হয়, এ সম্প্রদায় সেখানেই বাস করত। এখনও সে অঞ্চলে তাদের ঘর-বাড়ির ধ্বংসাবশেষ চোখে পড়ে। ৭৪ নং আয়াতে তাদের পাহাড় কেটে নির্মিত যে ইমারতের কথা বর্ণিত হয়েছে আজও তার ধ্বংসাবশেষ লক্ষ্য করা যায়। আরবের মুশরিকগণ বাণিজ্য উপলক্ষে যখন সিরিয়া অঞ্চলে যেত, এই উপদেশমূলক ধ্বংসাবশেষ তখন তাদের পথে পড়ত। কুরআন মাজীদের কয়েক স্থানে সেদিকে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এ সম্প্রদায়ের ভেতর কালক্রমে মূর্তিপূজার প্রচলন ঘটেছিল এবং এর ফলে তাদের সমাজে নানা রকম অন্যায়-অপরাধ বিস্তার লাভ করেছিল। হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম ছিলেন এ জাতিরই একজন লোক। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সঠিক পথ দেখানোর লক্ষ্যে তাকে নবী করে পাঠান। কিন্তু এক্ষেত্রেও সেই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটল। কওমের অধিকাংশ লোকই তার কথা প্রত্যাখ্যান করল। হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম যৌবন থেকে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত ক্রমাগত তাদের মধ্যে তাবলীগের কাজ করে যেতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তারা দাবী করল, আপনি যদি সত্যিই নবী হয়ে থাকেন, তবে আপনি এই পাহাড় থেকে কোনও উটনী বের করে আমাদের সামনে উপস্থিত করুন। এটা করতে পারলে আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনব। হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম দোয়া করলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়ায় পাহাড় থেকে একটি উটনী বের করে দেখালেন। তা দেখে কিছু লোক তো ঈমান আনল, কিন্তু তাদের বড় বড় সর্দার কথা রাখল না। তারা যে তাদের জেদ বজায় রাখল তাই নয়, বরং অন্য যেসব লোক ঈমান আনতে ইচ্ছুক ছিল তাদেরকেও নিবৃত্ত করল। হযরত সালিহ আলাইহিস সালামের আশংকা হল, ওয়াদা ভঙ্গের কারণে তাদের উপর আল্লাহ তাআলার কোন আযাব এসে যেতে পারে। তাই তাদেরকে বললেন, তোমরা অন্ততপক্ষে এই উটনীটির কোনও ক্ষতি করো না। তাকে স্বাধীনভাবে চলে-ফিরে খেতে দাও। উটনীটির পূর্ণ এক কুয়া পানি দরকার হত। তাই তিনি পালা বণ্টন করে দিলেন যে, একদিন উটনীটি পানি পান করবে এবং একদিন এলাকার লোকে। কিন্তু কওমের লোক গোপনে চক্রান্ত করল। তারা ঠিক করল উটনীটিকে হত্যা করবে। পরিশেষে ‘কুদার’ নামক এক ব্যক্তি সেটিকে হত্যা করল। এ অবস্থায় হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম তাদেরকে সতর্ক করে দিলেন যে, এখন শাস্তি আসতে মাত্র তিন দিন বাকি আছে। অতঃপর তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। কোনও কোনও রিওয়ায়াতে আরও আছে, তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, যে, এই তিন দিনের প্রতিদিন তাদের চেহারার রং পরিবর্তন হতে থাকবে। প্রথম দিন চেহারার রং হবে হলুদ, দ্বিতীয় দিন লাল এবং তৃতীয় দিন সম্পূর্ণ কালো হয়ে যাবে। এতদসত্ত্বেও জেদী সম্প্রদায়টি তাওবা ও ইস্তিগফারে রত হল না; বরং তারা হযরত সালিহ আলাইহিস সালামকেই হত্যা করার ষড়যন্ত্র আঁটল, যা সূরা নামলে (২৭ : ৪৮) বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পথেই ধ্বংস করে দেন। ফলে তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়। অন্য দিকে হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম যেমন বলেছিলেন, সেভাবেই তাদের তিন দিন কাটে। এ অবস্থায়ই প্রচণ্ড ভূমিকম্প শুরু হয়ে যায়। সেই সাথে আসমান থেকে এক ভয়াল শব্দ আসতে থাকে এবং তাতে গোটা সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে যায়। হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম ও তার সম্প্রদায়ের ঘটনা বিস্তারিতভাবে সূরা হুদ (১১ : ৬১), সূরা শুআরা (২৬ : ১৪১), সূরা নামল (২৭ : ৪৫) ও সূরা কামারে (৫৪ : ২৩) বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া সূরা হিজর, সূরা যারিয়াত, সূরা নাজম, সূরা হাক্কা ও সূরা শামসেও তাদের অবস্থা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে।