আল আ'রাফ

সূরা নং: ৭, আয়াত নং: ১৭৫

তাফসীর
وَاتۡلُ عَلَیۡہِمۡ نَبَاَ الَّذِیۡۤ اٰتَیۡنٰہُ اٰیٰتِنَا فَانۡسَلَخَ مِنۡہَا فَاَتۡبَعَہُ الشَّیۡطٰنُ فَکَانَ مِنَ الۡغٰوِیۡنَ

উচ্চারণ

ওয়াতলু ‘আলাইহিম নাবাআল্লাযী আ-তাইনা-হুআ-য়া-তিনা-ফানছালাখা মিনহাফাআতবা‘আহুশশাইতা-নুফাকা-না মিনাল গা-বীন।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং (হে রাসূল!) তাদেরকে সেই ব্যক্তির ঘটনা পড়ে শোনাও, যাকে আমি আমার নিদর্শনাবলী দিয়েছিলাম, কিন্তু সে তা সম্পূর্ণ বর্জন করে। ফলে শয়তান তার পিছু নেয়। পরিণামে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ৯৮

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

৯৮. সাধারণভাবে মুফাসসিরগণ বলেন, এ আয়াতে বালআম ইবনে বাউরার প্রতি ইশারা করা হয়েছে। বালআম ছিল ফিলিস্তিনের মাওআব অঞ্চলের এক প্রসিদ্ধ আবেদ ও সংসারবিমুখ (যাহেদ) ব্যক্তি। কথিত আছে, তার দোয়া খুব বেশি কবুল হত। তার সময়ে সে অঞ্চলটি মূর্তিপূজারীদের দখলে ছিল। ফির‘আউন ডুবে মরার পর হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলের বাহিনী নিয়ে সে এলাকায় আক্রমণ করতে চাইলেন এবং সে উদ্দেশ্যে তিনি নিজ বাহিনী নিয়ে মাওআবের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেলেন। এ সময় সেখানকার বাদশাহ বালআমকে বলল, সে যেন মূসা আলাইহিস সালাম যাতে ধ্বংস হয়ে যান সে লক্ষ্যে বদদোয়া করে। প্রথম দিকে সে তা করতে রাজি ছিল না, কিন্তু বাদশাহ তাকে মোটা অংকের উৎকোচ দিলে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল। কিন্তু সে যখন বদদোয়া করতে শুরু করল, তখন তার মুখে বদদোয়ার বিপরীতে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের যাতে কল্যাণ হয়, সেই অর্থের শব্দাবলী উচ্চারিত হল। এ অবস্থা দেখে বালআম বাদশাহকে পরামর্শ দিল, তার সৈন্যরা যেন তাদের নারীদেরকে বনী ইসরাঈলের তাঁবুতে পাঠিয়ে দেয়। তাহলে তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়বে আর ব্যভিচারের বৈশিষ্ট্যই হল, তা আল্লাহ তাআলার ক্রোধের কারণ হয়ে যায়। ফলে আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টির কারণে বনী ইসরাঈল তাঁর রহমত থেকে মাহরূম হয়ে যাবে। তার এ পরামর্শ মত কাজ করা হল এবং বনী ইসরাঈল ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়ল। ফলে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি নারাজ হয়ে গেলেন। শাস্তিস্বরূপ তাদের মধ্যে প্লেগের মহামারী দেখা দিল। বাইবেলেও এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে (দেখুন, শুমারী, পরিচ্ছেদ ২২-২৫ এবং ৩১:১৬)। কুরআন মাজীদ এস্থলে যে ব্যক্তির দিকে ইঙ্গিত করেছে তার নামও উল্লেখ করেনি এবং সে আল্লাহ তাআলার হুকুম অমান্য করে কিভাবে নিজ কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করেছিল তাও ব্যাখ্যা করেনি। উপরে যে ঘটনা উদ্ধৃত করা হল, তাও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত নয়। কাজেই আয়াতে যে সেই ব্যক্তিকেই বোঝানো উদ্দেশ্য এটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কিন্তু তা বলতে না পারলেও কুরআন মাজীদের মূল উদ্দেশ্য যেহেতু সেই ব্যক্তিকে সনাক্তকরণের উপর নির্ভরশীল নয়, তাই এতে কোন সমস্যা নেই। বস্তুত এস্থলে উদ্দেশ্য এই সবক দেওয়া যে, আল্লাহ তাআলা যাকে ইলম ও ইবাদতের মহা সৌভাগ্য দান করেন, তার উচিত অন্যদের তুলনায় বেশি সাবধানতা ও তাকওয়া অবলম্বন করা। এরূপ ব্যক্তি যদি আল্লাহ তাআলার আয়াতের বিপরীতে নিজের অবৈধ কামনা-বাসনা পূরণের পেছনে পড়ে, তবে দুনিয়া ও আখিরাতে তার পরিণতি হয় ভয়াবহ।
﴾﴿
সূরা আল আ'রাফ, আয়াত ১১২৯ | মুসলিম বাংলা