আল আ'রাফ

সূরা নং: ৭, আয়াত নং: ১৭২

তাফসীর
وَاِذۡ اَخَذَ رَبُّکَ مِنۡۢ بَنِیۡۤ اٰدَمَ مِنۡ ظُہُوۡرِہِمۡ ذُرِّیَّتَہُمۡ وَاَشۡہَدَہُمۡ عَلٰۤی اَنۡفُسِہِمۡ ۚ  اَلَسۡتُ بِرَبِّکُمۡ ؕ  قَالُوۡا بَلٰی ۚۛ  شَہِدۡنَا ۚۛ  اَنۡ تَقُوۡلُوۡا یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ اِنَّا کُنَّا عَنۡ ہٰذَا غٰفِلِیۡنَ ۙ

উচ্চারণ

ওয়া ইয আখাযা রাব্বুকা মিম বানীআ-দামা মিন জুহূরিহিম যুররিইইয়াতাহুম ওয়া আশহাদাহুম ‘আলাআনফুছিহিম আলাছতুবিরাব্বিকুম কা-লূবালা-শাহিদনা আন তাকূলূইয়াওমাল কিয়া-মাতি ইন্না-কুন্না-‘আন হা-যা-গা-ফিলীন।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং (হে রাসূল! মানুষকে সেই সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দাও) যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানদের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তানদেরকে বের করেছিলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের সম্পর্কে সাক্ষী বানিয়েছিলেন (আর জিজ্ঞেস করেছিলেন যে,) আমি কি তোমাদের রব্ব নই? সকলে উত্তর দিয়েছিল, কেন নয়? আমরা সকলে (এ বিষয়ে) সাক্ষ্য দিচ্ছি ৯৭ (এবং এ স্বীকারোক্তি আমি এজন্য নিয়েছিলাম) যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পার যে, ‘আমরা তো এ বিষয়ে অনবহিত ছিলাম।’

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

৯৭. এ আয়াতে যে সাক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, হাদীসে তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এরূপ যে, আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পর, তার ঔরসে যত সন্তান-সন্ততি জন্ম নেওয়ার ছিল তাদের সকলকে এক জায়গায় একত্র করেন। তখন তারা সকলে পিঁপড়ের মত ক্ষুদ্রাকৃতির ছিল। তিনি তাদের থেকে প্রতিশ্রুতি নেন যে, তারা আল্লাহ তাআলাকে নিজেদের প্রতিপালক স্বীকার করে কিনা? সকলেই স্বীকার করল যে, নিশ্চয়ই তারা আল্লাহ তাআলাকে নিজেদের প্রতিপালক স্বীকার করে (রূহুল মাআনীতে নাসাঈ, হাকিম ও বায়হাকীর বরাতে)। এই স্বীকারোক্তি দ্বারা তারা যেন স্বীকার করে নিল যে, তারা আল্লাহ তাআলার সমস্তআদেশ-নিষেধ বিনাবাক্যে পালন করবে; আর এভাবে আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুনিয়ায় পাঠানোর আগেই তাদের দ্বারা আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। দুনিয়ায় এমন মহাপুরুষও জন্ম নিয়েছেন, যাদের এ ঘটনা দুনিয়ায় আসার পরও স্মরণ ছিল, যেমন হযরত যুননুন মিসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে তাঁর এই উক্তি বর্ণিত আছে যে, সে প্রতিশ্রুতির কথা আমার এমনভাবে স্মরণ আছে যেন এখনও তা শুনতে পাচ্ছি (মাআরিফুল কুরআন, ৪র্থ খণ্ড, ১১৫ পৃষ্ঠা)। তবে এ কথা সত্য যে, কিছু ব্যতিক্রম বাদে কারওই একটা প্রতিশ্রুতিরূপে সে কথা স্মরণ নেই। কিন্তু সে কথা স্মরণ না থাকলেও সমস্যা নেই। কেননা এমন কিছু ঘটনা থাকে যা স্মরণ না থাকলেও তার প্রাকৃতিক ক্রিয়া ঠিকই দেখা দেয়। সুতরাং সেই প্রতিশ্রুতির ক্রিয়া আজ দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়। তাই তো তারা মহাবিশ্বের এক স্রষ্টায় বিশ্বাস রাখে এবং তাঁর মহিমা ও বড়ত্বের গুণকীর্তন করে। যারা বস্তুগত চাহিদা ও জড়বাদী মানসিকতার ঘুর্ণিপাকে ফেঁসে গিয়ে নিজেদের স্বভাব-প্রকৃতি নষ্ট করে ফেলেছে, তাদের কথা আলাদা, নয়ত প্রতিটি মানুষের স্বভাবের ভেতরই আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বের বোধ এবং তাঁর ভালোবাসা সংস্থাপিত রয়েছে। আর এ কারণেই যে সমস্ত পারিপার্শ্বিক কারণ স্বভাব-ধর্ম হতে দূরে সরিয়ে দেয়, সেগুলো যখন মানুষের সম্মুখ থেকে অপসৃত হয়, তখন মানুষ সত্যের দিকে এভাবে ছুটে যায়, যেন সে সহসা তার হারিয়ে যাওয়া সম্পদের সন্ধান পেয়ে গেছে।
﴾﴿