আল আ'রাফ

সূরা নং: ৭, আয়াত নং: ১৫৭

তাফসীর
اَلَّذِیۡنَ یَتَّبِعُوۡنَ الرَّسُوۡلَ النَّبِیَّ الۡاُمِّیَّ الَّذِیۡ یَجِدُوۡنَہٗ مَکۡتُوۡبًا عِنۡدَہُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ وَالۡاِنۡجِیۡلِ ۫  یَاۡمُرُہُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَیَنۡہٰہُمۡ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَیُحِلُّ لَہُمُ الطَّیِّبٰتِ وَیُحَرِّمُ عَلَیۡہِمُ الۡخَبٰٓئِثَ وَیَضَعُ عَنۡہُمۡ اِصۡرَہُمۡ وَالۡاَغۡلٰلَ الَّتِیۡ کَانَتۡ عَلَیۡہِمۡ ؕ  فَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِہٖ وَعَزَّرُوۡہُ وَنَصَرُوۡہُ وَاتَّبَعُوا النُّوۡرَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ مَعَہٗۤ ۙ  اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ٪

উচ্চারণ

আল্লাযীনা ইয়াত্তাবি‘ঊনার রাছূলান্নাবিইয়াল উম্মিইয়াল্লাযী ইয়াজিদূ নাহূমাকতূবান ‘ইনদাহুম ফিততাওরা-তি ওয়াল ইনজীলি ইয়া’মরুহুম বিলমা‘রূফি ওয়া ইয়ানহা-হুম ‘আনিল মুনকারি ওয়া ইউহিল্লুলাহুমুততাইয়িবা-তি ওয়া ইউ হাররিমু‘আলাইহিমুল খাবাইছা ওয়া ইয়াদা‘উ ‘আনহুম ইসরাহুম ওয়াল আগলা-লাল্লাতী কা-নাত ‘আলাইহিম ফাল্লাযীনা আমানূবিহী ওয়া ‘আঝঝারুহু ওয়া নাসারুহু ওয়াত্তাবা‘উন নূরাল্লাযী উনঝিলা মা‘আহূ উলাইকা হুমুল মুফলিহূন।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা এই রাসূলের অর্থাৎ উম্মী নবীর অনুসরণ করে, যার কথা তারা তাওরাত ও ইনজীলে, যা তাদের নিকট আছে, লিপিবদ্ধ পাবে, ৮৪ যে তাদেরকে সৎকাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজে নিষেধ করবে এবং তাদের জন্য উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করবে ও নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করবে এবং তাদের থেকে ভার ও গলার বেড়ি নামাবে, যা তাদের উপর চাপানো ছিল। ৮৫ সুতরাং যারা তার (অর্থাৎ নবীর) প্রতি ঈমান আনবে, তাকে সম্মান করবে, তার সাহায্য করবে এবং তার সঙ্গে যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করবে, তারাই হবে সফলকাম।

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

৮৪. হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ওফাতের পরও বনী ইসরাঈলের সামনে শত-শত বছরের পথ-পরিক্রমা ছিল। তিনি দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ চেয়ে যে দোয়া করেছিলেন, তার ভেতর বনী ইসরাঈলের আগামী প্রজন্মও শামিল ছিল। তাই আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়া কবুল করার সময় এটাও স্পষ্ট করে দিলেন যে, শেষ নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমলে বনী ইসরাঈলের যে সকল লোক জীবিত থাকবে, তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ কেবল সেই অবস্থায়ই হতে পারে, যখন তারা শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান আনবে ও তার অনুসরণ করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা তাঁর কিছু বৈশিষ্ট্যও উল্লেখ করে দিয়েছেন। প্রথম বৈশিষ্ট্য হল, তিনি নবী হওয়ার সাথে সাথে রাসূলও হবেন। সাধারণত রাসূল শব্দটি এমন নবীর জন্য প্রযোজ্য হয়, যিনি নতুন শরীয়ত (বিধি-বিধান) নিয়ে আসেন। সুতরাং এ শব্দ দ্বারা ইশারা করে দেওয়া হয়েছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নতুন শরীয়ত নিয়ে আসবেন। সে শরীয়তের কিছু-কিছু বিধান তাওরাতে প্রদত্ত বিধান থেকে ভিন্ন রকমও হতে পারে। তখন একথা বলা যাবে না যে, ইনি যেহেতু আমাদের শরীয়ত থেকে ভিন্ন রকমের বিধান শেখাচ্ছেন, তাই আমরা তার প্রতি ঈমান আনতে পারি না। সুতরাং আগেই বলে দেওয়া হচ্ছে যে, প্রতি যুগের প্রয়োজন ও চাহিদা আলাদা হয়ে থাকে, যে কারণে যে রাসূল নতুন শরীয়ত নিয়ে আসেন তাঁর প্রদত্ত শাখাগত বিধান পূর্বের শরীয়ত থেকে পৃথক হতেই পারে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে, তিনি উম্মী হবেন অর্থাৎ তার লেখাপড়া জানা থাকবে না। সাধারণত বনী ইসরাঈল উম্মী বা নিরক্ষর ছিল না। আরবদেরকেই উম্মী বলা হত (দেখুন কুরআন মাজীদ ২ : ৭৮; ৩ : ২০; ৬২ : ২)। খোদ ইয়াহুদীরাও আরবদের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশের জন্য এ শব্দটি ব্যবহার করত (দেখুন সূরা আলে-ইমরান, আয়াত ৭৫)। সুতরাং এ শব্দটি দ্বারা ইশারা করে দেওয়া হয়েছে যে, শেষ নবীর আবির্ভাব বনী ইসরাঈলের নয়; বরং আরবদের মধ্যেই হবে। তাঁর তৃতীয় বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে এই যে, তাওরাত ও ইনজীল উভয় গ্রন্থে তাঁর উল্লেখ থাকবে। এর দ্বারা সেই সব সুসংবাদ ও ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি ইশারা করা হয়েছে, যা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তাওরাত ও ইনজীলে তার আগমনের বহু আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপক রদবদল সত্ত্বেও আজও বাইবেলে এ রকমের বহু ভবিষ্যদ্বাণীর উল্লেখ পাওয়া যায়। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন মাওলানা রহমাতুল্লাহ কীরানবী (রহ.) রচিত ‘ইজহারুল হক’ গ্রন্থের উর্দূ অনুবাদ, যা ‘বাইবেল ছে কুরআন তাক’ নামে প্রকাশিত হয়েছে (-অনুবাদক মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী)।
﴾﴿