আল আনআম

সূরা নং: ৬, আয়াত নং: ৩৫

তাফসীর
وَاِنۡ کَانَ کَبُرَ عَلَیۡکَ اِعۡرَاضُہُمۡ فَاِنِ اسۡتَطَعۡتَ اَنۡ تَبۡتَغِیَ نَفَقًا فِی الۡاَرۡضِ اَوۡ سُلَّمًا فِی السَّمَآءِ فَتَاۡتِیَہُمۡ بِاٰیَۃٍ ؕ وَلَوۡ شَآءَ اللّٰہُ لَجَمَعَہُمۡ عَلَی الۡہُدٰی فَلَا تَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡجٰہِلِیۡنَ

উচ্চারণ

ওয়া ইন কা-না কাবুরা ‘আলাইকা ই‘রা-দুহুম ফাইনিছতাতা‘তা আন তাবতাগিয়া নাফাকান ফিল আরদিআও ছুল্লামান ফিছছামাই ফাতা’তিয়াহুম বিআ-ইয়াতিওঁ ওয়া লাও শাআল্লা-হু লাজামা‘আহুম ‘আলাল হুদা-ফালা-তাকূনান্না মিনাল জা-হিলীন।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

যদি তাদের উপেক্ষা তোমার কাছে বেশি পীড়াদায়ক হয়, তবে পারলে তুমি ভূগর্ভে (যাওয়ার জন্য) কোনও সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে (ওঠার জন্য) কোনও সিঁড়ি সন্ধান কর, অতঃপর তাদের কাছে (তাদের ফরমায়েশী) কোন নিদর্শন নিয়ে এসো। আল্লাহ চাইলে তাদের সকলকে হিদায়াতের উপর একত্র করতেন। সুতরাং তুমি কিছুতেই অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। ১২

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

১২. আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বহু মুজিযা (নিদর্শন) দান করেছিলেন। সর্বাপেক্ষা বড় মুজিযা হল কুরআন মাজীদ। কেননা তিনি একজন উম্মী বা নিরক্ষর ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তাঁর প্রতি এমন বিশুদ্ধ ও অলংকারময় বাণী নাযিল হয়, যার সামনে বড় বড় কবি-সাহিত্যিক নতি স্বীকারে বাধ্য হয়ে যায় এবং সূরা বাকারা ( ২ : ২৩) ও অন্যান্য সূরায় যে চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে একজনও তা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। সূরা আনকাবুতে (২৯ : ৫১) এরই দিকে ইশারা করে বলা হয়েছে যে, একজন সত্য সন্ধানীর জন্য কেবল এই এক মুজিযাই যথেষ্ট ছিল, কিন্তু নিজেদের জেদ ও হঠকারিতার কারণে মক্কার কাফেরগণ নিত্য-নতুন মুজিযা দাবী করতে থাকে। এভাবে তারা যে সব বেহুদা ফরমায়েশ ও দাবী-দাওয়া করত, সূরা বনী ইসরাঈলে (১৭ : ৮৯-৯৩) তার একটা তালিকাও উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে কখনও কখনও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরও ধারণা হত তাদের ফরমায়েশী মুজিযাসমূহের থেকে কোনও মুজিযা দেখিয়ে দেওয়া হলে হয়ত তারা ঈমান আনত ও জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেত। এ আয়াতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সদয় সম্বোধন করে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তাদের এ দাবীর উদ্দেশ্য সত্য গ্রহণ নয়; বরং কেবল জেদ প্রকাশ এবং যেমন পূর্বে ২৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, সব রকমের নিদর্শন দেখানো হলেও তারা ঈমান আনবে না। কাজেই তাদের ফরমায়েশ পূরণ করাটা কেবল নিষ্ফল কাজই নয়; বরং সামনে ৩৭নং আয়াতে আল্লাহ তাআলার যে হিকমতের কথা বর্ণিত হয়েছে, তারও পরিপন্থী। হাঁ আপনি নিজে যদি তাদের দাবী-দাওয়া পূরণ করার জন্য তাদের কথা মত ভূগর্ভে ঢোকার কোনও সুড়ঙ্গ বানাতে বা আকাশে আরোহণের কোনও সিঁড়ি তৈরি করতে পারেন, তবে তাও করে দেখতে পারেন। বলা বাহুল্য, আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ছাড়া আপনি তা করতে সক্ষম হবেন না। সুতরাং তাদেরকে তাদের ইচ্ছানুরূপ মুজিযা দেখানোর চিন্তা ছেড়ে দিন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা এটাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি চাইলে দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে জোরপূর্বক একই দীনের অনুসারী বানাতে পারতেন। কিন্তু দুনিয়ায় মানব প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরীক্ষা করা, আর পরীক্ষার দাবী হল মানুষ জবরদস্তিমূলক নয়, বরং সে তার নিজ বুদ্ধি-বিবেককে কাজে লাগিয়ে, নিখিল বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অগণিত নিদর্শনের ভেতর চিন্তা করে স্বেচ্ছায় খুশি মনে তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের উপর ঈমান আনবে। বস্তুত নবী-রাসূলগণ মানুষকে তাদের ফরমায়েশ অনুসারে নিত্য-নতুন কারিশমা দেখানোর জন্য নয়; বরং মহা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা নিদর্শনাবলীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই প্রেরিত হয়ে থাকেন। আসমানী কিতাব নাযিলের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের এ পরীক্ষাকে সহজ করে দেওয়া। তবে এসব দ্বারা উপকৃত হয় কেবল তারাই, যাদের অন্তরে সত্য জানার আগ্রহ আছে। যারা নিজেদের জেদ ধরে রাখার জন্য কসম করে নিয়েছে, তাদের জন্য না কোনও দলীল-প্রমাণ কাজে আসতে পারে, না কোনও মুজিযা।
﴾﴿