আল মায়িদাহ

সূরা নং: ৫, আয়াত নং: ২৭

তাফসীর
وَاتۡلُ عَلَیۡہِمۡ نَبَاَ ابۡنَیۡ اٰدَمَ بِالۡحَقِّ ۘ اِذۡ قَرَّبَا قُرۡبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنۡ اَحَدِہِمَا وَلَمۡ یُتَقَبَّلۡ مِنَ الۡاٰخَرِ ؕ قَالَ لَاَقۡتُلَنَّکَ ؕ قَالَ اِنَّمَا یَتَقَبَّلُ اللّٰہُ مِنَ الۡمُتَّقِیۡنَ

উচ্চারণ

ওয়াতলু‘আলাইহিম নাবাআবনাই আ-দামা বিলহাক্ক । ইযকাররাবা-কুরবা-নান ফাতুকুব্বিলা মিন আহাদিহিমা-ওয়া লাম ইউতাকাব্বাল মিনাল আ-খারি কা-লা লাআকতুলান্নাকা কা-লা ইন্নামা-ইয়াতাকাব্বালুল্লা-হু মিনাল মুত্তাকীন।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং (হে নবী!) তাদের সামনে আদমের দু’ পুত্রের বৃত্তান্ত যথাযথভাবে পড়ে শোনাও, যখন তাদের প্রত্যেকে একেকটি কুরবানী পেশ করেছিল এবং তাদের একজনের কুরবানী কবুল হয়েছিল, অন্যজনের কবুল হয়নি। ২৫ সে (দ্বিতীয়জন প্রথমজনকে) বলল, আমি তোমাকে হত্যা করে ফেলব। প্রথমজন বলল, আল্লাহ তো মুত্তাকীদের পক্ষ হতেই (কুরবানী) কবুল করেন।

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

২৫. জিহাদের বিধান আসা সত্ত্বে তা থেকে গা বাঁচানোর যে অপরাধে বনী ইসরাঈল লিপ্ত হয়েছিল, পূর্বের আয়াতসমূহে ছিল তার বিবরণ। এবার বলা উদ্দেশ্য যে, কোনও মহৎ উদ্দেশ্যে পরিচালিত জিহাদে হত্যা করা কেবল বৈধই নয়; বরং ওয়াজিব, কিন্তু অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা গুরুতর পাপ। বনী ইসরাঈল জিহাদে যোগদান থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেছে, অথচ বহু নিরপরাধ লোককে পর্যন্ত হত্যা করতে তাদের এতটুকু প্রাণ কাঁপেনি। প্রসঙ্গক্রমে দুনিয়ায় সর্বপ্রথম যে নরহত্যার ঘটনা ঘটেছিল, তা বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআন মাজীদ সে সম্পর্কে কেবল এইটুকু জানিয়েছে যে, হযরত আদম আলাইহিস সালামের দুই পুত্র কিছু কুরবানী পেশ করেছিল। একজনের কুরবানী কবুল হয়, অন্যজনের কবুল হয়নি। এতে দ্বিতীয়জন ভীষণ ক্ষুব্ধ হয় এবং শেষ পর্যন্ত সে তার ভাইকে হত্যা করে। কিন্তু এ কুরবানীর প্রেক্ষাপট কী ছিল, সে সম্পর্কে কুরআন মাজীদ কিছুই বলেনি। তবে মুফাসসিরগণ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) ও আরও কতিপয় সাহাবীর বরাতে সে ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। তার সারমর্ম এই যে, হযরত আদম আলাইহিস সালামের দুই পুত্র ছিল। একজনের নাম হাবিল, অন্যজনের কাবীল। বলাবাহুল্য, তখন পৃথিবীতে মানব বসতি বলতে কেবল হযরত আদম আলাইহিস সালামের পরিবারবর্গই ছিল। তার স্ত্রীর গর্ভে প্রতিবার দুটি জমজ সন্তানের জন্ম হত। একটি পুত্র ও একটি কন্যা। তাদের দু’জনের পরস্পরে বিবাহ তো জায়েয ছিল না, কিন্তু এক গর্ভের পুত্রের সাথে অপর গর্ভের কন্যার বিবাহ হালাল ছিল। কাবীলের সাথে যে কন্যার জন্ম হয় সে ছিল রূপসী। কিন্তু জমজ হওয়ার কারণে কাবীলের সাথে তার বিবাহ জায়েয ছিল না। তা সত্ত্বেও কাবীল গোঁ ধরে বসেছিল তাকেই বিবাহ করবে। হাবীলের পক্ষে সে মেয়ে হারাম ছিল না। তাই সে তাকে বিবাহ করতে চাচ্ছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে তা নিষ্পত্তির জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে, তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করবে। আল্লাহ তা‘আলা যার কুরবানী কবুল করবেন তার দাবী ন্যায্য মনে করা হবে। সুতরাং উভয়ে কুরবানী পেশ করল। বর্ণনায় আছে যে, হাবীল একটি দুম্বা কুরবানী দিয়েছিল আর কাবীল পেশ করেছিল কিছু কৃষিজাত ফসল। সে কালে কুরবানী কবুল হওয়ার আলামত ছিল এই যে, কুরবানী কবুল হলে আসমান থেকে আগুন এসে তা জ্বালিয়ে দিত। সুতরাং আসমান থেকে আগুন আসল এবং হাবীলের কুরবানী জ্বালিয়ে দিল। এভাবে প্রমাণ হয়ে গেল যে, তার কুরবানী কবুল হয়েছে। কাবীলের কুরবানী যেমনটা তেমন পড়ে থাকল। তার মানে, তার কুরবানী কবুল হয়নি। এ অবস্থায় কাবীলের তো উচিত ছিল সত্য মেনে নেওয়া, কিন্তু তার বিপরীতে সে ঈর্ষাকাতর হল এবং এক পর্যায়ে হাবীলকে হত্যা করতে প্রস্তুত হয়ে গেল।
﴾﴿