আল হুজুরাত

সূরা নং: ৪৯, আয়াত নং: ৬

তাফসীর
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ جَآءَکُمۡ فَاسِقٌۢ بِنَبَاٍ فَتَبَیَّنُوۡۤا اَنۡ تُصِیۡبُوۡا قَوۡمًۢا بِجَہَالَۃٍ فَتُصۡبِحُوۡا عَلٰی مَا فَعَلۡتُمۡ نٰدِمِیۡنَ

উচ্চারণ

ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূইন জাআকুম ফা-ছিকু ম বিনাবাইন ফাতাবাইয়ানূআন তুসীবূকাওমাম বিজাহা-লাতিন ফাতুসবিহূ‘আলা-মা-ফা‘আলতুম না-দিমীন।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

হে মুমিনগণ! কোন ফাসেক যদি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তবে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না বস। ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদেরকে অনুতপ্ত হতে হয়।

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

৩. এ আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে হাফেজ ইবনে জারীর (রহ.) ও অন্যান্য মুফাসসিরগণ একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। ঘটনাটির সারমর্ম নিম্নরূপ, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ওয়ালীদ ইবনে উকবা (রাযি.)কে আরবের বিখ্যাত গোত্র বনু মুস্তালিকের কাছে যাকাত উসুল করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তিনি যখন তাদের কাছাকাছি পৌঁছলেন, দেখতে পেলেন লোকালয়ের বাইরে তাদের বহু লোক জড়ো হয়ে আছে। আসলে তারা এসেছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেরিত দূত হিসেবে তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। কিন্তু ওয়ালীদ ইবনে উকবা (রাযি.) মনে করলেন, তারা হামলা করার জন্য বের হয়ে এসেছে। কোন কোন বর্ণনায় আছে, তাঁর ও বনু মুস্তালিকের মধ্যে জাহেলী যুগে কিছুটা শত্রুতাও ছিল। তাই হযরত ওয়ালীদ (রাযি.)-এর ভয় হল তারা সেই পুরানো শত্রুতার জের ধরে তাকে আক্রমণ করবে। সুতরাং তিনি মহল্লায় প্রবেশ না করে সেখান থেকেই মদীনা মুনাওয়ারায় ফিরে আসলেন এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালেন, বনু মুস্তালিক যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত খালেদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাযি.)কে ঘটনা তদন্ত করে দেখতে বললেন এবং নির্দেশ দিলেন, যদি প্রমাণিত হয় সত্যিই তারা অবাধ্যতা করেছে, তবে তাদের সাথে জিহাদ করবে। তদন্ত করে দেখা গেল, আসলে তারা অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বের হয়েছিল। যাকাত দিতে তারা আদৌ অস্বীকার করেনি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। উপরিউক্ত বর্ণনার ভিত্তিতে কেউ কেউ বলেন, আয়াতে যে ফাসেক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তার দ্বারা ওয়ালীদ ইবনে উকবা (রাযি.)কে বোঝানো হয়েছে। প্রশ্ন ওঠে যে, একজন সাহাবীকে ‘ফাসেক’ সাব্যস্ত করলে তা দ্বারা তো সাহাবায়ে কেরামের ‘আদালত’ (বিশ্বস্ততা)-এর বিষয়টা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু এর উত্তর দেওয়া হয়েছে যে, কোন কোন সাহাবীর দ্বারা কদাচিৎ গুনাহ হয়ে গেলেও তাদেরকে তাওবার তাওফীক দেওয়া হয়েছে। কাজেই তা দ্বারা সমষ্টিগতভাবে তাদের আদালত নষ্ট হয়ে যায় না। তবে বাস্তব কথা হল, এ ঘটনা সম্পর্কে যেসব বর্ণনা পাওয়া যায়, প্রথমত তা সনদের দিক থেকে শক্তিশালী নয়, তাও আবার একেক বর্ণনা একেক রকমের। দ্বিতীয়ত এ ঘটনার ভিত্তিতে হযরত ওয়ালীদ (রাযি.)কে ফাসেক সাব্যস্ত করার যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ নেই। কেননা এ ঘটনায় তিনি বুঝে শুনে কোন মিথ্যা বলেননি। তিনি যা করেছিলেন তা কেবলই ভুল বোঝাবুঝির ব্যাপারে আর এ রকম কাউকে ফাসেক বলা যেতে পারে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় ব্যাপারটা হয়ত এ রকম হয়েছিল যে, হযরত ওয়ালীদ (রাযি.) যখন বনু মুস্তালিকের এলাকায় পৌঁছলেন আর ওদিকে গোত্রের বহু লোক সেখানে জড়ো হচ্ছিল, তখন কোন দুষ্ট লোক তাকে বলে থাকবে, এরা আপনার সাথে লড়বার জন্য জড়ো হয়েছে। আয়াতে সেই দুষ্ট লোকটাকেই ফাসেক বলা হয়েছে। আর হযরত ওয়ালীদ (রাযি.)কে সতর্ক করা হয়েছে যে, একা সেই দুষ্ট লোকটার দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ তাঁর ঠিক হয়নি। উচিত ছিল তার আগে বিষয়টা যাচাই করে নেওয়া। একটি রেওয়ায়াত দ্বারাও এ ব্যাখ্যার পক্ষে সমর্থন মেলে। হাফেজ ইবনে জারীর (রহ.) রেওয়ায়াতটি উদ্ধৃত করেছেন এবং তাতে আছে, فحدثه الشيطان انهم يريدون قتله ‘শয়তান তাকে জানালো যে, তারা তাকে হত্যা করতে চায়’ (তাফসীরে ইবনে জারীর, ২২ খণ্ড, ২৮৬ পৃ.)। বোঝা যাচ্ছে, শয়তান কোন মানুষের বেশে এসে তাকে এই মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল। কাজেই আয়াতের ‘ফাসেক’ শব্দটিকে অযথা একজন সাহাবীর উপর খাটানোর কী দরকার, যখন তিনি যা করেছিলেন সেটা কেবলই তার বুঝের ভুল ছিল? বরং শব্দটিকে যে সংবাদদাতা হযরত ওয়ালীদ (রাযি.)কে মিথ্যা সংবাদ দিয়েছিল তার উপর খাটানোই বেশি যুক্তিযুক্ত। তবে ঘটনা যাই হোক না কেন, কুরআন মাজীদের রীতি হল, আয়াতের শানে নুযুলে বিশেষ কোন ঘটনা থাকলেও তাতে ব্যবহৃত শব্দাবলী হয়ে থাকে সাধারণ, যাতে তা দ্বারা মূলনীতিরূপে কোন বিধান জানা যায়। এ আয়াতের সে সাধারণ বিধান হল, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কোন ফাসেক ব্যক্তির দেওয়া সংবাদের উপর আস্থা রাখা উচিত নয়, বিশেষত সে সংবাদের ফলে যদি কারও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
﴾﴿