ইউসুফ

সূরা নং: ১২, আয়াত নং: ৫০

তাফসীর
وَقَالَ الۡمَلِکُ ائۡتُوۡنِیۡ بِہٖ ۚ فَلَمَّا جَآءَہُ الرَّسُوۡلُ قَالَ ارۡجِعۡ اِلٰی رَبِّکَ فَسۡـَٔلۡہُ مَا بَالُ النِّسۡوَۃِ الّٰتِیۡ قَطَّعۡنَ اَیۡدِیَہُنَّ ؕ اِنَّ رَبِّیۡ بِکَیۡدِہِنَّ عَلِیۡمٌ

উচ্চারণ

ওয়া কা-লাল মালিকু’তূনী বিহী ফালাম্মা-জাআহুর রাছূলুকা-লারজি‘ ইলা-রাব্বিকা ফাছআলহু মা-বা-লুন নিছওয়াতিল্লা-তী কাত্তা‘না আইদিয়াহুন্না ইন্না রাববী বিকাইদিহিন্না ‘আলীম।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

বাদশাহ বলল, তাকে (অর্থাৎ ইউসুফকে) আমার কাছে নিয়ে এসো। সেমতে যখন তার কাছে দূত উপস্থিত হল, সে বলল, নিজ প্রভুর কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস কর, যে নারীগণ নিজেদের হাত কেটে ফেলেছিল তাদের অবস্থা কী? আমার প্রতিপালক তাদের ছলনা সম্পর্কে বেশ অবগত। ৩৩

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

৩৩. এস্থলে কুরআন মাজীদ ঘটনার যে অংশ আপনা-আপনি বুঝে আসে তা লুপ্ত রেখেছে। অর্থাৎ, হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম স্বপ্নের যে ব্যাখ্যা দিলেন, তা বাদশাহকে জানানো হল। বাদশাহ সে ব্যাখ্যা শুনে তাঁর মর্যাদা উপলব্ধি করলেন এবং তার নিদর্শনস্বরূপ তাঁকে নিজের কাছে ডেকে আনাতে চাইলেন। এতদুদ্দেশ্যে তিনি নিজের একজন দূতকে পাঠালেন। দূত হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের কাছে গিয়ে এ বার্তা পৌঁছালে তিনি চাইলেন প্রথমে তার উপর আরোপিত মিথ্যা অভিযোগের মীমাংসা হয়ে যাক এবং তিনি যে নির্দোষ এটা সকলের সামনে পরিষ্কার হয়ে যাক। সেমতে তিনি দূতের সঙ্গে না গিয়ে বরং বাদশাহর কাছে বার্তা পাঠালেন, যে সকল নারী নিজেদের হাত কেটে ফেলেছিল আপনি প্রথমে তাদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিন। সেই নারীদের যেহেতু ঘটনার আদি-অন্ত জানা ছিল তাই প্রকৃত বিষয়টা তাদের মাধ্যমেই জানা সহজ ছিল। এ কারণেই হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম যুলায়খার পরিবর্তে তাদের কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও এ সত্য জেল থেকে বের হওয়ার পরও উদ্ঘাটন করা যেত, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এ পন্থা অবলম্বন করেছিলেন সম্ভবত এজন্য যে, তিনি চাচ্ছিলেন, তিনি কতটা নির্দোষ তা বাদশাহ, আযীয ও অন্যান্যদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাক এবং তিনি যে নিজ নির্দোষিতার ব্যাপারে পরিপূর্ণ আত্মপ্রত্যয়ী, যদ্দরুণ নির্দোষিতা প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত জেল থেকে বের হতে পর্যন্ত রাজি নন এটাও তারা বুঝতে পারুক। দ্বিতীয়ত বাদশাহর ভাব-গতি দ্বারা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম অনুমান করতে পেরেছিলেন যে, তিনি তাকে বিশেষ কোন সম্মান দান করবেন। সেই সম্মান লাভের পর যদি ঘটনার তদন্ত করা হয়, তবে সে তদন্ত নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দিতে পারে। এ কারণেই তিনি সমীচীন মনে করলেন, প্রথমে নিরপেক্ষ তদন্ত দ্বারা অভিযোগের সবটা কলঙ্ক ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যাক, তারপরেই তিনি কারাগার থেকে বের হবেন। আল্লাহ তাআলা করলেনও তাই। বাদশাহর পরিপূর্ণ বিশ্বাস হয়ে গেল হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম নির্দোষ ও নিষ্কলুষ। অতঃপর তিনি যখন সেই নারীদের ডাকলেন এবং তিনি যেন সবকিছু জানেন এই ভাব নিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তারা প্রকৃত সত্য অস্বীকার করতে পারল না। বরং তারা পরিষ্কার ভাষায় সাক্ষ্য দিল হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম সম্পূর্ণ নির্দোষ। এ পর্যায়ে আযীয-পত্নী যুলায়খাকেও স্বীকার করতে হল যে, প্রকৃতপক্ষে ভুল তারই ছিল। সম্ভবত আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ছিল যুলায়খাকে এই সুযোগ দেওয়া, যাতে সে নিজের অপরাধ স্বীকার ও তাওবার মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র ও শুদ্ধ করে নিতে পারে।
﴾﴿