ভিন্ন দেশ থেকে ৩০ রোযা রেখে বাংলাদেশে গেলে রোযা রাখতে হবে? রাখলে ৩১টা হয়ে যায়। করণীয় কি?
প্রশ্নঃ ৯০৫৮৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, দেশের বাইরের থাকার সমকালীন সময় যদি আমরা রোজা রেখে যাই, বাংলাদেশে আমাদের রোজার সংখা ৩১টা দাঁড়ায়,কয়টি রোজা রাখতে পারব
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যদি কোনো ব্যক্তি রমজানের প্রথম রোজা যে দেশে রেখেছে সে দেশ থেকে এমন কোনো দেশে সফর করে যেখানে ঈদুল ফিতর বিলম্বে হয়, তাহলে সে ব্যক্তি রোজা পালন চালিয়ে যাবে যতদিন না সে দেশবাসী ঈদ উদযাপন না করে।
শাইখ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল:
আমি পূর্ব এশিয়ার অধিবাসী। আমাদের দেশে হিজরি মাস সৌদি আরবের একদিন পর শুরু হয়। রমজান মাসে আমি দেশে যাব। আমি যদি সৌদি আরবে সিয়াম পালন শুরু করি এবং আমার দেশে গিয়ে শেষ করি, তাহলে আমার ৩১ দিন রোজা পালন করা হবে। এভাবে আমার সিয়াম পালনের হুকুম কি? আমি কতটি রোজা রাখব?
তিনি উত্তরে বলেন:
আপনি যদি সৌদি আরব বা অন্য কোনো দেশে সিয়াম পালন শুরু করেন এবং নিজের দেশে গিয়ে বাকিটা পালন করেন, তাহলে আপনার দেশের লোকদের সাথে সিয়াম ভঙ্গ করবেন তথা ঈদ উদযাপন করবেন; যদিও বা তা ৩০ দিনের বেশি হয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
(الصوم يوم تصومون، والفطر يوم تفطرون)
রোজা হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে) রোজা পালন কর, আর ঈদুল ফিতর হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে) ইফতার (রোজা ভঙ্গ) কর।’
কিন্তু আপনি যদি তাতে করে গিয়ে ২৯ দিনের কম রোজা পালন করেন, তাহলে আপনাকে পরবর্তীতে ১টি রোজা কাজা আদায় করতে হবে। কারণ রমজান মাস ২৯ দিনের কম হতে পারে না।
(মাজমূ ফাতাওয়াশ-শাইখ ইবনে বায (১৫/১৫৫))
শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল:
যদি কোনো ব্যক্তি এক মুসলিম দেশ থেকে অন্য দেশে গমন করে, যে দেশের মুসলমানেরা প্রথম দেশের একদিন পরে রমজান শুরু করেছে, সে ব্যক্তি সে দেশের লোকদের সাথে রোজা রাখতে গিয়ে তার ৩০টির বেশি রোজা হয়ে যায়— সে ক্ষেত্রে হুকুম কী? অনুরূপভাবে, এ অবস্থার বিপরীত অবস্থার হুকুম কী?
তিনি উত্তরে বলেন:
যদি কেউ এক মুসলিম দেশ থেকে অন্য মুসলিম দেশে ভ্রমণ করে এবং সেই দেশের রমজান পরে শুরু হয়, তবে তিনি ঐ দেশের লোকেরা সিয়াম না-ছাড়া পর্যন্ত সিয়াম পালন করে যাবেন। কারণ রোজা হল সেদিন, যেদিন লোকেরা সিয়াম পালন করে; আর ঈদুল ফিতর হল সেদিন, যেদিন লোকেরা রোজা ছেড়ে দেয়। ঈদুল আযহা হল সেদিন, যেদিন লোকেরা পশু যবেহ করে।
তাকে এভাবে রোজা পালন করতে হবে; যদিওবা এজন্য তাকে একদিন বা এর বেশি দিন সিয়াম পালন করতে হয়। এটি সেই মাসওয়ালার অনুরূপ, যখন কোনো ব্যক্তি এমন কোনো দেশে ভ্রমণ করে যেখানে সূর্যাস্ত দেরিতে হয়, তবে সে ব্যক্তিকে সূর্যাস্ত না যাওয়া পর্যন্ত রোজা পালন করতে হবে। যদিওবা এর ফলে রোজা পালন স্বাভাবিক দিনের চেয়ে দুই, তিন বা ততোধিক ঘণ্টা বিলম্বিত হয়। এছাড়া এ কারণেও তাকে বেশিদিন রোজা থাকতে হবে, যেহেতু সে দ্বিতীয় যে দেশে ভ্রমণ করেছে সেখানে (শাওয়াল মাসের) নতুন চাঁদ দেখা যায়নি। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে চাঁদ দেখে রোজা রাখতে ও চাঁদ দেখে রোজা ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছেন।**
তিনি বলেছেন:
(صوموا لرؤيته، وأفطروا لرؤيته)
তোমরা তা (নতুন চাঁদ) দেখে রোজা ধর এবং তা (নতুন চাঁদ) দেখে রোজা ছাড়।
আর বিপরীত অবস্থা হচ্ছে, যদি কোনো ব্যক্তি এক দেশ থেকে অন্য এক দেশে ভ্রমণ করে, যেখানে রমজান মাস প্রথম দেশের তুলনায় আগে শুরু হয়েছে, তবে তিনি তাদের সাথেই রোজা পালন ছেড়ে দেবেন এবং যে কয়দিনের রোজা বাদ পড়েছে সে রোজাগুলো পরে কাজা আদায় করে নিবেন।
যদি একদিন বাদ পড়ে তবে একদিনের রোজা কাজা করবেন।
যদি দুই দিনের বাদ পড়ে তবে দুই দিনের কাজা করবেন।
তিনি যদি ২৮ দিন পর রোজা ছাড়েন, তবে দুই দিনের রোজা কাজা আদায় করবেন।
যদি উভয় দেশে মাস ৩০ দিনে শেষ হয়, তবে এক দিনের কাজা করবেন, আর যদি উভয় দেশে বা যে কোনো এক দেশে ২৯ দিনে মাস শেষ হয়, তাহলে ২৯ দিনই পূর্ণ হয়ে যাবে।
(সূত্র: মাজমূ‘ ফাতাওয়া আশ-শাইখ ইবন উছাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৪))
আরও এক প্রশ্নে শাইখ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
কেউ হয়তো বলবে, কেন আপনি বলছেন যে প্রথম ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি রোজা পালন করতে হবে এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রোজার কাজা পালন করতে হবে?
তিনি উত্তরে বলেন:
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রোজার কাজা পালন করতে হবে, কারণ মাস ২৯ দিনের কম হতে পারে না। আর প্রথম ক্ষেত্রে সে ৩০ দিনের বেশি রোজা পালন করবে, কারণ তখনও নতুন চাঁদ দেখা যায়নি।
প্রথম ক্ষেত্রে আমরা তাকে বলব রোজা ছেড়ে দাও, যদিও তোমার ২৯ দিন পূর্ণ হয়নি। কারণ নতুন চাঁদ দেখা গিয়েছে। নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার পর রোজা ছেড়ে দেওয়া বাধ্যতামূলক। শাওয়াল মাসের প্রথম দিন রোজা পালন করা হারাম।
আর কেউ যদি ২৯ দিনের কম রোজা পালন করে থাকে, তাহলে তাকে ২৯ দিন পূরণ করতে হবে। এটি দ্বিতীয় অবস্থা হতে ভিন্ন। কারণ যে দেশে আসা হয়েছে সেখানে তখন রমজান চলছে; নতুন চাঁদ দেখা যায়নি। যেখানে এখনও রমজান চলছে, সেখানে কিভাবে রোজা ভঙ্গ করা যেতে পারে? তাই আপনাকে রোজা পালন চালিয়ে যেতে হবে। আর যদি তাতে মাস বেড়ে যায়, তাহলে তা দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার মতো।”
(সূত্র: মাজমূ‘ ফাতাওয়া আশ-শাইখ ইবন উছাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৫))
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা
গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন