মিরাসে বিধবা নারীর হক কতটুকু?
প্রশ্নঃ ৮১০০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, স্বামী মারা গেলে স্ত্রী যদি চলে যেতে চায় তাহলে স্বামীর রেখে যাওয়া ধন-সম্পদ থেকে কোন অংশ পাবে কি না? বা কি কি পেতে পারে? আর যদি স্বামীর পরিবার তার সম্পত্তি দিতে না চায় তাহলে এটা জায়েজ হবে কিনা? জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
স্বামী মারা যাওয়া মাত্রই স্ত্রী, সন্তান ও অন্যান্য ওয়ারিশরা স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির অধিকারী হয়ে যায়। স্বামীর সন্তান থাকলে তার রেখে যাওয়া সম্পদে স্ত্রী আট ভাগের এক ভাগের মালিক হয়। স্বামীর সন্তান না থাকলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে স্ত্রী চার ভাগের এক ভাগের মালিক হয়।
স্বামী মারা যাওয়ার পর ইদ্দত পালন পূর্বক স্ত্রী অন্যত্র বিবাহ করতে চাইলে শরীয়তের পক্ষ থেকে অনুমতি রয়েছে। অন্যত্র বিবাহ করার কারণে স্বামীর সম্পত্তি থেকে স্ত্রী বঞ্চিত হবে না।
উত্তরাধিকারের সূত্র হল মৃত্যুকালীন কার সাথে কী ধরনের সম্পর্ক ছিল তার ওপর। স্বামীর মৃত্যুর সময় স্ত্রী যেহেতু তার বিবাহ বন্ধনে ছিল, অতএব স্ত্রী তাৎক্ষণিক স্বামীর উত্তরাধিকার হয়ে গেছে। কাজেই তাকে বঞ্চিত করা কিংবা তার হক তাকে না দেওয়া শরীয়তসম্মত হবে না। যারা এমনটি করবে তারা গুনাহগার হবে।
وَلَکُمۡ نِصۡفُ مَا تَرَکَ اَزۡوَاجُکُمۡ اِنۡ لَّمۡ یَکُنۡ لَّہُنَّ وَلَدٌ ۚ فَاِنۡ کَانَ لَہُنَّ وَلَدٌ فَلَکُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَکۡنَ مِنۡۢ بَعۡدِ وَصِیَّۃٍ یُّوۡصِیۡنَ بِہَاۤ اَوۡ دَیۡنٍ ؕ وَلَہُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَکۡتُمۡ اِنۡ لَّمۡ یَکُنۡ لَّکُمۡ وَلَدٌ ۚ فَاِنۡ کَانَ لَکُمۡ وَلَدٌ فَلَہُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَکۡتُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ وَصِیَّۃٍ تُوۡصُوۡنَ بِہَاۤ اَوۡ دَیۡنٍ ؕ وَاِنۡ کَانَ رَجُلٌ یُّوۡرَثُ کَلٰلَۃً اَوِ امۡرَاَۃٌ وَّلَہٗۤ اَخٌ اَوۡ اُخۡتٌ فَلِکُلِّ وَاحِدٍ مِّنۡہُمَا السُّدُسُ ۚ فَاِنۡ کَانُوۡۤا اَکۡثَرَ مِنۡ ذٰلِکَ فَہُمۡ شُرَکَآءُ فِی الثُّلُثِ مِنۡۢ بَعۡدِ وَصِیَّۃٍ یُّوۡصٰی بِہَاۤ اَوۡ دَیۡنٍ ۙ غَیۡرَ مُضَآرٍّ ۚ وَصِیَّۃً مِّنَ اللّٰہِ ؕ وَاللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَلِیۡمٌ ؕ
তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ তোমাদের জন্যে, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে এবং তাদের সন্তান থাকলে তোমাদের জন্যে তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ; তাদের ওসিয়াত পালন এবং ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের সন্তান না থাকলে তাদের জন্যে তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ, আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্যে তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-অষ্টমাংশ; তোমরা যা ওসিয়াত করবে তা দেওয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যদি পিতা-মাতা ও সন্তানহীন কোন পুরুষ বা নারীর উত্তরাধিকারী থাকে তার এক বৈপিত্রেয় ভাই বা ভগ্নী, তবে প্রত্যেকের জন্যে এক-ষষ্ঠাংশ। তারা এর অধিক হলে সকলে সমঅংশীদার হবে এক-তৃতীয়াংশে; এটা যা ওসিয়াত করা হয় তা দেওয়ার এবং ঋণ পরিশোধের পর, যদি কারও জন্যে ক্ষতিকর না হয়। এটা আল্লাহ্ র নির্দেশ, আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
—আন নিসা - ১২
২. অনুমতি ছাড়া অন্যের হক ভক্ষণ করার বিষয়ে কুরআন সুন্নাহে বড় সতর্কতা এসেছে।
কুরআনুল কারীমে আমানত রক্ষার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমানত রক্ষা সম্পর্কে নিম্নে কয়েকটি আয়াত উদ্বৃত হলো।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ-
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের সাথে খেয়ানত করো না এবং জেনে-শুনে পরস্পরের আমানতসমূহ খেয়ানত করো না’ (আনফাল ৮/২৭)।
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا-
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যেন, তোমরা আমানতসমূহ তার যথার্থ হকদারদের নিকট পৌঁছে দাও। আর যখন তোমরা লোকদের মধ্যে বিচার করবে, তখন ন্যায়বিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে সর্বোত্তম উপদেশ দান করছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (নিসা ৪/৫৮)।
وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ- وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ- أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ- الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ-
(৩) ‘আর যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকার সমূহ রক্ষাকারী। এবং যারা তাদের ছালাত সমূহের হেফাযতকারী। তারাই হবে উত্তরাধিকারী। যারা উত্তরাধিকার লাভ করবে জান্নাতুল ফেরদৌসের। যেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (মুমিনূন ২৩/৮-১১)
হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, মনতুষ্টি ছাড়া অন্যের মাল বক্ষণ করা হালাল নয়।
কেননা, হাদিস শরীফে এসেছে
لا يحل مال امرئ مسلم إلا بطيب نفس منه.حديث صحيح أخرجه أحمد والبيهقي والدارقطني وغيرهم
কোনো ব্যক্তির সন্তুষ্টি ছাড়া তার সম্পদ গ্রহন করা হারাম।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন