অতিতের যাকাত
প্রশ্নঃ ৭৪৪৬৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার কাছে ১০ ভরি সোনার ও ২ ভরি রূপার গহনা আছে।যা আমি আমার বিয়েতে পেয়েছি। যা আমার কাছে ৮ বছর ধরে আছে। এখান থেকে ৩ ভরি সোনার গহনা আমার স্বামী বন্দকে রাখছে ৩ বছর ধরে।আমার কাছে আর কোন সম্পদ নাই। আমার স্বামী আমার গহনার যাকাত দেয় না।আমার কাছে কোন টাকা ও থাকে না যাকাত দেয়ার জন্য।বর্তমানে আমি কিছু গহনা আমার নাবালক ছেলে ও মেয়েকে দিছি।গহনাগুলো ওদের জন্য আলাদা করে রাখছি।এখন আমার প্রশ্ন হলো----
১/এখন আমি যাকাত দিতে চাই।আমার কাছে কোন টাকা নাই। আমি কিভাবে যাকাত আদায় করতে পারি? আর এত দিনের যাকাত এর হিসাব কোন দাম ধরবো কিভাবে করবো?
২/আমি আমার সন্তানদের গহনা দেয়ার পর আমার কাছে শুধু ৭ ভরি সোনার গহনা আছে। এখন বর্তমানে সময় ও কি আমাকে যাকাত দিতে হবে।আর সন্তানদেরকে যে গহনা দিছি তা কি আমি ব্যবহার করতে পারবো?
৩/আমার স্বামী যে গহনা বন্দক রাখছে ও গুলোর যাকাত কি দিতে হবে? আমি যদি যাকাত এর টাকা কিছু কিছু করে কয়েক বছরে পরিশোধ করি তবে কি আদায় হবে? দয়া করে উওর দিবেন খুব পেরেশানিতে আছি আর ভয় ও হচ্ছে অনেক।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
পেছনের বছরে যাকাতগুলোও আপনাকে আদায় করতে হবে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ অলংকারের বর্তমান বাজারদর ধরেই পিছনের যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা, প্রতি বছর ঐ অলংকারের শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত আদায় করা আপনার উপর ফরয ছিল। তা যেহেতু আদায় করা হয়নি তাই এখন এ পরিমাণ স্বর্ণ কিংবা তার বর্তমান বাজার দর আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলোর যাকাত আদায়ের সময় প্রত্যেক বছরের যাকাত বাদ দিয়ে যে সম্পদ/অলংকার থাকবে তা পরবর্তী বছরের যাকাতযোগ্য সম্পদ বলে বিবেচিত হবে। যেমন কারো কাছে ৪০ ভরি অলংকার আছে। সে দুই বছর যাকাত দেয়নি। এক্ষেত্রে তাকে প্রথম বছরের জন্য ১ ভরি স্বর্ণ বা তার মূল্য যাকাত দিতে হবে। আর দ্বিতীয় বছরের যাকাতযোগ্য সম্পদ ৩৯ ভরি। তাই এ থেকে যাকাত দিতে হবে ০.৯৭৫ ভরি স্বর্ণ বা তার মূল্য।
এখন ১০ ভরি সোনা এবং ২ভরি রুপার বাজার মূল্য জেনে নিন। তারপর মোট মূল্য যা হবে প্রথম বছরের জন্য তার থেকে ২.৫% (লাখে আড়াই হাজার টাকা) যাকাত হিসেবে বের করুন। যেমন ধরুর, এখন যদি সেগুলোর বাজারমূল্য হয় দশ লাখ টাকা, তাহলে প্রথম বছরের জন্য আপনাকে দিতে হবে-, ১০.০০০০০ - ২.৫% = ২৫ হাজার টাকা। এভাবে দ্বিতীয় বছরের জন্য দিতে হবে, 975000 - ২.৫% = 24,375। এভাবে প্রতি বছর কমে আসবে।
যেবছর আপনি সেখান থেকে সন্তানদের গহনা দিয়েছেন সেবছর থেকে নাবালক সন্তানদের গহনার যাকাত দিতে হবে না। তবে সন্তানদের দেওয়ার উদ্দেশ্য যদি হয় যাকাত থেকে বাঁচার ফন্দি তাহলে সেটা গ্রহনযোগ্য হবে না।
না বালকের সম্পদ পিতামাতার হাতে আমানত। তাই সেগুলো আপনার ব্যবহার করতে পারবেন না।
বন্ধকৃত গহনার যাকাতও দিতে হবে। কেননা সেটা বন্ধক থাকলেও মূল মালিক আপনিই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৫৭২০৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, নেসাব কি? যাকাত কার উপরে ফরজ?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ আছে এবং তার ওপর বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। সে আকেল (সুস্থবিবেক সম্পন্ন) বালেগ মানুষ।
বাংলাদেশের বিবেচনায় চারটি বস্তুর ওপর যাকাত আসে।
এক. স্বর্ণ। দুই. রূপা। তিন. টাকা। চার. ব্যবসার পণ্য।
স্বর্ণরূপার যাকাতে ক্ষেত্রে বিধান হলো,
(ক) যদি শুধু স্বর্ণ থাকে (রূপা, টাকা, বা ব্যবসার পণ্য না থাকে) তাহলে তার নেসাব হলো, সাড়ে সাত ভরি। সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের বাজারমূল্য যা হবে তার শতকরা ২.৫% যাকাত হিসেবে নির্ধারিত হবে।
(খ) যদি শুধু রূপা থাকে (স্বর্ণ, টাকা বা ব্যবসার পণ্য না থাকে) তাহলে তার নেসাবের পরিমাণ হলো, সাড়ে বায়ান্ন ভরি। সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার বাজারমূল্য যা হবে তার শতকরা ২.৫% যাকাত হিসেবে নির্ধারিত হবে।
(গ) ব্যাবসার পণ্যের ক্ষেত্রে বিধান রূপার ন্যায়। অর্থাৎ সেগুলোর মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয় তাহলে তার শতকরা ২.৫% যাকাত হিসেবে নির্ধারিত হবে।
যদি কারো কাছে কিছু স্বর্ণ কিছু রূপা, বা কিছু স্বর্ণ, কিছু টাকা বা ব্যবসার পণ্য থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে যাকাত নির্ধারণের বিধান হলো, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্য। অর্থাৎ, সেগুলোর সামষ্টিক মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার সমান হয় এবং বিগত একবছর যাবত সেগুলো বহাল থাকে তাহলে যাকাত দিতে হবে। মোট কথা, সামষ্টিক সম্পদ মিলেও যদি নেসাব হয়ে যায় তাহলে তার যাকাত দিতে হবে। আর যাকাতের পরিমাণ হলো, সকল বস্তুর ক্ষেত্রেই শতকরা ২.৫%।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের ০৭.০৩.২৪ ইং তারিখের ঘোষিত মূল্য তালিকা অনুযায়ী প্রতি ভরি রূপার মূল্য ১৬২০/- টাকা। সেই হিসেবে রূপার নেসাব হয় ১৬২০*৫২.৫=৮৫০০০/- টাকা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন