ইসলামের দৃষ্টিতে পীর মুরিদী : শর্ত ও গুণাবলী
প্রশ্নঃ ৪৪২৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ক) মুরিদ হওয়া কি ও কেন? কোরআন হাদিসের আলোকে দলিলভিত্তিক বর্ণনা চাই।
খ) কোন মুসলমান মুরিদ না হলে সে কি গুনাহগার হবে?
গ) পীর হওয়ার জন্য কি কি শর্ত ও গুণাবলী রয়েছে বিস্তারিত আলোচনা করুন?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ক. মানুষ মাত্রই অন্তরে কিছু সুপ্ত ব্যাধি রয়েছে। যেমন অহংকার, হিংসা, আত্মতুষ্টি ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা জরুরী। আল্লাহ তাআলা নবী প্রেরনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে যে চারটি মূলনীতি কথা বলেছেন তার মধ্যে একটি হলো অন্তরের ভিতরটা পরিশুদ্ধ করা।যাকে অপর শব্দে বলা হয় "তাযকিয়াহ"।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
ہُوَ الَّذِیۡ بَعَثَ فِی الۡاُمِّیّٖنَ رَسُوۡلًا مِّنۡہُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتِہٖ وَیُزَکِّیۡہِمۡ وَیُعَلِّمُہُمُ الۡکِتٰبَ وَالۡحِکۡمَۃَ ٭ وَاِنۡ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ ۙ
তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।
—আল জুমুআহ - ২
তাজকিয়াহ করা ফরয। তাজকিয়ার উদ্দেশ্যে কোন আল্লাহ ওয়ালার হাতে বাইআত গ্রহণ করা মুস্তাহাব।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম থেকে মৌলিকভাবে যে কয়টি বিষয়ের বাইআত নিতেন, হিজরতের বাইআত, জিহাদের বাইআত ও তাজকিয়া তথা আত্মশুদ্ধির বাইআত।
খ. উপরের উত্তর থেকে স্পষ্ট হয়েছে, মুরিদ না হলে গুনাহগার হবে না।
খাটি পীরের আলামত :
১. পীর তাফসীর, হাদীস ও ফিক্বহে অভিজ্ঞ আলেম হবেন।
২. পীরের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের মোয়াফেক হওয়া জরুরী। স্বভাব চরিত্র ও অন্যান্য গুণাবলীও শরীয়ত অনুকূল হওয়া চাই।
৩. টাকা-পয়সার ও সম্মান সুখ্যাতির লোভ থাকবে না। নিজেকে কামেল পীর হওয়ার দাবি করবেন না
৪. কোন কামেল ও খাটি পীরের কাছ থেকে ইসলাহে বাতেন ও তরীকত হাসিল করে থাকবেন।
৫. সমসাময়িক পরহেজগার মুত্তাকী আলেমগণ এবং খাঁটি সুন্নত তরীকার পীর-মাশায়েখগণ তাকে ভালো বলে মনে করবেন। ৬. দুনিয়াদার অপেক্ষা সমঝদার দ্বীনদার লোকেরাই তার প্রতিবেশী ভক্তি-শ্রদ্ধা রাখে এমন হতে হবে।
৭. মুরিদদের অধিকাংশ এমন যে, তারা শরীয়তের পাবন্দি করে এবং দুনিয়ার লোভ-লালসা কম রাখে।
৮. পীর মনোযোগ সহকারে মুরিদদের তালীম ও ইসলাহে বাতেন করান। তাদের কোনো দোষ ত্রুটি দেখলে সংশোধন করে দেন। তাদের মতলব অনুযায়ী স্বাধীন ছেড়ে দেন না।
৯. তার সোহবতে কিছুদিন থাকলে দুনিয়ার মহব্বত কম ও আখেরাতের চিন্তা বেশি হতে থাকে।
১০. তিনি নিজেও রীতিমতো যেকোনো জিকির-আজকার করেন। অন্ততপক্ষে ইরাদা রাখেন। কেননা নিজে আমল না করলে তার তালীম তালক্বীনে বরকত হয় না।
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَکُوۡنُوۡا مَعَ الصّٰدِقِیۡنَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।
—আত তাওবাহ্ - ১১৯
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন