প্রশ্নঃ ৪২৬৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম, আমি একজন কুয়েত প্রবাসী। এখানে কোরআন শরীফ পড়তে গিয়ে দেখি এখানকার কোরআন শরীফ গুলোতে সূরা ফাতেহাতে "বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম" কে প্রথম আয়াত ধরা হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের একজন আলেম কে আমি ইউটিউবে বক্তব্য দিতে শুনেছি যে, আরব দেশগুলোতে সূরা ফাতেহার শুরুতে "বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম" কে প্রথমে ধরা হয়েছে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে "বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম" কে আলাদাভাবে লিখা হয়েছে। এটা কেন লিখা হয়েছে। এটা তিনি ত্রুটি হিসেবে আখ্যা দেন। এ সম্পর্কে সহি মাসালা দিলে খুশি হব।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সারা দুনিয়ার সকল ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, সূরা ফাতিহার আয়াত ৭টি। এর প্রথম আয়াত কোনটি এ নিয়ে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কারো কারো মতে প্রথম আয়াত হল বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আর কারো মত হল, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন প্রথম আয়াত। আমাদের হানাফী মাযহাবে দ্বিতীয় মত গ্রহণ করা হয়েছে। এ মতটির পক্ষে যৌক্তিকতা হলো, নামাজের মধ্যে সূরা ফাতিহা সকলেই আলহামদুলিল্লাহ থেকে উচ্চ শব্দে পড়তে শুরু করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খোলাফায়ে রাশেদীন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের আমল এমনটিই ছিল। কেউ বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম জোরে পড়ার মাধ্যমে নামাজ শুরু করেননি।
মজার বিষয় হলো, আরববিশ্বে সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াত বিসমিল্লাহকে গণ্য করলেও কেউ কিন্তু আমলের ক্ষেত্রে সুরা ফাতিহা বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম জোরে পড়ে আরম্ভ করে না। এমনকি আপনার কুয়েতের মসজিদগুলো তেও দেখবেন নামাজের প্রথম যে আয়াতটি জোরে পড়ে সেটি হল, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। জীবনে কি একবারও শুনেছেন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম জোরে পড়ে নাময শুরু করা হয়েছে?
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ يَفْتَتِحُونَ الْقِرَاءَةَ بِـ (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ) قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَالتَّابِعِينَ وَمَنْ بَعْدَهُمْ كَانُوا يَسْتَفْتِحُونَ الْقِرَاءَةَ بِـ (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ) . قَالَ الشَّافِعِيُّ إِنَّمَا مَعْنَى هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ كَانُوا يَفْتَتِحُونَ الْقِرَاءَةَ بِـ (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ) مَعْنَاهُ أَنَّهُمْ كَانُوا يَبْدَءُونَ بِقِرَاءَةِ فَاتِحَةِ الْكِتَابِ قَبْلَ السُّورَةِ وَلَيْسَ مَعْنَاهُ أَنَّهُمْ كَانُوا لاَ يَقْرَءُونَ ( بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ) . وَكَانَ الشَّافِعِيُّ يَرَى أَنْ يُبْدَأَ بِـ( بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ) وَأَنْ يُجْهَرَ بِهَا إِذَا جُهِرَ بِالْقِرَاءَةِ .
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকার, ‘উমার ও উসমান (রাঃ) ‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন’ দিয়ে নামাযের কিরা’আত শুরু করতেন।
ফুটনোটঃ
আবূ ‘ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। নাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবা, তাবিঈন ও তাবা তাবিঈন এ হাদীস অনুযায়ী আমল করেছেন। তাঁরা ‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন’ (অর্থাৎ সূরা ফাতিহা) দিয়েই নামাযের কিরা’আত শুরু করেছেন। ইমাম শাফিঈ বলেন, এ হাদীসের তাৎপর্য হল, নাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকার, ‘উমার ও উসমান (রাঃ) অন্য সূরা পাঠের পূর্বে সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। এর অর্থ এই নয় যে, তাঁরা বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন না। ইমাম শাফিঈর মত হল ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ দিয়েই কিরা’আত শুরু করতে হবে এবং যখন সূরা ফাতিহা উচ্চস্বরে পাঠ করা হবে তখন “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” ও উচ্চস্বরে পাঠ করতে হবে।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৪৬
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন