প্রশ্নঃ ৪১২৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, শরিয়ত,তরিকত,হাকিকত ও মারেফতের এলেম বলতে কী বুঝায়।
কাদেরিয়া,চিশতীয়া,মুজাদ্দেদিয়া ও নক্সেবন্দীয়া তরিকার কথা বলে অনেকে, এসব তরিকায় কি শিখানো হয় ।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মারেফত শব্দ আরবী। যার অর্থ হল, পরিচয়। মৌলিকভাবে মারেফতের পরিচয় তাই, যা হাদীসে জিবরাঈলে “ইহসান” এর পরিচয়ে উদ্ধৃত। তথা-
যখন হযরত জিবরাঈল আঃ রাসূল সাঃ কে জিজ্ঞাসা করেন,
রৌ অবশেষে রাসূল সাঃ পর্যন্ত গিয়ে মিলেছে।
এ চার তরীকার শায়েখদের ইলমী ও আমলী হালাত ছিল সর্বজনবিদিত। ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাতের কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের দিয়েছিলেন ব্যাপক পরিচিত ও প্রসিদ্ধি। তাই পরবর্তী বুজুর্গানে দ্বীন নিজেদের নিসবত তাদের করা শুরু করে দেন। এভাবেই ছড়িয়ে পড়ে এ চার তরীকা।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ নূরানী সিলসিলার দিকে অনেক ভন্ড ও বিদআতি ও শিরকী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত কথিত পীররাও নিসবত করে থাকে। তাই শুধু সিলসিলার নিসবত দেখেই তাদেরকে হক বলা শুরু করা হবে বোকামী।
পীর ভাল না খারাপ তা মাপার মাপকাঠি শুধু সিলসিলার নিসবত নয়, বরং ইলম, আমল, তাকওয়া, ইখলাস, কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ-অনুকরণ, এক কথায় শরীয়ত ও সুন্নতের অনুসরণের ভিত্তিতে পীর সাহেবেকে যাচাই করতে হবে।
উক্ত মাপকাঠিতে উক্ত পীর উত্তীর্ণ হন, তাহলে তিনি প্রকৃত পীর। নতুবা ভন্ড। ঈমান বিধ্বংসী শয়তানের দোসর।
চার তরীকা কি ইসলামকে বিভক্তকারী চার পথ?
অনেক আলেম নামধারী ভাইকেও আজকাল দেখা যায় যে, একটি হাস্যকর বিষয়ের অবতারণা করে থাকেন। তাদের বক্তব্য হল চার তরীকা মানে হল চার পথ। যে পথের কোনটিতেই ইসলাম নেই। সঠিক পথ হল শুধুই ইসলাম।
হাস্যকর বক্তব্য। উক্ত ভাই হয়তো না বুঝার কারনে কিংবা বুঝেও ইলম ও আমলের রূহানিয়্যাত থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে এমন বোকামীসূলভ বক্তব্য প্রদান করে থাকেন।
আমরা যদি উক্ত ভাইকে প্রশ্ন করি-
১
কুরআনের সাত কিরাত কি ইসলামের সাত পথ? একটিতে নাজাত আর বাকিগুলোতে ধ্বংস? [নাউজুবিল্লাহ]
নাকি এর প্রতিটি কিরাতের দ্বারাই পূর্ণাঙ্গ কুরআন পাওয়া যায়?
নিশ্চয় এর জবাব হল, কুরআন সাত কিরাতে নাজিল হলেও, এক কিরাতে পড়লেও সেটি পূর্ণাঙ্গ কুরআনকেই বুঝায়। তেমনি চার তরীকার মূল টার্গেট একই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশ নিষেধ, রাসূল সাঃ এর আদেশ নিষেধ মোহাব্বত নিয়ে পালন করার মানসিকতা তৈরী করা।
২
দ্বীনী ইলম শিখার বর্তমানে দু’টি পদ্ধতি প্রচলিত। একটি হল একাডেমিক পদ্ধতিতে দ্বীন শিখা। যা রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত পদ্ধতি নয়। আরেকটি হল কোন আলেমের কাছে থেকে জ্ঞান শিক্ষা করা। যা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত পদ্ধতি।
এখন প্রশ্ন হল দ্বীন শিখার উপরোক্ত দুই পদ্ধতির একটি ইসলাম, আরেকটি গোমরাহী? এমন আহমকী কথা কি কেউ বলবেন?
নাকি উভয়টি দ্বারাই উদ্দেশ্য একটি। যা হল দ্বীনের ইলম শিক্ষা করা।
একাডেমিক পদ্ধতিটি কেবল দ্বীন শিখার সহায়ক হিসেবে আবিস্কৃত হয়েছে। এটি সুন্নত বা সওয়াবের কাজ একথা কেউ বলে না।
তেমনি তাসাউওফের ৪ তরীকা কোন সুন্নত নয়। নয় এটি আবশ্যকীয় বিষয়। বরং রাসূল সাঃ এর আনীত দ্বীন নিজের অভ্যাসে পরিণত করার জন্য, শরীয়তের বিধানগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করার জন্য একটি সহায়ক পদ্ধতি ছাড়া আর কিছু নয়।
পীর দেখেই তার পিছনে যেমন ছুটতে শুরু করা যাবে না। আগে যাচাই করে নিতে হবে তিনি ভাল মানুষ না ধোঁকাবাজ। তিনি আল্লাহ ও রাসূলের আশেক না শয়তানের দোসর। এ কারণে সকল পীরকে যেমন মন্দ বলা গোড়ামী, তেমনি পীর শুনেই ভক্তি করতে চাওয়া আহমকী ও গোমরাহীর নিদর্শন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন